বিসমিহি তা'আলা
জবাবঃ-
(১)
নাম রাখার কারণেই যে তিনি বেঁচে গিয়েছিলেন,বিষয়টা কিন্তু এমন নয়।বরং এ বিষয়টা সম্পূর্ণ কাকতালীয় ছিলো।হাফেজ গোলাম মোর্তজা ছাহেব পানিপতী রাহ,দু'আ করেছিলেন।আল্লাহ তা'আলা এই নেককার বান্দার দু'আকে কবুল করে নিয়েছিলেন।বিষয়টা মূলত এটাই,এছাড়া অন্যকিছু নয়।
সম্ভাবনা রয়েছে,
হয়তো এই হযরত কাশফ বা ইলহামের মাধ্যমে জানতে পেরেছিলেন।যে,আল্লাহ তাতে কোনো হেকমত রেখেছেন।এবং আল্লাহর তরফ থেকে কাফশ ইলহামের মাধ্যমে এটাও জানিয়ে দেয়া হয়েছিলো যে,নাম বদলালে হয়তো আল্লাহ সন্তানকে বাঁচাবেন।ইলহাম বা কাফশ যদিও শরীয়তের দলীল নয়,তথাপি নিজের আ'মলের জন্য দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য হয়ে থাকে।তবে এমন কথা দ্বারা যেহেতু আকিদা নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে,তাই এগুলো প্রচার-প্রসার না করাই শ্রেয়।যে মহান ব্যক্তি অনুবাদ করেছেন,সম্ভবত এটা উনার দৃষ্টিগোচর হয়নি বা দৃষ্টির আড়ালে অন্য কেউ করেছে।অথবা উনি ভেবেছিলেন যারা পড়বে, তারা বিষয়টাকে ব্যখ্যা সহ বুঝে নিবে।আল্লাহ-ই ভালো জানেন।
(২)
প্রত্যেক মানুষকে তার পিতার দিকে সম্বন্ধ করেই ডাকা হবে।পিতার ব্যতীত ভিন্ন কোনো পুরুষের দিকে সম্বন্ধ করে ডাকা যাবে না।যেমন রাসূলুল্লাহ সাঃ এর পালকপুত্র হযরত যায়েদ রাযি কে রাসূলুল্লাহ সাঃ এর দিকে সম্বন্ধ করে এভাবে ডাকা হতো,'হে যায়েদ ইবনে মুহাম্মদ!'এটাকে নিষেধ করে নিম্নোক্ত আয়াত নাযিল হয়।আল্লাহ তা'আলা বলেন,
ادْعُوهُمْ لِآبَائِهِمْ هُوَ أَقْسَطُ عِندَ اللَّهِ فَإِن لَّمْ تَعْلَمُوا آبَاءهُمْ فَإِخْوَانُكُمْ فِي الدِّينِ وَمَوَالِيكُمْ وَلَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ فِيمَا أَخْطَأْتُم بِهِ وَلَكِن مَّا تَعَمَّدَتْ قُلُوبُكُمْ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَّحِيمًا
তোমরা তাদেরকে তাদের পিতৃপরিচয়ে ডাক। এটাই আল্লাহর কাছে ন্যায়সঙ্গত। যদি তোমরা তাদের পিতৃ-পরিচয় না জান, তবে তারা তোমাদের ধর্মীয় ভাই ও বন্ধুরূপে গণ্য হবে। এ ব্যাপারে তোমাদের কোন বিচ্যুতি হলে তাতে তোমাদের কোন গোনাহ নেই, তবে ইচ্ছাকৃত হলে ভিন্ন কথা। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।(সূরায়ে আহযাব-০৫)
সুতরাং স্বাভাবিক নিয়ম হলো,প্রত্যেক মানুষকে তার পিতার দিকে সম্বন্ধ করেই ডাকা হবে।কেননা আদিকাল থেকে এমনটাই চলে আসছে।সন্তানকে তার মায়ের দিকে সম্বন্ধ করা জায়েয কি? এ প্রশ্নের জবাবে বলা যায় যে,শরীয়তে মায়ের দিকে সম্বন্ধ করাকে হারাম ঘোষনা দেয়নি।তবে বিভিন্ন হেকমত যেমন যিনা-ব্যভিচার রুখতে পিতার দিকে সম্বন্ধ করাকেই ইসলাম স্বাভাবিক রীতিসিদ্ধ করে দিয়েছে।
জাহিলিয়াত যুগে কিছু কিছু সন্তানকে তাদের মায়ের সুনাম ইত্যাদির কারণে মায়ের দিকেই সম্বন্ধ করে ডাকা হয়েছে।ইসলাম আসার পর অনেক নামকে নিষিদ্ধ করলেও এ সকল নামকে নিষিদ্ধ করেনি।সে হিসেবে আমরা বলবো,কিছু সংখ্যক সাহাবার নামও তাদের মায়ের দিকে সম্বন্ধ করে ছিলো।যদি মায়ের দিকে সম্বন্ধ করা হারাম হতো,তাহলে সেই সব নামকে রাসূলুল্লাহ সাঃ নিষেধ করে দিতেন।
মায়ের দিকে সম্বন্ধ করে কিছু সাহাবায়ে কেরামের নাম।
যেমনঃ (১) বেলাল ইবনে হামামাহ।(২)খুফাফ ইবনে নুদবাহ(৩)বশির ইবনুল খাসাসিয়্যাহ(৪)সা'দ ইবনুল হানযালিয়্যাহ(৫)শুরাহবিল ইবনে হাসানাহ(৬)সাহল ইবনুল হানযালিয়্যাহ(৭)বশির ইবনে আকরাবাহ।
প্রথম শতাব্দীর মিশরের গভর্নর আব্দুল আযিয ইবনে মারওয়ান, উনি উনার মায়ের নাম (লায়লা)সহ প্রশংসাজ্ঞাপক কবিতা শুনতে পছন্দ করতেন।
সুপ্রিয় পাঠকবর্গ ও প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
স্বাভাবিকত পিতার দিকেই সম্বন্ধ করেই মানুষ ডাকা হবে।তবে কোনো হেকমতে যদি মায়ের দিকে সম্বন্ধ হয়েও যায়,তাহলে সেটা নাজায়েয হবে না।
আল্লাহ-ই ভালো জানেন।
উত্তর লিখনে
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ, IOM.