জবাবঃ- নাশিদ আরবী শব্দ যার অর্থ হল,উচ্ছস্বরে সুন্দর ও মসৃণ ভাবে কবিতা আবৃত্তি করা।
শরয়ী প্রমাণাদি এ কথা প্রমাণ করে যে,গজল, কবিতা ও ইসলামি সংগিত সমূহ শ্রবণ করা বৈধ রয়েছে।রাসূলুল্লাহ সাঃ এবং সাহাবায়ে কেরাম থেকে এ কথা প্রমাণিত রয়েছে যে,তারা শে'র ইত্যাদি বলেছেন,শুনেছেন এবং অন্যকে শে'র বলার জন্য বলেছেন।সফরে এবং বাড়িতে,তাদের মজলিস সমূহে এবং কাজের ফাঁকে ফাঁকে সর্বত্রই এর কিছু প্রমাণ পাওয়া যায়।
একককন্ঠে যেমন হযরত হাসসান বিন ছাবিত রাযি, হযরত আকওয়া বিন আমির রাযি এবং আনজাশাহ রাযি এর একক কন্ঠে নাশিদ প্রমাণিত রয়েছে। সম্মিলিত কন্ঠে যেমন হযরত আনাস রাযি এর হাদীসে খন্দকের যুদ্ধ সম্পর্কে বর্ণিত রয়েছে,
যখন রাসূলুল্লাহ সাঃ সাহাবায়ে কেরামদের ক্ষিদামন্দা দেখলেন,এবং ক্লান্তিকে অনুভব করলেন,তখন তিনি নিম্নোক্ত শে'র আবৃত্তি করলেন,
" اللهم لا عيش إلا عيش الآخرة * فاغفر للأنصار والمهاجرة "
অর্থ-হে অাল্লাহ! আখেরাতের জীবন ব্যতীত অন্য সকল জীবন তুচ্ছ। সুতরাং আনসার এবং মুহাজিরদের তুমি ক্ষমা করে দাও।
সাহাবায়ে কেরাম জবাবে বললেন,
نحن الذين بايعوا محمدا * على الجهاد ما بقينا أبدا
আমরা তারাই, যারা মুহাম্মদ সাঃ এর হাতে আমৃত্যু জীহাদের জন্য বায়আত গ্রহণে করেছি।(সহীহ বোখারী-৩/১০৪৩)
মজলিস সমূহে শে'র আবৃত্তি করা হয়েছে।এর প্রমাণ- হযরত জাবের রাযি থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন,
عن جابر بن سمرة، قال: جالست النبي - صلى الله عليه وسلم - أكثر من مائة مرة، وكان أصحابه يتناشدون الشعر، ويتذاكرون أشياء من أمر الجاهلية وهو ساكت، وربما يتبسم معهم. ومن المعلوم أن في مجلسه الشريف لا يتناشد إلا الشعر المنيف المشتمل على التوحيد والترغيب والترهيب، وقد كان - صلى الله عليه وسلم - يتمثل بشعر ابن رواحة، يقول:
আমি রাসূলুল্লাহ সাঃ এর পাশে একশত বারের চেয়েও বেশী বার বসেছি।রাসূলুল্লাহ সাঃ এর সাহাবিগণ জাহিলিয়াত জমানার বিভিন্ন বিষয় উল্লেখ করে শের গাইতেন।রাসূলুল্লাহ চুপ থাকতেন।কখনো কখনো হাসতেন।প্রকাশ থাকে যে,রাসূলুল্লাহ সাঃ এর মহিমান্বিত মজলিসে উত্তাপিত শের গজল তাওহীদ,তারগিব,ইত্যাদি নিয়েই থাকতো।
রাসূলুল্লাহ সাঃ ইবনে রাওয়াহা(তারাফাহ ইবনে আবদ) এর শের কেই আবৃত্তি করতেন।
ﺳﺘﺒﺪﻱ ﻟﻚ ﺍﻷﻳﺎﻡُ ﻣﺎ ﻛﻨﺖَ ﺟﺎﻫﻼً * ﻭﻳﺄﺗﻴﻚ ﺑﺎﻷﺧﺒﺎﺭ ﻣﻦ ﻟﻢ ﺗﺰﻭِّﺩِ
অর্থঃ অচিরেই তোমার সামনে এমন জিনিষ প্রকাশিত হবে, যে সম্পর্কে তুমি অজ্ঞ ছিলে।এবং এমন মানুষ সেই সংবাদ নিয়ে আসবে,যাকে তুমি পাথেয়/পথ খরচা দাওনি।
রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেন,
«إن أصدق كلمة قالها الشاعر كلمة لبيد:
ألا كل شيء ما خلا الله باطل ... وكل نعيم لا محالة زائل
»
সবচেয়ে সত্য কথা যা লবিদ রাযি বলেছেন,
আল্লাহ ব্যতীত সবকিছুই বাতিল।এবং প্রত্যেক নিয়ামত(দুনিয়ার নিয়ামত) অবশ্যই শেষ হবে।(মিরকাত-৪৭৪৭)
সু-প্রিয় পাঠকবর্গ!
এ সমস্ত রেওয়াত প্রমাণ করে যে,গজল বা ইসলামী সংগীত যদি ভালো অর্থবোধক হয়, তাহলে আবৃত্তি করা, শ্রবণ করা জায়েয আছে।চায় একক কন্ঠে হোক বা সম্মিলিত কন্ঠে হোক।
তবে কয়েকটি মূলনীতিকে অত্যাবশ্যকীয়ভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে।
- মিউজিক থাকতে পারবে না।
- অত্যাধিক মনযোগ প্রদান করা যাবে না।যার দরুণ ফরয ওয়াজিব পালনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়।
- মহিলাদের কন্ঠে হতে পারবে না,এবং অশ্লীল বা হারাম কথাবার্থা তাতে থাকতে পারবে না।
- ফাসিক,এবং উদ্ভ্রান্তদের কন্ঠে হতে পারবে না।
- এমন কোনো আয়োজন হতে পারবে না, যা মিউজিকের মত মনে হয়।
- গান যেভাবে মানুষকে আকৃষ্ট করে,ফিতনায় পতিত করে, সে রকম কোনো কন্ঠ হতে পারবে না।
অথচ বর্তমানে প্রচলিত অনেক শে'র, গজলে এমনটাই লক্ষ্য করা যায়।আজকালের শ্রুতাগণ অর্থের দিকে খেয়াল না করে, তারা কন্ঠ এবং ভাবভঙ্গির দিকেই বেশী খেয়াল করে গজল বাছাইরকরে।এত্থেকে আমাদেরকে বেঁচে থাকতে হবে।(ফাতহুল বারী-১০/৫৫৩)
কলরবের সংগীতে মিউজিক আছে কি না? সেটা কোনো একজন সাউন্ড এনালিষ্টের মাধ্যমে পরীক্ষা করিয়ে নেবেন।
আল্লাহ-ই ভালো জানেন।