আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

+1 vote
733 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (14 points)
১। পাত্রীর পরিবারকে আগে থেকে না জানিয়ে, বিনা নোটিশে, পাত্রীর ঘরে পাত্রী দেখতে যাওয়া যাবে কিনা?

২। পাত্রীর পরিবার দ্বীনদার না, কিন্তু পাত্রী নিজে দ্বীনদার হলে, বিয়ের জন্য কথা আগানো উচিত হবে কিনা?

৩। পাত্রী দ্বীনের পথে ফিরে এসেছে, পূর্বে তার হারাম রিলেশন ছিলো, ব্যাভিচার করেছে, ঠিকমতো পর্দা করতো না, কিন্তু এখন পর্দা মেনে দ্বীনদারী অনুসরণ করার কথা বলেছে। এক্ষেত্রে বিয়ের জন্য কথা আগানো উচিত হবে কিনা?

৪। পাত্রী দেখার ক্ষেত্রে দ্বীনদারিতা যাচাই করার ইসলামিক পদ্ধতি কি?

৫। পাত্রীর সাথে কথা বলার সময় ৩য় কেউ উপস্থিত থাকা জরুরি কিনা?

৬। পাত্রের জন্য পাত্রীর শরীরের কোন কোন অঙ্গ দেখা জায়েজ হবে? পাত্রী যদি ঐসব অঙ্গ ঢেকে আসে, তাহলে তা প্রদর্শন করার জন্য বলা যাবে কিনা?

৭। পাত্রী দেখার পর তার হাতে টাকা দেয়া জায়েজ হবে কিনা? অথবা বস্তুগত গিফট দেয়া যাবে কিনা?

৮। পাত্রীপক্ষ ইচ্ছাপূর্বক কোনো সত্য যা পাত্রপক্ষ জানলে বিয়ে হবেনা এমন কিছু গোপন করে, তবে পাত্র পক্ষের করণীয় কি?

৯। বিয়ের সময় কোনো আত্মীয়দের না জানিয়ে বিয়ে সম্পন্ন করলে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা হবে কিনা?

১০। পাত্রী বা পাত্রীপক্ষ বিয়ের আগে যদি আল্লহর নামে শপথ করে বিয়ের ব্যাপারে কোনো মিথ্যা বলে ফেলে, বিয়ের পর স্বামী তা জানতে পারে তবে বিয়ে ভেঙ্গে যাবে কিনা?

১১। বিয়ের পূর্বে পাত্রী/পাত্র সম্পর্কে কোন কোন ব্যাপারে খোজ নেয়া যাবে? পাত্রীর পূর্বে হারাম রিলেশন/দৈহিক মেলামেশা ছিলো কিনা, কূমারী/ভার্জিন কিনা, নন-মাহরামদের সাথে বেপর্দা চলত কিনা ইত্যাদির খোজ নেয়া যাবে কিনা? এগুলা কি কারো দোষ খোজার মধ্যে পড়ে যেটা ইসলামে নিষেধ করা হয়েছে?

১২। পাত্র-পাত্রী একে অপরকে তারা 'একে অপরের অতীত সম্পর্কে জানতে চান না' এমন অভয় দিতে পারবেন কিনা? কেননা না চাইতেই অনেক সময় বিয়ের পর অতীতের এই ব্যাপার গুলো চলে আসে!

1 Answer

0 votes
by (657,800 points)
edited by
জবাব
بسم الله الرحمن الرحيم


(০১)
পাত্রীর পরিবারকে আগে থেকে না জানিয়ে, বিনা নোটিশে, পাত্রীর ঘরে পাত্রী দেখতে যাওয়া যাবে।
এটি জায়েজ আছে।
 
(০২)
বিয়ের আগে পাত্রপাত্রীর যে বিষয়গুলো গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে তার মধ্যে ‘কুফু’ অন্যতম। 
আরবি ‘কুফু’ শব্দের অর্থ সমতা, সমান, সাদৃশ্য, সমকক্ষ, সমতুল্য ইত্যাদি। 

বিয়ের ক্ষেত্রে বর-কনের দ্বীনদারি, সম্পদ, বংশ, সৌন্দর্যতা সব কিছু সমান সমান বা কাছাকাছি হওয়াকে ইসলামী পরিভাষায় কুফু বলে। 

স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের রুচি, চাহিদা, অর্থনৈতিক অবস্থান খুব বেশি ভিন্ন হলে সেখানে সুখী দাম্পত্যজীবন প্রতিষ্ঠা কষ্টসাধ্য হয়ে যায়। একজন উচ্চ শ্রেণীর ছেলেমেয়ের চাহিদা-রুচির সাথে একজন দরিদ্র বা মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়ের রুচিবোধের মিল না থাকাটাই স্বাভাবিক।

