আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
261 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (4 points)

আমাদের অনেকেই তার উপার্জিত অর্থের কিছু অংশ ভবিষ্যতে খরচের আশায় জমিয়ে রাখে। যেমন অনেকেরই উদ্দেশ্য এরকম থাকে যে - 

* বৃদ্ধ বয়সে চলার জন্য,

* চাকুরি শেষ হলে  চলার জন্য,

* সন্তানের ভবিষ্যত জীবনযাপন সহজ করার জন্য,

* বিপদ-আপদ আসলে তা মোকাবেলা করার জন্য,

* শখের কোনো জিনিস ক্রয় করা জন্য ইত্যাদি।

এরকম কোনো উদ্দেশ্যে টাকা জমানোর বিধান কি? কেউ একজন যদি প্রতিমাসের বেতন থেকে একটা অংশ এসব উদ্দেশ্যে জমা রাখে তবে সেই জমানো টাকা কি হালাল হবে?

1 Answer

0 votes
by (581,910 points)
জবাবঃ-
বৈধ পন্থায় মালের সমস্ত হক্ব (যাকাতসহ অন্যান্য হক্ব)আদায় করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের নিমিত্তে সম্পদ সঞ্চয় করা জায়েয আছে।
সম্পদ সঞ্চয় বৈধ তবে এক্ষেত্রে পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে যাকাত আদায় করতে হবে।
যাকাত আদায় না করে সম্পদ সঞ্চয়কারীদেরকে হুশীয়ারী করে কুরআনে কারীমে এরশাদ হয়েছে,

ﻭَﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻳَﻜْﻨِﺰُﻭﻥَ ﺍﻟﺬَّﻫَﺐَ ﻭَﺍﻟْﻔِﻀَّﺔَ ﻭَﻻَ ﻳُﻨﻔِﻘُﻮﻧَﻬَﺎ ﻓِﻲ ﺳَﺒِﻴﻞِ ﺍﻟﻠّﻪِ ﻓَﺒَﺸِّﺮْﻫُﻢ ﺑِﻌَﺬَﺍﺏٍ ﺃَﻟِﻴﻢٍ ﻳَﻮْﻡَ* ﻳُﺤْﻤَﻰ ﻋَﻠَﻴْﻬَﺎ ﻓِﻲ ﻧَﺎﺭِ ﺟَﻬَﻨَّﻢَ ﻓَﺘُﻜْﻮَﻯ ﺑِﻬَﺎ ﺟِﺒَﺎﻫُﻬُﻢْ ﻭَﺟُﻨﻮﺑُﻬُﻢْ ﻭَﻇُﻬُﻮﺭُﻫُﻢْ ﻫَـﺬَﺍ ﻣَﺎ ﻛَﻨَﺰْﺗُﻢْ ﻷَﻧﻔُﺴِﻜُﻢْ ﻓَﺬُﻭﻗُﻮﺍْ ﻣَﺎ ﻛُﻨﺘُﻢْ ﺗَﻜْﻨِﺰُﻭﻥَ
তরজমাঃ
যারা স্বর্ণ ও রূপাকে জমা করে রাখে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না , তাদেরকে কঠোর আযাবের সুসংবাদ শুনিয়ে দাও।
সে দিন জাহান্নামের আগুনে তা উত্তপ্ত করা হবে এবং তা দ্বারা তাদের ললাট, পার্শ্ব ও পৃষ্ঠদেশকে দগ্ধ করা হবে,এবং (সেদিন বলা হবে), এগুলো যা তোমরা নিজেদের জন্যে জমা রেখেছিলে,
সুতরাং এক্ষণে আস্বাদ গ্রহণ কর জমা করে রাখার।
সুরা তাওবাহ-৩৪-৩৫

