আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

+1 vote
976 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (1 point)
আলহামদুলিল্লাহ আমি ১.৫ বছর ধরে পর্দা শুরু করেছি। কিছু কিছু মানার চেষ্টা করছি।আমি জব করবো না দেখে আমার ফ্যামিলি বিয়ে দিতে চাচ্ছে এবং আমিও রাজি হয়েছি বিয়ে করতে।কিন্তু আমি অনার্সটা কমপ্লিট করতে চাচ্ছি,,২ বছরের মতো লাগবে আমার পড়া শেষ করতে।এমতাবস্থায় আমিকি জন্মনিয়ন্ত্রণ করতে পারবো???যেহেতু আমার বেবি দেখার কেউ নেই।।

1 Answer

0 votes
by (589,260 points)
edited by

জন্মনিয়ন্ত্রণ এবং ইসলাম

ইসলামী শরীয়তের মূল উৎস হলো কুরআনে কারীম এবং সুন্নাতে রাসূল সাঃ। জন্মনিয়ন্ত্রণ কোনো নতুন ইস্যু নয়।বরং বিভিন্ন প্রয়োজনে বিভিন্ন সূরতে প্রত্যেক যামানায় এবং দেশে দেশে এই ইস্যুর চর্চা হয়ে আসছে।রাসূলুল্লাহ সাঃ এর যামানা এবং কুরআন অবতীর্ণ হওয়ার সময়েও বিভিন্ন উদ্দেশ্য-কে সামনে রেখে উক্ত ইস্যুর ভিন্ন ভিন্ন সূরত নিয়ে বেশ আলোচনা উঠেছিলো।এবং রাসূল সাঃ এর সামনেও জন্মনিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে সুওয়াল উঠেছিলো।এমনকি রাসূল সাঃ এর পবিত্র মূখে সেই প্রশ্নের জবাবও উচ্ছারিত হয়েছিলো।একজন মুসলমানের জন্য কোনো মাসআলা সম্পর্কে সঠিক জ্ঞানাহরণে জন্য এটাই সর্বোত্তম পদ্ধতি।এপদ্ধতিতেই মূলত শরীয়তের বিভিন্ন বিষয় নিঃসংকোচে নির্ধারিত হয়।

কুরআন-সুন্নাহকে গভীরভাবে অনুসন্ধান করার পর দু'টি পদ্ধতিই আমাদের সামনে আসে।


  • এক. জন্মনিরোধ-  অর্থাৎ এমন কোনো পদ্ধতি গ্রহণ করা যার ধরুণ মানুষ স্থায়ীভাবে সন্তান জন্ম দানের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। 

  • দুই. জন্মনিয়ন্ত্রণ-  সন্তান জন্মদানের ক্ষমতা অবশিষ্ট থাকাবস্থায় এমন কোনো পদ্ধতি গ্রহণ করা যার ধরুণ বর্তমানে সন্তান জন্ম নিবে না।

আমরা এখন এ দু'টি বিষয়ে কুরাআন হাদীসের আলোকে বিস্তারিত আলোচনা পেশ করব।যাতে করে মাসআল বুঝতে এবং উক্ত বিষয়ের ফলাফল নির্ধারণ করতে কোনো অসুবিধে না হয়।


এক. জন্মনিরোধ

এর যে পদ্ধতি রাসূলুল্লাহ সাঃ এর যামানায় প্রসিদ্ধ ছিলো,সেটার নাম হল, ইখতেসা।ইখতেসা বলা হয়-অন্ডকোষ দু'টি কে বের করে যৌনক্ষমতাকে চিরতরে খতম করে দেয়া।হাদীসে এ বিষয়ের কিছু প্রশ্ন উত্তাপিত হয়েছিলো।সকল জবাবেই এই আ'মলকে অত্যান্ত শক্তভাবে নিষেধ করা হয়েছে।এবং হারাম ঘোষনা করা হয়েছে।

এরকম একটি প্রশ্নের ঘটনা সহীহ বুখারীতে উল্লেখিত হয়েছে-

 ‘হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত।

عن قيس، قال: قال عبد الله: كنا نغزو مع رسول الله صلى الله عليه وسلم، وليس لنا شيء، فقلنا: ألا نستخصي؟ " فنهانا عن ذلك، ثم رخص لنا أن ننكح المرأة بالثوب، ثم قرأ علينا: {يا أيها الذين آمنوا لا تحرموا طيبات ما أحل الله لكم، ولا تعتدوا إن الله لا يحب المعتدين} [المائدة: ٨٧] "،

