আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
374 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (42 points)
আসসালামু আ'লাইকুম ওয়া রহমাতুল্ল-হ্।

শাইখ,আমি একজন আইওএমের স্টুডেন্ট পাশাপাশি একজন দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী।আমার সামনে মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা আসন্ন।আমি মুসলিম উম্মাহর কল্যাণের নিয়্যাতে একজন মহিলা ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করি।এক্ষেত্রে আমার প্রচুর  পড়াশোনার দরকার।
পুরোদিনজুড়ে আমার অন্যান্য ব্যস্ততা অনেকটা বেশি থাকে।এমতাবস্থায় একইসাথে আমার মাদ্রাসার ইলম অর্জন এবং একাডেমিক পড়াশোনা চালানোর জন্য বহুল সময়ের দরকার যা স্বাভাবিক জীবনাচরণের মাধ্যমে সম্ভব হচ্ছে না।আমার মাদ্রাসার পড়াগুলো এবং একাডেমিক পড়াগুলো জমে যাচ্ছে।প্রতিদিনের পড়া প্রতিদিন শেষ হচ্ছে না।

তাছাড়া আমার পিতা-মাতা দ্বীনদার নন এবং আমি মাদ্রাসায় লুকিয়ে পড়াশোনা করছি।আমি দ্রুত এশার পর ঘুমাতে চাইলে তাতে বাধা প্রদান করেন এবং আমার প্রতি রাগান্বিত হয়ে বকাবকি করেন।আমি এশার পর দ্রুত ঘুমাতে চাইলেও পারছি না আবার এদিকে আমার পড়াগুলোও দিনদিন জমে যাচ্ছে।

1.এক্ষেত্রে আমি কি
এশার নামাযের আগে ঘুমাতে পারি যেন কিছুটা রিফ্রেশ হয়ে মাদ্রাসার দারসে অংশ নিতে পারি?

2.আমরা জানি,সুন্নাহ্ হচ্ছে এশা আদায়ের আগে না ঘুমানো এবং এশার পর দ্রুত ঘুমিয়ে যাওয়া।রাতে কোলাহল এবং অন্যান্য কাজের ব্যস্ততা কম থাকে পাশাপাশি দিনের বেলায় পড়াশোনার ক্ষেত্রে আমি যেটুকু সময় পাই তাতে আমি আমার পুরোটা পড়া শেষ করতে পারি না সেক্ষেত্রে আমি কি এশার পূর্বে কিছুটা সময় ঘুমানোর পর সারারাত জেগে পড়াশোনা করতে পারি?এতে কি আমার ইমান,আ'মলে কোনো ক্ষতিকর প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে(যেহেতু সুন্নাহ্ পদ্ধতি অবলম্বন করা হচ্ছে না)?

3.সারারাত রাত্রি জাগরণের পর আমি কি ইশরাকের সময়ে কিছুসময়ের জন্য ঘুমাতে পারি?

শাইখ,উক্ত প্রশ্নটি আমার মাধ্যমে একজন বোন করেছেন।

1 Answer

0 votes
by (63,240 points)

 

بسم الله الرحمن الرحيم

জবাব,

 ঈশার নামাজের পর দুনিয়াবি (অনার্থক) কাজ বা (অনার্থক) কথাবার্তা বলা মাকরুহ।

তবে জরুরী কাজ বা কথা হলে কোনো সমস্যা নেই।    (ফাতাওয়ায়ে শামী (১/৩৪১)

 حَدَّثَنَا جَرِيرٌ ، عَنْ مَنْصُورٍ ، عَنْ خَيْثَمَةَ ، عَنْ رَجُلٍ مِنْ قَوْمِهِ ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " لَا سَمَرَ بَعْدَ الصَّلَاةِ

অর্থাৎ ঈশার নামাজের পর কথা বলা যাবেনা (মুসনাদ আহমদ হাদীস নং ৩৬০৩)

,হজরত আয়েশা (রা.) সূত্রে বর্ণিত, আমি রাসুল (সা.)-কে কখনো এশার আগে ঘুমাতে এবং এশার পর গল্পগুজব করতে দেখিনি। এশার পর হয়তো জিকিরে মশগুল থাকতেন, এতে তো কেবল লাভই, নচেৎ ঘুমিয়ে পড়তেন, এর দ্বারা সব অপ্রয়োজনীয় কাজ থেকে মুক্ত থাকা যায়। আয়েশা (রা.) বলেন, তিন ধরনের মানুষের জন্য রাত জাগার অনুমতি রয়েছে : বিয়ের রাতে নবদম্পতি, মুসাফির ও নফল নামাজ আদায়কারী। (মুসনাদে আবি ইয়ালা, হা. : ৪৮৭৯)

