আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

+1 vote
3,515 views
in ঈমান ও বিশ্বাস (Faith and Belief) by (0 points)
edited by
আসসালামু আলাইকুম।

১. সহিহ মুস্লিম ২০৩. রাসুলের (স:) বাবা মা কি জাহান্নামী হবে??

২. উম্মে আয়মান (র)  ও রাসুলের পালক পুত্র জায়েদ (র) বিয়ের ব্যাপারটা বুঝলাম না?
৩. রাসুলের কিছু বিয়ে নিয়ে অরিয়েন্টালিস্টরা প্রশ্ন তোলে। এর উত্তর কি?

জাজাকাল্লাহ খাইরান

1 Answer

0 votes
by (565,890 points)
edited by
জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 


(০১)
এ সংক্রান্ত মুসলিম  শরীফের যেই হাদীস  পেয়েছি,তা হলোঃ

وَحَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ رَافِعٍ، وَعَبْدُ بْنُ حُمَيْدٍ، جَمِيعًا عَنْ عَبْدِ الرَّزَّاقِ، - قَالَ ابْنُ رَافِعٍ حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّزَّاقِ، - أَخْبَرَنَا مَعْمَرٌ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنِ ابْنِ الْمُسَيَّبِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ شَهِدْنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم حُنَيْنًا فَقَالَ لِرَجُلٍ مِمَّنْ يُدْعَى بِالإِسْلاَمِ " هَذَا مِنْ أَهْلِ النَّارِ " فَلَمَّا حَضَرْنَا الْقِتَالَ قَاتَلَ الرَّجُلُ قِتَالاً شَدِيدًا فَأَصَابَتْهُ جِرَاحَةٌ فَقِيلَ يَا رَسُولَ اللَّهِ الرَّجُلُ الَّذِي قُلْتَ لَهُ آنِفًا " إِنَّهُ مِنْ أَهْلِ النَّارِ " فَإِنَّهُ قَاتَلَ الْيَوْمَ قِتَالاً شَدِيدًا وَقَدْ مَاتَ . فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم " إِلَى النَّارِ " فَكَادَ بَعْضُ الْمُسْلِمِينَ أَنْ يَرْتَابَ فَبَيْنَمَا هُمْ عَلَى ذَلِكَ إِذْ قِيلَ إِنَّهُ لَمْ يَمُتْ وَلَكِنَّ بِهِ جِرَاحًا شَدِيدًا فَلَمَّا كَانَ مِنَ اللَّيْلِ لَمْ يَصْبِرْ عَلَى الْجِرَاحِ فَقَتَلَ نَفْسَهُ فَأُخْبِرَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم بِذَلِكَ فَقَالَ " اللَّهُ أَكْبَرُ أَشْهَدُ أَنِّي عَبْدُ اللَّهِ وَرَسُولُهُ " . ثُمَّ أَمَرَ بِلاَلاً فَنَادَى فِي النَّاسِ " إِنَّهُ لاَ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ إِلاَّ نَفْسٌ مُسْلِمَةٌ وَإِنَّ اللَّهَ يُؤَيِّدُ هَذَا الدِّينَ بِالرَّجُلِ الْفَاجِرِ " .

সহীহ মুসলিম ২০৫, মুহাম্মাদ বিন রাফি এবং আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ..... আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুনায়নের যুদ্ধে আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে ছিলাম। তিনি এক ব্যক্তিকে দোযখী বলে চিহ্নিত করলেন, যে আমাদের মাঝে মুসলিম হিসেবে পরিচিত ছিল। যখন আমরা যুদ্ধে লিপ্ত হলাম, ঐ লোকটি ভীষণভাবে যুদ্ধ করলো, সে আহত হয়ে গেলো। এ সময় কেউ এসে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! কিছুক্ষণ আগে আপনি যার সম্পর্কে বলেছিলেন যে, সে জাহান্নামী আজ সে ভীষণভাবে জিহাদ করে মারা গেছে। এ কথা শুনে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, সে জাহান্নামে চলে গেছে। কিন্তু এতে কোন কোন মুসলিম সন্দেহে পতিত হল।

ইত্যবসরে কেউ এসে বললো, লোকটি এখনও মরেনি, তবে সে মারাত্মকভাবে আহত। পরে যখন রাত হলো, সে জখমের যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করলো। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে এ সংবাদ জানানো হলো। তিনি বললেন, আল্লাহু আকবার, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি নিশ্চিত আল্লাহর বান্দা ও তার রাসূল। অতঃপর তিনি বিলাল (রাযিঃ) কে নির্দেশ দিলেন তখন তিনি লোকদের মাঝে ঘোষণা করলেন, মুসলিম ব্যতীত কোন ব্যক্তিই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। অবশ্য আল্লাহ তা'আলা পাপী ব্যক্তির দ্বারাও এ দীনের সাহায্য ও শক্তি প্রদান করবেন। (ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ  ২০৬, ইসলামিক সেন্টারঃ  ২১৩)


★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,  
রাসুলুল্লাহ সাঃ এর পিতা মাতা জান্নাতে যাবে নাকি জাহান্নামে যাবে?
 আসলে এ বিষয়টি নিয়ে কথা না বলাই সবচে’ উত্তম হবে। 

এটি জানা ও না জানা আমাদের ঈমানের পূর্ণতা বা অপূর্ণতার কোন সম্পর্ক নেই। হাশরের ময়দানেও এ ব্যাপারে আমাদের কোন জিজ্ঞাসা করা হবে না। এটি খুবই নাজুক একটি আলোচনা। 

সবচে’ উত্তম হল এ বিষয়  চুপ থাকা। আল্লাহ তাআলাই ভাল জানেন তাদের হালাত কি? এ বিষয়ে নিশ্চুপ থাকাই সবচে’ নিরাপদ পদ্ধতি। বিজ্ঞ উলামাগণ এ ব্যাপারে তাই চুপ রয়েছেন। আর চুপ থাকাকেই নিরাপদ বলে আখ্যায়িত করেছেন। এমনকি এ ব্যাপারে কথা বলাকে নাজায়েজও বলেছেন অনেকে। 
[রাদ্দুল মুহতার-২/১৮৫, কাফেরকে বিবাহ করার অধ্যায়, ফাতাওয়া রহিমীয়া-৩/৫২, আপকি মাসায়েল আওর উনকা হল-১/৭২}

রাসূল সাঃ এর পিতামাতা জান্নাতী জাহান্নামী বিষয়ে কথা বলা জায়েজ নয়!