তিনি বলেন, আমরা রাসূল  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএর সঙ্গে জিহাদে অংশ নিতাম; কিন্তু আমাদের কোন কিছু ছিল না। সুতরাং আমরা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে বললাম, আমরা কি খাসি হয়ে যাব? তিনি আমাদেরকে এ থেকে নিষেধ করলেন এবং কোন মহিলার সঙ্গে একটি কাপড়ের বদলে হলেও বিয়ে করার অনুমতি দিলেন এবং আমাদেরকে এই আয়াত পাঠ করে শোনালেনঃ অর্থাৎ, ‘‘ওহে ঈমানদারগণ! পবিত্র বস্তুরাজি যা আল্লাহ তোমাদের জন্য হালাল করে দিয়েছেন সেগুলোকে হারাম করে নিও না আর সীমালঙ্ঘন করো না, অবশ্যই আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীদের ভালবাসেন না।’’ (আল-মায়িদাহ ৫:৮৭)সহীহ বুখারী(শামেলা নুসখা)৫০৭৫(আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৭০২, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৭০৫ প্রথমাংশ)

এই হাদীস দ্বারা বুঝা গেল যে,স্থায়ীভাবে জন্মনিরোধ এর আ'মল উপরোক্ত আয়াত দ্বারা হারাম সাব্যস্ত হয়েছে।এবং এটা সীমালঙ্ঘন এর অন্তর্ভুক্ত।


দ্বিতীয় হাদীস

হযরত আবু হুরায়রা রাযি থেকে বর্ণিত,

عن أبي هريرة رضي الله عنه، قال: قلت: يا رسول الله إني رجل شاب، وأنا أخاف على نفسي العنت، ولا أجد ما أتزوج به [ص: ٥]النساء، فسكت عني، ثم قلت: مثل ذلك، فسكت عني، ثم قلت: مثل ذلك، فسكت عني، ثم قلت مثل ذلك، فقال النبي صلى الله عليه وسلم: «يا أبا هريرة جف القلم بما أنت لاق فاختص على ذلك أو ذر»

তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি একজন যুবক। আমার ভয় হয় যে, আমার দ্বারা না জানি কোন গুনাহর কাজ সংঘটিত হয়ে যায়; অথচ আমার কাছে নারীদেরকে বিয়ে করার মতো কিছু নেই। এ কথা শুনে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চুপ থাকলেন। আমি আবার ও কথা বললাম। তিনি চুপ থাকলেন। আমি আবারও ও কথা বললাম। তিনি চুপ থাকলেন। আবারও ও কথা বললে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তর দিলেন, হে আবূ হুরাইরাহ! তোমার ভাগ্যলিপি লেখা হয়ে গেছে আর কলমের কালি শুকিয়ে গেছে। তুমি খাসি হও বা না হও, তাতে কিছু আসে যায় না। সহীহ বুখারী(শা'মেলা নুসখা)-৫০৭৬(আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৭০৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৭০৫ শেষাংশ)

এই দু'টি হাদীস দ্বারা এ কথা প্রমাণিত হল যে, যৌনক্ষমতাকে চিরতরে খতম করে দেয়া হালালকে হারাম সাব্যস্ত করার নামান্তর।এবং সীমালঙ্ঘন হওয়ার ধরুণ তা হারাম।এই দুনু হযরতের উযর শক্তিশালী এবং যোক্তিক ছিলো।এতদ্বসত্তেও রাসূলুল্লাহ সাঃ তাদেরকে চিরতরে যৌনক্ষমতা নষ্ট করার অনুমতি দেননি।


তৃতীয় হাদীস

সা‘দ ইবনু আবী ওয়াক্কাস (রাঃ) হতে বর্ণিত।

أخبرنا ابن شهاب، سمع سعيد بن المسيب، يقول: سمعت سعد بن أبي وقاص، يقول: «رد رسول الله صلى الله عليه وسلم على عثمان بن مظعون التبتل، ولو أذن له لاختصينا»

তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘উসমান ইবনু মাজ‘উনকে বিয়ে করা থেকে বিরত থাকতে নিষেধ করেছেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে যদি অনুমতি দিতেন, তাহলে আমরাও খাসি হয়ে যেতাম।সহীহ বুখারী (শা'মেলা নুসখা)-৫০৭৩[৫০৭৪; মুসলিম ১৬/১, হাঃ ১৪০২, আহমাদ ১৫১৬] ] (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৭০০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৭০৩


হাফিয আব্দুল বার রাহ এ হাদীসকে আল-ইসতেআব গ্রন্থে উল্লেখ করার পর লিখেন,এরকম প্রশ্ন হযরত আলী রাযি এবং হযরত আবুযর গেফারী রাযি থেকেও এসেছিলো।(উমদাতুল ক্বারী-২/৭২)

এ সমস্ত বর্ণনা দ্বারা বুঝা গেল যে,এমন কোনো পদ্ধতি গ্রহণ করা যার মাধ্যমে যৌনক্ষমতা এবং সন্তান জন্মদানের ক্ষমতা চিরতরে লুপ্ত হয়ে যায়,তা অকাট্য ভাবে সম্পূর্ণরূপে হারাম।চায় তাতে যতই ফায়দা দৃষ্টিগোচর হোক না কেন।

