বিসমিহি তা'আলা
জবাবঃ-
ইবাদত দুই প্রকারঃ- (১)ইবাদতে বদনি(শারিরিক ইবাদত।(২)ইবাদতে মালি(মাল খরচের মাধ্যমে ইবাদত)।
একজন অন্যজনের পক্ষ্য থেকে ইবাদত করতে পারবেন কি না?
এ সম্পর্কে বলা যায় যে, নফল ইবাদত যে কেউ অন্যর পক্ষ্য থেকে করতে পারবে-যাকে পরিভাষায় ই'সালে সওয়াব বলা হয়- জীবিত বা মৃত যে কারো জন্য ইবাদত করা যায়,চায় ইবাদতে বদনি হোক বা ইবাদতে মালি হোক।
তবে ফরয ইবাদতের বেলায় হুকুম কিছুটা ব্যাখ্যা সাপেক্ষ্য।
ফরয ইবাদত যদি বদনি হয়,তাহলে সে ইবাদত-কে একে অন্যর পক্ষ্য থেকে আঞ্জাম দেয়া যাবে না।কিন্তু যদি সে ইবাদত মালি হয়,বা বদনি ও মালির সংমিশ্রণে হয়,তাহলে সে ইবাদতকে একে অন্যর পক্ষ্য থেকে আদায় করা যাবে।
যেমন নিম্নের হাদীস সমূহে বর্ণিত রয়েছে,
মিশকাতুল মাসাবিহ কিতাবে, সিহাহ সিত্তাহর উদ্ধৃতিতে এ সম্পর্কে কিছু হাদীস বর্ণিত রয়েছে।
হযরত ইবনে আব্বাস রাযি থেকে বর্ণিত,
َعَنْ قَالَ: «إِنَّ امْرَأَةً مِنْ خَثْعَمَ قَالَتْ: يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ فَرِيضَةَ اللَّهِ عَلَى عِبَادِهِ فِي الْحَجِّ أَدْرَكَتْ أَبِي شَيْخًا كَبِيرًا لَا يَثْبُتُ عَلَى الرَّاحِلَةِ أَفَأَحُجُّ عَنْهُ قَالَ نَعَمْ، وَذَلِكَ فِي حَجَّةِ الْوَدَاعِ» (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
খাছ'আম গোত্রের এক মহিলা বলল,ইয়া রাসূলুল্লাহ! আল্লাহর তরফ থেকে বান্দার উপর হজ্ব করা ফরয করা হয়েছে।আমার পিতা বার্ধক্যর কারণে সওয়ারীর উপর আরোহন করতে পারেন না।এখন আমি কি আমার পিতার পক্ষ্য থেকে হজ্ব আদায় করতে পারবো?।রাসূলুল্লাহ সাঃ উত্তরে বললেন,হ্যা আদায় করতে পারবে। এ ঘটনা বিদায় হজ্বে সংঘটিত হয়েছিলো।(মিশকাত-২৫১১)
(হজ্ব ইবাদতে বদনি ও ইবাদতে মালির সংমিশ্রণে হয়ে থাকে,বিধায় এ ফরয আমল একে অন্যর পক্ষ্য থেকে আদায় করা যাবে।)
ইবনে উমর রাযি থেকে বর্ণিত,
عَنْ نَافِعٍ عَنِ ابْنِ عُمَرَ عَنِ النَّبِيِّ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - قَالَ: " «مَنْ مَاتَ وَعَلَيْهِ صِيَامُ شَهْرِ رَمَضَانَ فَلْيُطْعَمْ عَنْهُ مَكَانَ كُلِّ يَوْمٍ مِسْكِينٌ» " رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: وَالصَّحِيحُ أَنَّهُ مَوْقُوفٌ عَلَى ابْنِ عُمَرَ.
রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেন,যে ব্যক্তি মারা গেল,এমতাবস্থায় যে তার উপর রোযা ফরয রয়েছে।তাহলে তার পক্ষ্য থেকে প্রতি একটি রোযার বিনিময়ে যেন একজন মিসকিনকে খাদ্য খাওয়ানো হয়।(মিশকাত-২০৩৪)
(সাওম ইবাদতে বদনি।সুতরাং এ ইবাদত একে অন্যর পক্ষ্য থেকে আদায় করা যাবে না মর্মে হাদীসে বর্ণিত হয়েছে।)
ইমাম মালিক উনার সূত্রে হাদীস বর্ণনা করে বলেন,
عَنْ مَالِكٍ بَلَغَهُ أَنَّ ابْنَ عُمَرَ كَانَ يُسْأَلُ: هَلْ يَصُومُ أَحَدٌ عَنْ أَحَدٍ؟ أَوْ يُصَلِّي أَحَدٌ عَنْ أَحَدٍ؟ فَيَقُولُ: لَا يَصُومُ أَحَدٌ عَنْ أَحَدٍ، وَلَا يُصَلِّي أَحَدٌ عَنْ أَحَدٍ، رَوَاهُ فِي الْمُوَطَّأِ.
