আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
471 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (37 points)
edited by
১. ধরুন একজন ব্যক্তি আল্লাহর কাছে তার নিজের জন্য শাস্তি চাইলো। পরবর্তীতে সে তওবা করলো আল্লাহর কাছে শাস্তি চাওয়ার জন্য। তো তওবা করার পরপরই কি সেই ব্যক্তি সারাক্ষণ আশা করতে পারবে যে, সে যে শাস্তি চেয়েছে আল্লাহর কাছে, তা আল্লাহ দিবেননা?

২. কোনো ব্যক্তি যদি কবিরা গুনাহ(সেই কবিরা গুনাহ ব্যতীত যার জন্য মানুষ ইসলাম থেকে বের হয়ে যায়) করার পর যদি তওবা ব্যতীত আশা করে যে, তার এই কবিরা গুনাহ করার শাস্তি আল্লাহ দিবেননা তবে তার এই আশা করাটা ঠিক হবে কি না?

৩. "আমি এখন মুসলমান" এই দাবিটা করা কি ঠিক নাকি "আশা করছি আমি এখন মুসলমান" এই দাবিটা করা ঠিক?

৪. মোবাইলের স্ক্রিনে যদি কুরআনের কোনো আয়াত না থাকে কিন্তু মোবাইলে যদি কুরআন থাকে তাহলে সেই মোবাইলকে পায়ের নিচে রাখা যাবে কি না?

৫. কোনো ব্যক্তি সগিরা গুনাহ করার পর যদি তওবা ব্যতীত আশা করে যে, তার এই সগিরা গুনাহ করার শাস্তি আল্লাহ দিবেননা তবে তার এই আশা করাটা ঠিক হবে কি না?

1 Answer

0 votes
by (657,800 points)
জবাব
بسم الله الرحمن الرحيم 


(০১)
হ্যাঁ সেই ব্যাক্তি এই আশা করতে পারে।

(০২)
কবীরা গুনাহ করলে ঈমান অত্যন্ত কমজোর হয়ে পড়ে এবং অনেক দিনের ইবাদত-বন্দেগীর দ্বারা অর্জিত নূর নষ্ট হয়ে যায়। আর এর ভয়াবহতা এমন যে, একটি গুনাহে কবীরাই মানুষকে জাহান্নামে নেয়ার জন্যে যথেষ্ট। তাওবা ছাড়া গুনাহে কবীরা মাফ হয় না। কবীরা গুনাহকে জায়িয বা হালাল মনে করলে ঈমান চলে যায়।

কতিপয় কবীরা গুনাহের বিস্তারিত বিবরণ

আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন:

إِنْ تَجْتَنِبُوا كَبَائِرَ مَا تُنْهَوْنَ عَنْهُ نُكَفِّرْ عَنْكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ 

তোমারা যদি নিষিদ্ধ বড় বড় পাপগুলো হতে বিরত থাক, তবে তোমাদের ছোট ছোট পাপগুলোকে আমি মাফ করে দেব। [সূত্র: সূরা নিসা, আয়াত ৩১।]

★মুফতী মনসুরুল হক সাহেব দাঃবাঃ লিখেছেনঃ    
এ আয়াতের আলোকে এখানে কতিপয় গুনাহে কবীরার সবিস্তারে আলোচনার আশা করছি, যাতে সেসব বিস্তারিতভাবে জেনে সেই সকল পাপকাজ হতে আত্মরক্ষা করা সহজ হয়।

১. শিরকঃ

এটা সর্বাপেক্ষা মহাপাপ। এর বিপরীত তাওহীদ। দুনিয়ার জীবনেই তাওবা করে তাওহীদ গ্রহণ না করে এই পাপের বোঝা নিয়ে মৃত্যুবরণ করলে শিরক পাপের শাস্তি স্থায়ী জাহান্নাম হতে বাঁচার অন্য কোন উপায় নেই।

২. হুকুকুল ওয়ালিদাইনঃ

অর্থাৎ মা-বাবার নাফরমানি করে মা-বাবার মনে কষ্ট দেওয়া। এটা অন্যতম কবীরা গুনাহ। এর বিপরীত বিররুল ওয়ালিদাইন। অর্থাৎ মা-বাবার খিদমত করা অনেক বড় নেকী।

