জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
(০১)
রোজা থাকা অবস্থায় কোনো কিছুর গন্ধ নাকে গ্রহণ করলে রোযার কোনো সমস্যা হবেনা।
রোযাদারের জন্য সুরমা লাগানো বা সুগন্ধি ব্যবহার করা মাকরূহ নয়।
হাদীস শরীফে এসেছেঃ
আতা রাহ. বলেন, ‘রোযাদারের জন্য সুরমা ব্যবহার করাতে দোষ নেই।’-মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ৪/২০৮; আলবাহরুর রায়েক ২/২৮০,
রমজান মাসে দিনের বেলা মশার কয়েল, ধূপ, আগরবাতি ইত্যাদি জ্বালানো জায়েয। এতে রোজার ক্ষতি হবে না। কারণ ধূপ, কয়েল, আগরবাতি ইত্যাদি জ্বালানোর পর আশপাশে সাধারণত এর ঘ্রাণই ছড়ায়। এর ধোঁয়া নাক পর্যন্ত পৌঁছে না। এরপরও অনিচ্ছাকৃত তা নাকে-মুখে চলে গেলে রোজা নষ্ট হবে না। তবে রোজা অবস্থায় কেউ যদি নাক বা মুখ দিয়ে এগুলোর ধোঁয়া টেনে নেয় সেক্ষেত্রে রোজা নষ্ট হয়ে যাবে। [রদ্দুল মুহতার ২/৩৯৫; আশশুরুনবুলালিয়া ১/২০২; মাজমাউল আনহুর ১/৩৬১; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাদ্দুর ১/৪৫০
لو أدخل حلقہ الدخان أي بأي صورة کان الإدخال حتی لو تبخر بخورة وآواہ إلی نفسہ واشتمہ ذاکرًا لصومہ، أفطر لإمکان التحرز عنہ․ (رد المختار: ۳/۳۶۶، زکریا)
সারমর্মঃ
যদি ইচ্ছাপূর্বক রোযা স্বরন থাকা সত্ত্বেও এ ধোয়া নাক দিয়ে টেনে নেয়,তাহলে রোযা ভেঙ্গে যাবে।
,
আরো জানুনঃ
,
★সুতরাং রোযাদার ব্যাক্তি আতর সাবান ব্যবহার করতে পারবে।
এতে রোযার কোনো সমস্যা হবেনা।
,
(০২)
লাওহে মাহফুজে আল্লাহর কালাম সংরক্ষিত আছে।
,
এক:
ইবনে মানযুর বলেন:
لوح (লাওহ): “কাঠের প্রশস্ত যে কোন পৃষ্ঠকে লাওহ বলে।”
আযহারি বলেন: কাঠের পৃষ্ঠকে লাওহ বলা হয়। কাঁধের হাড়ের ওপর যদি কিছু লেখা হয় সেটাকেও লাওহ বলা হয়।
যেটার উপর কিছু লেখা হয় সেটাই লাওহ।
اللوح দ্বারা উদ্দেশ্য- اللوح المحفوظ (সুরক্ষিত ফলক)। যেমনটি আয়াতে কারীমাতে এসেছে فِي لَوْحٍ مَحْفُوظ (অর্থ- সুরক্ষিত ফলকে রয়েছে)। অর্থাৎ আল্লাহ্ তাআলার ইচ্ছাসমূহের সংরক্ষণাগার।
প্রত্যেক প্রশস্ত হাড্ডিকে লাওহ বলা হয়।
শব্দটির বহুবচন হচ্ছে- ألواح
আর ألاويح হচ্ছে-جمع الجمع (বহুবচনের বহুবচন)।
দুই:
ইবনে কাছির (রহঃ) বলেন:
فِي لَوْحٍ مَحْفُوظ (অর্থ-লাওহে মাহফুযে তথা সুরক্ষিত ফলকে রয়েছে): অর্থাৎ এটি উচ্চ পরিষদ কর্তৃক সংযোজন, বিয়োজন, বিকৃতি ও পরিবর্তন থেকে সংরক্ষিত।[তাফসিরে ইবনে কাছির (৪/৪৯৭, ৪৯৮]
তিন:
ইবনুল কাইয়্যেম (রহঃ) বলেন:
আল্লাহ্র বাণী: مَحْفُوظ (সংরক্ষিত): অধিকাংশ ক্বারীগণ শব্দটিকে لوح শব্দের صفة হিসেবে جَرّ দিয়ে পড়েছেন। এর মধ্যে ইঙ্গিত রয়েছে যে, শয়তানদের পক্ষে কুরআন নিয়ে অবতীর্ণ হওয়া সম্ভব নয়। কারণ কুরআন যে স্থানে রয়েছে সে স্থানটি শয়তান সেখানে পৌঁছা থেকে সংরক্ষিত। এবং কুরআন নিজেও সংরক্ষিত; কোন শয়তান এতে সংযোজন-বিয়োজন করার ক্ষমতা রাখে না।
তাইতো আল্লাহ্ তাআলা তাঁর বাণীতে কুরআনকে সংরক্ষিত উল্লেখ করেছেন: “নিশ্চয় আমরা স্মরণিকাটি নাযিল করেছি। নিশ্চয় আমরা এর হেফাযতকারী”।[সূরা হিজর, আয়াত: ০৯]
আর এ সূরাতে আল্লাহ্ তাআলা কুরআনে কারীম যে স্থানে রয়েছে সে স্থানকেও সংরক্ষিত উল্লেখ করেছেন।
