আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
141 views
in সুন্নাহ-বিদ'আহ (Sunnah and Bid'ah) by (60 points)
আসসালামু আলাইকুম।

শায়েখ, আমি একজন ছাত্র এবং আমার কোনো স্থায়ী ইনকাম নেই।বাড়ি থেকে দেওয়া টাকায় আমার খরচের উৎস।

আমি এক অসুস্থ ভাই এর চিকিৎসার জন‍্য আমার কাছে থাকা অল্প পরিমাণ টাকা থেকে দান করব বলে ভেবেছি।

১)আমি কি তার তীব্র অসুস্থতার কথা ভেবে আমার সমস্ত টাকা তাকে দিয়ে দেব এবং নিজের প্রয়োজনগুলো আল্লাহর কাছে সপে দেব? এটা কি তাওয়াক্কুল?

এক্ষেত্রে রাসুল(স) এর সুন্নাহ কি? তিনি কিভাবে খরচ করতে বলেছেন?

1 Answer

0 votes
by (675,600 points)
জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 


শরীয়তের মূলনীতি হলো প্রয়োজনের অতিরিক্ত যা থাকে তা থেকে নফল দান সদকাহ করা যাবে।
নিজেকে কষ্টে ফেলে, তাদের অধিনস্তদেরকে অধিকার হতে বঞ্চিত করে সদাকা করার কোন বিধান নেই। 

সুরা বাকারার ২১৯ নং আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ 

 وَ یَسۡـَٔلُوۡنَکَ مَا ذَا یُنۡفِقُوۡنَ ۬ؕ قُلِ الۡعَفۡوَؕ کَذٰلِکَ یُبَیِّنُ اللّٰہُ لَکُمُ الۡاٰیٰتِ لَعَلَّکُمۡ تَتَفَکَّرُوۡنَ ﴿۲۱۹﴾ۙ

আর তারা আপনাকে জিজ্ঞেস করে কি তারা ব্যয় করবে? বলুন যা উদ্ধৃত সম্পদ। এভাবে আল্লাহ্ তার আয়াতসমূহ তোমাদের জন্য সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত করেন, যাতে তোমরা চিন্তা কর।

অর্থাৎ প্রয়োজনের অতিরিক্ত যা থাকে তাই খরচ কর। এতে বোঝা গেল যে, নফল সদাকার বেলায় নিজের প্রয়োজনে অতিরিক্ত যা থাকে তাই ব্যয় করতে হবে। নিজের সন্তানাদিকে কষ্টে ফেলে, তাদের অধিকার হতে বঞ্চিত করে সদাকা করার কোন বিধান নেই। অনুরূপভাবে যে ব্যক্তি ঋণগ্রস্ত, ঋণ পরিশোধ না করে তার পক্ষে নফল সদকা করাও আল্লাহর পছন্দ নয়।


নিজের পরিবারের জন্য খরচ করার পর যা কিছু অবশিষ্ট থাকে, তা দান করতে বলা হয়েছে। এমনভাবে দান করা যাবে না যে নিজের পরিবারকে রাস্তায় এসে দাঁড়াতে হয়। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে সেই বান্দাদের সুনাম করেছেন, যারা দান-সদকা করার ক্ষেত্রেও ভারসাম্য রক্ষা করে। 

