কোন কোনো ব্যাক্তির যাকাতের মাল তার দরিদ্র ভাই, বোন, চাচা, ফুফুসহ সকল দরিদ্র আত্মীয়-স্বজনকে দিতে কোন আপত্তি নেই।
বরং তাদেরকে যাকাত দেওয়া হলে সেটা সদকা ও আত্মীয়তার হক আদায়। দলিল হচ্ছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী: "মিসকীনকে যাকাত দেওয়া সদকা। আর আত্মীয়কে দেওয়া সদকা ও আত্মীয়তার হক আদায়"।[মুসনাদে আহমাদ (১৫৭৯৪) ও সুনানে নাসাঈ (২৫৮২)]
পূর্ণ হাদীসটি হলোঃ
أَخْبَرَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ الْأَعَلَى، قَالَ: حَدَّثَنَا خَالِدٌ، قَالَ: حَدَّثَنَا ابْنُ عَوْنٍ، عَنْ حَفْصَةَ، عَنْ أُمِّ الرَّائِحِ، عَنْ سَلْمَانَ بْنِ عَامِرٍ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِنَّ الصَّدَقَةَ عَلَى الْمِسْكِينِ صَدَقَةٌ، وَعَلَى ذِي الرَّحِمِ اثْنَتَانِ صَدَقَةٌ وَصِلَةٌ»
সালমান ইব্ন আমির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মিসকীনকে দান করার মধ্যে শুধু সাদাকা (র সওয়াব রয়েছে) আর আত্নীয়-স্বজনকে দান করা দুটি (সওয়াব রয়েছে) দান করা (র সওয়াব) এবং আত্নীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা (র সওয়াব)।
,
নিজ পিতা-মাতা, দাদা-দাদী, নানা-নানী, পরদাদা প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ যারা তার জন্মের উৎস তাদেরকে নিজের যাকাত দেওয়া জায়েয নয়। এমনিভাবে নিজের ছেলে-মেয়ে, নাতি-নাতিন এবং তাদের অধস্তনকে নিজ সম্পদের যাকাত দেওয়া জায়েয নয়। স্বামী এবং স্ত্রী একে অপরকে যাকাত দেওয়া জায়েয নয়।-রদ্দুল মুহতার ২/২৫৮
এরা গরীব হলেও এদেরকে যাকাতের মাল দেওয়া যাবে না; বরং সামর্থ্য থাকলে তাদের খরচ চালানো আবশ্যকীয়; যদি তাদের খরচ চালানোর মত সে ছাড়া অন্য কেউ না থাকে।
★★★সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে স্ত্রী স্বামীকে যাকাত দিতে পারবেনা।
এমনিতেই টাকা দিয়ে সহযোগিতা করতে পারে।
,
তবে স্বামী যদি ঋন গ্রস্থ হয়,কোনোভাবেই তাহা পূরন করতে সক্ষম না হয়,তাহলে কিছু ইসলামী স্কলারদের মতে সেই ছুরতে ঋন পরিশোধ করার জন্য স্ত্রী যাকাতের টাকা স্বামীকে দিতে পারবে।
,
শায়েখ আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলিল দাঃবাঃ এই বিষয়ে লিখেছেনঃ
স্ত্রী সম্পদশালী হলে তার ঋণগ্রস্ত স্বামীকে যাকাত দিতে পারবে।
কেননা ইসলামের দৃষ্টিতে এমন গরিব-অসহায় ব্যক্তিকে যাকাত দেয়া জায়েজ যাদের ভরণ-পোষণ দেয়া যাকাত দাতার জন্য ফরয নয়। যেমন: পিতা, মাতা, স্ত্রী প্রমুখকে যাকাত দেয়া যাবে না। কেননা তাদের ভরণ-পোষণ দেয়া ফরয।
কিন্তু ভাই, বোন, চাচা, চাচী, ফুফা, খালু, মামা ইত্যাদি ব্যক্তিদেরকে যাকাত দেয়া যাবে যদি তারা যাকাত পাওয়ার হকদার হয়।
এমন কি স্ত্রী যদি সম্পদশালী হয় আর স্বামী ঋণগ্রস্ত হয় আর আর্থিক অভাবে ঋণ পরিশোধে অক্ষম হয় তাহলে তাহলে স্ত্রী তার স্বামীকে যাকাতের অর্থ দিয়ে সাহায্য করতে পারে। শরিয়তে এতে কোনো বাধা নেই। কেননা, স্বামীর ভরণ-পোষণ দেয়া স্ত্রীর জন্য ফরয নয়।
এ মর্মে হাদিস হল:
