প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে রোজার কোন সমস্যা হবে না।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জুনুবি (নাপাক) অবস্থায় সেহরি (সাহুর) গ্রহণ করেছেন বলে একাধিক হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে এবং এটাও প্রমাণিত হয়েছে যে, তার আগে তিনি ওজু করে নিতেন।
এ অবস্থায় সেহরি খেলে ফজর সালাতের পূর্বে অবশ্যই গোসলের মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন করে নিতে হবে।
যেমন: হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,
উম্মুল মোমিনীন আয়েশা রা. বর্ণিত হাদিস:
ﻛﺎﻥ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻳﺪﺭﻛﻪ ﺍﻟﻔﺠﺮ ﻓﻲ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﻭﻫﻮ ﺟﻨﺐ ﻣﻦ ﻏﻴﺮ ﺣﻠﻢ، ﻓﻴﻐﺘﺴﻞ ﻭﻳﺼﻮﻡ
“রমজান মাসে স্বপ্নদোষ ব্যতীতই অপবিত্র অবস্থায় (অর্থাৎ স্ত্রী সহবাসের মাধ্যমে নাপাক অবস্থায়) রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজর হয়ে যেত। অত:পর তিনি গোসল করে রোজা রাখতেন।”
[সহিহ বুখারি : ১৮২৯ ও মুসলিম : ১১০৯।]
রাসুলের অপর স্ত্রী উম্মুল মোমিনীন উম্মে সালামা রা. বর্ণনা করেন:
ﻛﺎﻥ ﻳﺪﺭﻛﻪ ﺍﻟﻔﺠﺮ ﻭﻫﻮ ﺟﻨﺐ ﻣﻦ ﺃﻫﻠﻪ ﺛﻢ ﻳﻐﺘﺴﻞ ﻭﻳﺼﻮﻡ.
“সহবাসের ফলে নাপাকি অবস্থায় রাসুল সাল্লাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজর করে ফেলতেন। অত:পর গোসল করে রোজা রাখতেন।
[সহিহ বুখারি: ১৯২৬]
আল্লামা আব্দুল্লাহ বিন বায রহ. বলেন:
الصائم له أن يُصبح جنبًا ثم يغتسل، لا يضرُّه ذلك، فإذا جامع في الليل ثم أصبح واغتسل بعد الفجر فلا حرج عليه
“রোজাদার যদি জুনুবি বা গোসল ফরজ অবস্থায় ভোর করে অত:পর গোসল করে তাহলে তাতে কোন অসুবিধা নেই। যদি রাতে স্ত্রী সহবাস করার পর সকাল হয়ে যায় এবং ফজর উদিত হওয়ার পর গোসল করে তাহলে তাতে কোন সমস্যা নাই।”
তিনি আরও বলেন:
فلا بأس أن يجامع الإنسانُ في آخر الليل، ثم يتسحر، ثم يغتسل بعد أذان الفجر، لا حرج في ذلك.
“সুতরাং এতে অসুবিধা নেই যে, কেউ যদি শেষ রাতে স্ত্রী সহবাস করে, অত:পর সেহরি খায় অত:পর ফজরের আজানের পর গোসল করে। এতে কোন সমস্যা নেই।” (শাইখের ওয়েব সাইট থেকে নেয়া)
নাপাক অবস্থায় সেহরি খাওয়ার আগে ওজু করা উত্তম:
হাদিসে এসেছে,
عن عائشة قالت : كان رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا كان جنباً فأراد أن يأكل أو ينام توضأ وضوءه للصلاة
আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানাবাতের (গোসল ফরজ) অবস্থায় পানাহার কিংবা ঘুমানোর ইচ্ছা করলে নামাজের অজুর মত অজু করে নিতেন। ( সহিহ মুসলিম, হায়েজ অধ্যায়, হা/ ৩০৫)
আল্লামা উসাইমিন রাহ. বলেন:
والذي يظهر لي أن الجُنُبَ لا ينامُ إلا بِوُضُوءٍ على سبيل الاستحباب ، وكذا بالنسبة للأكل والشرب ، قال بعض العلماء : لا يكره له الأكل والشرب ، وهو على جنابة بلا وضوء
“আমার কাছে যেটা প্রতিভাত হচ্ছে যে, জুনুবি ব্যক্তি (যার উপর গোসল ফরজ হয়েছে) ওজু ছাড়া ঘুমাবেন না। এটা মুস্তাহাব। অনুরূপভাবে পানাহারের ক্ষেত্রেও।
কতিপয় আলেম বলেন, জুনুবি অবস্থায় ওজু ছাড়া পানাহার করা মাকরূহ (অপছন্দনীয়) নয়।” (শারহুল মুমতি)
মোটকথা, গোসল ফরজ অবস্থায় ঘুমানো, সেহরি বা অন্যান্য খাবার-দাবার গ্রহণ করা জায়েজ হলেও তার আগে ওজু করা উত্তম।
এতে রোযা হয়ে হবে। কিন্তু ফজরের নামায ইচ্ছেকৃত কাযা করার কারণে কবীরা গোনাহ হবে।
,
দিনে গোসল করতে পারলে রাতেও গোসল করা যায়। নামায নিয়ে অলসতা করা মোটেও উচিত নয়।
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ شَقِيقٍ العُقَيْلِيِّ، قَالَ: كَانَ أَصْحَابُ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لاَ يَرَوْنَ شَيْئًا مِنَ الأَعْمَالِ تَرْكُهُ كُفْرٌ غَيْرَ الصَّلاَةِ.
হযরত আব্দুল্লাহ বিন শাকীক রহঃ বলেছেন, হুজুরে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবাগণ কোন আমল ছেড়ে দেয়াকে কুফরী মনে করতেন না শুধু নামায ব্যতীত। অর্থাৎ নামায ছেড়ে দেওয়াকে তারা কুফরীর প্রায় নিকটবর্তী কাজ মনে করতেন। [সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-২৬২২]