সুরা ফুরকানের ৬৭ নং আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ 

وَ الَّذِیۡنَ اِذَاۤ اَنۡفَقُوۡا لَمۡ یُسۡرِفُوۡا وَ لَمۡ یَقۡتُرُوۡا وَ کَانَ بَیۡنَ ذٰلِکَ قَوَامًا ﴿۶۷﴾ 
এবং যখন তারা ব্যয় করে তখন অপব্যয় করে না, কৃপনতাও করে না, আর তাদের পন্থা হয় এতদুভয়ের মধ্যবর্তী।
,
অর্থাৎ আল্লাহর প্রিয় বান্দারা অপব্যয় করে না এবং কৃপণতাও করে না; বরং উভয়ের মধ্যবর্তী সমতা বজায় রাখে। আয়াতে أسْرَافٌ এবং এর বিপরীতে إقْتَارٌ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। أسْرَافٌ এর অর্থ সীমা অতিক্রম করা। শরীয়তের পরিভাষায় ইবনে আব্বাস, মুজাহিদ, কাতাদাহ, ইবনে জুবায়েরের মতে আল্লাহ্র অবাধ্যতার কাজে ব্যয় করা أسْرَافٌ তথা অপব্যয়; যদিও তা এক পয়সাও হয়। কেউ কেউ বলেন, বৈধ এবং অনুমোদিত কাজে প্রয়োজনাতিরিক্ত ব্যয় করাও অপব্যয়ের অন্তর্ভুক্ত। কেননা, تَبْذِيْرٌ তথা অনর্থক ব্যয় কুরআনের আয়াত দ্বারা হারাম ও গোনাহ্। আল্লাহ বলেনঃ (إِنَّ الْمُبَذِّرِينَ كَانُوا إِخْوَانَ الشَّيَاطِينِ) [সূরা আল-ইসরাঃ ২৭]

তাই খরচ করার ক্ষেত্রে পরিপূর্ণ ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে। এত বেপরোয়া খরচ করা যাবে না, পরে নিজেই মানুষের কাছে হাত পাততে হয়। আবার এত কৃপণতাও করা যাবে না, যার জন্য সব মহলে নিন্দিত হতে হয়।

সুরা বনি ইসরাইলের ২৯ নং আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ 

وَ لَا تَجۡعَلۡ یَدَکَ مَغۡلُوۡلَۃً اِلٰی عُنُقِکَ وَ لَا تَبۡسُطۡہَا کُلَّ الۡبَسۡطِ فَتَقۡعُدَ مَلُوۡمًا مَّحۡسُوۡرًا ﴿۲۹﴾ 
‘নিজের (দানের) হাত গলায় বেঁধে রেখো না এবং তাকে একেবারে খোলাও ছেড়ে দিয়ো না, তাহলে তুমি নিন্দিত ও অক্ষম হয়ে যাবে।’ (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ২৯)

“হাত বাঁধা” কৃপণতা অর্থেব্যবহৃত হয়। আর “হাত খোলা ছেড়ে দেয়া”র মানে হচ্ছে, বাজে খরচ করা। [ইবন কাসীর] আয়াতে সরাসরি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এবং তার মধ্যস্থতায় সমগ্র উম্মতকে সম্বোধন করা হয়েছে। উদ্দেশ্য এমন মিতাচার শিক্ষা দেয়া, যা অপরের সাহায্যে প্রতিবন্ধকও না হয় এবং নিজের জন্যেও বিপদ ডেকে না আনে। যখনই তুমি তোমার সামর্থ্যের বাইরে হাত প্রশস্ত করবে, তখনই তুমি খরচ করার কিছু না পেয়ে বসে পড়বে। তখন তুমি ‘হাসীর’ হবে। হাসীর বলা হয় সে বাহনকে যে দুর্বল ও অপারগতার কারণে চলতে অপারগ হয়ে গেছে। [ইবন কাসীর] হাসীর এর আরেক অর্থ তিরস্কৃত হওয়া। [ফাতহুল কাদীর]

হাদীসে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘প্রতিদিন সকালবেলা দু'জন ফেরেশতা নাযিল হয়। তাদের একজন বলতে থাকে, আল্লাহ্! আপনি খরচকারীকে বাকী থাকার মত সম্পদ দান করুন, অপরজন বলে, আল্লাহ্! আপনি কৃপনাকে নিঃশেষ করে দিন।' [বুখারী: ১৪৪২: মুসলিম: ১০১০]
,
★★সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে আপনি প্রশ্নে উল্লেখিত ব্যাক্তির  তীব্র অসুস্থতার কথা ভেবে আপনার সমস্ত টাকা তাকে দিয়ে দিতে পারবেন,এটি নাজায়েজ নয়।
তবে এক্ষেত্রে ইসলাম সমর্থিত পন্থা হলো আপনি নিজের প্রয়োজনীয় টাকা রেখে অবশিষ্ট টাকা দান করতে পারেন।  


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...