জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
ইসলামে অন্য কারো সন্তান লালন-পালন ও তার অভিভাবকত্ব নেওয়ার অনুমতি রয়েছে। যদি কোনো এতিম, গৃহহীন বা অবহেলিত শিশুকে নিজের সন্তানের ন্যায় অন্ন-বস্ত্র ও সব ধরনের সহযোগিতার মাধ্যমে লালন-পালন করে অথবা নিঃসন্তান দম্পতি কোনো শিশুকে স্নেহ করে লালন-পালন করে তাকে স্বেচ্ছায় কিছু দান করে, তাহলে শরিয়তে তা নিষিদ্ধ নয়। এতিম-অনাথ ও গরিব শিশুর অভিভাবকত্ব নিয়ে তার দেখাশোনার দায়িত্ব গ্রহণ করে তাকে যোগ্য মানুষ হিসেবে গড়ে তোলাকে ইসলাম উত্সাহিত করে। ইসলাম এ ধরনের কাজকে অনেক বেশি সওয়াবের কাজ বলে ঘোষণা করেছে। নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আমি ও এতিমের অভিভাবক জান্নাতে দুই আঙুলের ন্যায় অতি কাছাকাছি থাকব।’ (বুখারি : ৬০০৫)
,
নবী করিম (সা.) আরো ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি এতিমের খোরপোশ ও লালন-পালনের যাবতীয় দায়িত্ব গ্রহণ করে, আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাত দান করবেন।’ (তিরমিজি : ১৯১৭)
,
পিতৃপরিচয় ছিন্ন করা অবৈধ
দত্তক নেওয়ার সময় স্মরণ রাখতে হবে, চুক্তিপত্রে সই করে সন্তানের পিতৃপরিচয়স্বত্ব ত্যাগ করে এমনভাবে দেওয়া যাবে না যে মা-বাবা আর কখনো ওই শিশুর মা-বাবা হিসেবে পরিচয় প্রকাশ করতে পারবে না। ইসলাম এ কাজ কখনো সমর্থন করে না। কেননা ইসলাম সওয়াবের নিয়তে অসহায়ের পাশে দাঁড়াতে বলেছে, কিন্তু সন্তান দখল করা কিংবা তার প্রকৃত পরিচয় বিলুপ্ত করার অনুমতি দেয়নি। অনেক সময় দেখা যায়, টাকার বিনিময়ে গরিব মা-বাবা সন্তান দত্তক দেন। এটাকে এক ধরনের সন্তান বেচাকেনাও বলা যেতে পারে। এটি কেবল অমানবিকই নয়, ঘৃণ্যও বটে। ইসলামে এ ধরনের স্বাধীন মানুষ ক্রয়-বিক্রয় সম্পূর্ণ হারাম।
,
নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘কিয়ামতের দিন আমি তিন ব্যক্তির প্রতিপক্ষ হব—এক. ওই ব্যক্তি, যে কোনো কাজে আমার নামে কারো সঙ্গে কসম করার পর তা ভঙ্গ করেছে। দুই. যে ব্যক্তি কোনো স্বাধীন মানুষ বিক্রি করে সম্পদ অর্জন করেছে। তিন. আর যে ব্যক্তি কোনো লোক দিয়ে কাজ করিয়ে তার বিনিময় দেয়নি।’ (বুখারি : ২২২৭)
,
★লালন-পালনকারীর সঙ্গে পালিত সন্তান পর্দার ক্ষেত্রেও পুরোপুরি ইসলামের বিধান রক্ষা করে চলতে হবে। নিজ হাতে লালন-পালন করেছি বলে পর্দার বিধান লঙ্ঘনের কোনো সুযোগ নেই। অর্থাত্ পালক নেওয়া শিশুটি ছেলে হলে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর তাকে পালক নেওয়া মায়ের সঙ্গে পর্দা করতে হবে। অন্যদিকে পালক নেওয়া শিশুটি মেয়ে হলে তাকে পালক নেওয়া বাবার সঙ্গে পর্দা রক্ষা করে চলতে হবে। কেননা ইসলামী শরিয়ত মতে, দত্তকসংক্রান্ত সম্পর্ক কখনো বংশীয় সম্পর্কে পরিণত হয় না। এমনকি তাদের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্কও অন্য সাধারণ মানুষের ন্যায়ই বৈধ। এতে বিন্দুমাত্র সন্দেহের অবকাশ নেই। (তুহফাতুল ফুকাহা : ২/১২৩)