৩. ক্বাত‘ই রেহেমঃ

অর্থাৎ এক মায়ের পেটের ভাই-বোনদের সঙ্গে অসদ্ব্যবহার করা। মায়ের পেটের বলতে দাদীর পেটের চাচা, ফুফু, নানীর পেটের মামা, খালা এবং ভাই-বোনদের ছেলেমেয়ে, ভাতিজা, ভাতিজী, ভাগ্নে ভাগ্নী, সবাইকেই বোঝায়। অর্থাৎ রক্তের সম্পর্কের আত্মীয়-স্বজন| যে যত বেশি নিকটবর্তী, তার হক তত বেশি। ক্বাত‘ই রেহেমী করা কবীরা গুনাহ। এর বিপরীত সিলাহ রেহমী বা আত্মীয়তা সম্পর্ক বজায় রাখা অনেক বড় সাওয়াবের কাজ।

৪. যিনাঃ

অর্থাৎ নারীর সতীত্ব নষ্ট করা, পুরুষের চরিত্র নষ্ট করা, ব্যভিচার করা, এটা অত্যন্ত জঘন্য কবীরা গুনাহ। এর বিপরীত নারীর সতীত্ব রক্ষা করা ও পুরুষের চরিত্রকে পবিত্র রাখা ফরয। নারীর সতীত্ব ও পুরুষের  চরিত্র পবিত্র রাখার জন্যই আল্লাহ  তা‘আলা কুরআন শরীফের মধ্যে পর্দা বিধান করেছেন এবং বেপর্দার প্রতি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন। নারী জাতির জন্য পর্দা অবলম্বন ফরয এবং উত্তেজনা বর্ধনকারী, যৌন আবেদন সৃষ্টিকারী যাবতীয় জিনিস যেমন অশ্লীল ছবি, নাটক থিয়েটার, সিনেমা, বায়োস্কোপ, টিভি, ভিসিআর ইত্যাদি দেখা হারাম। তদ্রূপ বালকদের সঙ্গে কু-কর্ম করা যিনার চেয়েও বড় পাপ এবং এর শাস্তিও ভয়ানক। বিবাহিত অবস্থায় যিনা করলে এবং তা স্বীকার করলে অথবা চারজন সত্যবাদী সাক্ষীর দ্বারা তা প্রমাণিত হলে ইসলামী হুকুমতে তার শাস্তি রজম অর্থাৎ পাথর মেরে প্রাণে বধ করে ফেলা।

আর অবিবাহিত অবস্থায় যিনা প্রমাণিত হলে তার শাস্তি একশত বেত্রাঘাত। আর বালকদের সাথে কুকর্মকারীর শাস্তি হচ্ছে তাকে আগুণ দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া।

হযরত ঈসা আ. একদিন ভ্রমণকালে দেখতে পেলেন-একটি কবরের মধ্যে একজন মানুষকে আগুণ দ্বারা জ্বালানো হচ্ছে। তিনি আল্লাহর নিকট এর ভেদ জানতে চাইলে আল্লাহর নির্দেশে সেই লোকটি বললো, এই আগুণ সেই বালকটি, যাকে আমি ভালোবাসতাম। তারপর ক্রমান্বয়ে আমি বালকটির সঙ্গে কুকর্ম করে বসলাম। সে কারণে কিয়ামত পর্যন্ত আমাকে এরূপ শাস্তি ভোগ করতে হবে।

৫. চুরি করা কবীরা গুনাহ। সাধারণ চুরির চেয়ে বিশ্বাসের বিশ্বাসঘাতকতা করে চুরি করা অর্থাৎ আমানতের খিয়ানত করা অনেক বেশি পাপ।

৬. অন্যায়ভাবে যে কোন মানুষ খুন করা কবীরা গুনাহ। ইসলামী রাষ্ট্রের আনুগত্য স্বীকারকারী সংখ্যালঘুকে খুন করা, তার মাল চুরি করা ও তার নারীর সতীত্ব হরণ করা এক সমান পাপ এবং এক সমান শাস্তি।

তিন কারণ ব্যতীত কোন মানুষের জীবনকে বধ করা যায় না। যথা-

ক. মানুষ খুন করলে।

খ. বিবাহিত অবস্থায় অন্য নারীর সতীত্ব হরণ করলে। 

গ. মুরতাদ হয়ে গেলে অর্থাৎ মুসলমান হয়ে ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে কোন কথা বললে। অবশ্য এ শাস্তি জারি করার অধিকার একমাত্র ইসলামী হুকুমতের প্রশাসকদের।

৭. মিথ্যা তুহমত লাগানো। এটাও কবীরা গুনাহ। সবচেয়ে বড় তুহমত হচ্ছে যিনার তুহমত। কারো ওপর যিনার তুহমত দিলে আখিরাতে তার দোযখের শাস্তি ছাড়াও দুনিয়ার শাস্তি এই যে, তাকে আশিটি দুররা মারতে হবে। এতদ্ব্যতীত অন্যান্য তুহমত ও অশ্লীল গালির শাস্তি বিচারক ও সমাজনেতার বিচার অনুসারে কমবেশি হবে। শাস্তির দ্বারা সমাজ পবিত্র হয়।

