আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
268 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (23 points)
আসসালামু  আলাইকুম।

আমি এখানে প্রথমে আমার বাবা সম্পর্কে বলেছিলাম যদিও প্রশ্নের স্বার্থে আবার কিছুটা বলছি।আমিসহ আমার বোনেরা দ্বীনে ফেরার পর থেকে তথা হেদায়েত পাওয়ার পর থেকে আমার বাবা আমাদের  উপর প্রচুর পরিমাণে ক্ষিপ্ত। ফরজ নামাজ সময় নিয়ে আদায় করলেও তার সমস‍্যা। দ্বীন পালনের পথে বাধা প্রদান। দ্বীনের ব‍্যাপারে উল্টাপাল্টা বক্তব‍্য এমন বক্তব্য যা শুনলে মন থেকে ঘৃণা চলে আসে সেই ব‍্যক্তির প্রতি। আমরা শুদ্ধ করে কুরআন শিখছিলাম এমতাবস্থায় ওয়াইফাই অফ করে দেন,এবং দ্বীনের পথে চলার ক্ষেত্রে সহায়ক হিসেবে আমাদের জন‍্য অনলাইনটা মাধ‍্যম(অফলাইন উপায় নেই)সেক্ষেত্রে তিনি এমন কার্যকলাপ করেন যেন আমরা আর দ্বীন শিখতে না পারি। যদিও আল্লাহ তাআলা তার রহমতে এখনো আমার জন‍্য সেই সুযোগ খোলা রেখেছেন। তবে আমার বাবার কাছ থেকে এ বিষয়ে কোনো আর্থিক সাহায্য পাইনা।তার মতে আমরা বখে গেছি। তার এই বক্তব‍্য আমরা দ্বীনে ফেরার পর থেকে। আমাদের জন‍্য তার যে ড্রিম ছিলো যে পড়াশোনা শেষে জব করব,তিনি ভালো!!(বড়লোক,দ্বীনহীন ধরনের )ফ‍্যামিলিতে মেয়ে বিয়ে দিবেন ইত‍্যাদি ইত‍্যাদি এখন যেহেতু হচ্ছে না কারণ আমি আলহামদুলিল্লাহ্  এবার ইন্টার কমপ্লিট করার পর জেনারেল পড়াশুনা ছেড়ে দিয়েছি আর বিয়ের দিকটাতে একজন দ্বীনদ্বার জীবনসঙ্গীর অপেক্ষায় আছি তাদের আনীত প্রস্তাব প্রত‍্যাখ‍্যান করে সেজন‍্য তিনি আরো বেশি ক্ষিপ্ত।তন্মধ‍্যে একটা কারণ তিনি আলেমদের দেখতে পারেন না। আরেকটি জিনিস হলো তিনি সুদ,ঘুষ,হালাল,হারাম এর ব‍্যাপারে বেপরোয়া...জানেন কিন্তু মানেন না।কিছুদিন পূর্বে যখন আমি জ্বীনের বদনজর সংক্রান্ত সমস‍্যায় আক্রান্ত ছিলাম তখন তারা আমাকে তাবিজ কবজ নিতে একপ্রকারের বাধ‍্য করেছিলেন ---যদিও আমি শেষ পর্যন্ত নেই নি। তার মতে তাকে যদি অসুস্থতা সারাতে হিন্দু ব‍্যক্তির কাছ থেকে তাবিজ নিতে হয় সে তাই নিবে। হাদিস শুনলেই সে রেগে যায়(তার বিপক্ষে গেলে)। একবার তিনি সরাসরি বলেন "এখনকার ওহীই সেই ওহী কিনা তুমি কেমনে জানো" (নাউজুবিল্লাহ)। আবার কুরআন  বিশ্বাস করি কিন্তু টিভির  সংবাদ বিশ্বাস করিনা কেন এমন ধরনের প্রশ্ন ও তুলেন। জিহাদ সম্পর্কে তার কথাবার্তা অবশ্যই  একজন মুমিনের কথা না। তিনি বিপদে পরলে দ্বীনের হুকুম আহকামে শিথিল হতে  রাজী আছেন।তিনি বলেন দুনিয়ায় চলতে গেলে যেমনভাবে সবাই চলে সেভাবে চলতে হবে অর্থাৎ সুদ ঘুষ গান বাজনা সব। আসলে  গীবতের জন‍্য বা মনের ক্ষোভ মিটাতে নয় সমস‍্যা উত্তরণের সম্ভাব‍্য উপায় জানতেই এতকিছু বলা।

