وفي الجامع الصغير ، عن ابن عباس مرفوعا : " الجمعة حج المساكين
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস(রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্নিত, হুজুর(সলল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ফরমান, জুম’আ হল নিঃস্বদের জন্য হজ্জ্ব স্বরুপ।”
ইমাম সৈয়ুতিঃআল- জামেউস সগীরঃ১/২৭২পৃঃ,হাদিসঃ৩৬৩৫
তবে অনেকে এই হাদীসকে মওযু বলে আখ্যায়িত করেছেন।
এ হাদিসের ব্যাপারে বিজ্ঞ মুহাদ্দিসগণের বক্তব্য তুলে ধরা হল:
শাওকানি বলেন, لا أصل له “এ হাদিসটির কোনও ভিত্তি নাই।” [দ্রষ্টব্য: আল ফাওয়াইদুল মাজমুআ/৪৩৭]
সগানি বলেন, এ হাদিসটি বানোয়াট। [মাউযুআতে সাগানি/৫০] এ ছাড়াও অন্যান্য মুহাদ্দিসগণ কেউ যইফ (দুর্বল) আর কেউ বানোয়াট বলেছেন।
আলবানি বলেন, হাদিসটি موضوع বানোয়াট। [দ্রষ্টব্য: যাইফুল জামে/২৬৫৮, সিলসিলাহ যাইফা/১৯১০]
এ ব্যাপারে আরেকটি হাদিস পেশ করা হয়। তা হল,
الدجاجُ غَنَمُ فُقراءِ أُمَّتي والجمُعةُ حجُّ فُقَرائِها
“মুরগি হল, আমার উম্মতের ছাগল আর জুমা হল, গরিবদের হজ্জ।”
নিম্নে এ হাদিসের ব্যাপারে বিজ্ঞ মুহাদ্দিসগণের বক্তব্য তুলে ধরা হল:
এ হাদিস সম্পর্কে ইমাম ইবনে হিব্বান বলেন, موضوع لا أصل له “এটি একটি ভিত্তিহীন বানোয়াট হাদিস।” [কিতবুল মাজরূহীন ২/৪৩৮]
ইবনুল জাওযিও এ হাদিসটিকে তার বানোয়াট হাদিস সংকলন ‘কিতাবুল মাউযুআত’ كتاب الموضوعات কিতাবে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। [৩/১৪৩]
যাহাবি বলেন, باطل “হাদিসটি বাতিল ও বানোয়াট।” [দ্রষ্টব্য: মিযানুল ইতিদাল ৪/৩০১০, তাহযিবুত তাহযিব ১১/৪৮]
তিনি আরও বলেছেন, فيه عبد الله بن يزيد محمش – كذاب “এর বর্ণনা সূত্রে আব্দুল্লাহ বিন ইয়াজিদ মুহাম্মাশ নামক একজন মিথ্যাবাদী রয়েছে।” [দ্রষ্টব্য: তারতীবুল মাউযুআত/২১৮]
(সংগৃহীত)
(০৪)
যদি কোনো ব্যক্তি ফরজ হজ্জ আদায় করতে অক্ষম হয় তাহলে তার পক্ষ থেকে দায়িত্ব নিয়ে অন্য কোনো ব্যক্তির হজ্জ পালনকে বদলি হজ্জ বলে।
খাছআম গোত্রের জনৈকা মহিলা রাসূলুল্লাহ (সাঃ)কে বললেন,
يارسول الله إن فريضة الله على عباده ، أدركت أبي شيخا كبيرا لا يثبت على الراحلة ، أفأحج عنه ؟ قال: نعم ، وذلك في حجة الوداع
‘ইয়া রাসূলুল্লাহ (সাঃ)আল্লাহ তার বান্দাদের ওপর যে ফরজ আরোপ করেছেন তা আমার পিতাকে খুব বৃদ্ধ অবস্থায় পেয়েছে। তিনি বাহনের ওপর স্থির হয়ে বসতে পারেন না। তবে কি আমি তার পক্ষ থেকে হজ্জ আদায় করে দেব? তিনি বললেন, হাঁ। ঘটনাটি ছিল বিদায় হজ্জের সময়কার।
(বুখারি : হাদিস নং ১৪১৭)
আবু রাযিন আল আকিলি থেকে বর্ণিত। তিনি এসে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ)কে জিজ্ঞাসা করে বললেন,
قال يا رسول الله إن أبي شيخ كبير لا يستطيع الحج والعمرة والظعن فقال حج عن أبيك واعتمر
আমার পিতা খুব বৃদ্ধ, তিনি হজ্জ ও উমরা পালন করতে পারেন না। সওয়ারির ওপর উঠে চলতেও পারেন না। রাসূলুল্লাহ (সাঃ)বললেন, তোমার পিতার পক্ষ থেকে হজ্জ ও উমরা করো।