হযরত ইবনে উমরকে জিজ্ঞাসা করা হল,কেউ কি অন্য কারো পক্ষ্য থেকে নামায-রোযা করতে পারবে?ইবনে উমর প্রতিউত্তরে বললেন,কেউ অন্য কারো পক্ষ্য থেকে নামায-রোযা করতে পারবে না।(মুয়াত্তা মালিক)(মিশকাত-২০৩৫)
(নামায-রোযা ইবাদতে বদনি।সুতরাং এ ইবাদতকে অকে অন্য পক্ষ্য থেকে আদায় না হওয়ার কথা উক্ত হাদীসে বলা হয়েছে।)
হযরত আয়েশা রাযি থেকে বর্ণিত,
وَعَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ -: " «مَنْ مَاتَ وَعَلَيْهِ صَوْمٌ صَامَ عَنْهُ وَلِيُّهُ» " مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ.
রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেন, যদি কোনো ব্যক্তি মারা যায়,এবং তার উপর অনাদায়ী রোযা থাকে,তাহলে তার পক্ষ্য থেকে যেন তার ওয়ালি/ওয়ারিছরা সেই রোযাকে আদায় করে নেয়।
(মিশকাত-২০৩৩)
(উক্ত হাদীসে ব্যখ্যায় মিরকাতে বর্ণিত রয়েছে,
صَامَ " أَيْ: كَفَّرَ " عَنْهُ وَلِيُّهُ " قَالَ الطِّيبِيُّ: تَأْوِيلُ الْحَدِيثِ أَنَّهُ يَتَدَارَكُ ذَلِكَ وَلِيُّهُ بِالْإِطْعَامِ فَكَأَنَّهُ صَامَ،
এখানে ওয়ালী কর্তৃক রোযা রাখার অর্থ হলো,কাফফারা আদায় করার মাধ্যমে রোযার ক্ষতিপূরণ দেয়া।ইমাম তিবী রাহ বলেন,হাদীসের ব্যাখ্যা হলো,ওয়ালী উক্ত মৃত ব্যক্তির পক্ষ্য থেকে প্রত্যেক রোযার পরিবর্তে মিসকিন খাওয়াবে।এই মিসকিন খাওয়ানোই হল ওয়ালি কর্তৃক রোযা রাখার ব্যাখ্যা।)
পরস্পর পরস্পরের পক্ষ্য থেকে ইবাদত করা কি যথেষ্ট হবে? এ নিয়ে উলামাদের মধ্যে অনেক শক্ত মতবেদ রয়েছে।
সু-প্রিয় পাঠকবর্গ!ও প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই বোন!
আপনার বন্ধুর নানা যদি বার্ধক্যর কারণে রোযা রাখতে অপারগ থাকেন,নামায ও রোযা উনার জন্য অসম্ভব পর্যায়ের থাকে,তথা অবস্থা অত্যন্ত নাজুক থাকে,প্রায় সকরাতুল মাওতের মত,তাহলে উনি শরীয়তের দৃষ্টিতে মুকাল্লাফ হবেন না।তথা উনার উপর সেই অবস্থায় নামায-রোযা ফরযই হবে না।কিন্তু যদি হুশ থাকে,তবে নামায রোযা ইত্যাদি ইবাদত করতে কষ্ট অনুভব হয়,তাহলে এমতাবস্থায় উক্ত রোযা সমূহের ফিদয়া আসবে।প্রত্যেকটি রোযার বদলা একটি ফিতরা সমপরিমাণ আসবে।রোযার উপর কিয়াস করে উলামায়ে কেরাম প্রত্যেক ওয়াক্ত নামাযের জন্য ফিতরা পরিমাণ একটি ফিদয়া আদায়ের পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
আল্লাহ-ই ভালো জানেন।আরো জানুন- 1411
উত্তর লিখনে
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ, Iom.