 আবার একজন দ্বীনদার পাত্রপাত্রীর সাথে একজন ধর্মবিষয়ে উদাসীন পাত্রপাত্রীর জীবনাচার নাও মিলতে পারে। দ্বীনদার চাইবে সব কিছুতে ধর্মের ছাপ থাকুক। আর দীনহীন চাইবে সব কিছু ধর্মের আবরণমুক্ত থাকুক। সুতরাং এ দুইয়ের একত্রে বসবাস কখনো শান্তি-সুখের ঠিকানা হতে পারে না। তাই পবিত্র কুরআনও বিয়ের ক্ষেত্রে দ্বীনদারিতে সমতা রক্ষার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছে।

আল্লাহ বলেন, ‘দুশ্চরিত্রা নারী দুশ্চরিত্র পুরুষদের জন্য; দুশ্চরিত্র পুরুষ দুশ্চরিত্রা নারীর জন্য; সচ্চরিত্রা নারী সচ্চরিত্র পুরুষদের জন্য এবং সচ্চরিত্র পুরুষ সচ্চরিত্রা নারীর জন্য উপযুক্ত।’ (সূরা নূর : ২৬)।

অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘ব্যভিচারী পুরুষ যেন ব্যভিচারিণী বা মুশরিক নারী ছাড়া কাউকে বিয়ে না করে। আবার ব্যভিচারিণী নারী যেন ব্যভিচারী পুরুষ বা মুশরিক পুরুষ ছাড়া কাউকে বিয়ে না করে। মুমিনদের জন্য এ ধরনের চরিত্রের নারী-পুরুষকে হারাম করা হয়েছে।’ (সূরা নূর : ৩)।

কুরআনের পাশাপাশি রাসূল সা:-এর পবিত্র হাদিস শরিফেও ‘কুফু’ সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা পাওয়া যায়। 

রাসূল সা: ‘কুফু’র বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। 

حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ سَابُورَ الرَّقِّيُّ حَدَّثَنَا عَبْدُ الْحَمِيدِ بْنُ سُلَيْمَانَ الْأَنْصَارِيُّ أَخُو فُلَيْحٍ عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ عَجْلَانَ عَنْ ابْنِ وَثِيمَةَ النَّصْرِيِّ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِذَا أَتَاكُمْ مَنْ تَرْضَوْنَ خُلُقَهُ وَدِينَهُ فَزَوِّجُوهُ إِلَّا تَفْعَلُوا تَكُنْ فِتْنَةٌ فِي الْأَرْضِ وَفَسَادٌ عَرِيضٌ
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের নিকট এমন কোন ব্যক্তি বিবাহের প্রস্তাব নিয়ে এলে, যার চরিত্র ও ধর্মানুরাগ সম্পর্কে তোমরা সন্তুষ্ট, তার সাথে (তোমাদের মেয়েদের) বিবাহ দাও। তোমরা যদি তা না করো, তাহলে পৃথিবীতে বিপর্যয় ও ব্যাপক বিশৃংখলা ছড়িয়ে পড়বে।
(ইবনে মাজাহ ১৯৬৭,তিরমিযী ১০৮৪, ইরওয়াহ ১৮৬৮, সহীহাহ ১০২২।) 
,
আরো জানুনঃ  
,
★সুতরাং পাত্রীর পরিবার দ্বীনদার না, কিন্তু পাত্রী নিজে দ্বীনদার হলে, বিয়ের জন্য কথা আগানো উচিত হবে।
,
(০৩)
পাত্রী দ্বীনের পথে ফিরে এসেছে, পূর্বে তার হারাম রিলেশন ছিলো, ব্যাভিচার করেছে, ঠিকমতো পর্দা করতো না, কিন্তু এখন পর্দা মেনে দ্বীনদারী অনুসরণ করার কথা বলেছে। এক্ষেত্রে বিয়ের জন্য কথা আগানো ঠিক হবে।

(০৪
পাত্রী দেখার ক্ষেত্রে দ্বীনদারিতা যাচাই করার পদ্ধতি হলোঃ 
তিনি পূর্ণ পর্দা করেন কিনা?
পরিপূর্ণ ভাবে নামাজ আদায় করেন কিনা?
গায়রে মাহরাম পুরুষের সাথে কথা বার্তা দেখা সাক্ষাৎ করে কিনা? ইত্যাদি,,  
এগুলো বিষয়ে জানা।
,
(০৫)
হ্যাঁ ৩য় কাহারো উপস্থিতি জরুরি। 

পাত্র-পাত্রীর পরস্পর দেখা সাক্ষাৎ মূলনীতি সম্পর্কে বিস্তারিত  জানুনঃ 
,
(০৬)
চেহারা আর দুই হাতের কব্জি পর্যন্ত দেখা যাবে।

পাত্রী যদি চেহারা,হাত ঢেকে আসে, তাহলে তা প্রদর্শন করার জন্য বলা যাবে।
,
بَابُ النَّظِرِ إِلَى الْمَخْطُوْبَةِ وَبَيَانِ الْعَوْرَاتِ
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ : جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِىِّ ﷺ فَقَالَ : إِنِّىْ تَزَوَّجْتُ امْرَأَةً مِنَ الْأَنْصَارِ قَالَ : «فَانْظُرْ إِلَيْهَا فَإِنَّ فِى اعْيُنِ الْأَنْصَارِ شَيْئًا».
 (বিবাহের প্রস্থাবিত) পাত্রী দেখা ও সতর (পর্দা) প্রসঙ্গে

