আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

+1 vote
3,036 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (17 points)
তালাক সুন্নাহ সম্মত পদ্ধতিতে দেওয়ার বিধিবিধান আমি জানি। আমি এখানে শুধু কিছু একাডেমিক আলোচনা করতে চাই। চার মাযহাব মতে, এক বৈঠকে তিন তালাক দিলে তিন তালাকই পতিত হবে। অধিকাংশ সাহাবিরও একই মত। কিন্তু আমার প্রশ্ন হলো বিপরীত মতও তো আছে। অর্থাৎ যদি ধরে নিই ৯০%ই 'এক বৈঠকে তিন তালাকে তিন তালাক' এর পক্ষে, তাহলেও যে ১০% 'তিন তালাকে এক তালাক হয়' এই নীতিতে বিশ্বাস করে তাদের দলীলও তো কম শক্তিশালী নয়। এমন তো নয় যে ইবনে তাইমিয়া, ইবনে কায়্যিম (রহঃ) দলীল ছাড়াই ২য় মতটি গ্রহণ করেছেন। আমি আবু দাউদ শরিফের একটি হাসান হাদিস এর লিংক দিচ্ছি : https://sunnah.com/abudawud:2196

আবার মুফতি জুনায়েদ হাসান সাবেরি (ইনি এক বৈঠকে তিন তালাক দিলে তিন তালাকই হয় এই মতের পক্ষের) বলেছেন ঃ ওমর (রাঃ) বলেছেন, তার খেলাফতের যামানায় এক বৈঠকে তিন তালাক দেওয়ার প্রবণতা বেড়ে যাচ্ছিল দেখে তিনি তিন তালাককে তিন তালাকই গন্য করা শুরু করেন। তার আগ পর্যন্ত এক বৈঠকে তিন তালাককে এক তালাক গণ্য করা হত। সাবেরি হুজুরের মত হলো, সাহাবিদের ইজমাও তো আমাদের মানতে হবে।( লিংক ঃ https://www.youtube.com/watch?v=1LOsLNiaZ64)

আমার প্রশ্ন হলো, আমি যদি ধরে নিই যে নবিজীর যামানায় যেহেতু এক বৈঠকে তিন তালাক দিলে কখনো তিনি তিন তালাক ধরেছেন, কখনো এক তালাক ধরেছেন (কারণ দুই মতের পক্ষেই হাদিস আছে), এমনকি ওমর (রাঃ) এর খিলাফতকালের একটা সময় পর্যন্ত এই মাসলার উপর আমল হয়েছে সেহেতু এই মতটিকে একেবারে ফেলে দেওয়ার সুযোগ আছে কি? প্রশ্ন হতে পারে, আপনি কি ইজমাকে শরিয়তের দলিল মনে করেন না? আমি বলব, অবশ্যই করি, কিন্তু যেহেতু দুই ধরণের হাদিসই আছে, এবং দুটির কোনোটিই মানসুখ হয়নি (হলে আবু বকর রাঃ এর যামানায় তা থাকত না) সেক্ষেত্রে কেউ যদি এক সুন্নাত অনুসারে তার বিচারকাজ চালান তাহলে সেটাকে কি 'ইজমা' বলার সুযোগ আছে? নাকি ধরে নেওয়া উচিত যে এটা তার সাময়িক সময়ের জন্য নিজের বিচারকার্য চালানোর জন্য গৃহীত পদ্ধতি, ভিন্ন কোনো শাসক এসে বিপরীত সুন্নাতটিও বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা পাবে? অর্থাৎ, কোনো খলিফার জন্য দুই সুন্নাতের মধ্য থেকে একটাকে চূড়ান্ত ঘোষণা করে অপরটাকে কেয়ামত পর্যন্ত বাতিল করার সুযোগ আছে কি? এটাকে কি ইজমা বলা যায়? আমার জানামতে, ইজমা হয় সে বিষয়ে যেটি কুরআন-হাদিসে স্পষ্টভাবে নেই, কিন্তু যেটির বাপারে হাদিস থেকে একাধিক পন্থা আছে তার একটিকে চূড়ান্ত করে দিয়ে অপরটিকে চিরতরে বাতিল করা যায় না।  অর্থাৎ, উমর (রাঃ) তার সময়ে তার সুবিধাজনক পথটি গ্রহণ করেছেন, কিন্তু বিপরীত মতটিকে একেবারে হারাম ঘোষণা করেননি, পরবর্তীতে উম্মত অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ভিন্ন হাদিসের উপর আমল করলেও তাকে হারাম বলা যাবে না।। ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গির (রহঃ)কেও দেখলাম, তিনি তিন তালাকে তিন তালাক হওয়ার বিধানের পক্ষে হলেও বিপরীত মতটি স্বীকার করে নিয়েছেন (https://www.youtube.com/watch?v=UIHn8jLAtjk)।

