বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
হযরত আনাস ইবনে মালিক রাযি থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন,
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رضي الله عنه قَالَ : ( كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُفْطِرُ قَبْلَ أَنْ يُصَلِّيَ عَلَى رُطَبَاتٍ ، فَإِنْ لَمْ تَكُنْ رُطَبَاتٌ فَتُمَيْرَاتٌ ، فَإِنْ لَمْ تَكُنْ تُمَيْرَاتٌ حَسَا حَسَوَاتٍ مِنْ مَاءٍ )
রাসূলুল্লাহ সাঃ মাগরিবের নামাযের পূর্বে কিছু তাজা খেজুর দ্বারা ইফতার করতেন।যদি সতেজ- তাজা খেজুর না থাকতো তখন,শুকনা খেজুর দ্বারা ইফতার করতেন।যদি শুকনা খেজুরও না থাকতো,তখন পানি দ্বারা ইফতার করতেন।(সুনানু তিরমিযি-৬৩২)
জামাতে নামায পড়া পুরুষের জন্য সুন্নতে মু'আক্বাদা।বিশেষ কিছু প্রয়োজনে জামাতকে তরক করা জায়েয রয়েছে।এর মধ্যে একটি হল, এমন খানা সামনে উপস্থিত থাকা,যে খানার প্রতি অন্তরের চাহিদা রয়েছে।জামাত সম্পর্কে বিবিধ আহকাম জানতে ভিজিট করুন-1365
মসজিদের কতটুকু কাছে বাড়ী থাকলে মসজিদে জামাতের সাথে নামায আদায় করা জরুরী পর্যায়ের হয় ? এমন প্রশ্নের জবাবে বলা যায় যে,হাদীসে বর্ণিত রয়েছে,
من سمع النداء فلم يأتِ فلا صلاة له إلا من عذر قيل لابن عباس ما هو العذر؟ قال: مرض أو خوف،
যে ব্যক্তি আযান শুনবে,উযর ব্যতীত তার জন্য ঘরে নামাযের কোনো বিধান নেই।ইবনে আব্বাস রাযি কে জিজ্ঞাস করা হলো,সেই উযর কি কি হতে পারে? ইবনে আব্বাস রাযি বলেন,অসুস্থতা এবং ভয়।
অন্য এক বর্ণনায় এসেছে,এক অন্ধ ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাঃ কে জিজ্ঞেস করলো,
(ليس لي قائد يقودني إلى المسجد فهل لي من رخصة أن أصلي في بيتي؟، فقال له النبي ﷺ: هل تسمع النداء بالصلاة؟ قال: نعم، قال: فأجب وفي رواية لغير مسلم: قال: لا أجد لك رخصة)
ইয়া রাসূলুল্লাহ!
আমাকে মসজিদে নিয়ে আসার মত কোনো লোক নেই।আমার জন্য কি কোনো রুখসত রয়েছে যে,আমি ঘরে নামায পড়বো।তখন রাসূলুল্লাহ সাঃ তাকে জিজ্ঞাস করলেন,তুমি কি নামাযের আযান শুনে থাকো? ঐ ব্যক্তি বলল,জ্বী হ্যা আমি শ্রবণ করে থাকি।তখন রাসূলুল্লাহ সাঃ তাকে বললেন,তাহলে তুমি মসজিদে গিয়েই নামায পড়বে।(সহীহ মুসলিম) সহীহ মুসলিম ব্যতীত অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেছেন,আমি তোমার জন্য রুখসতের কোনো সুযোগ পাচ্ছি না।
যখন এমন অন্ধলোক -যাকে মসজিদে নিয়ে আসার মত কেউ নেই- এর জন্য রাসূলুল্লাহ সাঃ কোনো প্রকার রুখসত প্রদাণ করেননি।তাই (মাইক ব্যতীত সাধারণ) আযান শ্রবণকারী কারো জন্য মসজিদে না এসে ঘরে নামায পড়া অনুমোদন দেয়া যেতে পারে না।
