জবাবঃ-
কেউ যদি কাউকে এমন গালি দেয় যাতে হদ্দ বা শরয়ী দন্ডবিধি আসেনা তাহলে এমন গালির বদলা গালি দিয়ে দেয়া জায়েয হলেও মাফ করে দেয়া সর্বোত্তম চরিত্রের বৈশিষ্ট্য।
আল্লাহ তা'আলা এরশাদ করেন,
ﻭَﺟَﺰَﺍﺀ ﺳَﻴِّﺌَﺔٍ ﺳَﻴِّﺌَﺔٌ ﻣِّﺜْﻠُﻬَﺎ ﻓَﻤَﻦْ ﻋَﻔَﺎ ﻭَﺃَﺻْﻠَﺢَ ﻓَﺄَﺟْﺮُﻩُ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺇِﻧَّﻪُ ﻟَﺎ ﻳُﺤِﺐُّ ﺍﻟﻈَّﺎﻟِﻤِﻴﻦَ
তরজমাঃ
আর মন্দের প্রতিফল তো অনুরূপ মন্দই। যে ক্ষমা করে ও আপোষ করে তার পুরস্কার আল্লাহর কাছে রয়েছে; নিশ্চয় তিনি অত্যাচারীদেরকে পছন্দ করেন নাই।
সূরা আশ-শুরা-৪০
উক্ত আয়াতের ব্যখ্যায় ইমাম ক্বুরতুবী উল্লেখ করেন।কেউ কেউ বলেনঃ
ﺣﺪﺛﻨﻲ ﻳﻌﻘﻮﺏ ﻗﺎﻝ : ﻗﺎﻝ ﻟﻲ ﺃﺑﻮ ﺑﺸﺮ : ﺳﻤﻌﺖ . ﺍﺑﻦ ﺃﺑﻲ ﻧﺠﻴﺢ ﻳﻘﻮﻝ ﻓﻲ ﻗﻮﻟﻪ : ( ﻭﺟﺰﺍﺀ ﺳﻴﺌﺔ ﺳﻴﺌﺔ ﻣﺜﻠﻬﺎ ) ﻗﺎﻝ : ﻳﻘﻮﻝ ﺃﺧﺰﺍﻩ ﺍﻟﻠﻪ ، ﻓﻴﻘﻮﻝ : ﺃﺧﺰﺍﻩ ﺍﻟﻠﻪ .
বদ দু'আর বিনিময়ে বদদুআ করা জায়েয।
ﺣﺪﺛﻨﺎ ﻣﺤﻤﺪ ﻗﺎﻝ : ﺛﻨﺎ ﺃﺣﻤﺪ ﻗﺎﻝ : ﺛﻨﺎ ﺃﺳﺒﺎﻁ ، ﻋﻦ ﺍﻟﺴﺪﻱ ، ﻓﻲ ﻗﻮﻟﻪ : (
ﻭﺟﺰﺍﺀ ﺳﻴﺌﺔ ﺳﻴﺌﺔ ﻣﺜﻠﻬﺎ ) ﻗﺎﻝ : ﺇﺫﺍ ﺷﺘﻤﻚ ﺑﺸﺘﻤﺔ ﻓﺎﺷﺘﻤﻪ ﻣﺜﻠﻬﺎ ﻣﻦ ﻏﻴﺮ ﺃﻥ ﺗﻌﺘﺪﻱ . [ ﺹ : 548 ]
যদি তোমাকে কেউ গালি দেয় তাহলে সীমালঙ্ঘন ব্যতীত তুমিও হুবহু সেই গালি দিতে পারবে।
{তাফসীরে ক্বুরতুবী-২৬/৪০আয়াতের ব্যখ্যা দ্রষ্টব্য।ভলিউম২১/পৃ৫৪৮}
আর দন্ডবিধি আসলে যেমন কেউ কাউকে জারজ সন্তান বলল, তাকে বিচারক হদ্দে ক্বাযাফ তথা যিনার অহেতুক তুহমতের শাস্তি প্রয়োগ করবেন।
{ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া-২/১৬২.রশিদিয়্যাহ}
এবং কেউ কারো প্রতি জুলুম-অত্যাচার করলে বিচারকের কাছে বিচারপ্রার্থী হওয়া বা আল্লাহর কাছে বিচারপ্রার্থী হওয়াই উচিৎ।
অযথা কাউকে অভিশাপ দেয়া কখনো উচিত হবে না।
অবশ্য জুলুম-নির্যাতন চুড়ান্ত পর্যায়ে চলে গেলে তার জুলুম-অত্যাচার বন্ধের জন্য আল্লাহর কাছে দু'আ করা যাবে।এবং তার জুলুম নির্যাতন একদিন বন্ধ হবেই।
যেমন হাদিসে এসেছে...
