ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
আল্লাহ পাক সৃষ্টিকাল থেকেই প্রত্যেক মানুষকে তার ব্যক্তিগত নিজস্ব কিছু অধিকার দান করেছেন।স্ত্রীর উপর স্বামীর কিছু অধিকারও হক্ব দান করেছেন যেমনঃ-চাহিবামাত্র স্বামীকে সঙ্গ দেয়া ও স্বামীর সন্তানকে গর্ভে ধারণ করা এবং লালন-পালন করা ইত্যদি স্ত্রীর উপর স্বামীর অধিকার ও হক্ব।
তদরূপ স্বামীর উপর স্ত্রীরও কিছু অধিকারও হক্ব রয়েছে যেমনঃ-
বিয়ের পর স্ত্রীর ব্যক্তিগত অধিকার রক্ষা করে স্ত্রীকে একটি বাসস্থান ও খাদ্য এবং বস্র দান করা।
এটা স্বামীর উপর স্ত্রীর অধিকার ওহক্ব এবং শরীয়ত কর্তৃক ওয়াজিব।
এ সম্পর্কে কোরআনের ঘোষনা হলঃ
ﻭَﻋَﺎﺷِﺮُﻭﻫُﻦَّ ﺑِﺎﻟْﻤَﻌْﺮُﻭﻑ
নারীদের সাথে সদ্ভাবে জীবন-যাপন কর।৪সূরা নিসা-১৯।
নারীদের সাথে সদ্ভাবে ব্যবহার করতে হলে তাদেরকে নিয়মমাফিক অন্ন-বস্র-বাসস্থান দিতে হবে,
স্ত্রীর চিকিৎসা করানো স্বামীর উপর ওয়াজিব নয় এবং ঘরের রান্নাবান্না স্ত্রীর উপর ওয়াজিব নয়।তবে উভয়টা একটি ভালো ও উত্তম এবং প্রশংসনীয় কাজ ।
স্ত্রীর বাসস্থান কি রকম হবে?
এ সম্পর্কে ফুকাহায়ে কিরামদের নিম্নোক্ত কিছু আলোচনা লক্ষণীয়.....
আল্লামা হাসকফী রহ.বলেনঃ-
وَكَذَا تَجِبُ لَهَا السُّكْنَى فِي بَيْتٍ خَالٍ عَنْ أَهْلِهِ) سِوَى طِفْلِهِ الَّذِي لَا يَفْهَمُ الْجِمَاعَ وَأَمَتِهِ وَأُمِّ وَلَدِهِ (وَأَهْلِهَا) وَلَوْ وَلَدَهَا مِنْ غَيْرِهِ (بِقَدْرِ حَالِهِمَا) كَطَعَامٍ وَكُسْوَةٍ وَبَيْتٍ مُنْفَرِدٍ مِنْ دَارٍ لَهُ غَلْقٌ. زَادَ فِي الِاخْتِيَارِ وَالْعَيْنِيِّ: وَمَرَافِقَ، وَمُرَادُهُ لُزُومُ كَنِيفٍ وَمَطْبَخٍ، وَيَنْبَغِي الْإِفْتَاءُ بِهِ بَحْرٌ (كَفَاهَا) لِحُصُولِ الْمَقْصُودِ هِدَايَةٌ. وَفِي الْبَحْرِ عَنْ الْخَانِيَّةِ: يُشْتَرَطُ أَنْ لَا يَكُونَ فِي الدَّارِ أَحَدٌ -
مِنْ أَحْمَاءِ الزَّوْجِ يُؤْذِيهَا، وَنَقَلَ الْمُصَنِّفُ عَنْ الْمُلْتَقَطِ كِفَايَتَهُ مَعَ الْأَحْمَاءِ لَا مَعَ الضَّرَائِرِ فَلِكُلٍّ مِنْ زَوْجَتَيْهِ مُطَالَبَتُهُ بِبَيْتٍ مِنْ دَارٍ عَلَى حِدَةٍ.
