আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
739 views
in ঈমান ও বিশ্বাস (Faith and Belief) by (53 points)
edited by

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ,

মুহতারাম, অত্যন্ত ভীতসন্ত্রস্ত মন নিয় প্রশ্নটি লিখছি, কেবলই সংশয় দূর করার জন্য এবং ভবিষ্যতে কারো অভিযোগ-আপত্তিতে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য । যদি অনিচ্ছাকৃত কোনো ভুল হয় , মাফ করবেন। আল্লাহর কাছেও পানাহ চাই।


জনৈক ব্যক্তির সংশয়মূলক দাবি যে মাওলানা আশরাফ আলী থানবী (রহ:) এর লেখা এবং মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী (রহ:) এর অনূদিত 'বেহেশতী জেওর' গ্রন্থের ২য় পৃষ্ঠায় যেখানে হযরত থানবী (রহ:) এর জন্ম পটভূমি ও নামকরণ বিষয়ে লেখা হয়েছে তাতে শিরক রয়েছে।

 বইয়ের লেখা অংশটুকু নিম্নরূপ:

“জন্ম বৃত্তান্ত:: হাকীমুল উম্মত হযরত মাওলানা থানভীর জন্ম বৃত্তান্ত অলৌকিক ঘটনার সহিত জড়িত। তাহার পিতার কোন পুত্র সন্তানই জীবিত থাকিত না। তদুপরি তিনি এক দূরারোগ্য চর্মরাগে আক্রান্ত হইয়া চিকিৎসকের পরামর্শে এমন এক ঔষধ সেবন করেন যাহাতে তাহার প্রজনন ক্ষমতা সম্পূর্ণরূপে রহিত হইয়া যায়। ইহাতে হাকীমুল উম্মতের মাতামহী নেহায়েত বিচলিত  হইয়া পড়েন। একদা তিনি হাফেজ গোলাম মোর্তজা ছাহেব পানিপতীর খেদমতে এ বিষয়টি আরয করেন। হাফেজ ছাহেব ছিলেন মজযূব। তিনি বলিলেনঃ "ওমর ও আলীর টানাটানিতেই পুত্র-সন্তানগুলি মারা যায়। এবার পুত্র-সন্তান জন্মিলে হযরত আলীর সোপর্দ করিয়া দিও। ইনশাআল্লাহ জীবিত থাকিবে। তাহার এই হেঁয়ালী কেহই বুঝিতে পারিলেন না। পূর্ণ কথার সারমর্ম একমাত্র মাওলানার বুদ্ধিমতী জননীই বুঝিলেন আর তিনি বলিলেন, হাফেজ ছাহেবের কথার অর্থ সম্ভবতঃ এই যে, ছেলেদের পিতৃকুল ফারুকী, আর আমি হযরত আলী (রাঃ)-এর বংশধর। এযাবৎ পুত্র-সন্তানদের নাম রাখা হইতেছিল পিতার নামানুকরণে, অর্থাৎ হক শব্দ যোগে রাখা হইয়াছিল। যেমন আবদুল হক, ফজলে হক ইত্যাদি। এবার পুত্র-সন্তান জন্মিলে মাতৃকুল অনুযায়ী নাম রাখতে—অর্থাৎ আমার ঊর্ধ্বতন আদি পুরুষ হযরত আলী (রাঃ)-এর নামের সহিত মিল রাখিয়া, নামানুকরণ এর কথা বলিতেছেন। ইহা শুনিয়া হাফেজ সাহেব সহাস্যে বলিয়া উঠিলেন, বাবা! মেয়েটি বড়ই বুদ্ধিমতী বলিয়া মনে হয়। আমার উদ্দেশ্য ইহাই ছিল। ইহার গর্ভে দুইটি ছেলে হইবে। ইনশাআল্লাহ উভয়ই বাচিয়া থাকিবে এবং ভাগ্যবান হইবে। একজনের নাম রাখিবে আশরাফ আলী, অপরজনের নাম রাখিবে আকবর আলী। একজন হইবে আমার অনুসারী, সে হইবে আলেম ও হাফেজ। অপরজন হইবে দুনিয়াদার। বস্তুতঃ তাহাই হইয়াছিল। আল্লাহ্ পাক এক বুযুর্গের দ্বারা হযরত থানভী মাতৃগর্ভে আসার পূর্বে অর্থাৎ আলমে আরওয়াহে থাকাকালীন তাহার নাম রাখাইয়া দিলেন। আল্লাহ পাকের কত বড় মেহেরবানী ! কত বড় সৌভাগ্যের কথা !”

সংশয়ের বিষয়:
১. নির্দিষ্ট কোনো নাম রাখার কারণেই কারো মৃত্যু হয়, একথা কি শিরক নয়?
২. জানামতে, সন্তানের নামের পদবী তার পিতার নাম কিংবা বংশ অনুসারে  রাখতে হয়, তাহলে এখানে কেন মাতার বংশ অনুসারে রাখা হল?