হযরত আবু মুসা রাযি থেকে বর্ণিত,তিনি বলেনঃ
ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﻣﻮﺳﻰ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻗﺎﻝ ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺇﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﻟﻴﻤﻠﻲ ﻟﻠﻈﺎﻟﻢ ﺣﺘﻰ ﺇﺫﺍ ﺃﺧﺬﻩ ﻟﻢ ﻳﻔﻠﺘﻪ
নিশ্চয় আল্লাহ তা'আলা জালিমদেরকে অবকাশ দিয়ে থাকেন। অবশেষে যখন তাকে ধরবেন তখন সে আর রেহাই পাবে না।
{সহীহ বুখারী-৪৪০৯}
তবে সর্বাবস্থায় অভিশাপ না দিয়ে ক্ষমা করাটাই নবীজী সাঃ এর শিক্ষা।
যেমনঃ নবীজী সা বলেনঃ
ﻓَﻘُﻠْﺖُ ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺃَﺧْﺒِﺮْﻧِﻲ ﺑِﻔَﻮَﺍﺿِﻞِ ﺍﻟْﺄَﻋْﻤَﺎﻝِ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻳَﺎ ﻋُﻘْﺒَﺔُ ﺻِﻞْ ﻣَﻦْ ﻗَﻄَﻌَﻚَ ﻭَﺃَﻋْﻂِ ﻣَﻦْ ﺣَﺮَﻣَﻚَ ﻭَﺃَﻋْﺮِﺽْ ﻋَﻤَّﻦْ ﻇَﻠَﻤَﻚَ
অনুবাদঃ হে উক্ববাহ!
যে তোমার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে, তুমি তার সাথে সম্পর্ক স্থাপন করো, যে তোমাকে বঞ্চিত করে, তুমি তাকে তুষ্ট করো, যে তোমার প্রতি জুলুম করে, তুমি তার সাথে উত্তম ব্যবহার (ক্ষমা) করো।
মুসনাদে আহমদ- ১৭৩৩৪ নং হাদীস।
লা'নত দেয়া কোনো কামিল ইমানদ্বারের সিফাত হতে পারেনা।বরং নবীর শিক্ষায় দীক্ষিত হয়ে
ক্ষমা করে দেয়াটাই একজন কামিল ইমনদারের সিফাত।
হযরত ইবনে মাসউদ রাযি বলেনঃ
ﻭﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﻣﺴﻌﻮﺩ - ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ - ﻗﺎﻝ : ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ : " ﻟﻴﺲ ﺍﻟﻤﺆﻣﻦ ﺑﺎﻟﻄﻌﺎﻥ ، ﻭﻻ ﺑﺎﻟﻠﻌﺎﻥ ، ﻭﻻ ﺍﻟﻔﺎﺣﺶ ، ﻭﻻ ﺍﻟﺒﺬﻱﺀ " ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ ، ﻭﺍﻟﺒﻴﻬﻘﻲ ﻓﻲ " ﺷﻌﺐ ﺍﻹﻳﻤﺎﻥ " . ﻭﻓﻲ ﺃﺧﺮﻯ ﻟﻪ : " ﻭﻻ ﺍﻟﻔﺎﺣﺶ ﺍﻟﺒﺬﻱﺀ " ، ﻭﻗﺎﻝ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ : ﻫﺬﺍ ﺣﺪﻳﺚ ﻏﺮﻳﺐ
ﺍﻟﻜﺘﺐ » ﻣﺮﻗﺎﺓ ﺍﻟﻤﻔﺎﺗﻴﺢ ﺷﺮﺡ ﻣﺸﻜﺎﺓ ﺍﻟﻤﺼﺎﺑﻴﺢ » ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻵﺩﺍﺏ » ﺑﺎﺏ ﺣﻔﻆ ﺍﻟﻠﺴﺎﻥ ﻭﺍﻟﻐﻴﺒﺔ ﻭﺍﻟﺸﺘﻢ
অনুবাদঃ
রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেনঃ
মু'মিন কখনো তিরস্কারকারী,অভিসম্পাদকারী,এবং কাজে ও কথায় অশ্লীল কথুক হয় না।
{মিরক্বাতুল মাফাতিহ-৪৮৪৭}
যাকে অভিশাপ দেয়া হয়েছে সে যদি তার কোনো কৃতকর্মের কারণে উক্ত অভিশাপের যোগ্য থাকে তাহলে অভিশাপ তার উপর পতিত হবে।নতুবা উক্ত অভিশাপ অভিসম্পাতকারীর দিকেই শেষ পর্যন্ত ফিরে আসবে।