-আদ্দুররুল মুখতার ৩/৫৯৯;
আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী রহ উনার চিরাচরিত নিয়মানুযায়ী উক্ত আলোচনার বিস্তারিত ও গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা করেন,যা নিচে পৃথক পৃথকভাবে উল্লেখ করা হল,
قَوْلُهُ خَالٍ عَنْ أَهْلِهِ إلَخْ) ؛ لِأَنَّهَا تَتَضَرَّرُ بِمُشَارَكَةِ غَيْرِهَا فِيهِ؛؛ لِأَنَّهَا لَا تَأْمَنُ عَلَى مَتَاعِهَا وَيَمْنَعُهَاذَلِكَ مِنْ الْمُعَاشَرَةِ مَعَ زَوْجِهَا وَمِنْ الِاسْتِمْتَاعِ إلَّا أَنْ تَخْتَارَ ذَلِكَ؛ لِأَنَّهَا رَضِيَتْ بِانْتِقَاصِ حَقِّهَا هِدَايَةٌ (
স্ত্রীকে এমন একটি বাসস্থান দান করা স্বামীর জন্য ওয়াজিব,যা স্বামীর পরিবার থেকে খালি থাকবে,কেননা সে অন্যর উপস্থিতির ধরুণ কষ্ট উপভোগ করবে,এবং তার মাল সামানা পুরোপুরি সংরক্ষিত থাকবে না।তৃতীয় কারো উপস্থিতি স্বামী-স্ত্রীর পারিবারিক জীবন ও একান্ত সময় অতিবাহিত করতে ব্যাঘাত সৃষ্টি করবে। এ জন্য একটি পৃথক বাসস্থান স্ত্রীর মৌলিক অধিকার।তবে যদি সে তার নিজ অধিকার বিসর্জন দিতে রাজি হয় যায় তাহলে তার জন্য অনুমিত রয়েছে (যদি এক্ষেত্রে গোনাহের কোনো সম্ভাবনা না থাকে)
قَوْلُهُ وَبَيْتٍ مُنْفَرِدٍ) أَيْ مَا يُبَاتُ فِيهِ؛ وَهُوَ مَحَلٌّ مُنْفَرِدٌ مُعَيَّنٌ قُهُسْتَانِيٌّ. وَالظَّاهِرُ أَنَّ الْمُرَادَ بِالْمُنْفَرِدِ مَا كَانَ مُخْتَصًّا بِهَا لَيْسَ فِيهِ مَا يُشَارِكُهَا بِهِ أَحَدٌ مِنْ أَهْلِ الدَّارِ (قَوْلُهُ لَهُ غَلَقٌ) بِالتَّحْرِيكِ: مَا يُغْلَقُ وَيُفْتَحُ بِالْمِفْتَاحِ قُهُسْتَانِيٌّ.
পৃথক বাসস্থানঃ-মানে যেখানে রাত্রিযাপন করা হয়,তা নির্দিষ্ট এককস্থান হতে হবে।
পৃথক বাসস্থান মানে যা শুধুমাত্র তার জন্য নির্দিষ্ট থাকবে এতে স্বামীর পরিবারের অন্যকেউ শরীক থাকবে না, এবং উক্ত বাসস্থানের চাবি শুধুমাত্র স্ত্রীর হাতেই থাকবে।
قَوْلُهُ زَادَ فِي الِاخْتِيَارِ وَالْعَيْنِيِّ) وَإذَا كَانَ لَهُ غَلَقٌ يَخُصُّهُ وَكَانَ الْخَلَاءُ مُشْتَرَكًا لَيْسَ لَهَا أَنْ تُطَالِبَهُ بِمَسْكَنٍ آخَرَ (
যদি স্বামী তার স্ত্রীর জন্য একটি একক বাসস্থান বরাদ্দ করে এবং স্ত্রীর হাতে চাবিও অর্পণ করে,কিন্তু বাসস্থানের উঠান তার ও অন্যকারো মধ্যে শরিকানা থাকে, তাহলে এক্ষেত্রে স্ত্রীর অভিযোগের কোনো সুযোগ থাকবেনা।
قَوْلُهُ وَمُفَادُهُ لُزُومُ كَنِيفٍ وَمَطْبَخٍ) أَيْ بَيْتِ الْخَلَاءِ وَمَوْضِعِ الطَّبْخِ بِأَنْ يَكُونَا دَاخِلَ الْبَيْتِ أَوْ فِي الدَّارِ لَا يُشَارِكُهَا فِيهِمَا أَحَدٌ مِنْ أَهْلِ الدَّارِ.
স্ত্রীর জন্য বরাদ্দকৃত ঘরে একটি এটাস বাথরুম ও রান্নাঘর হতে হবে যাতে অন্যকেউ শরীক থাকতে পারবে না।
বাসস্থানের ধরণ কি রকম হওয়া চাইঃস্ত্রীকে পৃথক ঘর দিতে হবে, নাকি পৃথক বাড়ী/বাসা দিতে হবে।
এ সম্পর্কে ইবনে আবেদীন শামী রহ.বলেনঃ-
قُلْت: وَالْحَاصِلُ أَنَّ الْمَشْهُورَ وَهُوَ الْمُتَبَادَرُ مِنْ إطْلَاقِ الْمُتُونِ أَنَّهُ يَكْفِيهَا بَيْتٌ لَهُ غَلَقٌ مِنْ دَارٍ سَوَاءٌ كَانَ فِي الدَّارِ ضَرَّتُهَا أَوْ أَحْمَاؤُهَا.