বিস্তারিত জানুনঃ
(০১)
হ্যাঁ তার প্রকৃত পরিবারের সাথে সম্পর্ক ও যোগাযোগ স্থাপন এবং তা বজায় রাখা জরুরী।
,
(০২)
হ্যাঁ এমতাবস্থায় সে গোপনে প্রকৃত বাবা-মা, ভাই-বোন ও অন্যান্য আত্মীয়স্বজনের সাথে যোগাযোগ রাখতে পারে।
,
বরং এ যোগাযোগ রাখা জরুরি।
এক্ষেত্রে সমস্যা হলে বিষয় নিয়ে তাদেরকে খুব ভালো ভাবে বুঝাতে হবে।
ইসলামী দৃষ্টিকোন থেকে বুঝাতে হবে।
,
(০৩)
না এতে মিথ্যা বলা জায়েজ হবেনা।
মিথ্যা বলে থাকলে তওবা করতে হবে।
আরো জানুনঃ
,
(০৪)
কোনো শিথিলতা নেই।
তাদের সাথে অন্যান্য গায়রে মাহরামের সাথে পর্দা করার মতোই পর্দা করতে হবে।
তবে পর্দার ক্ষেত্রে একটি সহজ পদ্ধতি অবলম্বন করা যায়, তা হলো পালক শিশুটি দুগ্ধপোষ্য অবস্থায় তাকে লালন-পালনকারীর এমন কোনো মহিলা আত্মীয় থেকে দুধ পান করিয়ে নেবে, যাতে শিশুটির সঙ্গে তাদের দুধসম্পর্কের আত্মীয়তা হয়ে যায়। তখন তাদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাত্ বৈধ হবে। এ ক্ষেত্রে পর্দাও জরুরি হবে না এবং বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনও নিষিদ্ধ হয়ে যাবে।
হাদীস শরীফে এসেছে, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার ঘরে ছিলেন। এমতাবস্থায় আয়েশা শুনতে পেলেন যে, হাফসার ঘরে যাওয়ার জন্য একজন পুরুষ লোক অনুমতি চাচ্ছে। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! একলোক আপনার পরিবারভুক্ত ঘরে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আমার তো মনে হয় এটা অমুক ব্যক্তি। হাফসার কোন এক দুধ চাচা। তখন আয়েশা বললেন, অমুক যদি জীবিত থাকত- আয়েশার কোন এক দুধ চাচা, তাহলে কি সে আমার কাছে প্রবেশ করতে পারত? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হ্যাঁ, জন্মগত কারণে যা হারাম হয়, দুধগত কারণেও তা হারাম হয়। [বুখারী ৫০৯৯; মুসলিম: ১৪৪৪]
,
অন্য বর্ণনায় এসেছে, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলতেন, জন্মের কারণে যাদেরকে হারাম গণ্য করো দুধ পানের কারণেও তাদেরকে হারাম গণ্য করবে। [মুসলিম: ১৪৪৫]
,
তবে এ দুধপান দু’ বছরের মধ্যে হয়েছে কি না সে ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন জরুরী; কারণ, হাদীসে এসেছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, দুধ পানের সময়টুকু যেন ঐ সময়েই সংঘটিত হয় যখন সন্তানের দুধ ছাড়া আর কোন খাবার দিয়ে ক্ষুধা নিবারণ হতো না। [বুখারী ৫১০২; মুসলিম: ১৪৫৫]