তবে যাকাত আদায় করে কেউ সম্পদ সঞ্চয় করলে সে উক্ত শাস্তির আওতাধীন হবে না।
যেমন নবীজী সাঃ বলেনঃ
হযরত উম্মে সালামাহ রাযি থেকে বর্ণিত,
ﻋَﻦْ ﺃُﻡِّ ﺳَﻠَﻤَﺔَ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﺎ ﺃﻥ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻗﺎﻝ : ( ﻣَﺎ ﺑَﻠَﻎَ ﺃَﻥْ ﺗُﺆَﺩَّﻯ ﺯَﻛَﺎﺗُﻪُ ﻓَﺰُﻛِّﻲَ ﻓَﻠَﻴْﺲَ ﺑِﻜَﻨْﺰٍ )
নবীজী সাঃ বলেনঃ
যে মাল যাকাতের নেসাব পর্যন্ত পৌছবে,অতঃপর তার যাকাত আদায় করা হবে,সে মাল "কানয"(শাস্তিযোগ্য মাল) হবে না।
সুনানে আবু-দাউদ,১৫৬৪;

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে দিনার রাহ বলেনঃ
ﻋﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﺩﻳﻨﺎﺭ ﺃﻧﻪ ﻗﺎﻝ ﺳﻤﻌﺖ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﻋﻤﺮ ﻭﻫﻮ ﻳﺴﺄﻝ ﻋﻦ ﺍﻟﻜﻨﺰ ﻣﺎ ﻫﻮ ﻓﻘﺎﻝ ﻫﻮ ﺍﻟﻤﺎﻝ ﺍﻟﺬﻱ ﻻ ﺗﺆﺩﻯ ﻣﻨﻪ ﺍﻟﺰﻛﺎﺓ
ﺍﻟﻜﺘﺐ » ﻣﻮﻃﺄ ﻣﺎﻟﻚ » ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﺰﻛﺎﺓ » ﺑﺎﺏ ﻣﺎ ﺟﺎﺀ ﻓﻲ ﺍﻟﻜﻨﺰ
আমি আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাযি কে বলতে শুনেছি যে,উনাকে "কানয"(শাস্তিযোগ্য মাল)সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন,
কানয ঐ মাল যার যাকাত আদায় করা হয় না।
(মুয়াত্বা মালিক)

যাকাতসহ অন্যান্য হক্বসমূহ আদায় করে সম্পদ সঞ্চয় করা কোনো শাস্তিযোগ্য অপরাধ নয়।
নিম্নোক্ত হাদীস থেকে তা আরো পরিস্কারভাবে বুঝা যাচ্ছে,
ﺇﻧﻚ ﺃﻥ ﺗﺬﺭ ﺫﺭﻳﺘﻚ ﺃﻏﻨﻴﺎﺀ ﺧﻴﺮ ﻣﻦ ﺃﻥ ﺗﺬﺭﻫﻢ ﻋﺎﻟﺔ ﻳﺘﻜﻔﻔﻮﻥ ﺍﻟﻨﺎﺱ
ﺍﻟﻜﺘﺐ » ﺻﺤﻴﺢ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ » ﻛﺘﺎﺏ ﻣﻨﺎﻗﺐ ﺍﻷﻧﺼﺎﺭ » ﺑﺎﺏ ﻗﻮﻝ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺍﻟﻠﻬﻢ ﺃﻣﺾ ﻷﺻﺤﺎﺑﻲ ﻫﺠﺮﺗﻬﻢ ﻭﻣﺮﺛﻴﺘﻪ ﻟﻤﻦ ﻣﺎﺕ ﺑﻤﻜﺔ
(হে, সা'দ ইবনে আবি ওয়াক্বাস!)
তোমার সন্তানাদিকে ধনী রেখে যাওয়া উত্তম, এমন গরীব রাখার চেয়ে যে,তারা মানুষের কাছে মিনতি করে ভিক্ষাবৃত্তি করবে।
(হাদিসের একাংশ)
সহীহ বুখারী-৩৭২১