রাসূল সাঃ কে কষ্ট দেয়া হারাম। এতে কোন সন্দেহ নেই। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন-
إِنَّ الَّذِينَ يُؤْذُونَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ لَعَنَهُمُ اللَّهُ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ وَأَعَدَّ لَهُمْ عَذَابًا مُّهِينًا [٣٣:٥٧
যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলকে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তাদের প্রতি ইহকালে ও পরকালে অভিসম্পাত করেন এবং তাদের জন্যে প্রস্তুত রেখেছেন অবমাননাকর শাস্তি। {সূরা আহযাব-৫৭}
,
(০২)
উম্মে আইমান বারাকাহ (রা.) ছিলেন মুহাম্মদ (সা.) এর একজন অত্যন্ত মর্যাদামান সাহাবী। ইসলামের প্রথমদিকে , যখন মুসলমানদের প্রচণ্ড দুর্সময় চলছিল, তখন রাসুলুল্লাহকে বিপদ-আপদ থেকে আগলে রেখেছিলেন এই উম্মে আইমান বারাকাহ। 

তিনি মুহাম্মদ (সা.) এর পিতা আবদুল্লাহ ইবনে আবদুল মুত্তালিবের অধীন একজন ইথিওপিয়ান দাসী ছিলেন। আবদুল্লাহর মৃত্যুর পর তিনি মুহাম্মদ (সা.) এর অধীনে কাজ করতেন। পরবর্তীতে তিনি তাকে মুক্ত করে দেন। এরপর তিনি বনু খাজরাজ গোত্রের উবাইদ ইবনে জায়িদ নামক এক ব্যক্তিকে বিয়ে করেন। আইমান নামে তাদের এক সন্তান হয়। একারণে তাকে উম্মে আইমান (আইমানের মা) ডাকা হয়। 

★স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি যায়েদ ইবনে হারিসাকে (রা.)বিয়ে করেন। 
,
একদিন মসজিদে আসরের নামাজের পর রাসুলুল্লাহ বললেন, তোমাদের মধ্যে কে একজন জান্নাতি মহিলাকে বিয়ে করতে চাও। জমায়েত নিশ্চুপ। হঠাৎ উঠে দাঁড়ালেন রাসুলের পালক পুত্র জায়িদ। বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ আমি। রাসুল এই কথা বলেন তিনবার। তিনবারই কেবল জায়িদ তার সম্মতির কথা জানান। বিয়েতে এই পবিত্র দম্পতির উসামা ইবনে যায়িদ নামে এক পুত্র জন্মগ্রহণ করেন। হযরত উসামা (রা.)অনেক যুদ্ধে মুসলমানদের সেনাপতিত্ব করেন। ক্রীতদাসী মায়ের সন্তানকে এভাবে সম্মান দিয়ে রাসুল কুরাইশদের আভিজাত্যকে ধুলোয় মিশিয়ে দেন। 

(০৩) 
আমরা কিছু আয়াত দেখে নেই।

وَالْمُحْصَنَاتُ مِنَ النِّسَاءِ إِلَّا مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ ۖ كِتَابَ اللَّهِ عَلَيْكُمْ ۚ وَأُحِلَّ لَكُم مَّا وَرَاءَ ذَٰلِكُمْ أَن تَبْتَغُوا بِأَمْوَالِكُم مُّحْصِنِينَ غَيْرَ مُسَافِحِينَ ۚ فَمَا اسْتَمْتَعْتُم بِهِ مِنْهُنَّ فَآتُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ فَرِيضَةً ۚ وَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ فِيمَا تَرَاضَيْتُم بِهِ مِن بَعْدِ الْفَرِيضَةِ ۚ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيمًا حَكِيمًا [٤:٢٤]
এবং নারীদের মধ্যে তাদের ছাড়া সকল সধবা স্ত্রীলোক তোমাদের জন্যে নিষিদ্ধ; তোমাদের দক্ষিণ হস্ত যাদের মালিক হয়ে যায়-এটা তোমাদের জন্য আল্লাহর হুকুম। এদেরকে ছাড়া তোমাদের জন্যে সব নারী হালাল করা হয়েছে, শর্ত এই যে, তোমরা তাদেরকে স্বীয় অর্থের বিনিময়ে তলব করবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করার জন্য-ব্যভিচারের জন্য নয়। অনন্তর তাদের মধ্যে যাকে তোমরা ভোগ করবে,তাকে তার নির্ধারিত হক দান কর। তোমাদের কোন গোনাহ হবে না যদি নির্ধারণের পর তোমরা পরস্পরে সম্মত হও। নিশ্চয় আল্লাহ সুবিজ্ঞ, রহস্যবিদ। {সূরা নিসা-২৪]
এ আয়াতে যে বিধান বর্ণিত হয়েছে। তা শুধু রাসূল সাঃ এর জন্য খাস নয়। এটি সকলের জন্যই প্রযোজ্য।
এখানে কাকে কাকে বিবাহ করতে পারবে? তা বর্ণনা করা হয়েছে।

যিনা ব্যাভিচারের দরজা বন্ধ করার জন্য উক্ত আয়াতে কারিমায় মহর দিয়ে বিবাহ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সেই সাথে পরিস্কার বলা হয়েছে যে, বিবাহ করবে। যিনা বা ব্যাভিচার করার জন্য অর্থ দিয়ে তাদের সাথে সহবাস করবে না।

