বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
(১)
‘নিশ্চয় নামাজকে ঈমানদারের জন্য নির্ধারিত সময়ে (আদায় করা) আবশ্যক কর্তব্য করা হয়েছে।’ (সুরা নিসা : আয়াত ১০৩)
সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন!
সুন্নতকে তার ওয়াক্তের ভিতরেই পড়তে হবে।কোনো ওয়াক্তে সুন্নত পড়া সম্ভব না হলে সেই সুন্নতকে ভিন্ন সময়েও পড়া যাবে।তখন তা সাধারণ সুন্নত বা নফল হিসেবে আদায় হবে।অর্থাৎ সুন্নতের ওয়াক্ত চলে গেলে আর সেই সুন্নতকে পড়া জরুরী নয়। এবং সুন্নতে মু'আক্কাদা নামাযকে ভিন্ন সময়ে পড়লে তখন সুন্নতে মু'আক্কাদা হিসেবে আদায় হবে না বরং তখন তা সাধারণ সুন্নত হিসেবে গণ্য হবে।
(২)
মসজিদের তুলনায় ঘরে সুন্নত পড়া বেশী সওয়াবের কাজ।
রাসূলুল্লাহ সাঃ সর্বদাই নিজ ঘরে সুন্নত পড়তেন।
হযরত আয়েশা রাযি এর বর্ণনা থেকে বুঝা যাচ্ছে যে,রাসূলুল্লাহ সাঃ এর বিশেষ জরুরত ব্যতীত সুন্নত এবং নফল নামাযকে ঘরেই আদায় করতেন।
আবদুল্লাহ ইবনু শাক্বীক্ব (রহঃ) থেকে বর্ণিত।
عن عبد الله بن شقيق قال سألت عائشة عن صلاة رسول الله صلى الله عليه وسلم عن تطوعه فقالت كان يصلي في بيتي قبل الظهر أربعا ثم يخرج فيصلي بالناس ثم يدخل فيصلي ركعتين وكان يصلي بالناس المغرب ثم يدخل فيصلي ركعتين ويصلي بالناس العشاء ويدخل بيتي فيصلي ركعتين وكان يصلي من الليل تسع ركعات فيهن الوتر وكان يصلي ليلا طويلا قائما وليلا طويلا قاعدا وكان إذا قرأ وهو قائم ركع وسجد وهو قائم وإذا قرأ قاعدا ركع وسجد وهو قاعد وكان إذا طلع الفجر صلى ركعتين .رواه مسلم ( 730
তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নফল সালাতের ব্যাপারে ‘আয়িশাকে প্রশ্ন করেছি। ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেছেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথমে আমার ঘরে যুহরের পূর্বে চার রাক্‘আত সালাত আদায় করতেন। তারপর মসজিদে যেতেন। সেখানে লোকেদের নিয়ে (জামা‘আতে যুহরের ফরয) সালাত আদায় করতেন। তারপর তিনি কামরায় ফিরে আসতেন এবং দু’ রাক্‘আত সালাত আদায় করতেন। (ঠিক এভাবে) তিনি লোকদেরকে নিয়ে মাগরিবের সালাত মসজিদে আদায় করতেন। তারপরে হুজরায় ফিরে এসে দু’ রাক্‘আত সালাত আদায় করতেন। রাতে তিনি (তাহাজ্জুদের) সালাত কখনো নয় রাক্‘আত পড়তেন। এর মাঝে বিতরের সালাতও শামিল ছিল। আর রাতে তিনি দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে ও দীর্ঘ সময় বসে বসে সালাত আদায় করতেন, যে সময় তিনি দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করতেন? দাঁড়ানো থেকেই রুকূ‘ সাজদায় চলে যেতেন। আর যখন বসে বসে সালাত আদায় করতেন, বসা থেকেই রুকূ‘ ও সাজদায় চলে যেতেন। সুবহে সাদিকের সময় ফাজ্রের (ফজরের) দু’ রাক্‘আত সুন্নাত আদায় করে নিতেন। (মুসলিম; আবূ দাঊদ আরো কিছু বেশী শব্দ নকল করেছেন [অর্থাৎ ফজরের (ফজরের) দু’ রাক্‘আত সুন্নাত আদায় করে তিনি মসজিদে চলে যেতেন। সেখানে লোকজনসহ ফাজ্রের (ফজরের) ফরয সালাত আদায় করতেন]) (সহীহ : মুসলিম ৭৩০, আবূ দাঊদ ১২৫১)
এজন্য ইমাম নববী আল-মিনহাজ কিতাবে ঘরে সুন্নত পড়াকে মুস্তাহাব বলে থাকেন।
নফল নামায ঘরে পড়লে নামাযের তরীকা ও গুরুত্ব পরিবার-পরিজনের কাছে প্রকাশ পায়। আর এ জন্য হুকুম হল, “তোমরা ঘরে নামায পড় এবং তা কবর বানিয়ে নিও না।” (বুখারী ৪৩২, মুসলিম, সহীহ ৭৭৭, আবূদাঊদ, সুনান ১৪৪৮, তিরমিযী, সুনান, নাসাঈ, সুনান, জামে ৩৭৮৪নং) অর্থাৎ, কবরে বা কবরস্থানে যেমন নামায নেই বা হয় না সেইরুপ নিজের ঘরকেও নামাযহীন করে রেখো না।
মহানবী (সাঃ) আরো বলেন, “তোমরা স্বগৃহে নামায পড় এবং তাতে নফল পড়তে ছেড়ো না।” (সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী ১৯১০, জামে ৩৭৮৬নং)
আল্লাহর রসূল (সাঃ) বলেন, “তোমাদের কেউযখন মসজিদে (ফরয) নামায সম্পন্ন করে তখন তার উচিৎ, সে যেন তার নামাযের কিছু অংশ (সুন্নত নামায) নিজের বাড়ির জন্য রাখে। কারণ বাড়িতে পড়া ঐ কিছু নামাযের মধ্যে আল্লাহ কল্যাণ নিহিত রেখেছেন।” (মুসলিম, সহীহ ৭৭৮নং)
মহানবী (সাঃ) বলেন, “হে মানবসকল! তোমরা স্বগৃহে নামায আদায় কর। যেহেতু ফরয নামায ছাড়া মানুষের শ্রেষ্ঠতম নামায হল তার স্বগৃহে পড়া নামায।” (নাসাঈ, সুনান, ইবনে খুযাইমাহ্, সহীহ, সহিহ তারগিব ৪৩৭নং)
(৩)
জ্বী, সূরা প্রথমে আউজুবিল্লাহির মিনাশ-শাইত্বানির রাজীম পড়া যাবে।
আউযু বিল্লাহ এবং বিসমিল্লাহ্ যেহেতু ক্বেরাতের সুন্নাত। তাই যার যিম্মায় ক্বেরাত রয়েছে,অর্থাৎ কুরআন তেলাওয়াত কারী চায় ইমাম হোক বা মুনফারিদ(একাকী নামায আদায় কারী)তিনিই একমাত্র আউযুবিল্লাহ বিসমিল্লাহ্ পড়বেন।
এবং পড়াই সুন্নাত।
আল্লাম কা'সানি রাহ লিখেন,
ان التعوذ سنة للقراءة فيأتي به كل قارئ للقرآن .....لا يأتي به المقتدي
আউযুবিল্লাহ ক্বেরাতের সুন্নত। সুতরাং ক্বারী সাহেবগণই একমাত্র পড়বেন।মুক্বতাদি পড়বেন না।
(আল-বাহরুর রায়েক্ব-১/৩১১)