মিসওয়াক প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রিয় একটি সুন্নত। অনেক গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত এটি। আল্লাহ তাআলার নৈকট্য ও সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যম। হাদীস শরীফে এসেছে,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
السِّوَاكُ مَطْهَرَةٌ لِلْفَمِ، مَرْضَاةٌ لِلرَّبِّ.
মিসওয়াক মুখের পবিত্রতা, রবের সন্তুষ্টির মাধ্যম। -সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ২৮৯; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস ১৩৫; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ১০৬৭
,
মাসায়েলঃ
তিক্ত, কাঁচা ও নরম গাছের ডাল দ্বারা মিসওয়াক করা উত্তম। মহানবী (সা.) জয়তুন ও খেজুরগাছের ডাল দ্বারা মিসওয়াক করতেন। পিলুগাছের মিসওয়াক ব্যবহারে মস্তিষ্ক সতেজ হয়। দাঁতের ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের অভাব পূরণ করে।
মিসওয়াক কেমন হওয়া উচিত : মিসওয়াক নিজ হাতের আঙুলের মতো মোটা এবং এক বিঘত পরিমাণ লম্বা হওয়া উচিত। এতে মিসওয়াক করতে সুবিধা হয়।
মিসওয়াক করার পদ্ধতি : মিসওয়াক করার সুন্নত পদ্ধতি হলো মুখের ডান দিক থেকে শুরু করা এবং ওপর থেকে নিচে মিসওয়াক করা। আড়াআড়িভাবে না করা। মাড়ির ভেতর ও বাইরে জিহ্বার গোড়া পর্যন্ত মিসওয়াক করা। মিসওয়াক ধরার সময় ডান হাতের কনিষ্ঠাঙ্গুলি মিসওয়াকের নিচে থাকবে। মধ্যমা ও তর্জনী ওপর এবং বৃদ্ধাঙ্গুলি নিচে থাকবে।
রাসুলুল্লাহ সাঃ যেসব সময়ে মিসওয়াক করতেনঃ
ঘরে প্রবেশ করে মিসওয়াক
আয়েশা রা. হতে বর্ণিত তিনি বলেন-
أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: كَانَ إِذَا دَخَلَ بَيْتَهُ بَدَأَ بِالسِّوَاكِ.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ঘরে প্রবেশ করতেন প্রথমে মিসওয়াক করতেন। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৫৩
শুরাইহ রাহ. বলেন-
سَأَلْتُ عَائِشَةَ، قُلْتُ: بِأَيِّ شَيْءٍ كَانَ يَبْدَأُ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا دَخَلَ بَيْتَهُ؟ قَالَتْ: بِالسِّوَاكِ.
আমি আয়েশা রা.-কে জিজ্ঞাসা করলাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে প্রবেশ করে প্রথমে কোন্ কাজটি করতেন? উত্তরে তিনি বলেন, প্রথমে মিসওয়াক করতেন। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৫৩
শয্যার পাশে মিসওয়াক
عَنْ ابْنِ عُمَرَ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ لَا يَنَامُ إِلاَّ وَالسِّوَاكُ عِنْدَهُ، فَإِذَا اسْتَيْقَظَ بَدَأَ بِالسِّوَاكِ.
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুমানোর সময় মিসওয়াক পাশে রাখতেন। ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে প্রথমেই তিনি মিসওয়াক করতেন। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৫৯৬৯
ওযুর পূর্বে মিসওয়াক
আম্মাজান আয়েশা রা. বলেন-
أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ لَا يَرْقُدُ مِنْ لَيْلٍ وَلَا نَهَارٍ، فَيَسْتَيْقِظُ إِلاَّ تَسَوَّكَ قَبْلَ أَنْ يَتَوَضَّأَ.
দিনে বা রাতে যখনই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুম হতে জাগ্রত হতেন ওযুর পূর্বে মিসওয়াক করে নিতেন। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২৪৯০০
মৃত্যুর আগমুহূর্তেও মিসওয়াক!