৮. মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া। এটা অত্যন্ত মারাত্মক কবীরা গুনাহ। এরও শাস্তি বিধান করা রাষ্ট্রের ও সমাজের কর্তব্য। মিথ্যা বলা মহাপাপ। এই পাপের প্রতি সমাজের ঘৃণা থাকা দরকার। শৈশবে শিশুরা যাতে মিথ্যায় অভ্যস্ত না হয়, সেদিকে অভিভাবকদের অত্যন্ত তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখা দরকার।

৯. যাদু করে কারো ক্ষতি সাধনের চেষ্টা করা কবীরা গুনাহ। অনেক দুষ্ট প্রকৃতির লোক শয়তান-জিনের সাধনা করে মাছ, গোশত পরিত্যাগ করে পাক-ছাফ ও ফরয গোসল পরিত্যাগ করে, কালীর সাধনা করে, যাদুবিদ্যা হাসিল করে, মূর্খ সমাজে পীর বা ফকির নামে পরিচিত হয়ে গোপনে গোপনে কারো মাথার চুল কেটে নিজে, কারো কাপড়ের কোনা কেটে, কারো ঘরের দুয়ারে শ্মশানের কয়লা, শ্মশানের হাড়ের তাবিজ পুঁতে, কাউকে বান মেরে মানুষের ক্ষতি সাধনের চেষ্টা করে, একেই যাদু বলে। শরী‘আত অনুসারে এটা অত্যন্ত জঘন্য পাপকাজ। এরূপ ব্যক্তিকে ধরতে পারলে তার শাস্তি বিধান করা সমাজের ও রাষ্ট্রের কর্তব্য। আখিরাতের শাস্তি তো পরে হবে, দুনিয়ার শাস্তি এখানেই হওয়া দরকার। বিনা সাক্ষীতে বিনা প্রমাণে কারো ওপর কোনোরূপ [চুরি ইত্যাদির] দোষারোপ করা এই ভিত্তিতে যে, সূরা ইয়াসীন পড়ে লোটা ঘুরানোতে বা বাটি চালানো, খুর চালান দেওয়াতে অমুকের নাম উঠেছে, এটাও এক প্রকার যাদুর অন্তর্গত। ইসলাম এরূপ নীতিহীন-ভিত্তিহীন দোষারোপকে কিছুতেই অনুমোদন করে না।

১০. অঙ্গীকার ভঙ্গ করা, ওয়াদা খেলাফ করা, কথা দিয়ে বিনা উজরে তা ঠিক না রাখা, এগুলোও মারাত্মক কবীরা গুনাহ।

১১. আমানতের খিয়ানত করা কবীরা গুনাহ। আমানত অনেক রকমের আছে। টাকা-পয়সা, বিষয়-সম্পত্তির আমানত, কথার আমানত, কাজের আমানত, দায়িত্বের আমানত ইত্যাদি।

১২. গীবত করা তথা কারো অসাক্ষাতে তার বদনাম ও নিন্দা করা। [যদিও তা সত্য হয়] কবীরা গুনাহ।

১৩. বিদ্রোহী বানানো অর্থাৎ স্বামীর বিরুদ্ধে স্ত্রীকে, মনিবের বিরুদ্ধে চাকরকে, উস্তাদের বিরুদ্ধে শাগরিদকে, রাজার বিরুদ্ধে প্রজাকে, কর্তার বিরুদ্ধে কর্মচারীকে ক্ষেপিয়ে তোলাও কবীরা গুনাহ। হাদীস শরীফে আছে, ‘কোন চাকরকে তার প্রভুর বিরুদ্ধে অথবা স্ত্রীকে তার স্বামীর বিরুদ্ধে যে উস্কানী দেয়, সে আমাদের দলভুক্ত নয়।’

১৪. নেশাযুক্ত জিনিস পান করা কবীরা গুনাহ। যেমন মদ, গাঁজা হিরোইন, ফেনসিডিল ইত্যাদি। নেশার দ্বারা উদ্দেশ্য, যা পান করলে ব্রেনের স্বাভাবিক কর্ম ব্যাহত হয়।

