আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
206 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (23 points)
আসসালামু  আলাইকুম।
প্রশ্ন করার আগে বলে নেই।আমরা তিন বোন, আমাদের কোনো ভাই নেই। আমার বাবার বর্তমানে সম্পদ আছে একটি তিনতলা বাড়ি। আমার বাবা মোট 2 বার ব্যাংক লোন নিয়েছেন। এছাড়া সুদে অর্থ ধার নিতেন সমীতি থেকে। তার এই সম্পত্তির মেইন সোর্স হলো ব্যবসা। তার ব্যবসার কনটেন্ট সব হালাল ছিলো। কিন্তু সুযোগে  বেশি মুনাফা করা ইত্যাদি সংক্রান্ত হারাম ইনকাম তাতে শামিল আছে আমার ধারণা। আর আমার বাবার চোখে সমস্যা থাকায় বর্তমানে তিনি কিছুই করতে পারছেন না। বাড়ি ভাড়া থেকে যে আয় হয় সেটা দিয়ে ভরণপোষণ ও ঋণ পরিশোধ করেন ব্যাংক ও অন্যান্য
আমার দাদা আমার বাবার ছোট বেলাতেই মারা যায়। আমার বাবা ওয়ারিশ সূত্রে কিছু টাকা পেয়েছিলেন এছাড়া বাকিটা আল্লাহর রহমতে তার নিজের উপার্জন...
এটি বলার কারণ হলো আমার ফ্যমিলির লোক মনে করেন যে যেহেতু এই বাড়ি তার নিজের আর্নিং দিয়ে করা।তাই শুধু তার স্ত্রী সন্তান ই এর ভোগাধিকার পাবে। তাই আমার  বাবা এমন দলিল করেন যে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত  এই সম্পদের মালিক তিনি এবং মৃত্যুর পর শুধু আমাদের তিন বোনের।
 এখন আমার প্রশ্ন হলো:
১)আমার বাবা যে কাজটি করলেন এটি জায়েয কিনা? এতে কি আমার চাচার পক্ষের প্রাপ্য আছে কিনা?
২)দ্বিতীয়ত,এই সম্পদে উপরে উল্লিখিত ধরনে হালাল হারামের মিশ্রণ আছে, এই সম্পদ ভোগ করা আমার জন্য জায়েয হবে কিনা?
৩)ভোগ করা যদি জায়েজ হয়ে থাকে তবে এর ভাগ বন্টন কিভাবে করতে হবে? নাজায়েজ হলে এই সম্পদ কিভাবে পরিচালনা করতে পারি?

1 Answer

0 votes
by (589,230 points)
ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। 
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
হযরত আবু উমামা রাযি থেকে বর্ণিত,রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেনঃ
ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻗَﺪْ ﺃَﻋْﻄَﻰ ﻛُﻞَّ ﺫِﻱ ﺣَﻖٍّ ﺣَﻘَّﻪُ ، ﻓَﻠَﺎ ﻭَﺻِﻴَّﺔَ ﻟِﻮَﺍﺭِﺙٍ
নিশ্চয় আল্লাহ তা'আলা প্রত্যেক হক্বদারকে তার প্রাপ্য হক্ব (নির্ধারণ)করে দিয়েছেন।সুতরাং ওয়ারিছদের জন্য আর কোনো ওসিয়্যাত নেই। অর্থাৎ-মূত্যুর পরে কাউকে কিছু দানের সিদ্ধান্ত নিলে সেটা ওসিয়ত হয়ে যায়,আর নিজ ওয়ারিছদের মধ্য থেকে কারো জন্য ওসিয়ত করা জায়েয নয়।তবে ওয়ারিছ ব্যতীত অন্য কারো জন্য এক তৃতীয়াংশ মালে ওসিয়ত করা জায়েয আছে। (সুনানে আবু-দাউদ-২৮৭০সুনানে তিরমিযি-২১২০সুনানে নাসাঈ-৪৬৪১ইবনে মাজাহ-২৭১৩)

মৃত্যুর পূর্বে যদি কেউ তার পূর্ণ সম্পত্তিকে হেবা করে দেয় এবং যাকে হেবা করেছে সে ঐ হেবাকৃত মাল-কে কব্জা করে নেয়, তাহলে হেবাহকৃতব্যক্তি ঐ মালের মালিক হয়ে যাবে।অর্থাৎ নিজ জীবদ্দশায় কাউকে সম্পত্তি দান করা যায়,আংশিক বা সব। তবে ওয়ারিছদের বঞ্চিত করার নিয়ত থাকলে গোনাহ হবে। হাদীসে এসেছে,
হযরত আবু হুরায়রা রাযি থেকে বর্ণিত,
ﻭَﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ - ﺭَﺿِﻲَ اﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻨْﻪُ - ﻋَﻦِ اﻟﻨَّﺒِﻲِّ - ﺻَﻠَّﻰ اﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ - ﻗَﺎﻝَ: «ﺇِﻥَّ اﻟﺮَّﺟُﻞَ ﻟَﻴَﻌْﻤَﻞُ ﻭَاﻟْﻤَﺮْﺃَﺓَ ﺑِﻄَﺎﻋَﺔِ اﻟﻠَّﻪِ ﺳِﺘِّﻴﻦَ ﺳَﻨَﺔً، ﺛُﻢَّ ﻳَﺤْﻀُﺮُﻫُﻤَﺎ اﻟْﻤَﻮْﺕُ، ﻓَﻴُﻀَﺎﺭَّاﻥِ ﻓِﻲ اﻟْﻮَﺻِﻴَّﺔِ، ﻓَﺘَﺠِﺐُ ﻟَﻬُﻤَﺎ اﻟﻨَّﺎﺭُ»
রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেনঃকিছু মানুষ এমন রয়েছে যারা ৬০ বৎসর পর্যন্ত আল্লাহর এবাদত করার পর যখন মৃত্যু তাদের সন্নিকটে চলে আসে,তখনই তারা ওসিয়ত করে করে ওয়ারিছদের হক্ব নষ্ট করে তাদের কষ্ট পৌছায়।সুতরাং এমন ব্যক্তিদের জন্য আগুন ওয়াজিব হয়ে যায়। (মিশকাত-৩০৭৫)