আল্লাম বদরুদ্দীন আইনী রাহ. বুখারী শরীফের ব্যাখা গ্রন্থে লিখেন,

و هو محرم بالإ تفاق 

অর্থাৎ উলামায়ে কিরামের সর্বসম্মতিক্রমে স্থায়ী জন্মনিরোধ পদ্ধতি হারাম।


দুই. আ'যল/জন্মনিয়ন্ত্রণ

এর যে পদ্ধতি রাসূলুল্লাহ সাঃ এর  যামানায় প্রসিদ্ধ ছিলো, তাকে আ'যল বলে।অর্থ্যাৎ এমন কোনো পদ্ধতিকে অনুসরণ করা যার ধরুণ বীর্য জরায়ুতে পৌছাতে না পারে।চায় পুরুষ কোনো পদ্ধতিকে অনুসরণ করুক বা মহিলা তার আপন জরায়ুর মুখকে বন্ধ করে রাখুক।এই দু'টি পদ্ধতি অতীতকালে বেশ প্রসিদ্ধ ছিলো।কোনো কোনো  সাহাবায়ে কেরাম থেকে বিশেষ বিশেষ জরুরতের প্রেক্ষিতে এমনটা করা প্রমাণিত রয়েছে।

রাসূলুল্লাহ সাঃ যে ইরশাদ এ সম্পর্কীয় বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে দিয়েছিলেন সেগুলো এমন যে, তার মধ্যে না প্রকাশ্যে জায়েয বলা হয়েছে, না প্রকাশ্যে নাজায়েয বলা হয়েছে।তবে হাদীস সমূহের বাচনভঙ্গি থেকে এটুকু অবশ্যই বুঝা যায় যে,রাসূলুল্লাহ সাঃ এটাকে পছন্দ করেননি। 

এজন্যই এ মাসআলায় সালাফের মধ্যে মতপার্থক্য পরিলক্ষিত করা যায়।কিছুসংখ্যক সালাফ পরিস্কার ভাবে জায়েয ঘোষনা করেছেন।আবার কিছুসংখ্যক সালাফ উক্ত কাজকে অপছন্দ করেছেন।তবে বিশেষ বিশেষ প্রয়োজনে অনুমোদন দিয়েছেন।

অন্যদিকে উদ্দেশ্যে খারাপ(কুরআন-হাদীসের উসূল বিরোধী) হলে নাজায়েয হওয়ার কথাও উল্লেখ করেছেন।


আ'যল সম্পর্কে হাদীস হল এই........

১ ইবনু মুহাইরীয (রহ.) হতে বর্ণিত।

عن ابن محيريز، أنه قال: دخلت المسجد، فرأيت أبا سعيد الخدري فجلست إليه، فسألته عن العزل، قال أبو سعيد: خرجنا مع رسول الله صلى الله عليه وسلم في غزوة بني المصطلق، فأصبنا سبيا من سبي العرب، فاشتهينا النساء، واشتدت علينا العزبة وأحببنا العزل، فأردنا أن نعزل، وقلنا نعزل ورسول الله صلى الله عليه وسلم بين أظهرنا قبل أن نسأله [ص: ١١٦] ، فسألناه عن ذلك، فقال: «ما عليكم أن لا تفعلوا، ما من نسمةكائنة إلى يوم القيامة إلا وهي كائنة»

 তিনি বলেন, একদা আমি মসজিদে প্রবেশ করে আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ)-কে দেখতে পেয়ে তার কাছে গিয়ে বসলাম এবং আযল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) বললেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে বানূ মুসতালিকের যুদ্ধে যোগদান করেছিলাম। এ যুদ্ধে আরবের বহু বন্দী আমাদের হস্তগত হয়। মহিলাদের প্রতি আমাদের মনে আসক্তি জাগে এবং বিবাহ-শাদী ব্যতীত এবং স্ত্রীহীন অবস্থা আমাদের জন্য কষ্টকর অনুভূত হয়। তাই আমরা আযল করা পছন্দ করলাম এবং তা করতে মনস্থ করলাম। তখন আমরা পরস্পর বলাবলি করলাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মাঝে আছেন। এ ব্যাপারে তাঁকে জিজ্ঞেস না করেই আমরা আযল করতে যাচ্ছি। আমরা তাঁকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, ওটা না করলে তোমাদের কী ক্ষতি? ক্বিয়ামাত পর্যন্ত যতগুলো প্রাণের আগমন ঘটবার আছে, ততগুলোর আগমন ঘটবেই। (সহীহ বুখারী,শামেলা-৪১৩৮(আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৮২৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩৮২৯)[২২২৯; মুসলিম ত্বলাক/২১, হাঃ ১৪৩৮, আহমাদ ১১৮৩৯] সুনানু আবি দাউদ-২১৭২,সুনানু ইবনে মা'জা-১৯২৬)