১৫. যৌন উত্তেজনা সৃষ্টি করা। মদের দ্বারা যেমন নেশা হয়, মদ্যপানে যেমন, মানুষ বিবেক-বুদ্ধি হারিয়ে উন্মাদ হয়ে যায়, তার চেয়েও মানুষের মধ্যে বড় নেশা হলো যৌন উত্তেজনার নেশা এবং যৌন উত্তেজনা হলে মানুষ বুদ্ধি হারিয়ে হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে যায়। পুরুষ জাতির এই যৌন ক্ষুধাকে যারা উত্তেজিত করে অর্থাৎ নারী জাতি যখন যুবক পুরুষদের সামনে তাদের রূপ-সজ্জা দেখিয়ে বেড়ায়, মেকি রূপ, অঙ্গভঙ্গি করে বা নেচে নেচে দেখায় বা নগ্নমুর্তি, উলঙ্গ ছবি তাদের সামনে তুলে ধরা হয়, [যেমন টিভি, ভিসিআর ও সিনেমায় অশ্লীল ছবি দেখানো হয়], তখন যুবকদের যৌনক্ষুধা উত্তেজিত হয়ে তারা হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে পশুর ন্যায় আচরণ করে বসে এবং তাদের স্বাস্থ্য, সম্পত্তি, সময় ও স্বচ্ছ মনের এবং সুস্থ বিবেকের ভীষণ ক্ষতি হয়। এজন্য মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন, “তোমরা যিনার ধারে-কাছেও যেও না”। [সূত্র: সূরা বনী ইসারাঈল, আয়াত ৩২।] অর্থাৎ যে কাজে যিনার উপক্রম হতে পারে বা যৌন চাহিদার সৃষ্টি হতে পারে, সে কাজ করো না। এই ক্ষতি যাদের দ্বারা হয়, তারাও মহাপাপী।

১৬. জুয়া খেলা ও লটারি ধরা এটাও কবীরা গুনাহ। এর নেশাও মদের নেশা ও কামিনী-কাঞ্চনের নেশা অপেক্ষা কম নয়। জুয়া খেলা অনেক রকমের আছে। ঘোড় দৌড়, কুকুর দৌড়, পাশা খেলা, তাস খেলা, সতরঞ্জ খেলা বা টিকেট ধরা-এ সবই জুয়া। অর্থাৎ যাতে বাজি ধরা আছে, তা-ই জুয়া। জুয়া খেলা মহাপাপ। সমাজে ও রাষ্ট্রে এর প্রসার বন্ধ করার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি থাকা দরকার।

১৭. সুদ খাওয়া কবীরা গুনাহ। সুদ অনেক প্রকারের আছে। যেমন, সরল সুদ, চক্রবৃদ্ধি সুদ, ব্যাংকের সুদ, বীমা-ইন্স্যুরেন্সের সুদ ইত্যাদি। সর্ব প্রকারের সুদই মহাপাপ। প্রচলিত সকল বীমা ইন্স্যুরেন্স সুদ বা জুয়ার মধ্যে শামিল। আর স্বাভাবিকভাবে যে বাড়তি সুবিধা পাওয়া যায়, তাও সুদের মধ্যে শামিল। সুতরাং, বীমা ও ইন্স্যুরেন্স থেকে পরহেজ করা ফরয। সরকারী আইনের কারণে কেউ অপারগ হলে সে অবস্থার হুকুম কোন মুফতীর নিকট থেকে জেনে নিবে।

আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, “আল্লাহর অটল বিধান, সুদের দ্বারা আসে ধ্বংস, আর যাকাত, খয়রাত ও দানের দ্বারা আসে বরকত”। [সূত্র: সূরা বাকারা, আয়াত ২৭৬।]

সুদ ছাড়া ব্যাংক চলতে পারে। কাজেই এরূপ মনে করা উচিত নয় যে, সুদ না হলে ব্যাংক কীভাবে চলবে? আর ব্যাংক না থাকলে ব্যবসা-বাণিজ্যেই বা চলবে কীভাবে? সুদ খাওয়া আর দেওয়া উভয়ই কবীরা গুনাহ। তবে সুদ খাওয়া সর্বাবস্থায়ই মহাপাপ। কিন্তু জানমালের হেফাযতের জন্য অপারগ হয়ে সুদ দেওয়া মহাপাপের অন্তর্ভুক্ত নয়।

