উত্তর,
بسم الله الرحمن الرحيم
জীবন বাঁচানোর আবশ্যকীয়তা সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেনঃ
وَأَنفِقُواْ فِي سَبِيلِ اللّهِ وَلاَ تُلْقُواْ بِأَيْدِيكُمْ إِلَى التَّهْلُكَةِ وَأَحْسِنُوَاْ إِنَّ اللّهَ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ
আর ব্যয় কর আল্লাহর পথে, তবে নিজের জীবনকে ধ্বংসের সম্মুখীন করো না। আর মানুষের প্রতি অনুগ্রহ কর। আল্লাহ অনুগ্রহকারীদেরকে ভালবাসেন। [ সুরা বাকারা :১৯৫ ]
এই আয়াতের ব্যাখ্যায় ফুকাহায়ে কেরাম বলেছেন নিজের জীবন বাঁচানো ফরজ।
ভারতের ইসলামিক স্কলার মাওলানা শাহ ওলীউল্লাহ রহঃ এ সংক্রান্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন। মানুষের জীবন , মস্তিষ্ক, ধর্ম, ইজ্জত, সম্পদ যে কোন মূল্যে রক্ষা করা আবশ্যক।
আল্লাহ তা'আলা আরো বলেনঃ
ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﺣَﺮَّﻡَ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢُ ﺍﻟْﻤَﻴْﺘَﺔَ ﻭَﺍﻟﺪَّﻡَ ﻭَﻟَﺤْﻢَ ﺍﻟْﺨِﻨﺰِﻳﺮِ ﻭَﻣَﺎ ﺃُﻫِﻞَّ ﺑِﻪِ ﻟِﻐَﻴْﺮِ ﺍﻟﻠّﻪِ ﻓَﻤَﻦِ ﺍﺿْﻄُﺮَّ ﻏَﻴْﺮَ ﺑَﺎﻍٍ ﻭَﻻَ ﻋَﺎﺩٍ ﻓَﻼ ﺇِﺛْﻢَ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠّﻪَ ﻏَﻔُﻮﺭٌ ﺭَّﺣِﻴﻢٌ
তিনি তোমাদের উপর হারাম করেছেন, মৃত জীব, রক্ত, শুকরের মাংস এবং সেসব জীব-জন্তু যা আল্লাহ ব্যাতীত অপর কারো নামে উৎসর্গ করা হয়।অবশ্য যে লোক অনন্যোপায় হয়ে পড়ে এবং নাফরমানী ও সীমালঙ্ঘনকারী না হয়, তার জন্য(ভক্ষণে) কোন পাপ নেই। নিঃসন্দেহে আল্লাহ মহান ক্ষমাশীল ও অত্যন্ত দয়ালু।(সূরা বাক্বারা-১৭৩)
ﺣُﺮِّﻣَﺖْ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢُ ﺍﻟْﻤَﻴْﺘَﺔُ ﻭَﺍﻟْﺪَّﻡُ ﻭَﻟَﺤْﻢُ ﺍﻟْﺨِﻨْﺰِﻳﺮِ ﻭَﻣَﺎ ﺃُﻫِﻞَّ ﻟِﻐَﻴْﺮِ ﺍﻟﻠّﻪِ ﺑِﻪِ ﻭَﺍﻟْﻤُﻨْﺨَﻨِﻘَﺔُ ﻭَﺍﻟْﻤَﻮْﻗُﻮﺫَﺓُ ﻭَﺍﻟْﻤُﺘَﺮَﺩِّﻳَﺔُ ﻭَﺍﻟﻨَّﻄِﻴﺤَﺔُ ﻭَﻣَﺎ ﺃَﻛَﻞَ ﺍﻟﺴَّﺒُﻊُ ﺇِﻻَّ ﻣَﺎ ﺫَﻛَّﻴْﺘُﻢْ ﻭَﻣَﺎ ﺫُﺑِﺢَ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﻨُّﺼُﺐِ ﻭَﺃَﻥ ﺗَﺴْﺘَﻘْﺴِﻤُﻮﺍْ ﺑِﺎﻷَﺯْﻻَﻡِ ﺫَﻟِﻜُﻢْ ﻓِﺴْﻖٌ ﺍﻟْﻴَﻮْﻡَ ﻳَﺌِﺲَ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻛَﻔَﺮُﻭﺍْ ﻣِﻦ ﺩِﻳﻨِﻜُﻢْ ﻓَﻼَ ﺗَﺨْﺸَﻮْﻫُﻢْ ﻭَﺍﺧْﺸَﻮْﻥِ ﺍﻟْﻴَﻮْﻡَ ﺃَﻛْﻤَﻠْﺖُ ﻟَﻜُﻢْ ﺩِﻳﻨَﻜُﻢْ ﻭَﺃَﺗْﻤَﻤْﺖُ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﻧِﻌْﻤَﺘِﻲ ﻭَﺭَﺿِﻴﺖُ ﻟَﻜُﻢُ ﺍﻹِﺳْﻼَﻡَ ﺩِﻳﻨًﺎ ﻓَﻤَﻦِ ﺍﺿْﻄُﺮَّ ﻓِﻲ ﻣَﺨْﻤَﺼَﺔٍ ﻏَﻴْﺮَ ﻣُﺘَﺠَﺎﻧِﻒٍ ﻟِّﺈِﺛْﻢٍ ﻓَﺈِﻥَّ ﺍﻟﻠّﻪَ ﻏَﻔُﻮﺭٌ ﺭَّﺣِﻴﻢٌ
তোমাদের জন্যে হারাম করা হয়েছে মৃত জীব-জন্তু, রক্ত ও শুকরের মাংস কে।এবং যেসব জন্তু আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে উৎসর্গকৃত হয়।এবং যা কন্ঠরোধে মারা যায়।যা আঘাত লেগে মারা যায়।যা উচ্চ স্থান থেকে পতনের ফলে মারা যা। যা শিং এর আঘাতে মারা যায়। এবং যাকে হিংস্র জন্তু ভক্ষণ করেছে।কিন্তু যেটিকে তোমরা যবেহ করেছ।(তার হুকুম ভিন্ন)