 

হাদিস শরীফে বর্ণিত হয়েছেঃ নবী করীম (সাঃ) বলেছেন এশার নামাজের পূর্বে ঘুমানো এবং এশার নামাজের পর অপ্রয়োজনীয় অহেতুক গল্প গুজব করতে অপছন্দ করতেন (সহিহ বুখারি হাদিস নাম্বারঃ ৫১৪)

অধিক রাত জাগরণ মানুষকে চিন্তা-চেতনায় মননে ও শরীরে অসুস্থ করে তোলে। জীবন থেকে কেড়ে নেয় কর্মোদ্যোগী শক্তি। আল্লাহতায়ালা মানুষের সুন্দর জীবন যাপন, কর্ম ও চিন্তায় বেড়ে ওঠার জন্য রাতে ঘুমোতে বলেছেন। প্রিয়নবী মুহাম্মদ (সা.) নির্দেশ করেছেন এশার নামাজ পড়ে রাতের প্রথম ভাগে ঘুমানোর জন্য। ‘রাসুল (সা.) এশার নামাজ এক-তৃতীয়াংশ রাত পরিমাণ দেরি করে পড়া পছন্দ করতেন। আর এশার আগে ঘুমানো এবং এশার পর না ঘুমিয়ে গল্পগুজব করা অপছন্দ করতেন।’ ( সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৯৯)

 প্রয়োজনের তাগিদে রাত জাগার অনুমোদন করেছে ইসলাম। তবে সেক্ষেত্রে ইসলামের নিয়মকে উপেক্ষা করা যাবে না। রাত জাগা যেন ফজর নামাজ কাজা হওয়ার কারণ না হয়ে দাঁড়ায়। রাত জাগলে অনেক সময় ফজর নামাজ কাজা হয়ে যায়। কেউ জাগ্রত হতে পারলেও নামাজে মন দেওয়া কষ্টকর হয়ে পড়ে। শরীর দুর্বল হয়ে আসে। ঘুমের অভাবে মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। ব্যক্তি, পারিবারিক ও জনজীবনে অশান্তি দেখা দেয়। কাজকর্মে খেই হারিয়ে ফেলে। চিন্তার দৈন্যতা তৈরি হয়।

তাই মানুষের কল্যাণ রয়েছে রাতে ঘুমানোর মধ্যে। তাড়াতাড়ি ঘুমাতে পারলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। শরীরের ওজন ঠিক ও নিয়ন্ত্রণে থাকে। কাজকর্মে উদ্যমতা ও সৃষ্টিশীলতা আনয়নে সহায়তা করে। মন-মস্তিষ্ক ভালো থাকে। চেহারার সৌন্দর্য বাড়ে।

 

অন্য আরেকটি হাদীসে রাসূল (সাঃ) বলেছেনতোমরা এশার নামাজের পর এক তৃতীয়াংশ রাত পরিমাণ সময়ের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ো এবং ইশার আগে ঘুমিও না এবং এশার পর না ঘুমিয়ে অহেতুক গল্পগুজব করোনা।(সহিহ বুখারি হাদিস নাম্বারঃ ৫৯৯)

আরো বিস্তারিত দেখুন:https://ifatwa.info/2806/

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!

১.এশার নামাযের আগে আপনি চাইলে ঘুমাতে পারবেন, এটা জায়েয আছে এতে কোন গুনাহ হবে না । তবে না ঘুমানো উত্তম।

২. প্রয়োজনের তাগিদে রাত জাগার অনুমোদন করেছে ইসলাম। তবে সেক্ষেত্রে ইসলামের নিয়মকে উপেক্ষা করা যাবে না। রাত জাগা যেন ফজর নামাজ কাজা হওয়ার কারণ না হয়ে দাঁড়ায়।সারা রাত্রি জাগ্রত না থেকে কিছু সময় ঘুমালে শরীর ও মন উভয়টা ভালো থাকে এবং আপনি দিনের বেলায় পড়ার পরিমানটা আর একটু বৃদ্ধি করে রাত্রে ঘুমানোর চেষ্টা করবেন।এটাই আপনার জন্য শ্রেয়।

৩.জ্বী ঘুমাতে পারবেন। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...