সু-প্রিয় পাঠকবর্গ ও প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
ইফতারকে জামাত তরক করার মোটামোটি একটি কারণ হিসেবে দেখা যেতে পারে,তাদের জন্য যারা মসজিদের আযান শ্রবণ করেনা।কিন্তু যারা মসজিদের আযান শ্রবণ করতেছেন,তাদের জন্য ইফতার কোনো উযর নয়,বরং তারা অতি সংক্ষেপে অল্প পরিমাণে ইফতার করে মনজিদে গিয়েই মাগরিবের নামায পড়বেন।কেননা সাহাবায়ে কেরামগণও নফল রোযা রেখেছেন,তারা ঘরে ইফতার শেষে মসজিদে গিয়ে মাগরিবের নামায পড়েছেন।
আযান শ্রবণের অর্থ হচ্ছে,বাড়ি মসজিদের এত নিকটে যে,মাইক ব্যতীত এমনিতেই আযান দিনে সেই আযানকে ঘর থেকে শুনা যায়।সুতরাং এতটুকু নিকটে বাড়ি থাকলে উনি ঘরে ইফতার করে মসজিদে গিয়ে মাগরিবের নামায পড়বেন।কিন্তু যদি বাড়ি এত দূরে থাকে যে,আযান শুনা যায় না,তাহলে সেই চাইলে ঘরেই জামাতের সাথে মাগরিব আদায় করতে পারবে।যদিও মসজিদের ফযিলত সে পাবে না।কিন্তু তার ফরয আদায় হয়ে যাবে।
মাগরিবের নামায যতটুকু সম্ভব তারাতারি পড়াই মুস্তাহাব।কিন্তু ফুকাহায়ে কেরাম কোনো প্রয়োজন বা উযরের ধরুণ কিছুটা দেড়ীতে পড়ারও অনুমোদন দিয়েছেন।এই উযর সমূহের একটি হল,যদি কেউ খেতে বসে তাহলে সে মাগরিবের নামাযকে কিছুটা দেড়ীতে পড়তে পারবে।
والاصح أنه يكره الا من عذر كالسفر والكون على الاكل و نحوهما،
বিশুদ্ধ মতানুযায়ী মাগরিবের নামাযকে দেড়ী করে পড়া মাকরুহ।তবে উযর, যেমন- সফরে বা খানা সামনে উপস্থিত থাকার সময়ে মাগরিবের নামাযকে কিছুটা দেড়ী করে পড়ার অনুমোদন রয়েছে।(কাবিরি-৩৩৭)
অন্যদিকে আরেকটি কথা স্বরণ রাখতে হবে যে,আযান ও ইক্বামতের মধ্যখানে ইত্তেসাল করা মাকরুহ।অর্থাৎ আযান দেয়ার পর কিছু সময় অতিবাহিত হতে হবে,তারপর ইক্বামত দেয়া হবে। তাছাড়া মাগরিবের ফরযের পূর্বে দু'রাকাত সুন্নতের গায়রে মু'আক্বাদার কথাও হাদীসে এসেছে।
সুতরাং সর্বদিক বিবেচনায়, প্রত্যেক মসজিদের উচিৎ মাগরিবের আযানের পর অন্ততপক্ষে দু' রা'কাত নামায পড়ার পরিমাণ সময় অতিবাহিত হওয়ার পরই মাগরিবের জামাত শুরু করা উচিৎ।তাহলে মাকরুহ থেকে বাঁচা যাবে,নফল রোযায় ইফতার সম্পর্কিয় কোনো প্রশ্ন আসবে না।এবং একটি সুন্নতের উপর আ'মল করার সুযোগ পাওয়া যাবে।
ইফতারের বিবিধ আহকাম জানতে দেখুুন -
মাসাঈলে রাফআত ক্বাসেমী-৪/১৮১
(ফাতাওয়ায়ে রহিমিয়্যাহ-৫/২৪৩)
ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়্যাহ-১০/২১২
ফাতাওয়ায়ে দারুল উলূম দেওবন্দ