1 Answer

+1 vote
by (589,140 points)
বিসমিহি তা'আলা

জবাবঃ-

(১)

নাম রাখার কারণেই যে তিনি বেঁচে গিয়েছিলেন,বিষয়টা কিন্তু এমন নয়।বরং এ বিষয়টা সম্পূর্ণ কাকতালীয় ছিলো।হাফেজ গোলাম মোর্তজা ছাহেব পানিপতী রাহ,দু'আ করেছিলেন।আল্লাহ তা'আলা এই নেককার বান্দার দু'আকে কবুল করে নিয়েছিলেন।বিষয়টা মূলত এটাই,এছাড়া অন্যকিছু নয়।

সম্ভাবনা রয়েছে,

হয়তো এই হযরত কাশফ বা ইলহামের মাধ্যমে জানতে পেরেছিলেন।যে,আল্লাহ তাতে কোনো হেকমত রেখেছেন।এবং আল্লাহর তরফ থেকে কাফশ ইলহামের মাধ্যমে এটাও জানিয়ে দেয়া হয়েছিলো যে,নাম বদলালে হয়তো আল্লাহ সন্তানকে বাঁচাবেন।ইলহাম বা কাফশ যদিও শরীয়তের দলীল নয়,তথাপি নিজের আ'মলের জন্য দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য হয়ে থাকে।তবে এমন কথা দ্বারা যেহেতু আকিদা নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে,তাই এগুলো প্রচার-প্রসার না করাই শ্রেয়।যে মহান ব্যক্তি অনুবাদ করেছেন,সম্ভবত এটা উনার দৃষ্টিগোচর হয়নি বা দৃষ্টির আড়ালে অন্য কেউ করেছে।অথবা উনি ভেবেছিলেন যারা পড়বে, তারা বিষয়টাকে ব্যখ্যা সহ বুঝে নিবে।আল্লাহ-ই ভালো জানেন।

(২)

প্রত্যেক মানুষকে তার পিতার দিকে সম্বন্ধ করেই ডাকা হবে।পিতার ব্যতীত ভিন্ন কোনো পুরুষের দিকে সম্বন্ধ করে ডাকা যাবে না।যেমন রাসূলুল্লাহ সাঃ এর পালকপুত্র হযরত যায়েদ রাযি কে রাসূলুল্লাহ সাঃ এর দিকে সম্বন্ধ করে এভাবে  ডাকা হতো,'হে যায়েদ ইবনে মুহাম্মদ!'এটাকে নিষেধ করে নিম্নোক্ত আয়াত নাযিল হয়।আল্লাহ তা'আলা বলেন,

ادْعُوهُمْ لِآبَائِهِمْ هُوَ أَقْسَطُ عِندَ اللَّهِ فَإِن لَّمْ تَعْلَمُوا آبَاءهُمْ فَإِخْوَانُكُمْ فِي الدِّينِ وَمَوَالِيكُمْ وَلَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ فِيمَا أَخْطَأْتُم بِهِ وَلَكِن مَّا تَعَمَّدَتْ قُلُوبُكُمْ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَّحِيمًا

তোমরা তাদেরকে তাদের পিতৃপরিচয়ে ডাক। এটাই আল্লাহর কাছে ন্যায়সঙ্গত। যদি তোমরা তাদের পিতৃ-পরিচয় না জান, তবে তারা তোমাদের ধর্মীয় ভাই ও বন্ধুরূপে গণ্য হবে। এ ব্যাপারে তোমাদের কোন বিচ্যুতি হলে তাতে তোমাদের কোন গোনাহ নেই, তবে ইচ্ছাকৃত হলে ভিন্ন কথা। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।(সূরায়ে আহযাব-০৫)

সুতরাং স্বাভাবিক নিয়ম হলো,প্রত্যেক মানুষকে তার পিতার দিকে সম্বন্ধ করেই ডাকা হবে।কেননা আদিকাল থেকে এমনটাই চলে আসছে।সন্তানকে তার মায়ের দিকে সম্বন্ধ করা জায়েয কি? এ প্রশ্নের জবাবে বলা যায় যে,শরীয়তে মায়ের দিকে সম্বন্ধ করাকে হারাম ঘোষনা দেয়নি।তবে বিভিন্ন হেকমত যেমন যিনা-ব্যভিচার রুখতে পিতার দিকে সম্বন্ধ করাকেই ইসলাম স্বাভাবিক রীতিসিদ্ধ করে দিয়েছে।

জাহিলিয়াত যুগে কিছু কিছু সন্তানকে তাদের মায়ের সুনাম ইত্যাদির কারণে মায়ের দিকেই সম্বন্ধ করে ডাকা হয়েছে।ইসলাম আসার পর অনেক নামকে নিষিদ্ধ করলেও এ সকল নামকে নিষিদ্ধ করেনি।সে হিসেবে আমরা বলবো,কিছু সংখ্যক সাহাবার নামও তাদের মায়ের দিকে সম্বন্ধ করে ছিলো।যদি মায়ের দিকে সম্বন্ধ করা হারাম হতো,তাহলে সেই সব নামকে রাসূলুল্লাহ সাঃ নিষেধ করে দিতেন।

মায়ের দিকে সম্বন্ধ করে কিছু সাহাবায়ে কেরামের নাম।

যেমনঃ (১) বেলাল ইবনে হামামাহ।(২)খুফাফ ইবনে নুদবাহ(৩)বশির ইবনুল খাসাসিয়্যাহ(৪)সা'দ ইবনুল হানযালিয়্যাহ(৫)শুরাহবিল ইবনে হাসানাহ(৬)সাহল ইবনুল হানযালিয়্যাহ(৭)বশির ইবনে আকরাবাহ।

প্রথম শতাব্দীর মিশরের গভর্নর আব্দুল আযিয ইবনে মারওয়ান, উনি উনার মায়ের নাম (লায়লা)সহ প্রশংসাজ্ঞাপক কবিতা শুনতে পছন্দ করতেন।

সুপ্রিয় পাঠকবর্গ ও প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!

স্বাভাবিকত পিতার দিকেই সম্বন্ধ করেই মানুষ ডাকা হবে।তবে কোনো হেকমতে যদি মায়ের দিকে সম্বন্ধ হয়েও যায়,তাহলে সেটা নাজায়েয হবে না।

আল্লাহ-ই ভালো জানেন।

উত্তর লিখনে

মুফতী ইমদাদুল হক

ইফতা বিভাগ, IOM.


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...