আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
2,875 views
in কুরবানী (Slaughtering) by (22 points)
closed by
ক) কেউ গরু পালে। সে এক বছর আগেই নিয়ত করলো যে আগামী বছর এই পশুতে কুরবানি দিবে। তো এই এক বছর এই গরুর দুধ, হাল চাষের সব টাকা সদকা করতে হবে নাকি কোন নির্দিষ্ট সময় আছে?

খ) গর্ভবতী পশু কুরবানীর পরে পেটের মধ্যে বাচ্চা থাকলে তাকে জবাই করে মাংস সাদকাহ করতে হবে? নাকি বাচ্চা সাদকাহ করে দিলেও হবে?

গ) গরিব হলেও কুরবানি দিতে চাইলে, যদি কুরবানির পশুর কোন ক্ষতি হয় (যেমনঃসব দাঁত পড়ে গেল) তবে তার আবার গরু কিনতে হবে। কারণ গরীব নিজের উপরে চাপিয়ে নিছে তাই কোন ছাড় নাই। কিন্তু ধনী হলে আগেরটি দিয়েও হবে কিন্তু অনুত্তম।
কিন্তু পশু হারিয়ে গেলে সেই বিধানে গরিবকে কেন আবার কেনা লাগবে না আর ধনীকে কেন কিনতে হবে? এক্ষেত্রে কেন গরীবকে ছাড় দেওয়া হলো আর ধনীকে দেওয়া হলো না।

ঘ) বিসমিল্লাহ বলে কুরবানি না করলে সেই পশু কি করবো? নফল কুরবানী বা ওয়াজিব দুই ভাবেই বলুন।

ঙ) কুরবানির নেসাব কি রূপার হিসেবে (৫০,০০০ টাকা) হলেও দেওয়া লাগবে? তাহলে তো কুরবানি দেওয়ার পরে আর নিসাব পরিমাণ হথাকে না। এক্ষেত্রে কোন ছাড় আছে কি?
চ) কুরবানির নেসাব না থাকলেও কুরবানী দেওয়া নফল কি?
ছ) এমন দুর্বল পশু কুরবানী করা জায়েয হবে না দুর্বলতার কারণে যার অস্থিতে মগজ শুকিয়ে গেছে। এইখানে মগজ মানে কি? মগজ তো মাথাতে থাকে। অস্থিতে মগজ মানে কি

জ) i) ওসিয়ত এর / মানত এর কুরবানি কি ঈদুল আযহার কুরবানির সাথে ভাগে দেওয়া যাবে?

ii) উভয় ক্ষেত্রেই সব কি গরিবদের দান করতে হবে?

ঝ) এম্নিতেই নফল কুরবানির কসাইকে কুরবানির পশুর মাংস থেকে পারিশ্রমিক দেওয়া যাবে?
ঞ) প্রক্রিয়াজাত গরু/মহিষ/উট (ছাগলকে খাসি করলে তো জায়েয) কি জায়েয কুরবানির জন্য?
ট) কুরবানির পশুর বয়স হয়েছে কিন্তু দাঁত উঠে নাই। এক্ষেত্রে কি তা দিয়ে কুরবানি হবে?
ঠ) কুরবানির পশুতে আকিকা করা যায়। এর সবটাই দান করে দিতে হবে?
closed
by (583,410 points)
edited by
জবাব দেয়া হবে ইনশা আল্লাহ। 

1 Answer

+1 vote
by (559,260 points)
selected by
 
Best answer
জবাব
بسم الله الرحمن الرحيم 


(ক)
শরীয়তের বিধান হলো কুরবানীর প্রানী যদি প্রথম থেকেই লালন পালন করা হয়,সেক্ষেত্রে তার খাবার যদি ঘর থেকেই দেওয়া হয়,তাহলে দুধ খাওয়া,অন্যান্য ভাবে তার থেকে উপকৃত হওয়া জায়েজ আছে।

فتاوی ہندیہ

"فإن كان يعلفها فما اكتسب من لبنها أو انتفع من روثها فهو له، ولايتصدق بشيء، كذا في محيط السرخسي."

