ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
গোনাহ করার পর উক্ত গোনাহকে প্রকাশ না করার নির্দেশ রাসূলুল্লাহ সাঃ দিয়েছেন।যেমন-
আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
عَنْ سَالِمِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ سَمِعْتُ أَبَا هُرَيْرَةَ، يَقُولُ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ : ( ﻛُﻞُّ ﺃُﻣَّﺘِﻲ ﻣُﻌَﺎﻓًﻰ ﺇِﻟَّﺎ ﺍﻟْﻤُﺠَﺎﻫِﺮِﻳﻦَ ﻭَﺇِﻥَّ ﻣِﻦْ ﺍﻟْﻤُﺠَﺎﻫَﺮَﺓِ ﺃَﻥْ ﻳَﻌْﻤَﻞَ ﺍﻟﺮَّﺟُﻞُ ﺑِﺎﻟﻠَّﻴْﻞِ ﻋَﻤَﻠًﺎ ﺛُﻢَّ ﻳُﺼْﺒِﺢَ ﻭَﻗَﺪْ ﺳَﺘَﺮَﻩُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻓَﻴَﻘُﻮﻝَ ﻳَﺎ ﻓُﻠَﺎﻥُ ﻋَﻤِﻠْﺖُ ﺍﻟْﺒَﺎﺭِﺣَﺔَ ﻛَﺬَﺍ ﻭَﻛَﺬَﺍ ﻭَﻗَﺪْ ﺑَﺎﺕَ ﻳَﺴْﺘُﺮُﻩُ ﺭَﺑُّﻪُ ﻭَﻳُﺼْﺒِﺢُ ﻳَﻜْﺸِﻒُ ﺳِﺘْﺮَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻋَﻨْﻪُ )
আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, আমার সকল উম্মাতকে মাফ করা হবে, তবে প্রকাশকারী ব্যতীত। আর নিশ্চয় এ বড়ই অন্যায় যে, কোন লোক রাতের বেলা অপরাধ করল যা আল্লাহ গোপন রাখলেন। কিন্তু সে সকাল হলে বলে বেড়াতে লাগল, হে অমুক! আমি আজ রাতে এই এই কাজ করেছি। অথচ সে এমন অবস্থায় রাত কাটাল যে, আল্লাহ তার কর্ম লুকিয়ে রেখেছিলেন, আর সে ভোরে উঠে তার উপর আল্লাহর দেয়া আবরণ খুলে ফেলল। সহীহ বুখারী-৬০৬৯সহীহ?মুসলিম-২৯৯০
ইবনে হজর আসক্বালানী রাহ, ফাতহুল বারীতে লিখেন,
ﻭﻳﺆﺧﺬ ﻣﻦ ﻗﻀﻴﺘﻪ : ﺃﻧﻪ ﻳﺴﺘﺤﺐ ﻟﻤﻦ ﻭﻗﻊ ﻓﻲ ﻣﺜﻞ ﻗﻀﻴﺘﻪ ﺃﻥ ﻳﺘﻮﺏ ﺇﻟﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻭﻳﺴﺘﺮ ﻧﻔﺴﻪ ﻭﻻ ﻳﺬﻛﺮ ﺫﻟﻚ ﻷﺣﺪ ﻛﻤﺎ ﺃﺷﺎﺭ ﺑﻪ ﺃﺑﻮ ﺑﻜﺮ ﻭﻋﻤﺮ ﻋﻠﻰ ﻣﺎﻋﺰ . ﻭﺃﻥ ﻣَﻦ ﺍﻃﻠﻊ ﻋﻠﻰ ﺫﻟﻚ ﻳﺴﺘﺮ ﻋﻠﻴﻪ ﺑﻤﺎ ﺫﻛﺮﻧﺎ ، ﻭﻻ ﻳﻔﻀﺤﻪ ، ﻭﻻ ﻳﺮﻓﻌﻪ ﺇﻟﻰ ﺍﻹﻣﺎﻡ ﻛﻤﺎ ﻗﺎﻝ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓﻲ ﻫﺬﻩ ﺍﻟﻘﺼﺔ " ﻟﻮ ﺳﺘﺮﺗﻪ ﺑﺜﻮﺑﻚ ﻟﻜﺎﻥ ﺧﻴﺮﺍً ﻟﻚ " ،
মাইয ইবনে মালিক আল-আসলমি এর ঘটনা থেকে আমরা অনুধাবন করতে পেরেছি যে,যে ব্যক্তি মাইয ইবনে মালিক আল-আসলমীর মত ঘটনায় যুক্ত হয়ে যাবে,তার জন্য মুস্তাহাব হলো,সে আল্লাহর নিকট তাওবাহ করে নিবে।এবং উক্ত বিষয়কে গোপন করে নিজ ইজ্জত-আব্রুকে ঢেকে রাখবে।কারো নিকট সে তা প্রকাশ করবে না।
যেমনটা আবু-বকর রাযি, এবং উমর রাযি, মাইয আসলমীকে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।
এবং অন্য কেউ যদি সেই গোনাহকে জেনে ফেলে তার জন্যও সেই বিষয়কে ঢেকে রাখা মুস্তাহাব।সে যেন উক্ত ঘটনার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে লাঞ্ছিত-অপদস্থ না করে এবং উক্ত বিষয়কে ইমাম বা বিচারকের নিকট উপস্থাপন না করে।
যেমনটা রাসূলুল্লাহ সাঃ আসলমীর ঘটনাকে উপস্থাপনাকারী হযরত হায্যাল রাযি, কে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন যে, হে হায্যাল! তুমি যদি তোমার কাপড় দ্বারা বিষয়টাকে ঢেকে রাখতে তাহলে সেটা তোমার জন্য ভালো হতো তথা সওয়াবের কারণ হতো।(ফতহুল বারী-১২/১২৪)
