আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

–1 vote
236 views
in হালাল ও হারাম (Halal & Haram) by (5 points)
আসসালামু আলাইকুম উস্তাদ। আমি একটি বিমা কম্পানিতে আইটি পদে এপ্লাই করেছিলাম। ।জব এর জন্য এটা আমার প্রথম এপ্লিকেশন। ফেমিলি থেকে বিমা কম্পানি সম্পর্কে আগে থেকে জানলেও তারা আমাকে জানায় নি,এর কাজ সম্পর্কে।  আমি আগে জানতাম শুধু ব্যাংক এ সুদ এর সাথে জড়িত, তাই না জেনে এপ্লাই করে ফেলি।আমি এখন  জানতে পেরেছি।কিন্তু বাসা থেকে সবাই বলছে, আইটি পোস্ট এর কাজ তো টেকনিকেল,এটা সুদের সাথে কোনো সম্পর্ক নাই। আমি তো কাজের বিনিময়ে বেতন পাবো।কিন্তু আমি নিশ্চিত  হতে পারছিনা।জব করতে হলে হালাল উপায়ে করবো না হলে করবো না। তাই আমি জানতে চাচ্ছিলাম বিমা কম্পানিতে তে আইটি পদে জব করা কি জায়েজ হবে?একটু বুঝিয়ে বলবেন উস্তাদ যাতে করে আমি পরিবার কে বুঝাতে পারি।জাজাকাল্লাহ খাইর।

1 Answer

0 votes
by (58,830 points)
edited by

 

بسم الله الرحمن الرحيم

জবাব,

বীমা সম্পর্কে কয়েকটি ফাতাওয়া গ্রন্থের ভাষ্য নিম্নে তুলে ধরা হলো:

ফাতাওয়ায়ে ইসলামিয়ায় বর্ণিত রয়েছে,

يجوز للانسان أن يساهم في هذه الشركات اذا كانت لا تتعامل بالربا  فان كان تعاملها بالربا  فلايجوز  وذاك لثبوت تحريم التعامل بالربا في الكتاب و السنة و الاجماع وكذالك لايجوز للانسان أن يساهم في شركات التأمين التجاري لأن عقود التأمين مشتملة علي الغرر والجهالة والربا والعقود المشتملة علي الغرر والجهالة والربا محرمة في الشريعة الاسلامية،     ﴿الفتاوي الاسلامية - ٢/٣٩٢ ﴾

অর্থঃ-কোন ব্যক্তির জন্যে ব্যাংক ইত্যাদিতে অংশগ্রহণ করা তখনি জায়েয হবে যখন তা সুদ মুক্ত হবে। এটা এজন্যই যেহেতু সুদের হারাম হওয়া কুরআন সুন্নাহ ও ইজমায়ে উম্মত দ্বারা সাব্যস্ত। এমনিভাবে মানুষের জন্যে কমার্শিয়াল বিমায় অংশগ্রহণ করা জায়েয নেই। যেহেতু কমার্শিয়াল বিমার চুক্তি ধোঁকা অস্পষ্টতা ও সুদের অন্তর্ভুক্ত, বিধায় তা হারাম।(ফাতাওয়া ইসলামিয়া, ২/৩৯২)

মুফতিয়ে আযম পাকিস্তান আল্লামা শফী রাহিমাহুল্লাহ বলেনঃ-একথা তো সুস্পষ্ট যে, শুধুমাত্র নাম পরিবর্তন করার দ্বারা কোন লেনদেনের বাস্তবতা পরিবর্তন হয় না। বিমা কোম্পানি থেকে যে লাভ প্রদান করা হয় তা নিঃসন্দেহে সুদের অন্তর্ভুক্ত।(জাওয়াহিরুল ফিকহ - ২/১৮১)

বুহুস ফি ক্বাযায়া ফিকহিয়্যাহ মুআছারা তে বর্ণিত রয়েছে,

اما بعد! فقد اتفق معظم العلماء المعاصرين والمجامع والندوات الفقهية علي حرمة التأمين التجاري التقليدي لما يشمل عليه من الغرر والقمار والربا

﴿بحوث في قضايا فقهية معاصرة - ٢/١٨٧﴾

অর্থঃ- বর্তমান যুগের আলেমদের বড় অংশ ফিকহী বোর্ড ও সেমিনারে কমার্শিয়াল বিমা হারাম হওয়ার উপর একমত পোষণ করেছেন। যেহেতু এ জাতীয় বিমার মধ্যে ধোঁকাবাজি, জুয়া ও সুদের উপস্থিতি বিদ্যমান থাকে।(বুহুস ফি ক্বাযায়া ফিকহিয়্যাহ মুআছার, ২/১৮৭)

