জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
(০১)
অজু ব্যতীত কুরআনকে স্পর্শ করা যায় না,তবে বিনা অজুতে কুরআনকে স্পর্শ করা ব্যতীত পড়া যাবে।
চার মাযহাবের সিদ্বান্ত মতে বিনা অজুতে কোরআন শরীফকে স্পর্শ করা যাবে না।
,
সুতরাং ওযু ছাড়া মোবাইল এর apps থেকে, ট্যাব,ল্যাপটপ/কম্পিউটার থেকে কুরআন পড়া জায়েয আছে। তবে সরাসরি কুরআন লিখিত স্কীনে স্পর্শ করতে চাইলে ওযু থাকা জরুরি।
কুরআন শরীফ তথা কুরআনের আয়াত ধরার জন্য ওজু থাকা আবশ্যক। পড়ার জন্য বা শোনার জন্য ওজু করা আবশ্যক নয়। কুরআনে কারীমের আয়াত ছাড়া অন্য কিছু ধরার জন্য অজু থাকা জরুরী নয়।
لَّا يَمَسُّهُ إِلَّا الْمُطَهَّرُونَ [٥٦:٧٩
যারা পাক পবিত্র, তারা ব্যতিত অন্য কেউ একে স্পর্শ করবে না। {সূরা ওয়াকিয়া-৭৯}
,
হাদীস শরীফে এসেছে-
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي بَكْرِ بْنِ حَزْمٍ أَنَّ فِي الْكِتَابِ الَّذِي كَتَبَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِعَمْرِو بْنِ حَزْمٍ أَنْ لَا يَمَسَّ الْقُرْآنَ إِلَّا طَاهِرٌ
হযরত আব্দুল্লাহ বিন আবু বকর বিন হাযম বলেনঃ রাসূল সাঃ আমর বিন হাযম এর কাছে এই মর্মে চিঠি লিখেছিলেন যে, পবিত্র হওয়া ছাড়া কুরআন কেউ স্পর্শ করবে না”।
{মুয়াত্তা মালিক, হাদীস নং-৬৮০, কানযুল উম্মাল, হাদীস নং-২৮৩০, মারেফাতুস সুনান ওয়াল আসার, হাদীস নং-২০৯, আল মুজামুল কাবীর, হাদীস নং-১৩২১৭, আল মুজামুস সাগীর, হাদীস নং-১১৬২, মিশকাতুল মাসাবীহ, হাদীস নং-৪৬৫, সুনানে দারেমী, হাদীস নং-২২৬৬}
,
বিস্তারিত জানুনঃ
,
(০২)
শরীয়তের বিধান হলো মহিলাদের হায়েজ অবস্থায় কুরআন শরিফ স্পর্শ করা, তেলাওয়াত করা জায়েজ নেই।
,
হায়েজ,নেফাস,গোসল ফরজ থাকা অবস্থায় কুরআনে কারীম পড়া হারাম।
তবে যিকির,দোয়া সম্বলিত আয়াত,দ্বীনি কিতাব সমুহ পড়তে কোনো সমস্যা নেই।
(কিতাবুন নাওয়াজেল ৩/১১০)
হাদীস শরীফে এসেছেঃ
عن ابن عمر : عن النبي صلى الله عليه و سلم قال لا تقرأ الحائض ولا الجنب شيئا من القرآن (سنن الترمذى، ابواب الطهارات، باب ما جاء في الجنب والحائض : أنهما لا يقرأن القرآن، رقم الحديث-131
অনুবাদ-হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-ঋতুবতী মহিলা এবং গোসল ফরজ হওয়া ব্যক্তি কোরআন পড়বে না।
(সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-১৩১,
সুনানে দারেমী, হাদীস নং-৯৯১,
মুসনাদুর রাবী, হাদীস নং-১১,
মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-১০৯০,
মুসন্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং-৩৮২৩)
★হায়েজ অবস্থায় বিভিন্ন দোয়া পড়া জায়েজ আছে।
এতে কোনো সমস্যা নেই।
বিস্তারিত জানুনঃ
★হায়েজাহ মহিলার জন্য সুরা মুলক পড়া জায়েজ নেই।
,
(০৩)
হ্যাঁ এই দোয়াটির ফজিলত আছে।
