ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
(০১)
তদরূপ স্বামীর উপর স্ত্রীরও কিছু অধিকার ও হক্ব রয়েছে যেমন, বিয়ের পর স্ত্রীর ব্যক্তিগত অধিকার রক্ষা করে স্ত্রীকে একটি বাসস্থান ও খাদ্য এবং বস্র দান করা।এটা স্বামীর উপর স্ত্রীর অধিকার ওহক্ব এবং শরীয়ত কর্তৃক ওয়াজিব। এ সম্পর্কে কোরআনের ঘোষনা হলঃ
ﻭَﻋَﺎﺷِﺮُﻭﻫُﻦَّ ﺑِﺎﻟْﻤَﻌْﺮُﻭﻑ
নারীদের সাথে সদ্ভাবে জীবন-যাপন কর। (সূরা নিসা-১৯)
হাদীস শরীফে এসেছে-
عَنْ سُلَيْمَانَ بْنِ عَمْرِو بْنِ الأَحْوَصِ، قَالَ حَدَّثَنِي أَبِي أَنَّهُ، شَهِدَ حَجَّةَ الْوَدَاعِ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَحَمِدَ اللَّهَ وَأَثْنَى عَلَيْهِ وَذَكَّرَ وَوَعَظَ فَذَكَرَ فِي الْحَدِيثِ قِصَّةً فَقَالَ " أَلاَ وَاسْتَوْصُوا بِالنِّسَاءِ خَيْرًا… أَلاَ وَحَقُّهُنَّ عَلَيْكُمْ أَنْ تُحْسِنُوا إِلَيْهِنَّ فِي كِسْوَتِهِنَّ وَطَعَامِهِنَّ " .
সুলাইমান ইবনু আমর ইবনুল আহওয়াস (রহঃ) হতে তার পিতার সূত্র থেকে বর্ণিতঃ
বিদায় হজ্জের সময় তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে ছিলেন। তিনি আল্লাহ তা'আলার প্রশংসা ও গুণগান করলেন এবং ওয়াজ-নাসীহাত করলেন। এ হাদীসের মধ্যে বর্ণনাকারী একটি ঘটনা বর্ণনা করে বলেন, তিনি (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ স্ত্রীদের সাথে ভালো আচরণের উপদেশ নাও। ... জেনে রাখ! তোমাদের প্রতি তাদের অধিকার এই যে, তোমরা তাদের উত্তম পোশাক-পরিচ্ছদ ও ভরণপোষণের ব্যবস্থা করবে। (সুনানে তিরমিযী ১১৬৩)
ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়াতে রয়েছে-
تجب السكني لها عليه في بيت خال
মর্থার্থ: স্ত্রীর জন্য আলাদা ঘরের ব্যবস্থা করা স্বামীর উপর আবশ্যক। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়াত, ১/৬০৪)
স্ত্রীর সাথে উত্তম ব্যবহার করা।
স্ত্রীর সঙ্গে প্রয়োজনে একান্তে বসা ও খোশগল্প করা।
অবসরে স্ত্রীর সঙ্গে একান্তে বসে কিছু গল্পগুজব করা, তার মনের কথা জানা-বোঝা, তার কোনো চাহিদা থাকলে তা জেনে নিয়ে পূরণ করা স্বামীর জন্য জরুরি।
প্রয়োজন মাফিক স্ত্রীকে সময় দেয়া।
বাড়িতে প্রবেশ করে স্ত্রীকে সালাম দেওয়া।
স্ত্রীর প্রতি উত্তম ধারণা রাখা।
স্ত্রীর প্রয়োজনীয় চাহিদা যথাসম্ভব পূরন করা।
স্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করা ও তাকে গুরুত্ব দেওয়া।
স্ত্রীকে তার পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ দেওয়া
স্ত্রীকে তার মা-বাবা, ভাই-বোন ও নিকটাত্মীয়দের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ দেওয়া উচিত। আর এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনে নিজে সঙ্গে নিয়ে যাওয়া বা মাহরাম ব্যক্তিকে সঙ্গে দিয়ে পাঠাতে হবে। ইফকের ঘটনাকালে আয়েশা (রা.) অসুস্থ হলে তিনি পিতার বাড়িতে গমনের জন্য রাসুল (সা.)-এর কাছে অনুমতি চান। রাসুল (সা.) তাঁকে অনুমতি দিলে তিনি পিতৃগৃহে চলে যান। (বুখারি, হাদিস : ২৬৬১
স্ত্রী তার বাবা মার সাথে কতদিন পরপর সাক্ষাৎ করতে পারবে,এ সংক্রান্ত বিস্তারিত জানুনঃ-
স্ত্রীর দ্বীন পালনে পূর্ণ সচেষ্ট হওয়া।
নারীদের সাথে সদ্ভাবে ব্যবহার করতে হলে তাদেরকে নিয়মমাফিক অন্ন-বস্র-বাসস্থান দিতে হবে,স্ত্রীর চিকিৎসা করানো স্বামীর উপর ওয়াজিব নয় এবং ঘরের রান্নাবান্না স্ত্রীর উপর ওয়াজিব নয়।তবে উভয়টা একটি ভালো ও উত্তম এবং প্রশংসনীয় কাজ ।
স্ত্রীর বাসস্থান কি রকম হবে?