যে জন্তু যজ্ঞবেদীতে যবেহ করা হয় এবং যা ভাগ্য নির্ধারক শর দ্বারা বন্টন করা হয়।এসব গোনাহর কাজ।আজ কাফেররা তোমাদের দ্বীন থেকে নিরাশ হয়ে গেছে।অতএব তাদেরকে ভয় করো না বরং আমাকে ভয় কর। আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পূর্নাঙ্গ করে দিলাম।তোমাদের প্রতি আমার অবদান সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্যে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম।অতএব যে ব্যাক্তি তীব্র ক্ষুধায় কাতর হয়ে পড়ে; কিন্তু কোন গোনাহর প্রতি প্রবণতা না থাকে, তবে নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা ক্ষমাশীল।(সূরা মায়েদাঃ৩)
উপরোক্ত আয়াত সমূহের ব্যখ্যা প্রদাণ পূর্বক মুফতী শ'ফী রাহ বলেনঃ
মজবুরীর অবস্থায় প্রয়োজন অনুসারে স্বাদ-আস্বাদন গ্রহণের ইচ্ছা ব্যতীত হারাম বস্ত ভক্ষণের অনুমতি রয়েছে।
উপরোক্ত বস্তু সেই সময়েও হারাম হবে। তবে জান বাঁচানোর স্বার্থে উক্ত হারামের গুনাহ সেই সময় রহিত হয়ে যায়।
(তাফসীরে মা'রিফুল কোরআন-উর্দু- ১/৪২৫)
জরুরতের সময় হারাম ভক্ষণ করা ওয়াজিব না মুবাহ(বৈধ)?এ সম্পর্কে চার মাযহাব সম্বলীত সর্ব বৃহৎ ফেক্বাহী গ্রন্থ
"আল-মাওসু'আতুল ফেক্বহিয়্যায় "বর্ণিত রয়েছে,
ذَهَبَ الْحَنَفِيَّةُ - فِي ظَاهِرِ الرِّوَايَةِ - وَالْمَالِكِيَّةُ وَالشَّافِعِيَّةُ - فِي أَحَدِ الْوَجْهَيْنِ - وَالْحَنَابِلَةُ - عَلَى الصَّحِيحِ مِنَ الْمَذْهَبِ - إِلَى أَنَّ الْمُضْطَرَّ يَجِبُ عَلَيْهِ أَكْل الْمَيْتَةِ
হানাফি মাযহাবের জাহির রেওয়ায়াত অনুসারে, মালিকী ও শা'ফী মাযহাবের এক বিবরণ অনুযায়ী এবং বিশুদ্ধ মতানুযায়ী হাম্বলী অনুযায়ী, মুযতার( অনন্যোপায়) ব্যক্তির উপর উক্ত হারাম ভক্ষণ করে নিজ জান বাঁচানো ওয়াজিব।
যদি সে না খেয়ে মৃত্যু বরণ করে, তাহলে সে আত্মহত্যা কারী হিসেবে বিবেচিত হবে।
আরোও বর্ণিত রয়েছে,
وَقَال كُلٌّ مِنَ الْحَنَابِلَةِ وَالشَّافِعِيَّةِ - فِي وَجْهٍ - وَأَبُو يُوسُفَ - فِي رِوَايَةٍ عَنْهُ - إِنَّ الْمُضْطَرَّ يُبَاحُ لَهُ أَكْل الْمَيْتَةِ، وَلاَ يَلْزَمُهُ،
এক বিবরণ অনুযায়ী সমস্ত হাম্বলী ও শা'ফী মাযহাবের অনুসারীগণ এবং এক রেওয়ায়াত অনুযায়ী ইমাম আবু-ইউসুফ রাহ, জরুরতের সময় হারাম ভক্ষণকে জায়েয বলে থাকেন।তাদের মাযহাব মত ভক্ষণ অত্যাবশ্যকীয় নয়।(২৮/১৯৬-১৯৭)
প্রথম মতটি জাহির রেওয়ায়াতের মাধ্যমে প্রমাণিত হওয়ায় সেটিই গ্রহণযোগ্য।
প্রশ্নকারী প্রিয় ভাই/ বোন!
আমাদের সমাজে উক্ত কথাটি ব্যাপক ভাবে ব্যাবহার হয়। তবে সর্ব ক্ষেত্রে কথাটি প্রযোজ্য না। বরং এর প্রকৃত অর্থ হলো,
প্রয়োজনে জান বাঁচানো ওয়াজিব । তবে কেমন প্রয়োজন? প্রয়োজন এমন হতে হবে, যা ছাড়া জীবননাশের আশংকা থাকবে।তখন জান বাঁচানোর তাগিদে হারাম ভক্ষণ করাও জায়েয। এমন পরিস্থিতিতে উক্ত কথাটি ব্যবহার হওয়া যথোপযুক্ত।