হাদীস শরীফে এসেছেঃ
وَعَن جوَيْرِية أَنَّ النَّبِىَّ ﷺ خَرَجَ مِنْ عِنْدِهَا بُكْرَةً حِينَ صَلَّى الصُّبْحَ وَهِىَ فِىْ مَسْجِدِهَا ثُمَّ رَجَعَ بَعْدَ أَنْ أَضْحٰى وَهِىَ جَالِسَةٌ قَالَ: مَا زِلْتِ عَلَى الْحَالِ الَّتِىْ فَارَقْتُكِ عَلَيْهَا؟» قَالَتْ: نَعَمْ قَالَ النَّبِىُّ ﷺ: لَقَدْ قُلْتُ بَعْدَكِ أَرْبَعَ كَلِمَاتٍ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ لَوْ وُزِنَتْ بِمَا قُلْتِ مُنْذُ الْيَوْمِ لَوَزَنَتْهُنَّ: سُبْحَانَ اللّٰهِ وَبِحَمْدِه عَدَدَ خَلْقِه وَرِضَاءَ نَفْسِه وَزِنَةَ عَرْشِه وَمِدَادَ كَلِمَاتِه. رَوَاهُ مُسْلِمٌ
উম্মুল মু’মিনীন জুওয়াইরিয়্যাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সলাতের পর খুব ভোরে তাঁর নিকট হতে বের হলেন। তখন জুওয়াইরিয়্যাহ্ নিজ সলাতের জায়গায় বসা। তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন ফিরে আসলেন তখন সূর্য বেশ উপরে উঠে এসেছে। আর জুওয়াইরিয়্যাহ্ তখনো সলাতের জায়গায় বসে আছেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁকে বললেন, আমি তোমার কাছ থেকে চলে যাওয়ার সময় যে অবস্থায় তুমি ছিলে, এখনো কি সে অবস্থায় আছ? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার কাছ থেকে যাওয়ার পর আমি মাত্র চারটি কালিমাহ্ তিনবার পড়েছি, যদি তুমি এ পর্যন্ত যা পড়েছ তার সাথে আমার পড়া কালাম ওযন দেয়া হয় তাহলে এর ওযনই বেশি হবে। (বাক্যগুলো হলো)
‘সুবহা-নাল্ল-হি ওয়া বিহামদিহী, ‘আদাদা খলকিহী, ওয়া রিযা- নাফসিহী, ওয়া যিনাতা ‘আরশিহী, ওয়া মিদা-দা কালিমা-তিহী’’
(অর্থাৎ- আল্লাহ তা‘আলার পূত-পবিত্রতা বর্ণনা করি তাঁর প্রশংসার সাথে, তাঁর সৃষ্টির সংখ্যা পরিমাণ, তাঁর সন্তুষ্টি পরিমাণ, তার ‘আরশের ওযন পরিমাণ ও তাঁর বাক্যসমূহের সংখ্যা পরিমাণ।)।
সহীহ : মুসলিম ২৭২৬, আদ্ দা‘ওয়াতুল কাবীর ১২৭, শু‘আবূল ঈমান ৫৯৬, সহীহ আদাবুল মুফরাদ ৫০৪/৬৪৭, আল কালিমুত্ব ত্বইয়্যিব ১২, সহীহাহ্ ২১৫৬, সহীহ আত্ তারগীব ১৫৭৪, সহীহ আল জামি‘ ৫১৩৯, ইবনু খুযায়মাহ্ ৭৫৩।
(০৪)
১. হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে সকালে দশবার বলে।
لا إلَهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ المُلْكُ ؛ وَلَهُ الحَمْدُ ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
(অর্থ, আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। তিনি এক, তাঁর কোনো শরীক নেই। তাঁরই রাজত্ব, প্রশংসা তাঁরই, আর তিনি সব কিছুর উপর ক্ষমতাশালী।) এর বিনিময়ে তার আমলনামায় একশত নেকি লিখে দেওয়া হয় এবং একশ গোনাহ মুছে দেওয়া হয়। আর এ বাক্যগুলো একটি গোলাম আযাদ করার সমতুল্য এবং এর দ্বারা ঐদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত তাকে হেফাযত করা হয়। আর সন্ধ্যায় যে এ বাক্যগুলো বলে তারও অনুরূপ প্রাপ্য হয়। -মুসনাদে আহমাদ, ২/৩৬০ হাদীস ৮৭১৯।