এ সম্পর্কে ফুকাহায়ে কিরামদের নিম্নোক্ত কিছু আলোচনা লক্ষণীয়.....
আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী রহ উনার চিরাচরিত নিয়মানুযায়ী উক্ত আলোচনার বিস্তারিত ও গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা করেন,যা নিচে পৃথক পৃথকভাবে উল্লেখ করা হল,
قَوْلُهُ خَالٍ عَنْ أَهْلِهِ إلَخْ) ؛ لِأَنَّهَا تَتَضَرَّرُ بِمُشَارَكَةِ غَيْرِهَا فِيهِ؛؛ لِأَنَّهَا لَا تَأْمَنُ عَلَى مَتَاعِهَا وَيَمْنَعُهَاذَلِكَ مِنْ الْمُعَاشَرَةِ مَعَ زَوْجِهَا وَمِنْ الِاسْتِمْتَاعِ إلَّا أَنْ تَخْتَارَ ذَلِكَ؛ لِأَنَّهَا رَضِيَتْ بِانْتِقَاصِ حَقِّهَا هِدَايَةٌ )
স্ত্রীকে এমন একটি বাসস্থান দান করা স্বামীর জন্য ওয়াজিব,যা স্বামীর পরিবার থেকে খালি থাকবে,কেননা সে অন্যর উপস্থিতির ধরুণ কষ্ট উপভোগ করবে,এবং তার মাল সামানা পুরোপুরি সংরক্ষিত থাকবে না।তৃতীয় কারো উপস্থিতি স্বামী-স্ত্রীর পারিবারিক জীবন ও একান্ত সময় অতিবাহিত করতে ব্যাঘাত সৃষ্টি করবে। এ জন্য একটি পৃথক বাসস্থান স্ত্রীর মৌলিক অধিকার।তবে যদি সে তার নিজ অধিকার বিসর্জন দিতে রাজি হয় যায় তাহলে তার জন্য অনুমিত রয়েছে (যদি এক্ষেত্রে গোনাহের কোনো সম্ভাবনা না থাকে)
সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
স্ত্রীকে অন্ন বস্র ও বাসস্থান দান করা স্বামীর উপর ওয়াজিব। এবং এসব গুলো স্বামীর আর্থিক অবস্থার উপর নির্ভর করবে। স্বামীর আর্থিক অবস্থা বিবেচনায় মধ্যম ধরণের অন্ন বস্র ও বাসস্থান স্বামীর উপর ওয়াজিব হবে। প্রয়োজনে এ বিষয়টা দুই জন ন্যায় পরায়ন ব্যক্তি বা শরয়ী কোর্ট নির্ধারণ করে দিবে। চিকিৎসা করানো সুন্নত বিষয়, ওয়াজিব বা ফরয কোনো বিষয় নয়। সেজন্য চিকিৎসার বিষয়টা শরীয়ত স্বামীর উপর ওয়াজিব করে দেয়নি। কেননা অসুস্থ ব্যক্তিকে শরীয়তও চিকিৎসা করানো ওয়াজিব বলছেনা। স্ত্রী সে নিজের মহর থেকে প্রাপ্ত টাকা দ্বারা চিকিৎসা করাবে, বা বাবার কাছ থেকে প্রাপ্ত ওয়ারাছত দ্বারা সে চিকিৎসা করাবে।
পর্দার পরিবেশ নিশ্চিত করার সম্পূর্ণ দায়িত্ব স্বামীর, নয়তো এজন্য তাকে কঠোর শাস্তির সম্মুখিন হতে হবে।
,
(০২)
সু-প্রিয় পাঠকবর্গ!
স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে নাম ধরে ডাকা, সম্মোধন করা উরফ তথা পরিবেশ পরিস্থিতির উপর নির্ভরশীল।যেখানে নাম ধরে ডাকাকে অসম্মান জনক মনে করা হয় না সেখানে নাম ধরে ডাকাতে কোনো সমস্যা নেই।
যেমন: বুখারীতে বর্ণিত হয়েছে, যখন আল্লাহর রাসূল ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম তার স্ত্রী হাজেরা এবং শিশু পুত্র ইসমাইল আঃ কে মক্কার জনমানবহীন প্রান্তরে রেখে চলে যাচ্ছিলেন তখন পেছন থেকে তার স্ত্রী তাকে ডাকলেন এভাবে:
يَا إِبْرَاهِيمُ أَيْنَ تَذْهَبُ وَتَتْرُكُنَا بِهَذَا الْوَادِي الَّذِي لَيْسَ فِيهِ إِنْسٌ وَلَا شَيْءٌ ؟
“হে ইব্রাহিম, তুমি আমাদেরকে এমন জনমানবহীন উপত্যকায় রেখে কোথায় যাচ্ছ?” (সহিহ বুখারী)
তবে আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশ সহ অনেক স্থানেই নাম ধরে ডাকাতে অসম্মান ভাব পরিলক্ষণ করা যায়,তাছাড়া স্বামীর ফযিলত বা অধিকার ও সম্মাণটা একটু বেশীই,এজন্য ফুকাহায়ে কেরামগণ মাকরুহে তানযিহি বা শরয়ী অপছন্দ মনে করেন।
আরো জানুনঃ