(তিরমিযী : হাদিস নং ৮৫২)
★বদলী হজ্ব এমন লোককে দিয়ে করানো উচিত, যিনি নিজের ফরয হজ্ব আদায় করেছেন। যে ব্যক্তি নিজের হজ্ব আদায় করেনি সে যদি এমন হয় যে, তার উপর হজ্ব ফরয নয় তাহলে তাকে দিয়েও বদলী করানো জায়েয আছে। তবে তা মাকরূহ তানযীহি। আর যদি তার উপর হজ্ব ফরয হয়ে থাকে, কিন্তু সে এখনও তা আদায় করেনি তাহলে তার জন্য বদলী হজ্ব করা মাকরূহ তাহরীমী তথা নাজায়েয। তবে কেউ এমন ব্যক্তির দ্বারা বদলী হজ্ব করালে প্রেরণকারীর হজ্ব আদায় হয়ে যাবে। পুনরায় তাকে বদলী করাতে হবে না।
عن ابن عباس أن رسول الله سمع رجلا يقول لبيك عن شبرمة فقال من شبرمة؟ قال أخي أو قريب لي. قال :هل حججت؟ قال لا قال حج عن نفسك ثم حج عن شبرمة
রাসূলুল্লাহ (সাঃ)এক ব্যক্তিকে বলতে শুনলেন, لَبَّيْكَ عَنْ شُبْرَمَةَ- শুবরামার পক্ষ থেকে লাববাইক। তিনি বললেন, শুবরামা কে? লোকটি বললেন, আমার ভাই বা আত্মীয়। তিনি বললেন, তুমি কি নিজের হজ্জ করেছ? লোকটি বললেন, না। তিনি বললেন, আগে নিজের হজ্জ করো। তারপর শুবরামার হজ্জ।
(আবুদাউদ : হাদিস নং ১৪২৪)
★যেভাবে নিজের হজ্ব আদায় করা হয় সেভাবেই বদলী হজ্বও আদায় করা হয়। পার্থক্য শুধু এইটুকু যে, নিয়ত ও তালবিয়ার সময় বদলী হজ্বে প্রেরণকারীর পক্ষ থেকে হজ্বের নিয়ত করা হয়। এরপর হজ্বের সকল কাজ এক ও অভিন্ন।
★যার উপর হজ্ব ফরয হয়েছে এবং হজ্ব আদায়ের শারীরিক সক্ষমতাও আছে তার নিজে হজ্ব করা জরুরি। এক্ষেত্রে অন্যকে দিয়ে বদলী হজ্ব করানো জায়েয নয়। বদলী করালে এর দ্বারা তার ফরয হজ্ব আদায় হবে না।
★যার বদলী হজ্ব আদায় করা হবে তার পক্ষ থেকে আদেশ বা অনুমতি থাকতে হবে। তার আদেশ বা অনুমতি ছাড়া কেউ তার পক্ষ থেকে বদলী হজ্ব করলে এটি তার নফল হজ্ব গণ্য হবে।
★কোনো ব্যক্তির উপর হজ্ব ফরয ছিল, কিন্তু সে তা আদায় করেনি এবং তার পক্ষ থেকে আদায়ের অসিয়তও করেনি। এ অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে। তার পক্ষ থেকে ওয়ারিশদের বদলী হজ্ব করা বা করানো জরুরি নয়। তবে কোনো ওয়ারিশ বা অন্য কেউ স্বেচ্ছায় তার পক্ষ থেকে বদলী হজ্ব করলে এর দ্বারা ঐ মৃত ব্যক্তির ফরয হজ্ব আদায় হয়ে যাওয়ার আশা করা যায়।
হযরত বুরাইদাহ রা. বলেন, জনৈক মহিলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার মা ইন্তিকাল করেছেন। তিনি হজ্ব করেননি। আমি কি তার পক্ষ থেকে হজ্ব করতে পারি?’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘হ্যাঁ, তুমি তার পক্ষ থেকে হজ্ব করো।’ (সহীহ মুসলিম ১/৩৬২)
★বদলী হজ্বের জন্য নিজ দেশ থেকেই কাউকে পাঠাতে হবে। নিজ দেশ থেকে কাউকে পাঠানোর সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও অন্য দেশে অবস্থানরত কাউকে দিয়ে বদলী হজ্ব করানো হলে প্রেরণকারীর ফরয হজ্ব আদায় হবে না। এক্ষেত্রে নিজ দেশ থেকে পুনরায় বদলী হজ্ব করাতে হবে।