وَمَن لَّمْ يَسْتَطِعْ مِنكُمْ طَوْلًا أَن يَنكِحَ الْمُحْصَنَاتِ الْمُؤْمِنَاتِ فَمِن مَّا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُم مِّن فَتَيَاتِكُمُ الْمُؤْمِنَاتِ ۚ وَاللَّهُ أَعْلَمُ بِإِيمَانِكُم ۚ بَعْضُكُم مِّن بَعْضٍ ۚ فَانكِحُوهُنَّ بِإِذْنِ أَهْلِهِنَّ وَآتُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ مُحْصَنَاتٍ غَيْرَ مُسَافِحَاتٍ وَلَا مُتَّخِذَاتِ أَخْدَانٍ ۚ فَإِذَا أُحْصِنَّ فَإِنْ أَتَيْنَ بِفَاحِشَةٍ فَعَلَيْهِنَّ نِصْفُ مَا عَلَى الْمُحْصَنَاتِ مِنَ الْعَذَابِ ۚ ذَٰلِكَ لِمَنْ خَشِيَ الْعَنَتَ مِنكُمْ ۚ وَأَن تَصْبِرُوا خَيْرٌ لَّكُمْ ۗ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ [٤:٢٥]

আর তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি স্বাধীন মুসলমান নারীকে বিয়ে করার সামর্থ্য রাখে না, সে তোমাদের অধিকারভুক্ত মুসলিম ক্রীতদাসীদেরকে বিয়ে করবে। আল্লাহ তোমাদের ঈমান সম্পর্কে ভালোভাবে জ্ঞাত রয়েছেন। তোমরা পরস্পর এক, অতএব, তাদেরকে তাদের মালিকের অনুমতিক্রমে বিয়ে কর এবং নিয়ম অনুযায়ী তাদেরকে মোহরানা প্রদান কর এমতাবস্থায় যে, তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবে-ব্যভিচারিণী কিংবা উপ-পতি গ্রহণকারিণী হবে না। অতঃপর যখন তারা বিবাহ বন্ধনে এসে যায়, তখন যদি কোন অশ্লীল কাজ করে, তবে তাদেরকে স্বাধীন নারীদের অর্ধেক শাস্তি ভোগ করতে হবে। এ ব্যবস্থা তাদের জন্যে, তোমাদের মধ্যে যারা ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার ব্যাপারে ভয় করে। আর যদি সবর কর, তবে তা তোমাদের জন্যে উত্তম। আল্লাহ ক্ষমাশীল, করুণাময়। [সূরা নিসা-২৫]
এ দু’টি আয়াতে কারিমায় যে বিধান বর্ণিত হয়েছে। তা শুধু রাসূল সাঃ এর জন্য খাস নয়। এটি সকলের জন্যই প্রযোজ্য।

উলামায়ে কেরামগন বলেছেন যে,  
এখানে কাকে কাকে বিবাহ করতে পারবে? তা বর্ণনা করা হয়েছে।
যিনা ব্যাভিচারের দরজা বন্ধ করার জন্য উক্ত আয়াতে কারিমায় মহর দিয়ে বিবাহ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সেই সাথে পরিস্কার বলা হয়েছে যে, বিবাহ করবে। যিনা বা ব্যাভিচার করার জন্য অর্থ দিয়ে তাদের সাথে সহবাস করবে না।
বিয়ের পর যদি যিনা বা এজাতীয় পাপের কাজ করে থাকে, তাহলে তাদের শাস্তি ভোগ করতে হবে।
সেই সাথে বিবাহ করার সামর্থ না থাকলে ধৈর্যধারণ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
তাহলে আমরা কয়েকটি জিনিস পাচ্ছি। যথা-
সামর্থ থাকলে বিবাহ করবে।
বিয়ে করার সময় স্ত্রীকে মোহর দিতে হবে।
বিয়ের পর যিনা করলে সে শাস্তিযোগ্য পাপ করল।
বিয়ের সমর্থ না থাকলে ধৈর্য ধর, এর দ্বারা ব্যক্তি পূণ্য পাবে।
এই হল সূরা নিসার ২৪ ও ২৫ নং আয়াতের সারনির্যাস।
এখানে নারীলুলোপতার কী রইল?
যদি এখানে যার সাথে ইচ্ছে তার সাথে শারিরীক সম্পর্ক স্থাপনের অনুমতি থাকতো, যদি বিয়ের পরও কারো সাথে যিনায় লিপ্ত হলে গোনাহ না হতো, যদি বিয়ে সামর্থ না থাকলে যিনা করার অনুমতি প্রদান করা হতো, তাহলেই কেবল নারীলুলোপতার অপবাদ আরোপ করা যেতো।
কিন্তু এসব জঘন্য কথাতো আয়াতে বলা হয়নি।
বরং যারা নাস্তিক। তারা যার সাথে ইচ্ছে তার সাথে যিনায় লিপ্ত হওয়া, মোহর ছাড়াই শারিরীক সম্পর্কে লিপ্ত হওয়া এবং বিয়ের সামর্থ না থাকলেও নারীদের সাথে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হতে প্রলুব্ধ করে থাকে। কারণ তাদের কাছে বিয়ের কোন বিধান নেই। মোহরের কোন বিধান নেই। গোনাহের কোন ভয় নেই।
তাই নাস্তিকদের থিউরী হল, নারীলুলোপতার থিউরী। নারী স্বাধীনতার নামে নারীদের ভোগ করার মানসিকতা।

সেখানে রাসূল সাঃ এর উপর নাজিলকৃত কুরআনের শালীন ও সভ্য বিধানকে মিথ্যা অপবাদ দেবার অর্থ কি?
এবার আমরা সূরা আহযাবের আয়াতগুলো দেখি!
وَإِذْ تَقُولُ لِلَّذِي أَنْعَمَ اللَّهُ عَلَيْهِ وَأَنْعَمْتَ عَلَيْهِ أَمْسِكْ عَلَيْكَ زَوْجَكَ وَاتَّقِ اللَّهَ وَتُخْفِي فِي نَفْسِكَ مَا اللَّهُ مُبْدِيهِ وَتَخْشَى النَّاسَ وَاللَّهُ أَحَقُّ أَن تَخْشَاهُ ۖ فَلَمَّا قَضَىٰ زَيْدٌ مِّنْهَا وَطَرًا زَوَّجْنَاكَهَا لِكَيْ لَا يَكُونَ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ حَرَجٌ فِي أَزْوَاجِ أَدْعِيَائِهِمْ إِذَا قَضَوْا مِنْهُنَّ وَطَرًا ۚ وَكَانَ أَمْرُ اللَّهِ مَفْعُولًا [٣٣:٣٧]