১৮. রিশওয়াত। অর্থাৎ ঘুষ খাওয়া কবীরা গুনাহ। ঘুষের মাধ্যমে অবৈধভাবে কার্য উদ্ধার করা মহাপাপ। যাদের সরকারী বেতন ধার্য করা আছে, তারা কর্তব্য কাজে অতিরিক্ত যা কিছু গ্রহণ করবে, সবই ঘুষ বলে বিবেচিত হবে। চাই একটি সিগারেট হোক বা এক কাপ চা কিংবা এক খিলি পান অথবা একটি ডাবই হোক এবং যদিও দাতা তা খুশি হয়ে দেয়। আর যাদের কোন বেতন ধার্য করা নেই, তারা যদি চুক্তির মাধ্যমে মজুরী নির্ধারণ করে কোন কাজ করে এবং মজুরী গ্রহণ করে, তবে তা ঘুষ নয়। যারা সরকারের বেতনভোগী কর্মকর্তা-কর্মচারী নয়, তাদের কোন মহৎ কাজে উদ্বুদ্ধ হয়ে সম্মান অথবা ভালোবাসার নিদর্শনস্বরূপ যদি তাদের জন্য কোন উপঢৌকন দেওয়া হয়, তবে সেটা ঘুষ নয়। বরং এরূপ উপঢৌকনকে বলা হয় হাদিয়া। কিন্তু এরূপ দানের মধ্যে দাতার পক্ষে কোনরূপ কার্যোদ্ধারের নিয়ত বা গ্রহীতার পক্ষে কোনরূপ আশা থাকলে তা আর হাদিয়া থাকবে না। বরং সেটাও এক প্রকার রিশওয়াতের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। শুধু সুপারিশ করে বিনিময় গ্রহণ করা, সত্য সাক্ষ্যদানের বিনিময় গ্রহণ করা, ন্যায় বিচারের বিনিময় গ্রহণ করা, মৌখিকভাবে মাসআলা বলে, কুরআন পাঠ করে সাওয়াব রেসানীর বিনিময় গ্রহণ করা, তারাবীহ নামাযে কুরআন শুনিয়ে বিনিময় গ্রহণ করা, মুরীদ করে, দ্বীনের সবক বলে দিয়ে, নসিহত করে বিনিময় গ্রহণ করা-এসবও রিশওয়াতের অন্তর্ভুক্ত। অবশ্য ন্যায় বিচার করার জন্য, দ্বীনি সবক শিক্ষা দেওয়ার জন্য এবং নসিহত দ্বারা চরিত্র গঠন করার জন্য কিছু ভাতা নির্ধারণ করে দিলে, তা হারাম বা রিশওয়াত হবে না।

১৯. জোর-জুলুম করে অর্থ বা অতর্কিতভাবে কোন মুসলমান বা কোন সংখ্যালঘুর ছোট কিংবা বড় স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি হরণ করা বা ভোগ দখল করা কবীরা গুনাহ।

২০. অনাথ এতিমের মাল বা নিরাশ্রয় বিধবার মাল খাওয়া কবীরা গুনাহ। এতিমও বিধবার মাল খাওয়া যেমন মহাপাপ, তদ্রূপ একমাত্র আল্লাহর ওয়াস্তে বিধবার খেদমত করা মহাপুণ্যের কাজ।

২১. আল্লাহর ঘর যিয়ারতকারী তথা হজ্জ যাত্রীদের সাথে দুর্ব্যবহার করা কবীরা গুনাহ।

২২. মিথ্যা কসম খাওয়া কবীরা গুনাহ।

২৩. কোন মুসলমানকে গালি দেওয়া, মুসলমানে মুসলমানে গালাগালি করা কবীরা গুনাহ। কারণ মিথ্যা তুহমত ও অশ্লীল কথাবার্তা প্রয়োগ-এই দু’টি পাপের দ্বারা গালি তৈরি হয়। হাদীসে আছে,“কোন মুসলমানকে যে গালি দিবে, সে ফাসিক হয়ে যাবে।”       

২৪. জিহাদের ময়দান হতে পলায়ন করা কবীরা গুনাহ। জিহাদের আসল অর্থ-আল্লাহর দ্বীন প্রচারের জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করা। এমনকি যদি দ্বীনের শত্রুদের সাথে যুদ্ধ করে প্রাণ দিতে হয়, তাতেও কুন্ঠাবোধ না করা। দ্বীনের দুশমনরা সত্য ধর্মকে দুনিয়া থেকে মুছে ফেলার জন্য অনেক দূর থেকে অনেক সূক্ষ্ণ কূটনৈতিক চেষ্টা-তদবির করে সেগুলো উদ্ধার করে। সেসবের প্রতিকার করা জিহাদের পর্যায়ভুক্ত। আর যে জামানায় বৈধ যে উপায়ে দ্বীন জারি করা যায় এবং দ্বীনের দুশমনদেরকে দুর্বল করা যায়, সে জামানায় সেই কাজই জিহাদের অন্তর্ভুক্ত। সেরূপ দ্বীনের খিদমত হতেও পলায়ন করা জিহাদের ময়দান হতে পলায়ন করার শামিল ও সমতুল্য গুনাহর কাজ।      