মালের হক্ব শুধুমাত্র যাকাতই নয় বরং এছাড়াও আরো অনেক হুকুকাত রয়েছে,
যেমন আল্লাহ তা'আলা  মুত্তাকিনদের গুণাগুণ উল্লেখ পূর্বক বলেনঃ
ﻭَﻓِﻲ ﺃَﻣْﻮَﺍﻟِﻬِﻢْ ﺣَﻖٌّ ﻟِّﻠﺴَّﺎﺋِﻞِ ﻭَﺍﻟْﻤَﺤْﺮُﻭﻡِ

এবং তাদের ধন-সম্পদে সুওয়ালকারী ও বঞ্চিতের হক ছিলো।
সূরা যারিয়াত-১৯।

মুফতী শফী রাহ উক্ত আয়াতের ব্যখ্যায় বলেনঃ
যাকাত ব্যতীত মালের আরোও ওয়াজিব হক্ব রয়েছে,যেমন সুওয়ালকারী ও বঞ্চিতদের হক্ব।

সম্পদ সঞ্চয় জায়েয হলেও দ্বীন-দুনিয়া ছেড়ে দিয়ে শুধু দুনিয়ার পিছনে দৌড়লে হবে না।বরং আল্লাহর সন্তুষ্টিকে সামনে রেখে আমাদের জীবনকে পরিচালনা করতে হবে।

এ সম্পর্কে
 আহকামে জিন্দেগি নামক কিতাবে সম্পদ সঞ্চয় সম্পকীয় কিছু মূল্যবান নীতিমালা উল্লেখ রয়েছে,
সবার বুঝার সুবিধার্থে নিম্নে তা উল্লেখ করা হল,

সম্পদ উপার্জনের নীতিমালাঃ
১। সম্পদ হালাল ও পবিত্র হতে হবে।
২। হারাম, মাকরূহ ও সন্দেহপূর্ন (অর্থাৎ, যেখানে জায়েয বা নাজায়েয হওয়ার কোনো দিক স্পষ্ট নয়-এরুপ) পন্থায় সম্পদ উপার্জন করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
৩। সম্পদ উপার্জনের কাজে লিপ্ত হয়ে কোনো ফরয বা ওয়াজিব বা সুন্নাত কাজে কোনো বিঘ্ন ঘটতে যেন না পারে।
৪। সম্পদ উপার্জন করতে হবে সম্পদের মোহ বা ভোগ বিলাসিতার উদ্দেশ্যে নয় বরং নিজের দায়িত্ব পালন ও ছওয়াব অর্জনের কাজে ব্যয় করার নিয়তে। তাহলে এটা ইবাদত বলে গণ্য হবে।
সম্পদ ব্যয়ের নীতিমালাঃ
১। সম্পদের উপর শরীয়াত যেসব দায়িত্ব অর্পন করেছে, সম্পূর্ন ইখলাসের সাথে তা আদায় করা। যেমনঃ যাকাত, ফেতরা, কুরবানি, হজ্জ ইত্যাদি।
২। নিজের এবং নিজের পরিবারের ভরণ-পোষণ ও ও অন্যান্য হক আদায়ের কাজে ব্যয় করা।
৩। আত্নীয়-স্বজন, প্রতিবেশী, মেহমান, মুসাফির, এতীম-মিসকীন, বিধবা প্রভৃতি শ্রেনির লোকদের প্রয়োজন সাধ্যানুযায়ী পূরণ করা।
৪। অপব্যয় না করা অথ্যাত, যেসব স্থানে শরীআত ব্যয় করতে নিষেধ করেছে সেখানে ব্যয় না করা। অপব্যয় করা হারাম।
৫। অমিতব্যয় না করা অর্থাৎ, বৈধ স্থানেও প্রয়োজনের অতিরিক্ত বয় না করা। বৈধ স্থানেও প্রয়োজনের অতিরিক্ত ব্যয় করা শরীয়াতে নিষিদ্ধ।
৬। কার্পন্য না করা অর্থাৎ, বৈধ স্থানে ও প্রয়োজনের স্থানে মোটেই ব্যয় না করা বা প্রয়োজন অনুপাতে ব্যয় না করা এবং কমী করা। এটাকে ব


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...