স্ত্রীর সাথে সহবাস করাও একটি ইবাদত । যেমন হাদীসে বর্ণিত হয়েছে-
হযরত আবু যর রাযি থেকে বর্ণিত,
عَنْ أَبِي، ذَرٍّ أَنَّ نَاسًا، مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالُوا لِلنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم يَا رَسُولَ اللَّهِ ذَهَبَ أَهْلُ الدُّثُورِ بِالأُجُورِ يُصَلُّونَ كَمَا نُصَلِّي وَيَصُومُونَ كَمَا نَصُومُ وَيَتَصَدَّقُونَ بِفُضُولِ أَمْوَالِهِمْ . قَالَ " أَوَلَيْسَ قَدْ جَعَلَ اللَّهُ لَكُمْ مَا تَصَّدَّقُونَ إِنَّ بِكُلِّ تَسْبِيحَةٍ صَدَقَةً وَكُلِّ تَكْبِيرَةٍ صَدَقَةٌ وَكُلِّ تَحْمِيدَةٍ صَدَقَةٌ وَكُلِّ تَهْلِيلَةٍ صَدَقَةٌ وَأَمْرٌ بِالْمَعْرُوفِ صَدَقَةٌ وَنَهْىٌ عَنْ مُنْكَرٍ صَدَقَةٌ وَفِي بُضْعِ أَحَدِكُمْ صَدَقَةٌ " . قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ أَيَأْتِي أَحَدُنَا شَهْوَتَهُ وَيَكُونُ لَهُ فِيهَا أَجْرٌ قَالَ " أَرَأَيْتُمْ لَوْ وَضَعَهَا فِي حَرَامٍ أَكَانَ عَلَيْهِ فِيهَا وِزْرٌ فَكَذَلِكَ إِذَا وَضَعَهَا فِي الْحَلاَلِ كَانَ لَهُ أَجْرٌ " .
কিছু সাহাবা বললেন, হে আল্লাহর রসূল! ধনীরাই তো বেশী নেকীর অধিকারী হয়ে গেল। তারা নামায পড়ছে যেমন আমরা নামায পড়ছি, তারা রোযা রাখছে যেমন আমরা রাখছি এবং (আমাদের চেয়ে তারা অতিরিক্ত কাজ এই করছে যে,) নিজেদের প্রয়োজন-অতিরিক্ত মাল থেকে তারা সাদকাহ করছে। তিনি বললেন, আল্লাহ কি তোমাদের জন্য সাদকাহ করার মত জিনিস দান করেননি? নিঃসন্দেহে প্রত্যেক তাসবীহ সাদকাহ, প্রত্যেক তাকবীর সাদকাহ, প্রত্যেক তাহলীল সাদকাহ, ভাল কাজের নির্দেশ দেওয়া সাদকাহ ও মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করা সাদকাহ এবং তোমাদের স্ত্রী-মিলন করাও সাদকাহ।
সাহাবাগণ বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমাদের কেউ স্ত্রী-মিলন করে নিজের যৌনক্ষুধা নিবারণ করে, তবে এতেও কি তার পুণ্য হবে? তিনি বললেন, কী রায় তোমাদের, যদি কেউ অবৈধভাবে যৌন-মিলন করে, তাহলে কি তার পাপ হবে? (নিশ্চয় হবে।) অনুরূপ সে যদি বৈধভাবে (স্ত্রী-মিলন করে) নিজের কামক্ষুধা নিবারণ করে, তাহলে তাতে তার পুণ্য হবে। (সহীহ মুসলিম ২৩৭৬)
স্ত্রী সহবাসের সময় যেসব বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখা উচিতঃ-
★নিয়ত খালেস করে নেয়া। অর্থাৎ, কাজটির মাধ্যমে নিজেকে হারাম পথ থেকে বিরত রাখার, মুসলিম উম্মাহর সংখ্যা বৃদ্ধি করার এবং সাওয়াব অর্জনের নিয়ত করা।
★সহবাসের সময় ফোরপ্লে তথা চুম্বন, আলিঙ্গন, মর্দন ইত্যাদি করা। হাদিসে এসেছে,
كان رسول الله ﷺ يُلاعبُ أهله ، ويُقَبلُها
রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে আলিঙ্গন, চুম্বন ইত্যাদি করতেন। (যাদুল মা’আদ ৪/২৫৩)
★ সহবাসের শুরু করার সময় দোয়া পড়া–