২আবু সাঈদ খুদরী রাযি থেকে আরেকটি হাদীস বর্ণিত রয়েছে।

عن أبي سعيد الخدري، سمعه يقول: سئل رسول الله صلى الله عليه وسلم، عن العزل، فقال: «ما من كل الماء يكون الولد، وإذا أراد الله خلق شيء، لم يمنعه شيء»،

তিনি বলেছেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে 'আযল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হল। তিনি বললেনঃ সব পানিতেই সন্তান পয়দা হয় না। মূলত আল্লাহ যখন কোন বস্তু সৃষ্টি করতে ইচ্ছা করেন তখন কোন কিছুই তাকে বাঁধা দিতে পারে না। (সহীহ মুসলিম শামেলা-১৪৩৮(ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩৪১৯, ইসলামীক সেন্টার ৩৪১৮)


৩জাবির (রাযি.) সূত্রে বর্ণিত।

عن جابر، أن رجلا أتى رسول الله صلى الله عليه وسلم، فقال: إن لي جارية، هي خادمنا وسانيتنا، وأنا أطوف عليها، وأنا أكره أنتحمل، فقال: «اعزل عنها إن شئت، فإنه سيأتيها ما قدر لها»، فلبث الرجل، ثم أتاه، فقال: إن الجارية قد حبلت، فقال: «قد أخبرتك أنه سيأتيها ما قدر لها»

তিনি বলেন, একদা এক আনসরী লোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে বললো, আমার একটি দাসী আছে, আমি তার সাথে সঙ্গম করে থাকি, কিন্তু সে গর্ভবতী হোক তা আমি পছন্দ করি না। তিনি বললেনঃ তুমি ইচ্ছা করলে তার সাথে আযল করো। কিন্তু তার ভাগ্যে যা নির্ধারিত, তা নিশ্চিত আসবেই। বর্ণনাকারী বলেন, কিছুদিন পর ঐ ব্যক্তি পুনরায় তাঁর কাছে এসে বললো, দাসীট গর্ভবতী হয়েছে। তখন তিনি বললেনঃ আমি তো তোমাকে আগেই বলেছিলাম, তার ভাগ্যে যা নির্ধারিত তা অবশ্যই আসবে।(সহীহ মুসলিম শামেলা-১৪৩৯,সুনানু আবি দাউদ-২১৭৩)


৪ সা'দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত।

عن عامر بن سعد، أن أسامة بن زيد، أخبر والده سعد بن أبي وقاص، أن رجلا جاء إلى رسول الله صلى الله عليه وسلم، فقال: إني أعزل عن امرأتي، فقال له رسول الله صلى الله عليه وسلم: «لم تفعل ذلك؟» فقال الرجل: أشفق على ولدها، أو على أولادها، فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «لو كان ذلك ضارا ضر فارس والروم»، وقال زهير في روايته: «إن كان لذلك فلا، ما ضار ذلك فارس، ولا الروم»

এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বলল, আমি আমার স্ত্রীর সাথে আযল করে থাকি। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তুমি এ কাজ কেন কর? লোকটি বলল, আমি তার সন্তানের ক্ষতির আশংকা করি। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যদি এ কাজ ক্ষতিকর হত তাহলে তা পারস্য ও রোমবাসীদেরও ক্ষতিসাধন করত। রাবী যুহায়র তার বর্ণনায় উল্লেখ করেছেন, এ কাজ (আযল) যদি এ উদ্দেশেই হয় তাহলে তা করা সঠিক নয়। কেননা তা পারস্য ও রোমবাসীদের কোন প্রকার ক্ষতি করেনি।(সহীহ মুসলিম-শামেলা-১৪৪৩)(ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩৪৩২, ইসলামীক সেন্টার ৩৪৪১)


৫ জাবির (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত।

عن جابر، قال: «كنا نعزل، والقرآنينزل»، زاد إسحاق، قال سفيان: لو كان شيئا ينهى عنه لنهانا عنه القرآن

তিনি বলেন, আমরা ‘আযল করতাম আর কুরআন নাযিল হত। এর উপর ইসহাক আরো বাড়িয়ে বলেছেন যে, সুফইয়ান (রহঃ) বলেন, এতে যদি নিষেধ করার মতো কিছু থাকত, তবে কুরআন তা নিষেধ করে দিত।সহীহ মুসলিম,শামেলা-১৪৪০(ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩৪২৪, ইসলামীক সেন্টার ৩৪২৩)


৬ উকাশার ভগ্নি জুদামাহ্ বিনতু ওয়াহব (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত।

عن جدامة بنت وهب، أخت عكاشة، قالت: حضرت رسول الله صلى الله عليه وسلم، في أناس وهو يقول: «لقد هممت أن أنهى عن الغيلة، فنظرت في الروم وفارس، فإذا هم يغيلون أولادهم، فلا يضر أولادهم ذلك شيئا»، ثم سألوه عن العزل؟ فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «ذلك الوأد الخفي»، زاد عبيد الله في حديثه: عن المقرئ، وهي: {وإذا الموءودة سئلت}،