ফাতাওয়ায়ে উসমানী তে বর্ণিত রয়েছে,

ইন্স্যুরেন্স (বিমার) বর্তমান প্রচলিত যত প্রকার রয়েছে সবগুলো সুদ ও জুয়ার অন্তর্ভুক্ত, বিধায় তা হারাম। ... কিছু আলেমের বৈধ হওয়ার মত থাকলেও সে মতটি খুবই দুর্বল ও ক্ষীণ। তাদের দলীলাদিও অনেক দুর্বল ও কমজোর। 'মাজমাউল ফিকহ ইসলামি' জেদ্দাতে পুরো দুনিয়ার ইসলামি রাষ্ট্রের আলেমগণ একত্রিত হয়ে এ ব্যাপারে সুদীর্ঘ আলোচনা পর্যালোচনা করেছেন। অবশেষে বর্তমান প্রচলিত ইন্স্যুরেন্স হারাম হওয়ার উপর ফাতাওয়া দেওয়া হয় এবং কতক আলেমের বৈধ হওয়ার মতকে বাতিল সাব্যস্ত করা হয়। সেই সেমিনারে ১৪৫ টি ইসলামি রাষ্ট্র থেকে প্রায় ১৫০ জন আলেম অংশগ্রহণ করেন।(ফাতাওয়ায়ে উসমানী, ৩/৩২৮)

ফাতাওয়ায়ে হাক্কানিয়াতে বর্ণিত রয়েছে,

(পূর্বে পদ্ধতি আলোচনার পর) যদি জীবন বিমার পদ্ধতি এমন হয়ে থাকে যেমন আমাদের ধারণা, তাহলে বিমা নিম্নলিখিত কারণে অবৈধ ও হারাম।

১. বিমা চুক্তিতে সুদের অস্তিত্ব রয়েছে।২. বিমার চুক্তি জুয়ার অন্তর্ভুক্ত।৩. বিমাকারীর মৃত্যুর পর জমাকৃত টাকার মালিক হয় নমিনী হিসেবে যার নাম উল্লেখিত রয়েছে সে। অথচ ইসলামি ফারায়েয অনুযায়ী উক্ত টাকায় সমস্ত ওয়ারিসের নির্দিষ্ট অংশ রয়েছে।৪. বিমা কোম্পানিতে যুক্ত হওয়ার দ্বারা تعاون علی الاثم والعدوان অর্থাৎ গুনাহের কাজে সহায়তা করা হয়। অথচ কুরআন মাজীদে تعاون علی الاثم والعدوان গুনাহের কাজে সহায়তা করাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।(ফাতাওয়ায়ে হাক্কানিয়া, ৬/২২০)

বীমা সুদ এবং জোয়ার উপর নির্ভরশীল হওয়ার ধরুণ বর্তমানে প্রচলিত সকল প্রকার বীমাই হারাম।তবে সরকারের পক্ষ্য থেকে যেই সমস্ত বীমার করার জন্য পাবন্দী রয়েছে,যেমন মটর বীমা ইত্যাদি।সেই সমস্ত বীমা ঐ শর্তে করা যাবে যে,বীমা কম্পানি থেকে পরবর্তীতে শুধুমাত্র জমাকৃত টাকাই নিতে হবে।অতিরিক্ত কোনো টাকা বা সুবিধা গ্রহণ করা যাবে না।নিলেও তা সদকাহ করতে হবে।(ফাতাওয়ায়ে উসমানি-৩/৩১৪)

আরো বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন: https://www.ifatwa.info/1204

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী বোন!

লাইফ ইন্সুরেন্সে শরীয়ত সুদ, জুয়া ও ধোকা সবই বিদ্যমান। আর এসবকিছুই ইসলামে হারাম। এসব প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা বা এজেন্ট হওয়ার মানে হল হারাম ও জঘন্যতম গুনাহের কাজে সরাসরি অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা করা।আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-তোমরা সৎকর্ম ও তাকওয়ার কাজে পরস্পরকে সাহায্য কর, পাপ কাজে ও জুলুমে একে অপরকে সাহায্য করো না। -(সূরা মায়েদা (৫) : ৩)

সুতরাং কোনো মুসলমানের জন্য এ ধরনের কোম্পানিতে চাকরি করা বা এজেন্ট হওয়া জায়েয নয়। এখান থেকে যে কমিশন বা বেতন দেওয়া হয় তা-ও বৈধ নয়। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)
by
জাজাকাল্লাহ খাইর উস্তাদ। 

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...