আল্লাহ যাকে অনুগ্রহ করেছেন;আপনিও যাকে অনুগ্রহ করেছেন;তাকে যখন আপনি বলেছিলেন,তোমার স্ত্রীকে তোমার কাছেই থাকতে দাও এবং আল্লাহকে ভয় কর। আপনি অন্তরে এমন বিষয় গোপন করছিলেন,যা আল্লাহ পাক প্রকাশ করে দেবেন আপনি লোকনিন্দার ভয় করেছিলেন অথচ আল্লাহকেই অধিক ভয় করা উচিত। অতঃপর যায়েদ যখন যয়নবের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করল,তখন আমি তাকে আপনার সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ করলাম যাতে মুমিনদের পোষ্যপুত্ররা তাদের স্ত্রীর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করলে সেসব স্ত্রীকে বিবাহ করার ব্যাপারে মুমিনদের কোন অসুবিধা না থাকে। আল্লাহর নির্দেশ কার্যে পরিণত হয়েই থাকে। [সূরা আহযাব ৩৩: ৩৭]

উক্ত আয়াতে কারীমায় আরবে প্রচলিত একটি কুসংস্কারকে সমূলে উৎপাটনের কথা এসেছে। আরবের মাঝে জাহেলী প্রথা ছিল যে, পোষ্যপুত্র নিজের ঔরষজাত পুত্রের মতই।
পোষ্যপুত্রও ঔরসজাত সন্তানের মত মিরাছ পায়। তার সাথে লালনপালনকারী মায়ের পর্দা নেই।
সেই সাথে পোষ্য পুত্র যাকে বিবাহ করে, সে তাকে তালাক দিলে তার তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীকে আর পোষ্যকারী পিতা বিবাহ করতে পারে না।
জাহেলী যুগে প্রচলিত উক্ত প্রথাটি সে যুগের মানুষের মন মগজে ঢুকে গিয়েছিল। এর উল্টো বিষয়কে কেউ মানতেই চাইতো না। তাই আল্লাহ তাআলা চাইলেন রাসূল সাঃ এর মাধ্যমেই এ কুসংস্কারের মুলোৎপাটন করতে।

ঘটনার সংক্ষেপ হল, যয়নব বিনতে জাহাশ রাঃ রাসূল সাঃ এর ফুপাতো বোন ছিলেন। রাসূল সাঃ তার আযাদকৃত গোলাম জায়েদ বিন হারেছা রাঃ এর সাথে যয়নবের বিবাহ দেন।
আরবে বংশ গৌরব খুবই প্রচলিত ছিল। সেখানে ভাল বংশের কোন মেয়েকে গোলাম বা আযাদকৃত গোলামের কাছে বিবাহ দেয়াকে খুবই অপছন্দ করা হতো।

এ কারণে প্রথমে যয়নব রাঃ ও তার পরিবার এ সম্বন্ধে রাজি ছিলেন না।
তখন আয়াত সূরা আহযাবের আলোচ্য আয়াতের আগের আয়াতঃ
وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَلَا مُؤْمِنَةٍ إِذَا قَضَى اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَمْرًا أَن يَكُونَ لَهُمُ الْخِيَرَةُ مِنْ أَمْرِهِمْ ۗ وَمَن يَعْصِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا مُّبِينًا [٣٣:٣٦]

আল্লাহ ও তাঁর রসূল কোন কাজের আদেশ করলে কোন ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীর সে বিষয়ে ভিন্ন ক্ষমতা নেই যে, আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আদেশ অমান্য করে সে প্রকাশ্য পথভ্রষ্ট তায় পতিত হয়। [সূরা আহযাব ৩৩: ৩৬]

এ আয়াত নাজিল হবার পর যয়নব রাঃ ও তার পরিবার আল্লাহর ভয়ে উক্ত বিয়েতে রাজি হয়ে যান।
কিন্তু পরিবারে মিল ছিল না। হযরত যায়েদের সাথে যয়নব রাঃ এর বিলকুল বনিবনা হচ্ছিল না। প্রায়ই কথা কাটাকাটিও বিবাদ হতো।

ফলে যায়েদ রাঃ রাসূল সাঃ এর কাছে তালাকের অনুমতি প্রদানের জন্য আবেদন করতেন।
কিন্তু আল্লাহর রাসূল সাঃ তালাক দিতে বারণ করেন। কারণ বিয়ের পর তালাক প্রদান করা অনুত্তম কাজ।
কিন্তু হযরত যায়েদের পক্ষে এ সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা অসম্ভব হয়ে পড়ে।
ইতোমধ্যে আল্লাহ তাআলা রাসূল সাঃ কে অহীর মাধ্যমে জানিয়ে দেন যে, যায়েদ এ বিবাহ বন্ধন টিকিয়ে রাখতে পারবে না। বরং সে তালাক দিবেই। আর এরপর যয়নবের মনকে খুশি করতে খোদ রাসূল সাঃ কেই তাকে বিবাহ করতে হবে।
এটাই আল্লাহর ফায়সালা। যা অহীর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা জানিয়ে দেন।

কিন্তু রাসূল সাঃ উক্ত বিষয়টিকে প্রকাশ করতে আরবের মুশরিকদের অপপ্রচার ও বিভ্রান্তির ভয় পাচ্ছিলেন। কারণ, আরবে পোষ্যপুত্রের তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীকে বিবাহ করাকে অবৈধ মনে করা হয়। খুবই অশোভন মনে করা হয়। অথচ এটি মোটেও অশোভন কিছু ছিল না।