আমি  একটি কথা ভাবছি, দয়া করে জানাবেন আমার ভাবনাটি সঠিক কিনা। নবিজী (দঃ)কে আমরা তালাকের ক্ষেত্রে দুই রকম আমল করতেই দেখতে পাই কেন? আমার ধারণা, এক বৈঠকে কেউ যদি  তিন তালাক দেয় তাহলে সেটা তিন তালাক হবে নাকি এক তালাক হবে তা নির্ভর করছে তালাকদাতার নিয়তের উপর। যে তার স্ত্রীকে চিরতরে বিচ্ছিন্ন করতেই তালাক দিয়েছে সে একসাথে তিন তালাক দিলে তিন তালাকই হবে (যেমনঃ এক সাহাবি তার স্ত্রীকে জেনা কর‍তে দেখে দিয়েছিলেন)। অর্থাৎ, তিনি যদি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন যে আমি আর এর সাথে ঘর করবই না, তাহলে এক সাথে তিন তালাক দিলে তিন তালাকই হবে (যদিও কাজটা হারাম হবে)। কিন্তু যদি কেউ মুখ ফস্কে তিন তালাক দিয়ে ফেলে পরে মন চায় ঘর করতে, অথবা ঠান্ডা মাথাতেই এক বৈঠকে তিন তালাক দিয়ে ফেলে, কিন্তু পরে মন চায়, বা কাজির হুকুম হয় তার জন্য এক তালাক হিসেবে গ্রহণ করারও সুযোগ আছে (কিন্তু একাধিক বৈঠকে তিন তালাক দিলে আর সেই সুযোগ নেই)। যদি আমরা ব্যাপারটাকে এভাবে নিই তাহলে উভয় প্রকারের হাদিসের মধ্যেই সমন্বয় সাধন হয় এবং বহু সংসার হিলা বিয়ের হাত থেকে বেঁচে যায়।

আমার প্রশ্ন হলো আমার এই ধারণা কি ভুল? যদি ভুল হয় তাহলে কি বলতে চাচ্ছেন এক বৈঠকে তিন তালাক দিলে এক তালাক হবে এই ফতোয়া  একদম পরিত্যাক্ত? যদি পরিত্যাক্ত বা পরিত্যাজ্য হয় তাহলে রুকানা (রাঃ) এর ওই হাদিসটি (উপরে আমি যেটার লিংক দিয়েছি, আবু দাউদ শরিফের হাসান হাদিস) এর কী ব্যাখ্যা? আর ওমর (রাঃ) এর আগ পর্যন্ত যে উক্ত হাদিসের নীতিটির উপর আমল হয়েছে তারই বা কী ব্যাখ্যা তা দয়া করে জানাবেন? সাথে এও জানাবেন, "এক বৈঠকে তিন তালাকে এক তালাক" পক্ষের আলেমরা কেন তাহলে এই নীতির উপর এলেন? তাদের বোঝার ভুলটা কোথায় হলো?
দয়া করে দলিলভিত্তিক, সুচিন্তিত ও প্রাসঙ্গিকভাবে জবাব দেবেন।

1 Answer

0 votes
by (597,330 points)
edited by

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
https://www.ifatwa.info/222 নং ফাতাওয়ায় আমরা বলেছিলাম যে,
সৌদী আরবের গ্রহণযোগ্য বিদগ্ধ গবেষক আলেমগণ এ  সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, তিন  তালাকে তিন তালাক-ই পতিত হবে।

সৌদী গবেষকবৃন্দে সিদ্ধান্তের কপি এই -
توصل المجلس بأكثريته إلى اختيار القول بوقوع الطلاق الثلاث بلفظ واحد ثلاثا ___الخ (مجلة البحوث الإسلامية، المجلة الأول، العدد الثالث، سنة 1397 ه)
অর্থ: লাজনাতুত দায়িমা লিল বুহুস ওয়াল ইফতা পরিষদ (সৌদী আরব)- অধিকাংশ সদস্য ওলামায়ে কিরামের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এই সিদ্ধান্তে উপনিত হয় যে,এক শব্দে তিন তালাক দিলে তিন তালাকই পতিত হবে। (মাজাল্লাতুল বুহুসিল ইসলামিয়্যা, প্রথম খন্ড, তৃতীয় সংখ্যা, ১৩৯৭ হিজরী)

তিন তালাকই পতিত হবে।স্ত্রী স্বামীর জন্য হারাম হয়ে যাবে।(ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়্যা-১২/৩৯১)

প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন!
আপনি যে বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চান?
সেটা হল, একসাথে তিন তালাক দ্বারা তিন তালাকও হবে আবার এক তালাকও হবে। পরিবেশ পরিস্থিতি অনুযায়ী যে কোনো একটিকে গ্রহণ করা যাবে।