২৫. ধোঁকা দেওয়া বিশেষত শাসনকর্তা ও বিচারকর্তা কর্তৃক জনসাধারণকে ধোঁকা দেওয়া মারাত্মক কবীরা গুনাহ। কারবারের মধ্যে, বেচা-কেনার মধ্যে ধোঁকা দেয়াও মহাপাপ। কিন্তু শাসক বা বিচারক হয়ে ধোঁকা দেওয়ার তুলনা নেই। 

২৬. অহংকার করা কবীরা গুনাহ। পদের অহমিকা বা ধন-সম্পদের গৌরবে গরিবদেরকে তুচ্ছ মনে করা বা উচ্চ বংশে জন্মগ্রহণ করায় অন্য কোন বংশীয় লোকদেরকে হেকারত বা তুচ্ছ জ্ঞান করা, যেমন যারা কাপড় বুনে, তাদেরকে জোলা বলে তুচ্ছ করা, যারা তেল উৎপাদন করে তাদেরকে তেলি বলে তুচ্ছ করা, যারা কৃষিকাজ করে, তাদেরকে চাষা বলে হেকারত করা, যারা আরবীতে ধর্মবিদ্যা চর্চা করে তাদেরকে মোল্লা বলে তুচ্ছ করা ইত্যাদি অহংকার-তাকাব্বুরও কবীরা গুনাহ বা মহাপাপের অন্তর্ভুক্ত।       

২৭. বাদ্য-বাজনাসহ নাচ-গান করা কবীরা গুনাহ। হযরত নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘বর্বরতার যুগের কু-প্রথা ও কু-সংস্কারসমূহ নিশ্চিহ্ন করে ফেলার জন্য আল্লাহ তা‘আলা আমাকে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। যেমন-বাঁশি, বাদ্যযন্ত্র ইত্যাদি।[সূত্র: আলকামেল ফিজ্জুআফা খণ্ড-৬, পৃষ্ঠা-৪১১৮]        

২৮. ডাকাতি করা, লুন্ঠন করা কবীরা গুনাহ। প্রত্যেক মুসলমানের এবং ইসলামী রাষ্ট্রের অনুগত প্রত্যেক অমুসলমান নাগরিকের জান-মাল ও ইজ্জত পবিত্র আমানত। এ আইন ভঙ্গ করে কারো জান-মাল বা ইজ্জত হরণ করা কবীরা গুনাহ।        

২৯. স্বামীর নাফরমানি করা কবীরা গুনাহ। হযরত নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “তিন প্রকার লোকের ইবাদত-বন্দেগী যেমন নামায-রোযা ইত্যাদি কবুল হয় না। যথা-ক. ক্রীতদাস, যদি তার প্রভুর নিকট হতে পলায়ন করে, খ. স্ত্রী, যদি তার স্বামীকে নারাজ রাখে, গ. মদখোর, যে নেশা পান করে”। [সূত্র: সহীহে ইবনে খুজাইমা, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-৬৯, হাদীস-৯৪০] 

একজন মেয়েলোক স্বামীর হক সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তাকে হযরত নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন,“খবরদার, সাবধান থাক!সবসময় লক্ষ্য রেখ, স্বামীর মনের মধ্যে তুমি আছ কি না? জেনে রেখ, পতিই সতীর গতি। স্বামীই স্ত্রীর বেহেশত অথবা দোযখ।”

হযরত আয়েশা সিদ্দীক রাযি. বর্ণনা করেন, “হে কন্যাসকল! তোমরা নারী জাতি। তোমরা যদি তোমাদের স্বামীর হক সম্পর্কে জানতে, তবে প্রত্যেক নারী তার স্বামীর পায়ের ধুলা-কাদা মুখের দ্বারা সাফ করতো।”

হযরত নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ তা‘আলার আইনে যদি কারো জন্য কোন মানুষকে সিজদা করা জায়িয হতো, তবে আমি প্রত্যেক স্ত্রীকে আদেশ করতাম, তার স্বামীকে সিজদা করার জন্য।”[সূত্র: তিরমিযী শরীফ, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-২১৯ ও তাবারানী কাবীর খণ্ড, হাদীস-৫১১৭]  