ফায়েদা : সুতরাং হাদীসে উল্লেখিত বাক্যগুলো ফজরের নামাজের পর দশবার ও মাগরিবের নামাযের পর দশবার পাঠ করি। এতে যেমন অশেষ নেকী হাসিল হবে তেমনি আল্লাহর পক্ষ হতে সুরক্ষাও পাওয়া যাবে।
২. আব্দুল্লাহ ইবনে খুবাইব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা এক বর্ষণমুখর অন্ধকার রাতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে খুঁজতে বের হলাম যেন তিনি আমাদের নিয়ে নামায পড়েন। তাঁর সাথে যখন সাক্ষাৎ হল তিনি বললেন, ‘قل’ বল। আমি নিশ্চুপ রইলাম। তিনি আবার বললেন, ‘قل ’ বল। আমি নিশ্চুপ রইলাম। তিনি আবার বললেন, ‘قل’ বল। আমি আরজ করলাম, আল্লাহর রাসূল! কী বলব? তিনি বললেন
قل هو اللَّه أحد ، والمعوذتين حين تمسي وحين تصبح ، ثلاث مرات تكفيك من كل شيء
‘কুল হুয়াল্লাহু আহাদ’ ও ‘মুয়াওয়াযাতাইন’ সন্ধ্যায় ও সকালে, তিনবার। এ (সূরাগুলো) সব কিছু থেকে তোমার হেফাযতের জন্য যথেষ্ট হবে। -মুসনাদে আহমাদ ৫/৩১২; সুনানে আবু দাউদ, আদব অধ্যায়; হাদীস ৫০৮২; জামে তিরমিযী, হাদীস ৩৫৭৫
ফায়েদা : এ হাদীসে পাওয়া গেল যে, সকাল-সন্ধ্যায় তিনবার করে সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস পাঠ করা সকল অনিষ্ট ও বিপদাপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায়।
৩. আব্দুল্লাহ ইবনে গাননাম আলবায়াযী রা. থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে সকালে বলে-
اللَّهُمَّ مَا أَصْبَحَ بِي مِنْ نِعْمَةٍ أَوْ بِأَحَدٍ مِنْ خَلْقِكَ فَمِنْكَ وَحْدَكَ لا شَرِيكَ لَكَ ، لَكَ الْحَمْدُ وَلَكَ الشُّكْرُ
(অর্থ, ইয়া আল্লাহ! এই সকালে আমার মাঝে বা আপনার যে কোনো সৃষ্টির মাঝে যা কিছু নেয়ামত, সব আপনারই তরফ থেকে। আপনি একক, আপনার কোনো শরীক নেই। সুতরাং আপনারই হামদ, আপনারই শোকর।)
সে তার এ দিনের শোকর আদায় করল।
আর যে সন্ধ্যায় (এ কথাগুলো) বলল সে ঐ রাতের শোকর আদায় করল। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৫০৭৩; সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস ২৩৬১; আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লাইলা, ইবনুস সুন্নী ৪২
ফায়েদা : সন্ধ্যায় এ দু্আয় ‘مَا أَصْبَحَ بِي’-এর স্থলে বলতে হবে ‘ما أَمسى بي’ বাকী দুআ অভিন্ন। অর্থাৎ,
اللَّهُمَّ مَا أَمسى بِي مِنْ نِعْمَةٍ أَوْ بِأَحَدٍ مِنْ خَلْقِكَ فَمِنْكَ وَحْدَكَ لا شَرِيكَ لَكَ ، لَكَ الْحَمْدُ وَلَكَ الشُّكْرُ
অর্থ. ইয়া আল্লাহ! এই সন্ধ্যায় আমার মাঝে বা আপনার যে কোনো সৃষ্টির মাঝে যা কিছু নেয়ামত, সব আপনারই তরফ থেকে। আপনি একক, আপনার কোনো শরীক নেই। সুতরাং আপনারই হামদ, আপনারই শোকর।
(সংগৃহীত)
,