তিনি বলেন, আমি একদিন কিছু সংখ্যক লোকের সাথে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে হাযির হলাম। তিনি তখন বলছিলেন, আমি স্তন্যদায়িনী মহিলার সাথে সঙ্গম করা নিষেধ করার ইচ্ছা করলাম, এমতাবস্থায় আমি রোম ও পারস্যবাসী লোকদের অবস্থার কথা বিবেচনা করে অবগত হলাম যে, তারা তাদের স্তন্যদায়িনী স্ত্রীর সাথে সঙ্গম করে থাকে, কিন্তু তা তাদের সন্তান-সন্ততির কোনরূপ ক্ষতি করে না। অতঃপর লোকেরা তাকে ‘আযল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করল। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তা হল গোপন হত্যা। রাবী উবায়দুল্লাহ তার বর্ণনায় আল মুকরী সূত্রে আয়াতটুকুও উল্লেখ করেছেন অর্থাৎ "যখন জীবন্ত সমাধিস্থ কন্যাকে জিজ্ঞেস করা হবে কী অপরাধে তাকে হত্যা করা হয়েছে" (সূরা আত্ তাকভীর ৮১ঃ ৮-৯)। (সহীহ মুসলিম,শামেলা-১৪৪২(ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩৪৩০, ইসলামীক সেন্টার ৩৪২৯ )


৭ হযরত জাবের রাযি থেকে বর্ণিত রয়েছে যে,তারা রাসূলুল্লাহ সাঃ এর নিকট আরয করেছিলেন, হে রাসূলুল্লাহ সাঃ আমরা আমাদের বান্দীদের সাথে আ'যল করে থাকি, কিন্তু কিছুসংখ্যক ইহুদিরা বলে থাকে যে, এটা নাকি ছোট দাফন।অর্থাৎ কন্যা সন্তানদের জীবন্ত দাফনের একটি ছোট পদ্ধতি।রাসূলুল্লাহ সাঃ এর জবাবে বললেন,ইহুদিরা ভূল বলছে,যদি আল্লাহ তা'আলা কোনো জীবকে সৃষ্টি করতে চান তাহলে তাকে কেউ বাধা দিতে পারবে না।(তিরমিযি)


সাধারণত এই হাদীস পূর্ববর্তী জুমাদাহ্ রাযি এর  হাদীসের বিপরিত বুঝা যাচ্ছে,ঐখানে(জুমাদার হাদীসে) তো স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাঃ আ'যল কে গোপন দাফন বললেন।আর এখানে(জাবের রাযি. র হাদীসে ইহুদীদের কথা 'ছোট দাফন' কে ভূল আখ্যা দিলেন। 

কিন্তু মূলত এ দুয়ের মধ্যে কোনো পরস্পর বিরোধিতা নেই।কেননা মূলত ইহুদিরা এই আ'মলকে জীবিত দাফনের এক প্রকার সাব্যস্ত করেছিলো।পার্থক্য শুধু ছোট এবং বড় এর।আর রাসূলুল্লাহ সাঃ একে জীবিত দাফন সাব্যস্ত না করে গোপন দাফন সাব্যস্ত করে এদিকে ইশারা করলেন যে,যদিও তা বাস্তবিক দাফন নয় তথাপি এতে এই উদ্দেশ্যর একটি গোপন রাস্তা রয়েছে, যে কারণে মেয়ে শিশুদেরকে জীবিত দাফন করা হতো।অর্থাৎ মেয়ে শিশু জন্ম নেয়ার কারনে লজ্জা অনুবূত হওয়ার আশঙ্কায় দাফন করা হতো।এই ব্যখায় যদিও এই হাদীস প্রথম হাদীস সমূহের বিরোধী নয় তথাপি পরবর্তী হাদীস সমূহের সম্পূর্ণ বিরোধী। কেননা এখানে আ'যলকে সম্পূর্ণ রূপে নিষেধ করা হযেছে।আর পরবর্তী হাদীস সমূহে সম্পূর্ণ নিষেধ করা হয় নি।

এই পরস্পর বিরোধী হাদীস সমূহের মধ্যে সামঞ্জস্য  করার লক্ষ্যে মুহাক্কিক্ব উলামায়ে কেরাম বিভিন্ন সূরত গ্রহণ করেছেন।

এর মধ্যে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য সামঞ্জস্য হল যে,

জুযামাহ এর বর্ণনাকে মাকরুহ হিসেবে গণ্য করা হবে।এবং পরবর্তীতে বর্ণিত সকল বর্ণনাকে জায়েয এর প্রমাণ হিসেবে গণ্য করা হবে।