بِسْمِ اللّهِ اللّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ وَ جَنِّبِ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا
‘আল্লাহর নামে শুরু করছি, হে আল্লাহ! আমাদেরকে তুমি শয়তান থেকে দূরে রাখ এবং আমাদেরকে তুমি যা দান করবে (মিলনের ফলে যে সন্তান দান করবে) তা থেকে শয়তানকে দূরে রাখ।’
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, এরপরে যদি তাদের দু’জনের মাঝে কিছু ফল দেয়া হয় অথবা বাচ্চা পয়দা হয়, তাকে শয়তান কখনো ক্ষতি করতে পারবে না। (বুখারী ৪৭৮৭)
★যেকোনো আসনে স্ত্রী সহবাসের অনুমতি ইসলামে আছে। মুজাহিদ রহ. نِسَاؤُكُمْ حَرْثٌ لَّكُمْ فَأْتُوا حَرْثَكُمْ أَنَّىٰ شِئْتُمْ (তোমাদের স্ত্রীগণ তোমাদের জন্য ক্ষেতস্বরূপ; অতএব তোমরা যেভাবেই ইচ্ছা তোমাদের ক্ষেতে গমণ কর।)
এই আয়াতের তফসিরে বলেন, قَائِمَةً وَقَاعِدَةً وَمُقْبِلَةً وَمُدْبِرَةً فِي الْفَرْجِ ‘দাঁড়ানো ও বসা অবস্থায়, সামনের দিক থেকে এবং পিছনের দিক থেকে (সঙ্গম করতে পারো, তবে তা হতে হবে) স্ত্রীর যোনিপথে।’ ( দুররে মানছুর ১/২৬৫ তাফসীর তাবারী ২/৩৮৭-৩৮৮ মুসান্নাফ ইবনু আবী শাইবা ৪/২৩২)
★ মলদ্বারে সহবাস হারাম। কেননা, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
لا يَنْظُرُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ إِلَى رَجُلٍ جَامَعَ امْرَأَتَهُ فِي دُبُرِهَا
যে ব্যক্তি তার স্ত্রীর মলদ্বারে সঙ্গম করে, আল্লাহ্ তার দিকে (দয়ার দৃষ্টিতে) তাকান না। (ইবন মাজাহ ১৯২৩)
★হায়েজ অবস্থায় সহবাস হারাম। কেননা, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
مَنْ أَتَى حَائِضًا أَوِ امْرَأَةً فِي دُبُرِهَا أَوْ كَاهِنًا فَصَدَّقَهُ بِمَا يَقُولُ فَقَدْ كَفَرَ بِمَا أُنْزِلَ عَلَى مُحَمَّدٍ
যে ব্যাক্তি ঋতুবতী স্ত্রীর সাথে সহবাস করলো অথবা স্ত্রীর মলদ্বারে সঙ্গম করলো অথবা গণকের নিকট গেলো এবং সে যা বললো তা বিশ্বাস করলো, সে অবশ্যই মুহাম্মাদ ﷺ -এর উপর নাযিলকৃত জিনিসের (আল্লাহ্র কিতাবের) বিরুদ্ধাচরণ করলো। (তিরমিযী ১৩৫ আবূ দাঊদ ৩৯০৪)
★একবার সহবাসের পর পুনরায় সহবাস করতে চাইলে অজু করে নেয়া মুস্তাহাব। হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
إِذَا أَتَى أَحَدُكُمْ أَهْلَهُ ثُمَّ أَرَادَ أَنْ يَعُودَ فَلْيَتَوَضَّأْ بَيْنَهُمَا وُضُوءًافإنه أنشط للعود
যখন তোমাদের কেউ নিজ স্ত্রীর সাথে সহবাস করার পর আবার সহবাস করতে চায় তখন সে যেন এর মাঝখানে ওযু করে নেয়। কেননা, এটি দ্বিতীয়বারের জন্য অধিক প্রশান্তিদায়ক। (মুসলিম ৩০৮ হাকিম ১/২৫৪)
তবে গোসল করে নেয়া আরো উত্তম। কেননা, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, هَذَا أَزْكَى وَأَطْيَبُ وَأَطْهَرُ এরূপ করা অধিকতর পবিত্র, উত্তম ও উৎকৃষ্ট। ( আবু দাউদ ২১৯)