লোক লজ্জার ভয়ে রাসূল সাঃ উক্ত বিষয়টিকে জনসম্মুকে বলতে ভয় পাচ্ছিলেন। তাই তা মনের মাঝেই গোপন করে রাখেন।
এরই মাঝে একদিন যায়েদ বিন হারেছা এসে জানান যে, তিনি স্ত্রীকে তালাক দিয়ে দিয়েছেন। তখন রাসূল সাঃ চুপ করে রইলেন।
যখন যয়নবের ইদ্দত সম্পন্ন হয়ে যায়, তখন রাসূল সাঃ হযরত যায়েদের মাধ্যমেই হযরত জয়নব রাঃ এর কাছে বিবাহের প্রস্তাব পাঠান।
সেসময় সুরা আহযাবের এ ৩৭ নং আয়াত নাজিল হয়। যাতে আল্লাহ তাআলা পরিস্কার ভাষায় জানিয়ে দিলেন যে, পোষ্যপুত্রের তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীকে বিবাহ করা এটি সম্পূর্ণই বৈধ। এতে দোষের কিছু নেই। আর যায়েদ জয়নবকে তালাক দিবে, পোষ্যপুত্রের তালাকপ্রাপ্তাকেই রাসূল সাঃ এর বিবাহ করতে হবে, একথা আল্লাহর বিধান হওয়ার পরও রাসূল সাঃ লোকলজ্জার ভয়ে তা প্রকাশ করতে দ্বিধাগ্রস্থ ছিলেন। অথচ আল্লাহ তাআলাই অধিক ভয় পাবার যোগ্য।
অবশেষে অহীর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা তা প্রকাশ করে দিলেন। সেই সাথে আল্লাহ তাআলা নিজেই রাসূল সাঃ ও যয়নব রাঃ এর বিবাহে আসমানে সম্পন্ন করে দিলেন। [ঈষৎ সংক্ষেপিত: সীরাতুল মুস্তাফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, উর্দু-৩/২৯৫-২৯৯, ইদ্রিস কান্ধলবী রহঃ কৃত]
তাহলে এ আয়াতে কি পেলাম?
পোষ্যপুত্রের তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীকে বিবাহ করার কুপ্রথা বিলুপ্তকরণের জন্য রাসূল সাঃ আল্লাহর নির্দেশে বিবাহ করলেন।
তো এখানে নারী লুলোপতার কি নিদর্শন খুজে পেল নাস্তিক ভাইটা। তা আমাদের কিছুই বুঝে আসছে না।
এবার সূরা আহযাবের ৫০ নং আয়াত দেখে নেইঃ
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِنَّا أَحْلَلْنَا لَكَ أَزْوَاجَكَ اللَّاتِي آتَيْتَ أُجُورَهُنَّ وَمَا مَلَكَتْ يَمِينُكَ مِمَّا أَفَاءَ اللَّهُ عَلَيْكَ وَبَنَاتِ عَمِّكَ وَبَنَاتِ عَمَّاتِكَ وَبَنَاتِ خَالِكَ وَبَنَاتِ خَالَاتِكَ اللَّاتِي هَاجَرْنَ مَعَكَ وَامْرَأَةً مُّؤْمِنَةً إِن وَهَبَتْ نَفْسَهَا لِلنَّبِيِّ إِنْ أَرَادَ النَّبِيُّ أَن يَسْتَنكِحَهَا خَالِصَةً لَّكَ مِن دُونِ الْمُؤْمِنِينَ ۗ قَدْ عَلِمْنَا مَا فَرَضْنَا عَلَيْهِمْ فِي أَزْوَاجِهِمْ وَمَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُمْ لِكَيْلَا يَكُونَ عَلَيْكَ حَرَجٌ ۗ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَّحِيمًا [٣٣:٥٠]
হে নবী! আপনার জন্য আপনার স্ত্রীগণকে হালাল করেছি,যাদেরকে আপনি মোহরানা প্রদান করেন। আর দাসীদেরকে হালাল করেছি,যাদেরকে আল্লাহ আপনার করায়ত্ব করে দেন এবং বিবাহের জন্য বৈধ করেছি আপনার চাচাতো ভগ্নি,ফুফাতো ভগ্নি,মামাতো ভগ্নি,খালাতো ভগ্নিকে যারা আপনার সাথে হিজরত করেছে। কোন মুমিন নারী যদি নিজেকে নবীর কাছে সমর্পন করে,নবী তাকে বিবাহ করতে চাইলে সেও হালাল। এটা বিশেষ করে আপনারই জন্য-অন্য মুমিনদের জন্য নয়। আপনার অসুবিধা দূরীকরণের উদ্দেশে। মুমিনগণের স্ত্রী ও দাসীদের ব্যাপারে যা নির্ধারিত করেছি আমার জানা আছে। আল্লাহ ক্ষমাশীল,দয়ালু। [সূরা আহযাব ৩৩: ৫০]
উপরোক্ত আয়াতে কারীমা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন রাসূল সাঃ এর সম্পর্কে কয়েকটি বিশেষ নেয়ামতের কথা উল্লেখ করেছেন।
চারের অধিক স্ত্রী হলেও রাসূল সাঃ যদি তাদের মোহরানা আদায় করে দেন, তাহলে তিনি বিয়ে করতে পারবেন।
রাসূল সাঃ এর মালিকানাধীন নারীও রাসূল সাঃ এর জন্য বৈধ।
যদিও এটি সকল মুসলিমের জন্য বৈধ। পার্থক্য শুধু রাসূল সাঃ এর মৃত্যুর পর উক্ত মালিকানাধীন নারীর কারো সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া বৈধ নয়।
রাসূল সাঃ এর হিজরত করেছেন এমন চাচাত, ফুপাতো, মামাতো ও খালাতো বোনকে বিবাহ করাও রাসূল সাঃ এর জায়েজ।