সুতরাং সকল হাদীসকে একত্রিত করার ধারা বর্তমানে হুকুম এমন হবে যে,আ'যল জায়েয তবে মাকরুহ।

এই সামঞ্জস্য সাধনের প্রমাণ উক্ত রেওয়ায়াত সমূহের মধ্যেই নিহিত রয়েছে।কেননা আ'যল জায়েয বুঝা যায় সম্পর্কে যত রেওয়ায়াত উপরে বর্ণিত হয়েছে, সকল হাদীসের সারমর্ম একথাই যে,রাসূলুল্লাহ সাঃ তো কোথাও অা'যলের উৎসাহ প্রদান করেননি।বরং অপছন্দতা এবং অনর্থকতার বিষয়টিই ফুটে উঠছে।অন্যদিকে এই আ'মলকে পরিস্কার নিষেধও করেননি।

সেজন্য ফলাফল এটাই বের হবে যে,এ কাজ জায়েয তবে অপছন্দনীয়।এবং গবেষনার পর  জুদামাহ রাযি এর হাদীস দ্বারা এটাই বুঝা যায় যে এ কাজ যদিও জায়েয তবে মাকরুহ।কেননা গোপন দাফন কে বাস্তবিক গোপন দাফন সাব্যস্ত করা যাবে না।অথচ বাস্তবিক গোফন দাফন হারাম।

সুতরাং এই গোপন দাফন মাকরুহ-ই হবে।

সাহাবা এবং তা'বেয়িদের প্রসিদ্ধ একটি জামাতের এটাই মাযহাব।যে এটাকে মাকরুহ বলা হবে।

আল্লামা আইনি রাহ সহীহ বুখারীর ব্যাখ্যাগ্রন্থে উল্লেখ করেন।হযরত আবু বকর,হযরত উমর, হযরত উছমান,হযরত আলী হযরত ইবনে উমর, এবং আবু উমামাহ,থেকে এটাই বর্ণিত রয়েছে।ইবরাহিম নাখায়ী,সালিম ইবনে আব্দুল্লাহ,আসওয়াদ ইবনে ইয়াযিদ,তাউস বলেন যে আ'যল মাকরুহ।


সাধারণত সকল ফুকাহায়ে কিরাম ও উক্ত রেওয়ায়াত সমূহ দেখার পর এ সিদ্ধান্তেই উপনীত হয়েছেন যে,আ'যল মাকরুহ।যেমন ফাতহুল কাদীর,রাদ্দুল মুহতার,এহয়াউল উলূম,ইত্যাদি গ্রন্থ সমূহ দ্রষ্টব্য।হ্যা উযর এবং অপারগতা  সকল বিষয়েই শীতিলযোগ্য।এখানেও বিশেষ বিশেষ প্রয়োজন অনুসারে মাকরুহ থাকবে না।যার বিস্তারিত বিবরণ রাদ্দুল মিহতারে রয়েছে।

যেমন, মহিলা এত দুর্বল যে,গর্ভধারণের সক্ষমতা নেই,বা দূরে কোথাও সফরে আছেন,অথবা এমন কোনো স্থানে রয়েছেন যেখানে স্থায়ীভাবে বসবাসের সম্ভাবনা নেই, শংকাযক্ত স্থান।অথবা স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে টানাপোড়ন চলছে।

এই সকল উযরের খুলাসাহ হল, ব্যক্তিগত জীবনে কারো এমন কোনো সমস্যা সামনে আসলে উযর পর্যন্ত তার জন্য মাকরুহ ব্যতীত আ'যল জায়েয হবে।

উযর দূর হওয়ার পর আবার তার জন্য সেটা মাকরুহ হবে।

তবে ব্যাপকহারে সরকারী ব্যবস্থাপনায় এটার প্রচার প্রসার কখনো উচিৎ হবে না।বরং শরীয়ত এটাকে অপছন্দ করে।

তবে ব্যক্তিগতভাবে যদি কেউ এমন কোনো কারণে আ'যল করতে চায় যা ইসলামী উসূলের খেলাফ।তাহলে এমতাবস্থায় আ'যল জায়েয হবে না।

যেমন কেউ এ কারণে করল যে যদি মেয়ে সন্তান হয়ে যায় তাহলে লজ্জা অনুভূত হবে অথবা সন্তান হলে তার খরছ বেড়ে যাবে তাহলে এমতাবস্থায় তার জন্য আ'যল জায়েয হবে না।

আল্লাহ তা'আলা রিযিকের অভাবে সন্তান হত্যা সম্পর্কে বলেন,

وَلاَ تَقْتُلُواْ أَوْلادَكُمْ خَشْيَةَ إِمْلاقٍ نَّحْنُ نَرْزُقُهُمْ وَإِيَّاكُم إنَّ قَتْلَهُمْ كَانَ خِطْءًا كَبِيرًا