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন জনৈক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট উপস্থিত হয়ে বলল যে, আমি জনৈকা আনসারী নারীকে বিয়ে করার ইচ্ছা করেছি (আপনার কী অভিমত?)। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, (বিয়ের পূর্বে) তাকে দেখে নাও। কেননা, আনসারী নারীদের চক্ষুতে কিছু দোষ থাকে। 

(মুসলিম ১৪২৪, নাসায়ী ৩২৪৬, আহমাদ ৭৮৪২, সহীহাহ্ ৯৫।)
,
আলোচ্য হাদীসে রয়েছে যে, বিবাহের জন্য মনোনীত মহিলাকে দেখা মুস্তাহাব। আর এটাই আমাদের মালিকী, হানাফী, কুফী, আহমাদ ও জুমহূর ‘উলামাগণের মত। আর মহিলার চেহারা ও দু’ হাতের কব্জি পর্যন্ত দেখা বৈধ। কেননা চেহারাতেই প্রমাণ পাওয়া যাবে যে, মহিলাটি সুন্দরী নাকি এর বিপরীত। আর হাত দেখার মাধ্যমে মহিলার দেহের নমুনা পাওয়া যাবে যে, দেহ কোমল নাকি এর বিপরীত। আর এটাই অধিকাংশ ‘উলামাগণের মত। (শারহে মুসলিম ৯/১০ খন্ড, হাঃ ১৪২৪)

عَنْ جَابِرٍ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ : «إِذَا خَطَبَ أَحَدُكُمُ الْمَرْأَةَ فَإِنِ اسْتَطَاعَ أَنْ يَنْظُرَ إِلٰى مَا يَدْعُوهُ إِلٰى نِكَاحِهَا فَلْيفْعَلْ»
জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন কোনো নারীকে বিয়ের প্রস্তাব দেবে, আর যদি তার পক্ষে এমন কোনো অঙ্গ দেখা সম্ভব হয় যা বিবাহের পক্ষে যথেষ্ট, তখন তা যেন দেখে নেয়।

(আবূ দাঊদ ২০৮২, সহীহাহ্ ৯৯, আহমাদ ১৪৫৮৬, ইরওয়া ১৭৯১, সহীহ আল জামি‘ ৫০৬।)

মুহাম্মাদ বিন মাসলামাহ্ কর্তৃক হাদীসে রয়েছে, তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, যার অন্তরে আল্লাহ তা‘আলা কোনো নারীকে বিবাহ করার আগ্রহ জাগিয়ে দিবেন, তার দিকে দেখতে কোনো দোষ নেই। নববী (রহঃ) বলেনঃ কোনো মহিলাকে বিবাহ করার ইচ্ছা করলে তাকে দেখা মুস্তাহাব। আর এটাই জুমহূর ‘উলামাগণসহ মালিক, শাফি‘ঈ, হানাফী, কুফী মাযহাবের মত। তবে উক্ত মহিলার শুধু চেহারা ও দু’হাত দেখা বৈধ হবে। কারণ এ দু’টো লজ্জাস্থান নয়। আর চেহারাতে নারীর সুন্দরী বা অসুন্দরী হওয়া প্রমাণিত হবে। আর দু’ হাত দেখায় তার দেহের সৌন্দর্য প্রমাণিত হবে। আর এটাই আমাদের ও আধিকাংশ ‘উলামাগণের মত। হাফিয শামসুদ্দীন ইবনুল কইয়্যূম (রহঃ) বলেনঃ ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ) বলেছেন, পয়গামকৃত মহিলা পর্দায় আবৃত অবস্থায় তার চোহারা ও দু’হাত দেখা যাবে, এর বেশী কিছু দেখা যাবে না। (‘আওনুল মা‘বূদ ৪র্থ খন্ড, হাঃ ২০৮২)

আরো জানুনঃ

(০৭)
গিফট দেওয়া যাবে।
তবে তার হাত স্পর্শ করা যাবেনা।
যদি টাকা বা এমন কিছু দিতে চায়,যাহা দিতে হলে হাত স্পর্শ হয়,তাহলে নিজের মাহরাম মহিলার দ্বারা দিবে।
,
(০৮)
পাত্র চাইলে বিবাহ করতেও পারে,চাইলে নাও করতে পারে।
,
(০৯)
না এতে সেই গুনাহ হবেনা।
,
(১০)
না, এতে বিবাহ ভেঙ্গে যাবেনা।
,
(১১)
এগুলো খোজ নেওয়া যাবে।
অন্যথায় তার দ্বীনদারিত্ব বুঝা সম্ভব নয়।
,
(১২)
হ্যাঁ তারা চাইলে অভয় দিতে পারবে। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...