এটা আল্লাহর সবিশেষ অনুগ্রহ যে,তিনি বান্দার গোনাহসমূহের উপর পর্দা ঢেলে দেন।বান্দার গোনাহকে প্রকাশ করেন না।এজন্য মানুষ নিতান্তই সে তার নিজেকে অপদস্থ করে যখন সে তার গোনাহকে প্রকাশ করে যা আল্লাহ ঢেকে রেখেছিলেন। বরং এক্ষেত্রে মানুষের উচিৎ হল,সে তার গোনাহকে আল্লাহর পর্দার দ্বারা ঢেকে রাখবে। শরয়ী প্রমাণাদি এ বিষয়টি কে জোড় প্রমাণ করে উপস্থাপন করে।যেমন-
হযরত আবু-হুরায়রা রাযি থেকে বর্ণিত,
ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ ﻋَﻦْ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻗَﺎﻝَ : ( ﻟَﺎ ﻳَﺴْﺘُﺮُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻰ ﻋَﺒْﺪٍ ﻓِﻲ ﺍﻟﺪُّﻧْﻴَﺎ ﺇِﻟَّﺎ ﺳَﺘَﺮَﻩُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ )
রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেন- আল্লাহ (তাওবাহর মাধ্যমে)দুনিয়াতে যদি কোনো বান্দার দোষকে ঢেকে রাখেন,তাহলে কিয়ামতের দিনও সেই দোষকে ঢেকে রাখবেন। (সহীহ মুসলিম-২৫৯০)
কখন গিবত করা জায়েয? এবং কখন নাজায়েয ? এসম্পর্কে আমরা পূর্বের একটি ফাতাওয়ায় বলেছিলাম,
ফাতাওয়া চাওয়ার সময় কারো গিবত করা।এভাবে যে,কেউ কোনো মুফতী সাহেবের নিকট গিয়ে বলল,আমার উপর আমার বাবা,ভাই জুলুম-নির্যাতন করতেছে।আমার উপর তাদের এমন জুলুম করার কি কোনো অধিকার আছে?এখন কিভাবে আমি তাদের জুলুম-নির্যাতন থেকে নাজাত পেতে পারি এবং নিজের অধিকারকে আদায় করে নিতে পারি?ইত্যাদি ইত্যাদি।প্রয়োজনের খাতিরে এমনটা জায়েয।তবে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হলো,নাম ঠিকানা নির্দিষ্ট না করে এভাবে বলা যে,এক ব্যক্তি অন্যজনের সাথে এমন আচরণ করছে কিংবা একজন স্বামী তার স্ত্রীর সাথে এমন এমন আচরণ করছে।তখন কাউকে নির্দিষ্ট করে পরিচয় প্রদান ব্যতীত উদ্দেশ্য হাসিল হয়ে যাবে।তাছাড়া নির্দিষ্ট করে কারো পরিচয় প্রদান করাও জায়েয আছে।যেমন হাদীসে বর্ণিত রয়েছে,হযরত হিনদাহ রাযি রাসূলুল্লাহ সাঃ এর কাছে গিয়ে নিজ স্বামী আবু সুফিয়ান রাযি এর নামে নালিশ করে বললেন,যে ইয়া রাসূলুল্লাহ সাঃ! আমার স্বামী আবু সুফিয়ান একজন কৃপন লোক।রাসূলুল্লাহ সাঃ তখন তার এমন নাম উল্লেখ-কে বাধা প্রদান করেননি।.........বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন-
https://www.ifatwa.info/1715
সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
দ্বীনের পথে আসার পর এভাবে পূর্বের গোনাহকে নির্দিষ্ট করে উল্লেখ করা কখনো জায়েয হবে না। তবে যদি কেউ অন্যকে হেদায়তের দাওয়াতের উদ্দেশ্যে অনির্দিষ্ট ভাবে গোনাহকে উল্লেখ করে নেয়, এবং গোনাহের অপকারতিা ও নেকির উপকারিতা উল্লেখ পূর্বক যদি আলোচনা চালিয়ে নেয়,তাহলে আশা রাখা যায়, এটার জন্য তাকে জবাবদিহিতা করতে হবে না। এভাবে গোনাহকে প্রকাশ করা ব্যতীতও মানুষকে হেদায়তের দাওয়াত দেয়া যায়। অনেক মানুষ অন্যর গোনাহর কথা না শুনে বরং ইসলামের সুন্দর ব্যবস্থাপনা দেখে ইসলাম এনেছে ও ভবিষ্যতে আনবে।সুতরাং সাধারণত এমনটা না করাই উচিৎ।