দারিদ্রের ভয়ে তোমাদের সন্তানদেরকে হত্যা করো না। তাদেরকে এবং তোমাদেরকে আমিই জীবনোপকরণ দিয়ে থাকি। নিশ্চয় তাদেরকে হত্যা করা মারাত্নক অপরাধ।

মোটকথা-সন্তান জন্ম না দেয়ার যদি কেউ এমন পদ্ধতি গ্রহণ করে যে, যাদ্বারা ঐ ব্যক্তির চিরস্থায়ী জন্মদানের ক্ষমতা কে হারিয়ে ফেলে তাহলে তার ঐ কাজ করা হারাম।চায় পুরুষ করুক বা মহিলা করুক।চায় অপারেশনের মাধ্যমে হোক বা ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে হোক বা অন্যকিছু দ্বারা হোক


হ্যা অস্থায়ী ভিত্তিতে চায় পুরাতন মাধ্যম দ্বারা হোক বা অাধুনিক মাধ্যম দ্বারা হোক বিশেষ বিশেষ জরুরতের সময় জন্মবিরতি নেয়া অনুমোদনযোগ্য রয়েছে।শর্ত এই যে এক্ষেত্রে কোনো নাজায়েয কারণ থাকতে পারবে না।

কিন্তু জাতীয়ভাবে এর ব্যাপকতর প্রচার-প্রসার কুরআন এবং সুন্নাহর বিরোধিতা। যে জন্মনিয়ন্ত্রণকে রাসূলুল্লাহ সাঃ অপছন্দ করেছেন এবং মানবতার জন্য হমকিস্বরূপ মনে করেছেন, তাকে উন্নতি ও অগ্রগতির চাবিকাঠি মনে করা কখনো বৈধ হবে না।

বিশেষ করে অর্থনৈতিক চিন্তাভাবনায় জন্মনিয়ন্ত্রণের প্রচার-প্রসার কখনো বৈধ হবে না।যেখানে রিযিকের দায়িত্ব আল্লাহ স্বয়ং নিয়ে নিয়েছেন সেখানে রিযিক নিয়ে চিন্তাভাবনা করে আল্লাহর নেযামের বিরোধীতা করে জন্মনিয়ন্ত্রণ করা কখনো উচিৎ হবে এবং জায়েয হবে না।


আরবের জাহেলগণ যখন অভাব-অনটনের ভয়ে নিজ সন্তানকে হত্যা করত,তখন আল্লাহ তা'আলা তাদের সেই ভ্রান্ততাকে প্রকাশ করে যে আয়াত অবতীর্ণ করেন,তার সারমর্ম হল,তোমাদের এ কাজ খোদায়িয়ত এর মধ্যে হস্তক্ষেপের শামিল।

সমস্ত মাখলুকাতের রিযিকের দায়িত্ব রাব্বুল আ'লামিন নিজ দায়িত্বে নিয়ে অত্যান্ত স্পষ্টভাবে ঘোষনা দেন যে,

وَمَا مِن دَآبَّةٍ فِي الأَرْضِ إِلاَّ عَلَى اللّهِ رِزْقُهَا وَيَعْلَمُ مُسْتَقَرَّهَا وَمُسْتَوْدَعَهَا كُلٌّ فِي كِتَابٍ مُّبِينٍ

আর পৃথিবীতে কোন বিচরণশীল নেই, তবে সবার জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহ নিয়েছেন তিনি জানেন তারা কোথায় থাকে এবং কোথায় সমাপিত হয়। সবকিছুই এক সুবিন্যস্ত কিতাবে রয়েছে।(সূরা হুদ-০৬)


এই আয়াত এবং এর মত আরো অনেক আয়াতে আল্লাহ তা'আলা পরিস্কার জানিয়ে দিয়েছেন যে,যত প্রাণী এই পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করবে,তাদের রিযিকের ব্যবস্থা আল্লাহ স্বয়ং করবেন।আল্লাহ এমন ভঙ্গিতে বলতেছেন যে,সরকারী রেশন অফিসের মত কোনো অফিসে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।বরং আল্লাহ প্রত্যেক মানুষ পর্যন্ত তাদের রিযিক পৌছে দেয়ার দায়িত্ব নিজের জিম্মায় নিয়ে নিয়েছেন। কোনো রেশন কার্ডধারী যদি স্থানান্তরিত হয়,তবে রেশন কার্ড স্থানান্তরকরণের জন্য সরকার বরাবর দরখাস্ত করতে হয়,কিন্তু আল্লাহর নিকট দরখাস্ত করতে হবে না।কেননা আল্লাহ বলেন,يعلم مستقرها و مستودعها

অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলা প্রত্যেক প্রাণীর স্থায়ী এবং অস্থায়ী বাসস্থল সম্পর্কে জ্ঞাত।সেখানেই আল্লাহ রিযিক পাঠিয়ে দেন।