স্বামীর হক স্ত্রীর ওপর এত বেশি। প্রত্যেক স্ত্রীর ওপর ওয়াজিব-হায়া-শরম সহকারে স্বামীর সামনে চক্ষু নিচু করে রাখা এবং স্বামীর প্রত্যেকটি আদেশ পালন করা এবং স্বামী যখন কথা বলেন, তখন চুপ করে থাকা। যখনই স্বামী বাড়ি আসেন, তখনই তার কাছে এসে তার প্রতি সম্মান করা এবং যে সমস্ত কাজে স্বামী অসন্তুষ্ট হন, সেই সমস্ত কাজ থেকে দূরে থাকা। আর যখন স্বামী বাইরে যান, তখন তার যাবতীয় নির্দেশ মুতাবিক কাজ সমাধা করা। স্বামী যখন শয়ন করেন, তখন নিজেকে তার সামনে পেশ করা এবং স্বামীর অনুপস্থিতিতে তার ঘর-বাড়ি, ধন-সম্পদ, তার সন্তান-সন্ততি ও স্বীয় ইজ্জত-আব্রু হেফাযত করা, তাতে আদৌ কোনরূপ খিয়ানত না করা। সুগন্ধি ব্যবহার করে স্বামীর সামনে আসা এবং মুখ, শরীর, কাপড় যেন কোনরূপ দুর্গন্ধযুক্ত না হতে পারে, সেদিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখা। স্বামীর উপস্থিতিতে সাজ-সজ্জা করা ও তার অনুপস্থিতিতে সাজ-সজ্জা না করা, স্বামীর ভাই-বোনদের ভালোবাসা, তাদেরকে আদর-যত্ন ও ইজ্জত সম্মান করা। স্বামী যা কিছু এনে দেয়, তাতেই সন্তুষ্ট থাকা, শোকর করা। স্বামীর বাড়ির বাইরে না যাওয়া। যদি প্রয়োজনবশত কোথাও যেতে হয়, তবে স্বামীর অনুমতি নিয়ে যাওয়া এবং ময়লা কাপড় পরিধান করে ও ময়লাযুক্ত বোরকা পরিধান করে যাওয়া। হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে- “যে মেয়েলোক তার স্বামীর বাড়ি হতে স্বামীর বিনা অনুমতিতে বাইরে যায়, তাঁর ওপর ফেরেশতাগণ লানত করতে থাকেন।”

ইসলাম ধর্মের ও মানব কল্যাণের অনেক শত্রু আছে। তারা বলে থাকে যে, পুরুষরা নারীদেরকে পরাধীন করে রেখেছে। এ কথা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভ্রান্ত। স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা আল্লাহই স্ত্রীকে স্বামীর তাবেদারি করে চলতে নির্দেশ দিয়েছেন। কুরআন শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “পুরুষরা নারীদের অভিভাবক।” [সূত্র: সূরা নিসা, আয়াত-৩৪]

ইসলাম যেমন নারীদেরকে স্বামীর পূর্ণ তাবেদারি করার হুকুম করেছে, তদ্রূপ স্বামীদেরকেও নির্দেশ দিয়েছে, নিজ স্ত্রীর প্রতি সদ্ব্যবহার করার জন্য। দুর্ব্যবহার বা জুলুম করতে অতি কঠোরভাবে নিষেধ করেছে। তাদেরকে দ্বীনি শিক্ষা দিতে এবং যথাসম্ভব তাদের ভুল-ত্রুটিকে মাফ করতে কঠোর তাগিদ করেছে। আল্লাহ তা‘আলা নির্দেশ দিয়েছেন, “তোমরা স্ত্রীদের সাথে সদ্ব্যবহার করো।”       

৩০. জায়গা-জমির সীমানা নষ্ট করা কবীরা গুনাহ। হযরত নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “জায়গা-জমির সীমানা যে নষ্ট করবে, তার ওপর লানত।”  

হাদীসে আরো বর্ণিত আছে, “যে ব্যক্তি জায়গা-জমির সীমানা নষ্ট করে অন্যের এক বিঘত জমি হরণ করবে, কিয়ামতের দিন তার স্কন্ধে এই পরিমাণ সাত তবক জমিন চাপিয়ে দেওয়া হবে।” [সূত্র: মুসলিম শরীফ, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-৩২]       

৩১. শ্রমিকের মজুরি কম দেওয়া কবীরা গুনাহ। হযরত নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে লোক শ্রমিকের শ্রমের পূর্ণ মজুরি দেয় না বা পূর্ণ মজুরি দিতে টাল-বাহানা করে, কিয়ামতের দিন আমি তার বিরুদ্ধে বাদী হয়ে আল্লাহর দরবারে দাঁড়াব।” হযরত নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাষ্ট্রানুগত সংখ্যালঘুর ওপর জুলুমকারী সম্পর্কেও এরূপ উক্তি করেছেন।