আমি মনে করি ফুকাহায়ে কিরামদের আলোচনা থেকে এটাই বুঝা যাচ্ছে যে,বাসস্থানের জন্য পৃথক একটি রুম-ই যথেষ্ট হবে, যদি সেই রুমের সমস্ত কর্তৃত্ব স্বীকে দিয়ে দেয়া হয় ,চায় ঐ বাড়ির অন্যান্য রুম গুলাতে স্বামীর আত্বীয়-স্বজন থাকুক অথবা স্বামীর অন্যকোনো স্ত্রী(সতীন)থাকুক।এতে কোনো অসুবিধা নেই (যদি শরয়ী অন্যান্য বিধি-বিধান লঙ্ঘনের আশংকা না থাকে)
لَا يَكْفِي ذَلِكَ إذَا كَانَ فِي الدَّارِ أَحَدٌ مِنْ أَحْمَائِهَا يُؤْذِيهَا، وَكَذَا الضَّرَّةُ بِالْأَوْلَى
যদি স্বামীর অাত্বীয়-স্বজন স্ত্রীকে কোনো কষ্ট দেয় অথবা শরয়ী বিধি-বিধান লঙ্ঘনের আশংকা থাকে, তাহলে এক্ষেত্রে স্ত্রীকে পৃথক বাড়ী/ বাসা দিতে হবে, পৃথক রুম দিলে হবে ওয়াজিব আদায় হবে না।
أَنَّ ذَلِكَ يَخْتَلِفُ بِاخْتِلَافِ النَّاسِ، فَفِي الشَّرِيفَةِ ذَاتِ الْيَسَارِ لَا بُدَّ مِنْ إفْرَادِهَا فِي دَارٍ، وَمُتَوَسِّطِ الْحَالِ يَكْفِيهَا بَيْتٌ وَاحِدٌ مِنْ دَارٍ. وَمَفْهُومُهُ أَنَّ مَنْ كَانَتْ مِنْ ذَوَاتِ الْإِعْسَارِ يَكْفِيهَا بَيْتٌ وَلَوْ مَعَ أَحْمَائِهَا وَضَرَّتِهَا كَأَكْثَرِ الْأَعْرَابِ وَأَهْلِ الْقُرَى وَفُقَرَاءِ الْمُدُنِ الَّذِينَ يَسْكُنُونَ فِي الْأَحْوَاشِ وَالرُّبُوعِ، وَهَذَا التَّفْصِيلُ هُوَ الْمُوَافِقُ، لِمَا مَرَّ مِنْ أَنَّ الْمَسْكَنَ يُعْتَبَرُ بِقَدْرِ حَالِهِمَا، وَلِقَوْلِهِ تَعَالَى - {أَسْكِنُوهُنَّ مِنْ حَيْثُ سَكَنْتُمْ مِنْ وُجْدِكُمْ}
[ الطلاق: 6]
তবে এ বিষয়টা স্থান-কাল-পাত্র বেধে ভিন্ন ও হতে পারে,সুতরাং স্ত্রী পর্দানশীন- সচ্চরিত্রা ও ধনী হলে তাকে পৃথক বাড়ী/বাসা দিতে হবে,মাধ্যম পর্যায়ের হলে পৃথক ঘর-ই যথেষ্ট হবে,আর একেবারে নিম্ন পর্যায়ের হলে একটি ঘর-ই যতেষ্ট হবে যদিও তাতে স্বামীর আত্বীয়-স্বজন(নারী) থাকে,যেমন বেদুইন জাযাবর,ও নেহায়েত গরীবদের পারিবারিক জীবনাতিপাথ।এ ব্যখ্যা-ই সূরা ত্বালাকের ৬নং আয়াত সাথে বেশী সঙ্গতিপূর্ণ। (শেষ)
সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
আপনি উপরোক্ত লিংক প্রথমে পড়বেন……………..
১। একজন মা হিসেবে সন্তান, সংসার, সমাজ, রাস্ট্র থেকে একজন নারীর পাওনা হল ন্যায় সংগত ও ইনসাফ।
২। একজন স্ত্রী হিসেবে স্বামী, সংসার, সমাজ, রাস্ট্র থেকে একজন নারীর পাওনা হল ন্যায় সংগত ও ইনসাফ।
৩। একজন বোন হিসেবে ভাই, সংসার, সমাজ, রাস্ট্র থেকে একজন নারীর পাওনা হল ন্যায় সংগত ও ইনসাফ।
৪। একজন মেয়ে হিসেবে বাবা, সংসার, সমাজ, রাস্ট্র থেকে একজন নারীর পাওনা হল ন্যায় সংগত ও ইনসাফ।