দেনমোহর ছাড়াই বিয়ে করার জন্য কোন নারী রাসূল সাঃ এর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে আহবান করলে রাসূল সাঃ তাকে বিবাহ করতে পারেন।
সাধারণ মুসলমানদের জন্য ইহুদী খৃষ্টান তথা কিতাবী মহিলাদের বিবাহ করা বৈধ হলেও রাসূল সাঃ এর জন্য তা বৈধ নয়। বরং নারী মুসলিম হতে হবে।
উক্ত ৫টি বিধানের মাঝে রাসূল সাঃ এর জন্য খাস করে দু’টি অতিরিক্ত শর্ত রয়েছে। যা সাধারণ মুসলিমদের জন্য নেই।
যথা-
খালাতো, ফুপাতো, মামাতো ও চাচাতো বোনকে বিবাহ করা জায়েজ। কিন্তু রাসূল সাঃ এর জন্য শর্ত হল, তাদের হিজরতে করতে হবে। নতুবা বিবাহ করা যাবে না।
তাহলে এখানে রাসূল সাঃ এর জন্য তা অসুবিধারই কারণ হচ্ছে উক্ত শর্ত।
সবার জন্য কিতাবী মহিলাদের আমভাবে বিবাহ বৈধ থাকলেও রাসূল সাঃ এর জন্য ইসলাম গ্রহণ না করলে তা বৈধ নয়।
বাকি বাহ্যিকভাবে উক্ত আয়াতে রাসূল সাঃ এর জন্য সুবিধা কেবল পাওয়া যায়, দু’টি বিষয়ে। যথা-
কোন নারী মোহর ছাড়া বিবাহ করতে আবেদন জানালে নবীজী সাঃ মোহর ছাড়াই বিয়ে করতে পারবেন।
যা অন্য কেউ পারবে না। সবার জন্যই মোহর আবশ্যক। এটি শুধুই রাসুল সাঃ এর বৈশিষ্ট্য।
চারের অধিক বিবাহ করার সুযোগ।
এ দু’টি বিষয়ের মাঝে রাসুল সাঃ কে বিশেষ সুযোগ দেয়া হয়েছে। বাকি বিধানগুলোর ক্ষেত্রে মূলত সুযোগ নয়। বরং কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।
তো আল্লাহর দেয়া এসব নির্দেশনাবলীর ক্ষেত্রে কিভাবে নারীলোলুপতা অপবাদ আরোপ করা হচ্ছে তা আমাদের বোধগম্য নয়।
আর রাসূল সাঃ কে কেন একাধিক বিবাহের অনুমতি প্রদান করা হয়েছে তার ব্যাখ্যা সামনে আসছে ইনশাআল্লাহ।
এবার আমরা সূরা আহযাবের ৫২ নং আয়াত দেখিঃ
لَّا يَحِلُّ لَكَ النِّسَاءُ مِن بَعْدُ وَلَا أَن تَبَدَّلَ بِهِنَّ مِنْ أَزْوَاجٍ وَلَوْ أَعْجَبَكَ حُسْنُهُنَّ إِلَّا مَا مَلَكَتْ يَمِينُكَ ۗ وَكَانَ اللَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ رَّقِيبًا [٣٣:٥٢]
এরপর আপনার জন্যে কোন নারী হালাল নয় এবং তাদের পরিবর্তে অন্য স্ত্রী গ্রহণ করাও হালাল নয় যদিও তাদের রূপলাবণ্য আপনাকে মুগ্ধ করে, তবে দাসীর ব্যাপার ভিন্ন। আল্লাহ সর্ব বিষয়ের উপর সজাগ নজর রাখেন। [সূরা আহযাব ৩৩: ৫২]
উক্ত আয়াতে কারীমায় সূরা আহযাবের ৫০ ও ৫১ নং আয়াতে বর্ণিত রাসূল সাঃ এর বিবাহ সংশ্লিষ্ট যেসব মেয়েদের কথা বর্ণিত হয়েছে, তাদের ছাড়া আর কাউকে বিবাহ করা যাবে না মর্মে নির্দেশ  দেয়া হয়েছে।
এর মাধ্যমে এতদসংশ্লিষ্ট বিধানকে পরিপূর্ণভাবে বিবৃত করা হল।
এখানে এসে নাস্তিকরা প্রশ্ন করতে পারেন দু’টি। যথা-
রাসূল সাঃ কে একাধিক বিবাহ করার অনুমতি প্রদান করা হল কেন?
তিনি কি নারী লোভী ছিলেন? [নাউজুবিল্লাহি মিন জালিক]
১ম অভিযোগের জবাব
রাসূল সাঃ একজন সাধারণ ব্যক্তি ছিলেন না। তিনি একজন নবী ছিলেন। সেই সাথে একজন রাষ্ট্রনায়ক। চতুর্মূখী ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে ইসলাম নামক জান্নাতী ধর্মকে গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে আদিষ্ট ছিলেন।
এ কারণে পরিবেশ পরিস্থিতিকে শামাল দিতে অনেক বিষয়ের সম্মুখিন হতে হয়। রাজনৈতিক জটিলতায় পড়তে হয়েছে। সেখানে একাধিক বিবাহ করার সুযোগ অনেক জটিল পরিস্থিতি শামাল দেবার হাতিয়ার হয়েছিল।
রাসূল সাঃ এর বিয়েকৃত নারীদের হালাত দেখলেই তা আমাদের কাছে পরিস্কার হয়ে যাবে।
হযরত খাদিজা রাঃ এর সাথে রাসূল সাঃ এর বিবাহ হয়,যখন রাসূল সাঃ এর বয়স ছিল ২৫ বছর। আর হযরত খাদিজা রাঃ এর বয়স ছিল ৪০ বছর।
হযরত খাদিজা রাঃ এর সাথে রাসূল সাঃ সংসার করেন ২৫ বছর। অর্থাৎ হযরত খাদিজা রাঃ এর ইন্তেকালের সময় রাসূল সাঃ এর  বয়স হয়েছিল ৫০ বছর। এই  ২৫ বছরের মাঝে রাসূল সাঃ দ্বিতীয় কোন বিবাহ করেননি।
 