এই প্রশ্নের জবাব বুঝার পূর্বে আপনাকে মাযহাব নিয়ে জানতে হবে।
https://www.ifatwa.info/1936 নং ফাতাওয়ায় বলেছি যে,
মোটকথাঃ দুই প্রকার তাকলীদই সাহাবা তাবেঈনদের জমানায় প্রচলিত ছিলো।কিন্তু যখন হিজরী দ্বিতীয় শতাব্দীতে অনেক মাযহাব ও মুজতাহিদের অাবির্ভাব হওয়া শুরু হল।অনেক কম মাস'আলা ই হালাল-হারামের ইখতেলাফ থেকে অবশিষ্ট থাকল।অন্যদিকে মানুষের সামনে প্রবৃত্তি তার ডানা মেলে দাড়াল।যেজন্য লোকজন রুখসতকে তালাশ করতে শুরু করল।যে ইমামের মাস'আলা নিজের প্রবৃত্তি অনুযায়ী হল, লোকজন সেটাকে অনুসরণ করতে শুরু করল।সাথে সাথে অন্য ইমামের মাযহাব কে প্রত্যাখ্যান করতে শুরু করল। শেষ পর্যন্ত দেখা গেল,এই শ্বাসত দ্বীন একটা প্রবৃত্তির সমষ্টি হয়ে যাচ্ছে।দ্বীন-ইসলামকে অনুসরণ করার স্থলে লোকজন নিজ প্রবৃত্তির পূজা করতে শুরু করে দিল।

এহেন পরিস্থিতে সে সময়ের বিজ্ঞ উলামায়ে কেরাম চিন্তা করলেন,যে তাকলীদে গায়রে সাখসী তথা স্বাধীন তাকলীদের ধরুণই যেহেতু এই সমস্যা হচ্ছে এবং ভবিষ্যততে আরো হবে।তাই তারা ভাবলেন, এখনই লোকজনকে স্বাধীন তাকলীদ থেকে বাধা প্রদাণ করতে হবে।এবং সবাইকে তাকলীদে শাখসীর উপর একাট্টা করতে হবে।নতুবা দ্বীন- ইসলাম ধংশ হয়ে যাবে।
সুতরাং এই সমস্ত কারণেই তাকলীদে শাখসীর  উপরই ইজমা সংঘটিত হয়ে গেলো।

নাওয়াব সিদ্দিক হাসান খান আল-ইনসাফ(৯৫) গ্রন্থে লিখেন,
হিজরী দ্বিতীয় শতাব্দীর পর থেকে মানুষের মধ্যে তাকলীদে শাখসীর সূচনা হয়।এবং এ সময় এটা ওয়াজিব ছিলো।

যেহেতু তাকলীদের দু'টি শাখার মধ্যে তাকলীদে গায়রে শাখসী ক্ষতিকর প্রমাণিত হয়েছে।এজন্য এখন কুরআন হাদীসে ঘোষিত ফরয তাকলীদ শুধুমাত্র তাকলীদে শাখসীতেই সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে।এবং সবার জন্য এটা ওয়াজিব হয়ে গেছে।(জাওয়াহিরুল ফিকহ-২/২৪)

সু-প্রিয় পাঠকবর্গ ও প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
এক সাথে তিন তালাক দ্বারা তিন তালাত পতিত হওয়ার সাথে সাথে যেহেতু এক তালাক পতিত হওয়ার বিষয়টাও আলোচিত। কিন্তু সমস্ত উম্মাহর ঐক্যর জন্য কোনো একটিকে গ্রহণ করে নেওয়া বাঞ্চনীয়। হয়তো তিন তালাকে তিন তালাক বা তিন তালাকে এক তালাক। যে কোনো একটিকেই বেচে নিতে হবে।সর্বক্ষেত্রে, সবমসময়। হানাফি মাযহাব দলীল প্রমাণাদির ভিত্তিতে যেহেতু তিন তালাকে তিন তালাকের বিধানকে যথেষ্ট শক্তিশালী বিবেচনা করেছে, তাই এখন তিন তালাকে তিন তালাকই পতিত হবে।
বিশেষ বিবেচনা বা পরিবেশ পরিস্থিতির প্রতি লক্ষ্য করে তিন তালাকে এক তালাক গ্রহণ করার কোনো সুযোগ নাই।বরং সর্বদা সর্বক্ষেত্রে তিন তালাকে তিন তালাকই পতিত হবে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

by (25 points)
+2
এটা ফতোয়া জিজ্ঞাসা করার গ্রুপ। একাডেমিক আলোচনার জায়গা এটা নয়। বরং প্রাজ্ঞ গবেষকদের সাথে বসে বিষয়টি আলোচনা করা বিধেয়।
by
স্ত্রীর হায়েছ অবস্থায় এবং পারিবারিক চাপে এক বৈঠকে তিন তালাক দিলে কি তালাক হবে? এখানে আমি কিছু মতামত দেখেছি যেখানে হয়ে যাবে আবার হবেনা এমনও বেশ কিছু মতামত আছে কোরআন এর এমন কিছু আয়াতও আছে যেখানে ইদ্দত এর কথা বলা আছে, আমি জানতে চাচ্ছি ইদ্দত এর প্রতি লক্ষ্য রেখে যেহেতু তালাকের কথা বলা হয়েছে এখানে কোন ঘটনার প্রেক্ষিতে এ আয়াত নাযিল হয়েছিল???

by (597,330 points)
জ্বী, হায়েয অবস্থায় তিন তালাক দিলেও তিন তালাক পতিত হবে । 

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...