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ ـ رضى الله عنه ـ خَرَجَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فِي أَضْحًى أَوْ فِطْرٍ إِلَى الْمُصَلَّى ثُمَّ انْصَرَفَ فَوَعَظَ النَّاسَ وَأَمَرَهُمْ بِالصَّدَقَةِ فَقَالَ ” أَيُّهَا النَّاسُ تَصَدَّقُوا ”. فَمَرَّ عَلَى النِّسَاءِ فَقَالَ ” يَا مَعْشَرَ النِّسَاءِ تَصَدَّقْنَ، فَإِنِّي رَأَيْتُكُنَّ أَكْثَرَ أَهْلِ النَّارِ ”. فَقُلْنَ وَبِمَ ذَلِكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ ” تُكْثِرْنَ اللَّعْنَ وَتَكْفُرْنَ الْعَشِيرَ، مَا رَأَيْتُ مِنْ نَاقِصَاتِ عَقْلٍ وَدِينٍ أَذْهَبَ لِلُبِّ الرَّجُلِ الْحَازِمِ مِنْ إِحْدَاكُنَّ يَا مَعْشَرَ النِّسَاءِ ”. ثُمَّ انْصَرَفَ فَلَمَّا صَارَ إِلَى مَنْزِلِهِ جَاءَتْ زَيْنَبُ امْرَأَةُ ابْنِ مَسْعُودٍ تَسْتَأْذِنُ عَلَيْهِ فَقِيلَ يَا رَسُولَ اللَّهِ هَذِهِ زَيْنَبُ فَقَالَ ” أَىُّ الزَّيَانِبِ ”. فَقِيلَ امْرَأَةُ ابْنِ مَسْعُودٍ. قَالَ ” نَعَمِ ائْذَنُوا لَهَا ”. فَأُذِنَ لَهَا قَالَتْ يَا نَبِيَّ اللَّهِ إِنَّكَ أَمَرْتَ الْيَوْمَ بِالصَّدَقَةِ، وَكَانَ عِنْدِي حُلِيٌّ لِي، فَأَرَدْتُ أَنْ أَتَصَدَّقَ بِهِ، فَزَعَمَ ابْنُ مَسْعُودٍ أَنَّهُ وَوَلَدَهُ أَحَقُّ مَنْ تَصَدَّقْتُ بِهِ عَلَيْهِمْ. فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ” صَدَقَ ابْنُ مَسْعُودٍ، زَوْجُكِ وَوَلَدُكِ أَحَقُّ مَنْ تَصَدَّقْتِ بِهِ عَلَيْهِمْ ”
আবু সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ঈদুল আযহা বা ঈদুল ফিতর দিনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদগাহে গেলেন এবং সালাত শেষ করলেন। পরে লোকদের উপদেশ দিলেন এবং তাদের সদকা দেওয়ার নির্দেশ দিলেন আর বললেন:
“লোক সকল! তোমরা সদকা দিবে। তারপর মহিলাগণের নিকট গিয়ে বললেন: মহিলাগণ তোমরা সদকা দাও। আমাকে জাহান্নামে তোমাদেরকে অধিক সংখ্যক দেখানো হয়েছে। তারা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! এর কারণ কি? তিনি বললেন: তোমরা বেশী অভিশাপ দিয়ে থাক এবং স্বামীর অকৃতজ্ঞ হয়ে থাক। হে মহিলাগণ! জ্ঞান ও দ্বীনে অপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও দৃঢ়চেতা পুরুষের বুদ্ধি হরণ কারিণী তোমাদের মত কাউকে দেখিনি।”
যখন তিনি ফিরে এসে ঘরে পৌঁছলেন, তখন ইবনে মাস’উদ (রাঃ) এর স্ত্রী যায়নাব (রাঃ) তাঁর কাছে প্রবেশের অনুমতি চাইলেন।
বলা হল, হে আল্লাহর রাসূল, যায়নাব এসেছেন।
তিনি বললেন, কোন যায়নাব?
বলা হল, ইবনে মাস’উদের স্ত্রী।
তিনি বললেন: হ্যাঁ, তাকে আসতে দাও।
তাকে অনুমতি দেওয়া হল।
তিনি বললেন: হে আল্লাহর নবী, আজ আপনি সা’দকা করার নির্দেশ দিয়েছেন। আমার অলংকার আছে। আমি তা সা’দকা করব ইচ্ছা করেছি। ইবনে মাস’উদ (রাঃ) (তার স্বামী) মনে করেন, আমার এ সদকায় তাঁর এবং তার সন্তানদেরই হক বেশী।
তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: ইবনে মাস’উদ (রাঃ) ঠিক বলেছে। “তোমার স্বামী ও সন্তানই তোমার এ সদকায় অধিক হকদার।”
সহীহ বুখারী, হাদিস নম্বর: [1377]
অধ্যায়ঃ ২১/ যাকাত (كتاب الزكاة)
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
তবে অন্যান্য ইসলামী স্কলারদের মতানুসারী গন ঋন পরিশোধের ক্ষেত্রে সেই মত অবলম্বন করতে পারবেন।