হযরত খাদিজা রাঃ এর ইন্তেকালের পর সর্বপ্রথম রাসূল সাঃ বিয়ে করেন হযরত সাওদা রাঃ কে। যার স্বামী হিযরত করে হাবশা গিয়েছিলেন। সেখানেই তিনি ইন্তেকাল করেন। ফলে হযরত সাওদা রাঃ বিধবা হয়ে যান।
তখন রাসূল সাঃ তার কষ্ট লাঘবের জন্য বিবাহ করেন।
হযরত আম্মাজান আয়শা রাঃ।
যখন ইসলামের পতাকাতলে লোকজন প্রবেশ করতে শুরু করে দেয়। তখন মক্কার মুশরেকরা মুসলমানদের সাথে আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করতে শুরু করে।
রাসূল সাঃ এর নিজের দুই কন্যা তথা রুকাইয়া ও উম্মে কুলসুমের বিবাহ দেয়া হয়েছিল আবু লাহাবের দুই ছেলে উতবা ও উতাইবার কাছে। কিন্তু তারা উভয়ে পিতা আবু লাহাবের নির্দেশে যয়নব ও উম্মে কুলসুম রাঃ কে তালাক দিয়ে দেয়।
শুধু তাই নয়, হযরত আবু বকর রাঃ তার কন্যা হযরত আয়শা রাঃ এর বিবাহ এক কাফির যুবায়ের বিন মুতয়িম এর সাথে ঠিক করা ছিল। কিন্তু তার পিতা সেই বিবাহ রদ করে দেয় এ শংকায় যে, তার ছেলে মুসলমান হয়ে যেতে পারে।
এ ছিল পরিস্থিতি। মুসলিম কন্যাদের মুসলিমদের সাথে বিবাহ দেয়া ছাড়া কোন গত্যান্তর ছিল না। উক্ত বিবাহ নাকচ হয়ে যাবার পর হযরত আবু বকর রাঃ তার কন্যা আয়শা রাঃ এর সাথে রাসূল সাঃ এর বিবাহ দিয়ে দেন।
হযরত উমর রাঃ এর কন্যা হযরত হাফসা রাঃ ও তার স্বামীর সাথে হিযরত করেন। কিন্তু তার স্বামীও ইন্তোকাল করেন। তখন হযরত উমর রাঃ তার কন্যাকে বিয়ে করার জন্য প্রথমে হযরত উসমান রাঃ কে, তারপর হযরত আবু বকর রাঃ কে অনুরোধ করেন। কিন্তু তারা উভয়ে অস্বিকৃতি জানালে রাসূল সাঃ হযরত হাফসা রাঃ কে বিবাহ করেন।
হযরত উম্মে সালামা রাঃ। যার স্বামীও কাফিরদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে হিযরত করেছিলেন। অতঃপর সেখানেই ইন্তেকাল করেন। তখন রাসূল সাঃ উক্ত বিধবা নারী হযরত সালমা রাঃ কে বিবাহ করেন।
হযরত উম্মে হাবীবা রাঃ। যিনি কুরাইশের সর্দার হযরত আবু সুফিয়ান এর কন্যা ছিলেন। স্বীয় স্বামীর সাথে হিযরত করে হাবশায় চলে যান। সেখানে পৌঁছার পর তার স্বামী খৃষ্টান হয়ে যায়। তারপর সেখানেই সে মারা যায়। কিন্তু হযরত উম্মে হাবীবা রাঃ ইসলামের উপর অটল থাকেন। এরপর রাসূল সাঃ উম্মে হাবীবা রাঃ কে বিবাহ করেন।
হযরত যয়নব বিনতে জাহাশ রাঃ। যাকে তার স্বামী জায়েদ বিন হারেছা রাঃ বনিবনা না হওয়ায় তালাক দিয়ে দেন। তখন রাসূল সাঃ তাকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করেন।
উম্মুল মাসাকীন হযরত যয়নব বিনতে খুজাইমা রাঃ। যার স্বামী উহুদ যুদ্ধে শহীদ হয়ে যান। তারপর রাসূল সাঃ এর বিবাহে আসেন।
হযরত মাইমুনা রাঃ। তিনিও হিজরত করেছিলেন। বিধবা হবার পর রাসূল সাঃ এর বিবাহে আসেন।
যয়নব বিনতে জাহাশ রাঃ ছাড়া বাকিরা সবাই ইসলামের শুরু যুগেই ইসলাম কবুল করেন। তারপর কাফেরদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে বাধ্য হয়ে মাতৃভূমি ত্যাগ করে পরবাসে চলে যান। কিন্তু সেখানে তাদের স্বামীগণ ইন্তেকাল করলে তারা দিশেহারা হয়ে পড়েন। কোথায় যাবেন? কার কাছে যাবেন? আপন বাড়িতে ফিরে গেলে কাফির আত্মীয় স্বজন অত্যাচার নিপিড়ন করে ধ্বংস করে ফেলবে।
এরকম অসহায় হালাতে পড়া নারীদের রাসূল সাঃ স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে সম্মানিত করেন।
১০
হযরত জুআইরিয়া রাঃ। যিনি তার কওমের সর্দারের কন্যা ছিলেন। রাসূল সাঃ অনেক মূল্য পরিশোধ করে হযরত জুআইরিয়া রাঃ কে বিবাহ করেন। যাতে করে উক্ত গোত্রের সাথে মুসলমানদের দুশমনী লাঘব হয়।
১১
হযরত সফিয়্যাহ রাঃ। খায়বর যুদ্ধে বন্দি হন এক সর্দারের বেটি হযরত সফিয়্যা রাঃ। তখন ফিতনা রোখার মানসে রাসূল সাঃ তাকে বিয়ে করেন।