মোল্লা আলী ক্বারী রাহ উক্ত হাদীসের ব্যখ্যায় লিখেন,
( «ﻓﻴﻀﺎﺭاﻥ ﻓﻲ اﻟﻮﺻﻴﺔ» ) ﻣﻦ اﻟﻤﻀﺎﺭﺓ ﺃﻱ: ﻳﻮﺻﻼﻥ اﻟﻀﺮﺭ ﺇﻟﻰ اﻟﻮاﺭﺙ ﺑﺴﺒﺐ اﻟﻮﺻﻴﺔ ﻟﻷﺟﻨﺒﻲ ﺑﺄﻛﺜﺮ ﻣﻦ اﻟﺜﻠﺚ، ﺃﻭ ﺑﺄﻥ ﻳﻬﺐ ﺟﻤﻴﻊ ﻣﺎﻟﻪ ﻟﻮاﺣﺪ ﻣﻦ اﻟﻮﺭﺛﺔ ﻛﻴﻼ ﻳﺮﺙ ﻭاﺭﺙ ﺁﺧﺮ ﻣﻦ ﻣﺎﻟﻪ ﺷﻴﺌﺎ، ﻓﻬﺬا ﻣﻜﺮﻭﻩ ﻭﻓﺮاﺭ ﻋﻦ ﺣﻜﻢ اﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ
ওয়ারিছদের কষ্ট দেওয়ার অর্থ হচ্ছে, কোনো অনাত্মীয়/অপরিচিত ব্যক্তির জন্য এক তৃতীয়াংশর অধিক মালের ওসিয়ত করা।অথবা কোনো এক ওয়ারিছের জন্য সমস্ত মালের ওসিয়ত করা।যাতে করে অন্য কোনো ওয়ারিছ তার হিস্সা না পায়।এটা মাকরুহ।এবং আল্লাহর বিধি-বিধান পলায়নপর এর শামিল।

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
(১) আপনার বাবা শুধুমাত্র আপনারা বোনদেরকে সমুদয় সম্পত্তি দিতে পারবেন না। বরং এতে আপনাদের চাচা বা চাচাতো ভাইদেরও হিস্যা রয়েছে। হ্যা, আপনাদের বাবা আপনাদের নামে লিখে দিলে যদিও আপনার উক্ত সম্পত্তির মালিক হয়ে যাবেন, তথাপি আপনার বাবার এমনটার জন্য অবশ্যই গোনাহ হবে। 
(২) হালাল হারামের সংমিশ্রণ থাকলে সম্পদের যতটুকু অংশ হালাল বলে মনে হবে, শুধুমাত্র ততটুকু অংশই আপনাদের জন্য হালাল হবে। অতিরিক্ত যা হারাম রয়েছে, সেগুলো আপনাদের জন্য হালাল হবে না। আপনারা একটু আন্দাজ করে নিবেন যে, কতটুকু সম্পদ আপনাদের হালাল রয়েছে, সেগুলো রেখে বাদবাকী গুলো সদকাহ করে দিবেন। যদি আন্দাজ করা না যায়, তাহলে অনুমান করে কিছু টাকা আপনারা সদকাহ করে দিবেন। 
(৩) আপনাদের বাবা আপনাদের নামে পূর্ণ সম্পদ লিখে দিলে আপনাদের জন্য উক্ত সম্পদ ব্যবহার করা নাজায়েয হবে না। আর হালাল হারামের সংমিশ্রণ থাকার কারণে আপনারা উক্ত সম্পত্তি থেকে অনুমান করে হারাম সম্পদের পরিমাণকে সদকাহ করে দিতে পারেন। জাযাকুমুল্লাহ। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

by (23 points)
জাযাকাল্লাহু খইরন ফিদ্দুনিয়া ওয়াল আখিরহ।

সম্পদ থেকে হারাম অংশ বাদ দেয়ার পর যেহেতু তা আমার জন্য জায়েজ হবে এবং আমার বাবা যেহেতু আমার চাচার পক্ষের লোকদের কিছু দেননি সেহেতু তাদের প্রাপ্য কীভাবে কি অনুপাতে পরিশোধ করতে পারি উল্লিখিত সম্পদ অনুযায়ী। একটু ধারণা দিলে উপকৃত হতাম ইনশা আল্লাহ।

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...