(الباب السادس،ج:5،ص:301،ط:مکتبه رشیدیه)
সারমর্মঃ 
যদি তার খাদ্য দেওয়া হয়,তাহলে তার দুধ,গোবর থেকে যাহা উপার্জন করবে,সেটক তারই।
সেটি আর ছদকাহ করতে হবেনা।

(খ)
কুরবানীর পশুর বাচ্চা হলে, কুরবানীর পশু বাচ্চা দিলে ওই বাচ্চা জবাই না করে জীবিত সদকা করে দেওয়া উত্তম। যদি সদকা না করে তবে কুরবানীর পশুর সাথে বাচ্চাকেও জবাই করবে এবং গোশত সদকা করে দিবে। [ আলমগীরী ৫/৩০১, রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৩] 

(গ)
গরীব  হলে (যার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়) তার পশু হারিয়ে গেলে তার জন্য আরেকটি পশু কুরবানী করা ওয়াজিব নয়।-বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৬, খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩১৯

★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই, 
শরীয়তের বিধান হলো, কুরবানীর নিয়তে ভালো পশু কেনার পর যদি তাতে এমন কোনো দোষ দেখা দেয় যে কারণে কুরবানী জায়েয হয় না তাহলে ওই পশুর কুরবানী সহীহ হবে না। এর স্থলে আরেকটি পশু কুরবানী করতে হবে। তবে ক্রেতা গরীব হলে ত্রুটিযুক্ত পশু দ্বারাই কুরবানী করতে পারবে। -খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩১৯, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৬, ফাতাওয়া নাওয়াযেল ২৩৯, রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৫
,
★সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে গরিব উক্ত ত্রুটিযুক্ত পশু দিয়েই কুরবানী দিবে।
ধনী নতুন করে আরেকটি পশু ক্রয় করবে।   

(ঘ)
যদি ভুলক্রমে হয়,তাহলে উভয় কুরবানীতেই কোনো সমস্যা নেই।
,
কেননা শরীয়তের বিধান হলোঃ
জবাইয়ের সময় বিসমিল্লাহ বলা ওয়াজিব। ইচ্ছাকৃত বিসমিল্লাহ ছেড়ে দিলে সে পশু খাওয়া হারাম হয়ে যাবে। কেননা, আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَلَا تَأْكُلُوا مِمَّا لَمْ يُذْكَرِ اسْمُ اللَّهِ عَلَيْهِ وَإِنَّهُ لَفِسْقٌ
যেসব জন্তুর উপর আল্লাহর নাম উচ্চারিত হয় নি, সেগুলো থেকে ভক্ষণ করো না; এ ভক্ষণ করা গোনাহ। (সুরা আনআম-১২১)
তবে ভুলে বিসমিল্লাহ ছুটে গেলে জবাই সহীহ হয়ে যায়। ‘বিসমিল্লাহ’ ভুলে যাওয়ার কারণে জবাইকৃত পশু-পাখি হারাম হয়ে যায় না।
ভুলবশত বিসমিল্লাহ না পড়ে জবাই করা সম্পর্কে তাবিঈ ইবরাহীম নাখায়ী রহ.-কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, এতে কোনো সমস্যা নেই। (মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক ৮৫৪০)
হাদিসে এসেছে, আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
  إِنَّ اللَّهَ تَجَاوَزَ لِي عَنْ أُمَّتِي الْخَطَأَ وَالنِّسْيَانَ ، وَمَا اسْتُكْرِهُوا عَلَيْهِ
নিশ্চয় আল্লাহ আমার উম্মতের ভুল, বিস্মৃতি এবং বাধ্য হয়ে করা বিষয় ক্ষমা করেছেন। (ইবন মাজাহ ২০৪০)

(ঙ)
হ্যাঁ উক্ত টাকা প্রয়োজন অতিরিক্ত হলেই কুরবানী ওয়াজিব হবে।
যদিও এর পর নেসাব আর বাকি না থাকে।
,
(চ)
নফল হলো অতিরিক্ত আমল।
যে কেউ চাইলে আদায় করতে পারে। 

(ছ)
হাড্ডির মধ্যেও মগজ থাকে,যেটা চুষলে পাওয়া যায়।

(জ)
অছিয়তের কুরবানী ঈদুল আযহার কুরবানীতে দেওয়া যাবে।
মান্নতের কুরবানীর ক্ষেত্রে যেহেতু কোনো পশুকেই মান্নত করা হয়,তাই মান্নত কৃত পূর্ণ এক পশুই কুরবানী দিতে হবে।
কুরবানীর দিন গুলোতে সেটি আদায় করবে।
শরীকানা কুরবানীতে অংশ নিবেনা।
,
তবে কেহ কেহ বলেন যে এভাবে কুরবানী দেয়া যাবে।

الفتاوى الهندية (5 / 304):