এতকিছুর পর বাবার সাথে ভালো ব‍্যবহার আসেনা। তাকে আগে বুঝানোর চেষ্টা করতাম,আল্লাহর কাছে দুআ করতাম হেদায়েতের। এখন আর চেষ্টা করিনা কারণ বাসায় এখন নিজের টেকাই দায়। আল ওয়ালা আল বারা  করতে চাই। এতকিছুর পর আমার জন‍্য সহজ হত বিষয়টা যদি এটা বাবা না হয়ে অন‍্য সাধারণ কারো সাথে এমন হতো। কিন্তু আল্লাহ তা'য়ালা পিতা-মাতার হক নষ্টকারীকে জান্নাত ই দিবেন না। এখন আমি দুয়ের মধ‍্যে তাল মিলাতে পারছিনা। আমার বাবাকে খুশি রাখতে গেলে দ্বীন পালন করতে পারব না আবার আমার দ্বীন পালন করতে গেলে আমার আবারো বাবাকে  আমার সহ‍্য করা কষ্টকর। সত‍্যি বলতে গেলে আমি মন থেকে আমার বাবা অপছন্দ করি,তার জন‍্য শ্রদ্ধাবোধ আসেনা আর কেন যেন। এটাতো একটা দিক বললাম তার প্রসঙ্গে,পারিবারিক জীবনে আমার বাবার  আরো কিছু দিক আছে অপছন্দ করার মতো। তার এরূপ বাধা দেওয়ার ফলে আমি আস্তে আস্তে দ্বীন থেকে সরে যাচ্ছি মনে হচ্ছে

 ( আল্লহুম্মাগফিরলী)
আল্লাহ্ হেফাজত করুন। ওয়াল্লাহি আমি কখনো চাইনা সেই পূর্বের বেদ্বীন জীবনে ফিরে যেতে।

কিন্তু এমন অবস্থায় আমি দিশেহারা হয়ে পড়েছি। আমাকে দয়া করে কিছু উপদেশ দিন বা আমার করণীয় সম্পর্কে বলুন। অফলাইনে আলোচনা করার মতো দ্বীনি অভিজ্ঞ কেউ নেই আমার তাই অনলাইনেই এতকিছু বলা। আমি কিভাবে এই অবস্থাতেও বাবার হক আদায় করবো। সন্তান হিসেবে বাবার প্রতি কি কি হক আদায় করতে আমি এই পর্যায়ে দায়গ্রস্থ আমাকে প্লিজ জানান। আশা করি একটু ডিটেইলসে আমাকে আমার করণীয় সম্পর্কে  আমাকে অভিহিত করবেন।
জাযাকাল্লাহ্।

1 Answer

0 votes
by (678,880 points)
জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 


মা বাবার সর্বদায় আনুগত্য করতে হবে,তাদের কথার নাফরমানী করা যাবেনা।
তাদের সাথে সর্বদায় ভালো ব্যবহার করতে হবে।

তারা কষ্ট পায়,এমন কাজ কখনোও করা যাবেনা।
তাদের হক বা অধিকারসমূহ এবং তাদের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করা সন্তানের ওপর ওয়াজিব বা আবশ্যক।

 পিতামাতার খরচ বহন করা; তাদের খোঁজ-খবর নেয়া; প্রয়োজনের সময় বিশেষ করে বার্ধক্যে তাদের পাশে থাকা আবশ্যক ।

মাতাপিতার দেখভাল করা ও তাদের সাথে উত্তম আচরণ করা শরীয়ত কর্তৃক ফরয ঘোষনা করা হয়েছে।

আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَوَصَّيْنَا الْإِنسَانَ بِوَالِدَيْهِ إِحْسَانًا ۖ حَمَلَتْهُ أُمُّهُ كُرْهًا وَوَضَعَتْهُ كُرْهًا ۖ وَحَمْلُهُ وَفِصَالُهُ ثَلَاثُونَ شَهْرًا

“আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহারের আদেশ দিয়েছি। তার মা তাকে কষ্টসহকারে গর্ভে ধারণ করেছে এবং কষ্টসহকারে প্রসব করেছে। তাকে গর্ভে ধারণ করতে ও তার স্তন্য ছাড়তে লেগেছে ত্রিশ মাস।” (সূরা আহকাফ-১৫)

আল্লাহ তা'আলা আরও বলেন,

وَقَضَى رَبُّكَ أَلاَّ تَعْبُدُواْ إِلاَّ إِيَّاهُ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا إِمَّا يَبْلُغَنَّ عِندَكَ الْكِبَرَ أَحَدُهُمَا أَوْ كِلاَهُمَا فَلاَ تَقُل لَّهُمَآ أُفٍّ وَلاَ تَنْهَرْهُمَا وَقُل لَّهُمَا قَوْلاً كَرِيمًا

তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে, তাঁকে ছাড়া অন্য কারও এবাদত করো না এবং পিতা-মাতার সাথে সদ্ব-ব্যবহার কর। তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়; তবে তাদেরকে ‘উহ’ শব্দটিও বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না এবং বল তাদেরকে শিষ্ঠাচারপূর্ণ কথা।(সূরা বনী ইসরাঈল-২৩)

أن جاهمة جاء إلى النبي صلى الله عليه وسلم، فقال: يا رسول الله، أردت أن أغزو وقد جئت أستشيرك، فقال: «هل لك من أم؟» قال: نعم، قال: «فالزمها، فإن الجنة تحت رجليها»

“হযরত জাহিমাহ (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.) এর কাছে এসে বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমি যুদ্ধে অংশগ্রহণের ইচ্ছা করেছি, আপনার কাছে পরামর্শ নিতে এসেছি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, “তোমার কি মা আছেন?” সাহাবী জবাব দিলেন, “হ্যাঁ!”। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, “তাঁর সেবাকে নিজের উপর আবশ্যক করে নাও। নিশ্চয়ই তাঁর দুই পায়ের নিচে রয়েছে জান্নাত।” (সুনানে নাসাঈ: ৩১০৪)

হাদিস শরীফে আরও এসেছে,

عن أبي هريرة رضي الله عنه قال : "جاء رجلٌ إلى رسول الله -صلى الله عليه وسلم- فقال : يا رسول الله، من أحق الناس بحسن صحابتي؟، قال: (أمك) ، قال: ثم من؟ قال: (أمك) ، قال: ثم من؟ قال: (أمك) ، قال: ثم من؟ قال: (أبوك) متفق عليه .

হযরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, একবার এক সাহাবী এসে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর কাছে জিজ্ঞাসা করলেন, “হে আল্লাহর রাসূল! মানুষের মধ্যে কে আমার সর্বাধিক মনোযোগ পাওয়ার যোগ্য?” রাসূল (সা.) উত্তর দিলেন, “তোমার মাতা।” লোকটি জিজ্ঞেস করলো, “তারপর কে?” রাসূল (সা.) উত্তর দিলেন, “তোমার মাতা।” লোকটি আবার জিজ্ঞেস করলো, “তারপর কে?” রাসূল (সা.) উত্তর দিলেন, “তোমার মাতা।” লোকটি পুনরায় জিজ্ঞেস করলো, “তারপর কে?” রাসূল (সা.) উত্তর দিলেন, “তোমার পিতা।”(বুখারী ও মুসলিম)

তবে তারা যদি শরীয়ত বহির্ভূত কাজের আদেশ করে,তাহলে তা মানা যাবেনা।   

হাদীস শরীফে এসেছেঃ   

وَعَنِ النَّوَّاسِ بْنِ سِمْعَانَ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ : «لَا طَاعَةَ لِمَخْلُوقٍ فِىْ مَعْصِيَةِ الْخَالِقِ»


নাও্ওয়াস ইবনু সিম্‘আন (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রতিপালকের অবাধ্যতার মাঝে কোনো সৃষ্টির আনুগত্য নেই।

(শারহুস্ সুন্নাহ্ ২৪৫৫, সহীহ আল জামি‘ ৭৫২০।)
,
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
আপনি আপনার পিতা মাতার হক পুরোপুরি আদায় করেই যাবেন,একান্ত দ্বীনের পথে চলা সমস্যাকর মনে হলে কিছু দিন তাদের কাছে কম যেতে পারেন,দূরত্ব অবলম্বন করতে পারেন।
তবে তাদের হক অবশ্যই আদায় করবেন।
,
সকলের সাথেই সতর্কতা অবলম্বন করে হেকমতের সহিত চলবেন।          
প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে আপনি তার কাছে যাওয়া কমিয়ে দিতে পারেন।
এড়িয়ে চলতে  পারেন,তবে কথা বন্ধ করে দিবেননা,সালাম দেওয়া হলেও চালিয়ে যাবেন।
অন্যায় মূলক কোনো কথার জবাব দিবেননা,শুধু তার বৈধ কাজের আদেশ শুনবেন, মহান আল্লাহর কাছে তার হেদায়েতের জন্য দোয়া করুন।
দ্বীনদার পাত্রের সাথে দ্রুত বিবাহের জন্যেও আল্লাহর কাছে দোয়া করুন।   
ইনশাআল্লাহ সমস্ত সমস্যার সমাধান হবে। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...