যেমন এক হাদীসে এসেছে হযরত উম্মে দারদা রাযি বলেন আমি আবুদ্দারদা রাযি কে বলতে শুনেছি
ﻋﻦ ﺃﻡ ﺍﻟﺪﺭﺩﺍﺀ ﻗﺎﻟﺖ ﺳﻤﻌﺖ ﺃﺑﺎ ﺍﻟﺪﺭﺩﺍﺀ
ﻳﻘﻮﻝ ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺇﻥ ﺍﻟﻌﺒﺪ ﺇﺫﺍ ﻟﻌﻦ ﺷﻴﺌﺎ ﺻﻌﺪﺕ ﺍﻟﻠﻌﻨﺔ ﺇﻟﻰ ﺍﻟﺴﻤﺎﺀ ﻓﺘﻐﻠﻖ ﺃﺑﻮﺍﺏ ﺍﻟﺴﻤﺎﺀ ﺩﻭﻧﻬﺎ ﺛﻢ ﺗﻬﺒﻂ ﺇﻟﻰ ﺍﻷﺭﺽ ﻓﺘﻐﻠﻖ ﺃﺑﻮﺍﺑﻬﺎ ﺩﻭﻧﻬﺎ ﺛﻢ ﺗﺄﺧﺬ ﻳﻤﻴﻨﺎ ﻭﺷﻤﺎﻻ ﻓﺈﺫﺍ ﻟﻢ ﺗﺠﺪ ﻣﺴﺎﻏﺎ ﺭﺟﻌﺖ ﺇﻟﻰ ﺍﻟﺬﻱ ﻟﻌﻦ ﻓﺈﻥ ﻛﺎﻥ ﻟﺬﻟﻚ ﺃﻫﻼ ﻭﺇﻻ ﺭﺟﻌﺖ ﺇﻟﻰ ﻗﺎﺋﻠﻬﺎ
ﺍﻟﻜﺘﺐ » ﺳﻨﻦ ﺃﺑﻲ ﺩﺍﻭﺩ » ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻷﺩﺏ » ﺑﺎﺏ ﻓﻲ ﺍﻟﻠﻌﻦ
অনুবাদঃ
রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যখন কোন বান্দা কোন ব্যক্তিকে অভিশাপ দেয়,তখন অভিশাপ আকাশে চলে যায়, আকাশের দরজাগুলো তার জন্য বন্ধ হয়ে যায়, অতপর তা জমিনের দিকে নেমে আসে, তখন জমিনের দরজাগুলোও তার থেকে বন্ধ করে দয়ো হয়, অতপর তা ডানে বাঁয়ে ঘুরতে থাকে, যখন কোন উপায় না পায়, তখন যাকে অভিসম্পাত করা হয়েছে, সে যদি এর যোগ্য হয় তাহলে তার প্রতি পতিত হয়, অন্যথায় অভিশাপকারীর দিকেই ধাবিত হয়।
{সুনানে আবু-দাউদ-৪৯০৫}
সু-প্রিয় পাঠকবর্গ!
একজন কামিল ঈমানদারের জন্য উচিৎ নবীজী সাঃ এর শিক্ষায় দীক্ষিত হয়ে ক্ষমার গুণ অর্জন করা।অভিশাপ দেয়াকে চিরতরে নিজের কাছ থেকে দূর করে দেয়া।এবং কবি জসিমুদ্দিনের সেই কবিতার দিকে একটু লক্ষ্য করা যা তিনি নবীজী সাঃ এর একটি হাদীস থেকে চয়ন করে লিখেছিলেন,
আমার এ ঘর বাঙ্গিবে যে আমি বাধি তার ঘর।
যেমন রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেনঃ
ﺻﻞ ﻣﻦ ﻗﻄﻌﻚ ﺃﻋﻂ ﻣﻦ ﺣﺮﻣﻚ ﺍﻋﻒ ﻋﻤﻦ ﻇﻠﻤﻚ
অনুবাদঃ
যে তোমার সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করে তুমি তার সাথে সম্পর্কস্থাপন করো।যে তোমাকে মাহরুম করে তুমি তাকে দান করো।যে তোমার উপর জুলুম করে তুমি তাকে ক্ষমা করে দাও।
{শুআবুল ঈমান-বায়হাক্বী-7599}
অহেতুক কাউকে বদ দুআ করা জায়েয হবে না।
চার মাযহাব সম্বলীত সর্ব বৃহৎ ফেক্বাহী গ্রন্থ
"আল-মাওসু'আতুল ফেক্বহিয়্যায় " রয়েছে,
لا خلاف بين الفقهاء في أن الدعاء على المسلم المصون باللعن حرام. أما المسلم الفاسق المعين فقد اختلفت فيه أقوال الفقهاء: فالمذهب عند الحنفية والشافعية وهو المذهب عند الحنابلة وهو قول ابن العربي من المالكية، أنه لا يجوز لعنه
নিরপরাধ কোনো মুসলমানকে অহেতুক বদদুআ করা হারাম।এবং গুনাহগার নির্দিষ্ট কোনো মুসলমানকে লা'নত করাও চার মাযহাব মতে হারাম।{৩৫/৩৭৩}
{ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া-২৪/২৫২}