আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

+6 votes
600 views
in ঈমান ও বিশ্বাস (Faith and Belief) by (10 points)
edited by

بِسْمِ الّٰلهِ الرَّحْمٰنِ الرَحِيْمِ

শাইখ আসসালামু'আলাইকুম

  • অন্যের দেবতাকে কখনো গালি দিবেন না। অন্য ধর্মের আচার অনুষ্ঠান সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য করবেন না। 
  • যেভাবে আপনার ধর্মের প্রতি অন্য ধর্মাবলম্বীদের সম্মান আপনি প্রত্যাশা করেন, নিজেও এইরকম শ্রদ্ধাশীল হন। 
  • যে কোন ধর্মের উপাসনালয় বা ইবাদতখানাকে সম্মানের দৃষ্টিতে দেখুন। এর চারপাশ অপরিচ্ছন্ন করা থেকে বিরত থাকুন।
  • সাপ্তাহিক প্রার্থনা ও ধর্মীও অনুষ্ঠান চলাকালে আশেপাশে শোরগোল হইচই ও লাউডস্পিকার অডিও বাজানো থেকে বিরত থাকুন। 
  • আপনার সন্তানকে ছোটবেলা থেকেই অন্য ধর্ম ও ধর্মাবলম্বীদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে শেখান। 
  • নিজ ধর্ম পালনের পাশাপাশি অন্যদের নিজ নিজ ধর্মপালনের সুযোগ করে দিন। এটাই ইসলামের শিক্ষা।

-----------------------------------------------------------------------------------

আমার প্রশ্ন হল, অন্য ধর্মের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের মাত্রা কতটুকু হওয়া উচিৎ? আমার কেন যেন মনে হচ্ছে, এখানের সব গুলো পয়েন্ট যুক্তি সঙ্গত নয়, বিভ্রান্তিকর কিছু কথা চলে এসেছে। আমরা জানি যে, আল্লাহর ইবাদত এবং সকল প্রকার ভাল কাজ আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়ার প্রথম ও প্রধান শর্ত হল কুফর-শিরক মুক্ত বিশুদ্ধ ইমান। ওস্তাদ, উপরের পয়েন্ট গুলো যদি আলোচনা করতেন, তাহলে বিভ্রান্তি দূর হবে। ইন শা আল্লাহ 

by (0 points)
ওস্তাদ, এই ফতোয়া টা নিয়ে অনেক সন্দেহ হচ্ছে।অনেক প্রশ্ন চলে আসছে মনে।মনে হয় উত্তর টা ঠিকভাবে এখানে বুঝানো হয় নি।
by (10 points)
আমারও তাই মনে হচ্ছে, এখানের সব গুলো পয়েন্ট যুক্তি সঙ্গত নয়, বিভ্রান্তিকর কিছু কথা চলে এসেছে। এজন্য মুহতারামের জবাবের অপেক্ষায় আছি।

1 Answer

+1 vote
by (660 points)
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম
উত্তর

মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনুল কারীমে ইরশাদ করেছেন-
لا اكراه في الدين، قد تبين الرشد من الغي،
'ধর্মের ব্যাপারে কোন জোরজবরদস্তি নেই। ভ্রান্ত মত ও পথ থেকে সঠিক মত ও পথ সুস্পষ্ট হয়ে গেছে।' (সূরা বাকারা : ২৫৬)
অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে-
وَلَا تَسُبُّوا۟ ٱلَّذِينَ يَدْعُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِ فَيَسُبُّوا۟ ٱللَّهَ عَدْوًۢا بِغَيْرِ عِلْمٍ كَذَٰلِكَ زَيَّنَّا لِكُلِّ أُمَّةٍ عَمَلَهُمْ ثُمَّ إِلَىٰ رَبِّهِم مَّرْجِعُهُمْ فَيُنَبِّئُهُم بِمَا كَانُوا۟ يَعْمَلُونَ،
'তোমরা তাদেরকে মন্দ বলো না, যাদের তারা আরাধনা করে আল্লাহকে ছেড়ে। তাহলে তারা ধৃষ্টতা করে অজ্ঞতাবশতঃ আল্লাহকে মন্দ বলবে। এমনিভাবে আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের দৃষ্টিতে তাদের কাজ কর্ম সুশোভিত করে দিয়েছি। অতঃপর স্বীয় পালনকর্তার কাছে তাদেরকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। তখন তিনি তাদেরকে বলে দেবেন যা কিছু তারা করত।' (সূরা আল আনআম, আয়াত: ১০৮)
পবিত্র কুরআনুল কারীমে সুস্পষ্ট ভাষায় অমুসলিম হওয়া সত্বেও সম্পর্ক রক্ষা করতে বলা হয়েছে মহান আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেছেন-
ووصينا الانسان بوالديه حسانا، وان جاهداك لتشرك بي ماليس لك به علم فلا تطعهما،
'আমি মানুষকে বাবা-মায়ের সাথে সুন্দর আচরণের আদেশ করেছি তবে তারা যদি তোমাদের ওপর বল প্রয়োগ করে আমার সাথে এমন কিছু শরিক করতে যে সম্পর্কে তোমার কোন জ্ঞান নেই তাহলে তাদের কথা মানবে না। (সূরা আনকাবুত : ৮)
সূরা লোকমান এই বিষয়ে ইরশাদ হয়েছে-
وان جاهداك على ان تشرك بي ماليس لك به علم فلا تطعهما،وصاحبهما في الدنيا معروفا واتبع سبيل من اناب الي ثم الي مرجعكم فانبئكم بما كنتم تعملون،
'তারা যদি এমন কাউকে আমার সমকক্ষ সাব্যস্ত করার জন্য তোমাকে চাপ দেয়, যে সম্পর্কে তোমার কোন জ্ঞান নেই তাহলে তুমি তাদের কথা মানবে না। তবে দুনিয়ায় তাদের সাথে সদাচরণ করো। এমন ব্যক্তির পথ অবলম্বন করো যে একনিষ্ঠভাবে আমার দিকে অভিমুখি হয়েছে। অতঃপর তোমাদের সকলকে আমার কাছেই ফিরে আসতে হবে তখন আমি তোমাদেরকে অবহিত করব তোমরা যা কিছু করতে।' (সূরা লোকমান : ১৫)
হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে-
عن جابر بن عبد الله رضي الله عنهما، قال : مر بنا جنازة، فقام لها النبي صلى الله عليه وسلم، وقمنا به، فقلنا : يا رسول الله، إنها جنازة يهودي. قال : " إذا رأيتم الجنازة فقوموا ".
'হযরত জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন একদিন আমাদের পাশ দিয়ে একটি লাশ নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। তা দেখে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে গেলেন। তার দেখাদেখি আমরাও দাঁড়ালাম আমরা তাকে বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! এটা তো এক ইহুদীর লাশ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন যখন কোন লাশ নিতে দেখবে তখন দাঁড়াবে। (সহিহ বুখারী : ১৩১১)
অন্য এক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে-
كان سهل بن حنيف ، وقيس بن سعد قاعدين بالقادسية فمروا عليهما بجنازة، فقاما فقيل لهما : إنها من أهل الأرض، أي من أهل الذمة، فقالا : إن النبي صلى الله عليه وسلم مرت به جنازة فقام، فقيل له : إنها جنازة يهودي. فقال : " أليست نفسا " ؟