অন্য এক আয়াতে আল্লাহ বলেন,

ﻭَﺇِﻥ ﻣِّﻦ ﺷَﻲْﺀٍ ﺇِﻻَّ ﻋِﻨﺪَﻧَﺎ ﺧَﺰَﺍﺋِﻨُﻪُ ﻭَﻣَﺎ ﻧُﻨَﺰِّﻟُﻪُ ﺇِﻻَّ ﺑِﻘَﺪَﺭٍ ﻣَّﻌْﻠُﻮﻡٍ

আমার কাছে প্রত্যেক বস্তুর ভান্ডার রয়েছে। আমি নির্দিষ্ট পরিমানেই তা অবতরণ করি। সূরা হিজর-২১

এই আয়াতের উপর ঈমান আনয়নকারীর জন্য এ কথা বিশ্বাস করতে হবে যে,আল্লাহ তা'আলা না বুঝে মাখলুকাতকে সৃষ্টিকরে ঢেলে দেননি।যে অন্য কেউ ঐ ব্যক্তির রিযিকের জন্য পেরেশান হতে হবে।(মা'আযাল্লাহ)এ কথাও সম্ভব নয় যে,দিনিদন সৃষ্টজীব দ্বারা পৃথিবীর আবাদী বাড়ছে,অন্যদিকে এই পৃথিবী এবং তার সমস্ত আসবাবপত্র সীমিত।


আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা প্রত্যেককে সৃষ্টি করার পূর্বে তারা থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা নির্ধারিত করে রেখেছেন।প্রাণীর পৃথিবীতে আগমের পূর্বে মাতৃগর্ভে এবং ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর মায়ের দুধে তার জন্য খাদ্য সৃষ্টি করে রেখেছেন।তার হজমশক্তি বাড়ার সাথে সাথে খাদ্যকেও আল্লাহ বদলে দিয়েছেন।শুধু মানুষ নয় বরং জঙ্গলের হিংস প্রাণীর বিষয়ে ও আল্লাহ এমন নিয়ম করে দিয়েছেন।যে সময় যে জিনিষের প্রয়োজন সে সময় সেগুলোকে বাহির করে দিচ্ছেন।এবং যেগুলোর প্রয়োজন নেই সেটাকে কমিয়ে দিচ্ছেন।অতীতকালে গ্যাস-পেট্রোল এর কোনো প্রয়োজন ছিল না,সুতরাং তার উৎপাদন ও ছিল না।কিন্তু আজকের পৃথিবী গ্যাস-পেট্রোল এর উপর নির্ভরশীল,তাই যমিন ও সেগুলো বাহির করে দিচ্ছে।


মোট কথা: 

জন্মনিয়ন্ত্রণকে জাতীয়করণের মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার প্রসার করা এবং এটাকে উন্নতি ও অগ্রগতির চাবিকাঠি মনে করা আল্লাহর নেযামের বিরোধিতার সমতুল্য।যা কোনো মুসলমানের জন্য উচিৎ না।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

by (589,260 points)
+1
অনার্স কম্পিলিট করা বা না করার সম্পর্ক ইসলাম, মুসলমান বা আখেরাতের সাথে নেই।নারীদের শিক্ষা গ্রহণ করা বিশেষ করে সহশিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষা গ্রহণের অনুমতি শুধুমাত্র ইসলাম ও মুসলমানের স্বার্থের কথা বিবেচনা করেই দেয়া হয়েছে।এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন- ৪৩৪

সুতরাং আপনার এ উযর শরয়ীভাবে গ্রহণযোগ্য নয়।কেননা যেহেতু আপনি ভবিষ্যতে ইসলাম ও মুসলমানের স্বার্থে পর্দায় থেকে কিছু করছেন না,তাই অনার্স কম্পিলিট করার শরয়ীভাবে কোনো যৌক্তিকতা নেই।সুতরাং আপনার প্রতি পরামর্শ হলো,আপনি অনার্সের চিন্তা না করে সন্তানের চিন্তা করুন।এটাই আপনার জন্য কল্যাণকর হবে।

তবে যদি আপনি মনে করেন,ভবিষ্যতে ছেলেমেয়েদেরকে ইসলাম শিক্ষার পাাশাপাশি দুনিয়াবি শিক্ষায় পারদর্শী করতে চান।নিজ ছেলেমেয়েদেরকে ইসলাম ও মুসলমানদের স্বার্থে নিয়োজিত রাখতে চান,তাহলে এমতাবস্থায় আ'যল বা প্রাকৃতিক জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন।অর্থাৎ ঋতুচক্র শুরু হওয়ার পর অষ্টম দিন থেকে নিয়ে ১৯তম দিন পর্যন্ত সহবাস এড়িয়ে চলা।২০তম দিন থেকে নিয়ে আবার ঋতুচক্র শুরু হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সহবাস করা। কেননা এ সময়টা নিরাপদ।

আল্লাহ-ই ভালো জানেন।


আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...