শেষোক্ত দুই বিয়ে দ্বারা উদ্দেশ্য ছিল, যেন উভয় কওমের মাঝে চলা যুদ্ধ থেকে যায়। পারস্পরিক আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ হবার বদৌলতে শান্তি ছড়িয়ে পড়ে। পারস্পরিক সম্প্রীতি বৃদ্ধি পায়।
আল্লাহর রহমাতে হয়েছিলও তা।
এ ছিল রাসূল সাঃ এর এগারটি বিবাহের হালাত। যা পরিস্কার প্রমাণ করে, রাসূল সাঃ প্রথম বিয়ে করেছিলেন সাধারণ নীতি অনুপাতে। কিন্তু বাকি দশ বিবাহ করেছেন পরিস্থিতি, পারিপার্শিকতার স্বীকার হয়ে। দ্বীনী ফায়দার উদ্দেশ্যে।
শুধু নিজের খাহেশের কারণে অধিক বিবাহ রাসূল সাঃ করেননি।
২য় পয়েন্ট
রাসূল সাঃ সমগ্র মানবজাতির জন্য সমগ্র বিষয়ে আদর্শ হিসেবে প্রেরীত হয়েছেন। আর প্রতিটি মানুষের দু’টি হালাত। তথা-
ক)
ঘরের বাহিরের জীবন।
খ)
ঘরের ভিতরের জীবন।
রাসূল সাঃ এর ঘরের বাহিরের জীবন পুরুষ সাহাবায়ে কেরাম রাঃ এর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা সংরক্ষিত করেছেন। যা সাহাবায়ে কেরাম স্বীয় বর্ণনার মাধ্যমে সমগ্র বিশ্বের কাছে পৌছে দিয়েছেন।
বাকি ছিল, রাসূল সাঃ এর ঘরের জীবন। এ বিষয়েও আল্লাহ তাআলা উম্মতে মুহাম্মদীকে মাহরূম করেননি। তাই একাধিক বিয়ের মাধ্যমে রাসূল সাঃ এর ঘরে একাধিক বিবিকে পাঠিয়েছেন। যাতে করে রাসূল সাঃ এর পারিবারিক জীবনও বর্ণিত হয়ে সবার জন্য আদর্শ হয়।
উম্মতের ফায়দার জন্য আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত নিজাম ছিল একাধিক বিবাহ।
২য় প্রশ্নের জবাব
রাসূল সাঃ যখন প্রথম বিবাহ করেন, তখন তার বয়স ছিল ২৫ বছর। টগবগে যুবক। বিয়ে করেছেন হযরত খাদিজা রাঃ কে। বিয়ের সময় হযরত খাদিজা রাঃ এর বয়স হয়েছিল ৪০ বছর।
যে খাদিজা রাঃ এর ইতোপূর্বে দুইবার বিবাহ হয়েছিল। দুইবারই স্বামী ইন্তেকাল করেছেন। পূর্বের স্বামী থেকে তিনজন সন্তানও জন্ম নিয়েছিল।
যদি রাসূল সাঃ নারীলোভীই হতেন [নাউজুবিল্লাহ] তাহলে ২৫ বছরের যুবক হয়ে, দুই দুইবারের বিধবা নারী, তাও ৪০ বছরের মধ্যবয়স্কা এক নারীকে কেন বিয়ে করলেন?
২৫ বছর বয়সে ৪০ বছর বয়স্কা একজনকে বিবাহ করার পর উক্ত নারীকে নিয়ে যৌবনের পূর্ণ সময় কাটিয়ে দিলেন। বিয়ের পর কেটে গেল আরো ২৫টি বছর।
এ ২৫ বছরের মাঝে তথা হযরত খাদিজা রাঃ এর জীবদ্দশায় রাসূল সাঃ দ্বিতীয় কোন বিবাহ করেননি। তার থেকেই রাসূল সাঃ এর চার কন্যা, যয়নব, রুকাইয়া, উম্মে কুলসুম এবং ফাতিমা রাঃ জন্মগ্রহণ করেন। এবং দুই ছেলে জন্ম নেন।
এছাড়া শুধু মারিয়া কিবতিয়া রাঃ এর গর্ভেই রাসূল সাঃ এর এক সন্তান জন্ম নিয়েছিল। এছাড়া আর কোন স্ত্রীর গর্ভে রাসূল সাঃ এর কোন সন্তান জন্মগ্রহণ করেননি।
হযরত খাদিজা রাঃ যখন ইন্তেকাল করেন, তখন রাসূল সাঃ এর বয়স  হয়েছিল ৫৫ বছর। ৫৫ বছর মানেই বার্ধক্যে উপনীত।
তাহলে যৌবনকাল থেকে বার্ধক্য পর্যন্ত একজন মধ্য বয়স্কা দুইবারের বিধবা নারীকে নিয়ে ঘরসংসার করলেন মহানবী সাঃ। এর মাঝে দ্বিতীয় কোন নারীর দিকে তাকাননি।
তারপরও নারীলোভী বলে যে অমানুষগুলো অভিযোগের আঙ্গুল তুলে তাদের রুচিবোধ  ও আকল নিয়ে আমাদের সন্দেহ জাগে।
হযরত খাদিজা রাঃ এর ইন্তেকালের পর, রাসূল সাঃ ৫৫ বছর বয়স থেকে ৬৩ বছর বয়স পর্যন্ত মৃত্যুর আগ পর্যন্ত নানা পারিপার্শিক ও রাজনৈতিক কারণে বাকি দশজন নারীকে বিয়ে করেন। যাদের শুধু একজন ছিলেন কুমারী। বাকি ৯ জনই ছিলেন বিধবা নারী।
এরপরও যারা আমাদের শ্রেষ্ঠ নবী, উত্তম আখলাক ও শ্রেষ্ঠ চরিত্রবান নবীজী সাঃ এর পবিত্র সত্বা নিয়ে অপবাদে খড়গ তুলে তাদের জ্ঞানপাপী বা মুর্খ ছাড়া আমরা আর কী’বা বলতে পারি?
বিস্তারিত জানতে হলে পড়ুন
মাওলানা ইদ্রিস কান্ধলবী রহঃ কৃত সীরাতুল মুস্তাফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উর্দু-৩য় খন্ড।
মাওলানা আশরাফ আলী থানবী রহঃ কৃত আহকামে ইসলাম আকল কী নজর মে-১৫৬-১৬০।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...