এভাবে আল্লাহ্ তাআলা কুরআন যে আধারে রয়েছে সে আধার সংরক্ষণ করেছেন এবং কুরআনকেও যাবতীয় সংযোজন, বিয়োজন ও পরিবর্তন থেকে হেফাযত করেছেন। কুরআনের শব্দাবলি যেভাবে হেফাযত করেছেন অনুরূপভাবে কুরআনের অর্থকেও বিকৃতি থেকে হেফাযত করেছেন। কুরআনের কল্যাণে এমন কিছু ব্যক্তিকে নিয়োজিত করেছেন যারা কোন প্রকার বাড়তি বা কমতি ছাড়া কুরআনের হরফগুলো মুখস্ত রাখে এবং এমন কিছু ব্যক্তি নিয়োজিত করেছেন যারা কুরআনের অর্থকে বিকৃতি ও পরিবর্তন থেকে হেফাযত করে।”[দেখুন: আত-তিবইয়ান ফি আকসামিল কুরআন, পৃষ্ঠা-৬২]
চার:
কিছু কিছু তাফসিরে এসেছে যে, ‘লওহে মাহফুয’ হচ্ছে- ইস্রাফিলের কপালে; অথবা সবুজ রঙের মণি দিয়ে তৈরী এক প্রকার সৃষ্টি; কিংবা এ জাতীয় অন্যান্য ব্যাখ্যা— এসব বক্তব্য সাব্যস্ত নয়। এটি অদৃশ্যের বিষয়। যার কাছে ওহী আসত তিনি ছাড়া অন্য কারো কাছ থেকে গায়েব বা অদৃশ্যের ব্যাপারে কোন তথ্য গ্রহণ করা যাবে না।
(ফাতাওয়া বিভাগ islamqa)
,
শায়েখ মাওলানা শামছুদ্দীন সাদী দাঃবাঃ লিখেছেনঃ
মানুষের ভাগ্যলিপিসহ মহাবিশ্বে কেয়ামত পর্যন্ত যা যা ঘটবে আল্লাহ তায়ালা সব কিছু লাওহে মাহফুজে পুঙ্খানুপুঙ্খ লিখে রেখেছেন। সেই লেখার বিন্দুমাত্র পরিবর্তন ও হেরফের হওয়া সম্ভব নয়। তাফসিরে তাবারিতে উল্লেখ রয়েছে, লাওহে মাহফুজকে আল্লাহ তায়ালা বৃদ্ধি ও হ্রাস থেকে সংরক্ষণ করেন। অর্থাৎ তাতে যা লিখিত হয়েছে তা কমেও না বাড়েও না। তাফসিরে ইবনে কাসিরে সুরা বুরুজের ‘বরং এটা মহান কোরআন। লাওহে মাহফুজে লিপিবদ্ধ’ এই আয়াতের তাফসিরে উল্লেখ রয়েছে, লাওহে মাহফুজ হ্রাস-বৃদ্ধি ও পরিবর্তন-বিচ্যুতি থেকে মুক্ত।
লাওহে মাহফুজের ধরন : লাওহে মাহফুজ কিসের তৈরি? এটি কত বড়? এর ধরন কেমন? এ বিষয়ে হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, লাওহে মাহফুজ লাল ইয়াকুত পাথরের তৈরি। তার উপরাংশ আরশের সঙ্গে সংযুক্ত, নিম্নাংশ একজন সম্মানিত ফেরেশতার ওপর। হজরত আনাস (রা.) বলেন, লাওহে মাহফুজ হজরত ইসরাফিলের পিঠের ওপর। হজরত মাকাতিল (রহ.) বলেন, লাওহে মাহফুজ আরশের ডান দিকে অবস্থিত। (তাফসিরে কুরতুবি: পৃষ্ঠা ২৯৮, খÐ ১৯)।
ইমাম সুয়ুতি (রহ.) বলেন, হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা লাওহে মাহফুজকে একশ বছরের দূরত্বের পথ সমান সৃষ্টি করেছেন। (দুররুল মানছুর : খÐ ৬, পৃষ্ঠা ৭৪)।
হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, লাওহে মাহফুজের দৈর্ঘ্য আসমান-জমিনের সমান, প্রস্থ পূর্ব-পশ্চিমের সমান। আর তা নির্মিত হয়েছে সাদা মণিমুক্তা দ্বারা। (তাফসিরে ইবনে কাসির : খÐ ৪, পৃষ্ঠা ৪৯৮)
ইমাম বগভি (রহ.) হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে একটি হাদিস বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, লাওহে মাহফুজের সর্বোচ্চ স্থানে লেখা রয়েছে, ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। তিনি একক। তার ধর্ম ইসলাম। মুহাম্মাদ তার বান্দা ও রাসুল। সুতরাং যে ব্যক্তি তার প্রতি ঈমান আনবে, তার অঙ্গীকারকে সত্যায়ন করবে, তার রাসুলকে অনুসরণ করবে আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।’ তিনি আরও বলেন, লাওহে মাহফুজ সাদা মুক্তার তৈরি। তার দৈর্ঘ্য আসমান-জমিন সমান। প্রস্থ পূর্ব-পশ্চিম সমান। তার দুই পার্শ্বদেশ মুক্তা ও ইয়াকুত পাথরের, তার দুই কিনারা লাল ইয়াকুতের। তার কলম নূরের এবং তার উপরাংশ আরশের সঙ্গে সম্পৃক্ত, নিম্নাংশ ফেরেশতার ওপর। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া : পৃষ্ঠা ২৬)