আয়েশা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন-
تُوُفِّيَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي بَيْتِي، وَفِي يَوْمِي، وَبَيْنَ سَحْرِي وَنَحْرِي، وَكَانَتْ إِحْدَانَا تُعَوِّذُهُ بِدُعَاءٍ إِذَا مَرِضَ، فَذَهَبْتُ أُعَوِّذُهُ...، وَمَرَّ عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ أَبِي بَكْرٍ وَفِي يَدِهِ جَرِيدَةٌ رَطْبَةٌ، فَنَظَرَ إِلَيْهِ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَظَنَنْتُ أَنَّ لَهُ بِهَا حَاجَةً، فَأَخَذْتُهَا، فَمَضَغْتُ رَأْسَهَا، وَنَفَضْتُهَا، فَدَفَعْتُهَا إِلَيْهِ، فَاسْتَنَّ بِهَا كَأَحْسَنِ مَا كَانَ مُسْتَنًّا، ثُمَّ نَاوَلَنِيهَا، فَسَقَطَتْ يَدُهُ، أَوْ: سَقَطَتْ مِنْ يَدِهِ، فَجَمَعَ اللهُ بَيْنَ رِيقِي وَرِيقِهِ فِي آخِرِ يَوْمٍ مِنَ الدُّنْيَا، وَأَوَّلِ يَوْمٍ مِنَ الآخِرَةِ.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার ঘরে আমার ‘পালা’র দিনে এবং আমার বুকে মাথা রাখা অবস্থায় ইন্তিকাল করেন। তিনি অসুস্থ হলে আমাদের মধ্যকার কেউ দুআ পড়ে তাঁকে ঝাড়ফুঁক করতেন। আমি তাঁকে ঝাড়ফুঁক করছিলাম এসময় আবদুর রহমান ইবনে আবু বকর আগমন করল। তার হাতে মিসওয়াকের একটি তাজা ডাল ছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন সেদিকে তাকালেন। আমি বুঝতে পারলাম যে, তিনি মিসওয়াকের প্রয়োজন বোধ করছেন। তখন আমি সেটি নিয়ে চিবিয়ে প্রস্তুত করে তাঁকে দিলাম। তিনি এর দ্বারা সুন্দরভাবে মিসওয়াক করলেন, যেমনটি তিনি (সুস্থতার সময়) করে থাকেন। অতঃপর তিনি তা আমাকে দিলেন। পরক্ষণই তাঁর হাত ঢলে পড়ল। আল্লাহ তাআলা আমার থুথুকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের থুথুর সঙ্গে মিলিয়ে দিলেন তাঁর এ দুনিয়ার শেষ দিনে এবং আখিরাতের প্রথম দিনে। -সহীহ বুখারী হাদীস ৪৪৫১
জুমার দিনে মিসওয়াক
আবু সায়ীদ খুদরী রা. হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
غُسْلُ يَوْمِ الْجُمُعَةِ عَلَى كُلِّ مُحْتَلِمٍ، وَسِوَاكٌ، وَيَمَسُّ مِنَ الطِّيبِ مَا قَدَرَ عَلَيْهِ.
জুমার দিন প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির গোসল ও মিসওয়াক করা কর্তব্য এবং সামর্থ্য অনুযায়ী সে সুগন্ধিও ব্যবহার করবে। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৮৪৫
ওযুর সময় মিসওয়াক করা গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত
হাদীস শরীফে এসেছে, বান্দা যখন নামাযে দাঁড়ায় সে তখন রবের সাথে কথাপোকথন করে। ফিরিশতাগণ জামাতের নামাযে তার সাথে কাতারবন্দি হয়ে দাঁড়ায়। তার তিলাওয়াত খুব নিকট থেকে শোনে। এজন্য নামাযে দাঁড়ানোর পূর্বে বান্দার কর্তব্য হল, পাকসাফ হয়ে সবধরনের পবিত্রতা অর্জন করে নামাযে দাঁড়ানো। নোংরা ময়লা পোশাক নিয়ে দুর্গন্ধময় মুখ ও শরীর নিয়ে প্রভুর সম্মুখে দাঁড়ানো কিছুতেই কাম্য নয়।
এ কারণেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওযুতে মিসওয়াকের এত গুরুত্ব প্রদান করেছেন। কোনো কোনো বর্ণনার ভাষা লক্ষ করুন-
لَوْلَا أَنْ أَشُقَّ عَلَى أُمَّتِي لَأَمَرْتُهُمْ بِالسِّوَاكِ مَعَ كُلِّ وُضُوءٍ.
আমার উম্মতের উপর যদি (অধিক) কষ্টের আশঙ্কা না হত তাহলে আমি তাদের উপর প্রত্যেক ওযুর সময় মিসওয়াক আবশ্যকীয় করে দিতাম। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৯৯২৮