'হযরত সাহল ইবনে হুনাইফ ও হযরত কায়েস ইবনে সাদ রাদিয়াল্লাহু আনহুমা একদিন বসা ছিলেন। তারা তখন কাদেসিয়ায় থাকতেন। পাশ দিয়ে একটি লাশ নেওয়া হচ্ছিল তা দেখে তারা দুজনই দাঁড়ালেন উপস্থিত লোকেরা তাদেরকে জানালো এটি একটি অমুসলিমের লাশ। তখন তারা শোনালেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পাশ দিয়ে একবার এক লাশ নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। তিনি যখন তা দেখে দাঁড়ালেন উপস্থিত সাহাবায়ে কেরাম তখন বললেন এতো ইহুদির লাশ! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, সে কি মানুষ নয়?
(নোট : কারো জানাজা নিয়ে যাওয়ার সময় তা দেখে দাঁড়ানো মুস্তাহাব কিনা এ বিষয়ে ইমামগনের মাঝে মত ভিন্নতা রয়েছে। এটি এখানে আলোচ্য বিষয় না হওয়ায় তা উল্লেখ করা হয়নি)
এই হাদীছ দু'টি থেকে অমুসলিমদের প্রতি সম্মান, ভদ্রতা ও সুরক্ষা ব্যাপারে ইসলামের দিকনির্দেশনা স্পষ্ট।
এক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
ألا من ظلم معاهدا أو انتقصه، أو كلفه فوق طاقته، أو أخذ منه شيئا بغير طيب نفس - فأنا حجيجه يوم القيامة ".
'জেনে রেখো, কোন ব্যক্তি যদি ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের উপর জুলুম করে কিংবা তাদের অধিকার ক্ষুন্ন করে অথবা সামর্থের বাইরে তাদের উপর বোঝা চাপিয়ে দেয় অথবা জোরপূর্বক তার কাছ থেকে কোন জিনিস গ্রহণ করে তাহলে আমি কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলার দরবারে তার বিরুদ্ধে কথা বলব।' (সুনানু আবি দাউদ : ৩০৫২)
অন্য ধর্মের লোকদের প্রতি সম্মান অসৌজন্যমূলক আচরণ রক্ষার পাশাপাশি ইসলাম অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে এ বিষয়টি উপস্থাপন করেছে যে, কোন মুসলমান যেন কাফেরদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ না করে। সৌজন্যে রক্ষা কিংবা উদারতা প্রদর্শন করতে গিয়ে যেন নিজেদের দ্বীনদারী আক্রান্ত না হয়। দ্বীনের ব্যাপারে আপোস করা কোনভাবেই বৈধ নয়। সম্মান অসদাচরণের ক্ষেত্রে অন্য ধর্মাবলম্বীকে মুসলমান ভাই থেকে প্রাধান্য দেওয়াও বৈধ নয়।
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনুল কারীমে ইরশাদ করেছেন-
لَّا يَنْهَىٰكُمُ ٱللَّهُ عَنِ ٱلَّذِينَ لَمْ يُقَٰتِلُوكُمْ فِى ٱلدِّينِ وَلَمْ يُخْرِجُوكُم مِّن دِيَٰرِكُمْ أَن تَبَرُّوهُمْ وَتُقْسِطُوٓا۟ إِلَيْهِمْ إِنَّ ٱللَّهَ يُحِبُّ ٱلْمُقْسِطِينَ، إِنَّمَا يَنْهَىٰكُمُ ٱللَّهُ عَنِ ٱلَّذِينَ قَٰتَلُوكُمْ فِى ٱلدِّينِ وَأَخْرَجُوكُم مِّن دِيَٰرِكُمْ وَظَٰهَرُوا۟ عَلَىٰٓ إِخْرَاجِكُمْ أَن تَوَلَّوْهُمْ وَمَن يَتَوَلَّهُمْ فَأُو۟لَٰٓئِكَ هُمُ ٱلظَّٰلِمُونَ
'ধর্মের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেনি এবং তোমাদেরকে দেশ থেকে বহিস্কৃত করেনি, তাদের প্রতি সদাচরণ ও ইনসাফ করতে আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করেন না। নিশ্চয় আল্লাহ ইনসাফকারীদেরকে ভালবাসেন। আল্লাহ কেবল তাদের সাথে বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করেন, যারা ধর্মের ব্যাপারে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে, তোমাদেরকে দেশ থেকে বহিস্কৃত করেছে এবং বহিস্কারকার্যে সহায়তা করেছে। যারা তাদের সাথে বন্ধুত্ব করে তারাই জালেম। (সূরা আল-মুমতাহিনাহ, আয়াত: ৮- ৯)
শরীয়তের সীমারেখায় থেকে অন্য ধর্মাবলম্বীদের প্রতি সম্মান সুন্দর আচরণের মাধ্যমে তাদেরকে ইসলামের দিকে দাওয়াত দেওয়ার ক্ষেত্র সৃষ্টি হয় এমনকি এই সম্মান ও সুন্দর আচরণও দাওয়াতের কাজ করে। নবীজির যুগে ও খোলাফায়ে রাশেদীনের খেলাফত কালে ব্যক্তিপর্যায়ে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের নিজ নিজ ধর্ম পালনে বাধা প্রদানের কোনো নজির নেই। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে বুঝার তাওফিক দান করুন। আমিন।

আল্লাহ তাআলা ভালো জানেন।

উত্তর প্রদান
মুফতি মুহাম্মাদ মাহবুবুল হাসান
ফাতওয়া বিভাগ, IOM
by (10 points)
জী। ইন শা আল্লাহ। 

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...