" وَلَوْ أَرَادُوا الْقُرْبَةَ - الْأُضْحِيَّةَ أَوْ غَيْرَهَا مِنْ الْقُرَبِ - أَجْزَأَهُمْ سَوَاءٌ كَانَتْ الْقُرْبَةُ وَاجِبَةً أَوْ تَطَوُّعًا أَوْ وَجَبَ عَلَى الْبَعْضِ دُونَ الْبَعْضِ، وَسَوَاءٌ اتَّفَقَتْ جِهَاتُ الْقُرْبَةِ أَوْ اخْتَلَفَتْ بِأَنْ أَرَادَ بَعْضُهُمْ الْأُضْحِيَّةَ وَبَعْضُهُمْ جَزَاءَ الصَّيْدِ وَبَعْضُهُمْ هَدْيَ الْإِحْصَارِ وَبَعْضُهُمْ كَفَّارَةً عَنْ شَيْءٍ أَصَابَهُ فِي إحْرَامِهِ وَبَعْضُهُمْ هَدْيَ التَّطَوُّعِ وَبَعْضُهُمْ دَمَ الْمُتْعَةِ أَوْ الْقِرَانِ وَهَذَا قَوْلُ أَصْحَابِنَا الثَّلَاثَةِ رَحِمَهُمْ اللَّهُ تَعَالَى، وَكَذَلِكَ إنْ أَرَادَ بَعْضُهُمْ الْعَقِيقَةَ عَنْ وَلَدٍ وُلِدَ لَهُ مِنْ قَبْلُ، كَذَا ذَكَرَ مُحَمَّدٌ - رَحِمَهُ اللَّهُ تَعَالَى - فِي نَوَادِرِ الضَّحَايَا، وَلَمْ يَذْكُرْ مَا إذَا أَرَادَ أَحَدُهُمْ الْوَلِيمَةَ وَهِيَ ضِيَافَةُ التَّزْوِيجِ وَيَنْبَغِي أَنْ يَجُوزَ، وَرُوِيَ عَنْ أَبِي حَنِيفَةَ - رَحِمَهُ اللَّهُ تَعَالَى - أَنَّهُ كَرِهَ الِاشْتِرَاكَ عِنْدَ اخْتِلَافِ الْجِهَةِ، وَرُوِيَ عَنْهُ أَنَّهُ قَالَ: لَوْ كَانَ هَذَا مِنْ نَوْعٍ وَاحِدٍ لَكَانَ أَحَبَّ إلَيَّ، وَهَكَذَا قَالَ أَبُو يُوسُفَ - رَحِمَهُ اللَّهُ تَعَالَى -، وَإِنْ كَانَ كُلُّ وَاحِدٍ مِنْهُمْ صَبِيًّا أَوْ كَانَ شَرِيكُ السَّبْعِ مَنْ يُرِيدُ اللَّحْمَ أَوْ كَانَ نَصْرَانِيًّا وَنَحْوَ ذَلِكَ لَا يَجُوزُ لِلْآخَرَيْنِ أَيْضًا كَذَا فِي السِّرَاجِيَّةِ".
সারমর্মঃ-
যদি কুরবানীর পশুতে ওয়াজিব,নফল,অথবা কাহারো উপর ওয়াজিব হয়েছে,এমন কিছুর নিয়ত করে,এক্ষেত্রে সকলের বিষয় কুরবানী হোক বা ভিন্ন ভিন্ন হোক,সকলেরটাই আদায় হয়ে যাবে। (তবে বিষয়টি মতবিরোধ পূর্ণ।)

এক্ষেত্রে গোশত খাওয়ার বিধানঃ-
এক্ষেত্রে মান্নতের অংশের গোশত খাওয়া জায়েজ নেই। ফকির মিসকিনকে পুরো অংশই দান করে দিতে হবে।
কুরবানীর অংশ খাওয়া যাবে।
(তবে বিষয়টি মতবিরোধ পূর্ণ।) তাই সেই পশুর গোশত না খাওয়ার পরামর্শ থাকবে। 

(!!) 
অছিয়তের কুরবানী সকলেই খেতে পারবে।
মান্নতের কুরবানীর গোশত ইত্যাদি  সবই গরিব মিসকিনকে দিয়ে দিতে হবে।

(ঝ)
না,দেওয়া যাবেনা।
,
(ঞ)
হ্যাঁ জায়েজ আছে।
,
(ট)
হ্যাঁ সেই পশুর কুরবানী ছহীহ হবে।
,
(ঠ)
হ্যাঁ কুরবানীর পশুতে আকীকা করা যাবে।
আকীকার ভাগ নেওয়া যাবে।
সবটাই দান করতে হবেনা।
এটি সকলেই খেতে পারবে।
,
আকীকার গোশত পিতা-মাতা ও অন্যান্য আত্মীয়স্বজন ধনী-গরীব নির্বিশেষে সকলেই খেতে পারবে। হযরত আয়েশা রাযি. বলেন, (আকীকার গোশত) নিজে খাবে, অন্যদের খাওয়াবে এবং সদকা করবে। (মুসতাদরাকে হাকেম ৫/৩৩৮)


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

by (22 points)
ছ এর প্রকৃত উত্তর 

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

0 votes
1 answer 2,400 views
0 votes
1 answer 250 views
...