৩২. মাপে কম দেওয়া কবীরা গুনাহ। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে-“যারা মাপে কম দিবে, তাদের জন্য ওয়ায়েল নামক দোযখ নির্ধারিত রয়েছে।”       

৩৩. দ্রব্য সামগ্রীতে ভেজাল মিশ্রিত করা কবীরা গুনাহ।       

৩৪. খরিদ্দারকে ধোঁকা দেওয়া কবীরা গুনাহ। হাদীস শরীফে আছে- “যে ধোঁকা দিবে, সে আমার উম্মত নয়।”       

৩৫. স্ত্রীকে তিন তালাক দিয়ে, শর্তের সাথে হিলা করে পুনরায় তাকে নিয়ে ঘর-সংসার করা কবীরা গুনাহ। একে তো তালাক কথাটাই এমন, যা অত্যন্ত ঘৃণিত। কেবলমাত্র জরুরতের কারণে এটাকে জায়িয রাখা হয়েছে। নতুবা এর চেয়ে জঘন্য কাজ আর নেই। তাই হাদীস শরীফে বলা হয়েছে- “যত রকমের জায়িয জিনিস আছে, তন্মধ্যে সবচেয়ে খারাপ জিনিস হচ্ছে তালাক।” [সূত্র : আবু দাউদ শরীফ খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-২৯৬] 

তারপর একসঙ্গে তিন তালাক দিয়ে ফেলা, এটা আরো খারাপ। আবার তিন তালাকের দ্বারা যে স্ত্রী হারামে মোগাল্লাযা হয়ে গেছে, তাকে শর্ত করে হিলার মাধ্যমে ঘরে রাখা খুবই জঘন্য ব্যাপার। এজন্যই হাদীস শরীফে উভয়ের ওপর লানত বর্ষিত হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। হযরত নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে হিলা করবে এবং যার জন্য হিলা করা হবে, উভয়ের ওপরই লানত বর্ষিত হবে।”  [সূত্র: মিশকাত শরীফ।]  

হযরত উমর রাযি. এর যুগে আইন ছিল, যদি কেউ এভাবে হিলা করতো, তবে তাকে সঙ্গেসার করা হতো অর্থাৎ পাথর নিক্ষেপ করে তাকে মেরে ফেলা হতো। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমরের নিকট জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, এক ব্যক্তি তার চাচাত বোনকে বিবাহ করে ক্রোধের বশবর্তী হয়ে তাকে তিন তালাক দিয়েছে, এখন আবার হিলা করে তাকে স্ত্রীরূপে রাখতে চায়। তিনি ফাতাওয়া দিয়েছিলেন, তোমার চাচাত ভাই একসঙ্গে তিন তালাক দিয়ে আল্লাহপাকের নাফরমানি করেছে। আল্লাহ তাকে এই শাস্তি দিয়েছেন। সে শয়তানের তাবেদারি করেছে, তাই আল্লাহপাক তার জন্য আর কোন পথ বাকি রাখেন নি। সকল ইমামগণের ফাতাওয়াই এরূপ যে, শর্ত করে হিলা করা হারাম ও গুনাহে কবীরা।

৩৬. দাইয়ুসিয়াত অর্থাৎ নিজের স্ত্রী, বোন বা কন্যাকে পরপুরুষের সাথে অবাধে দেখা-সাক্ষাত, মেলা-মেশা করতে দেওয়া, পরপুরুষের বিছানায় যেতে দেওয়া জঘন্য কবীরা গুনাহ ও হারাম। এটা জাহিলিয়্যাতের যুগের একটি জঘন্য পাপ, যা ইউরোপ-আমেরিকার বর্বরতা ও আধুনিক সভ্যতার যুগে আবার চালু হয়েছে। এটা অতি জঘন্য পাপপ্রথা ও ভয়াবহ কবীরা গুনাহ।   

৩৭. ঘোড় দৌড় বা রেস খেলা কবীরা গুনাহ। যেহেতু এতে বাজি ধরা হয়েছে। আর যাতে বাজি ধরা আছে, তা জুয়া। অতএব, এটা হারাম ও মহাপাপ।    

৩৮. সিনেমা, টিভি ইত্যাদি দেখা কবীরা গুনাহ। কারণ, এর মধ্যে উত্তেজনামূলক ছবি দেখানো হয়, যদ্দারা যুবকদের স্বাস্থ্য নষ্ট, সময় নষ্ট, সম্পদ নষ্ট, স্বভাব নষ্ট ও মাতৃজাতির অবমাননা করা হয় এবং হায়া-শরম যা দ্বীনের ওপর কায়িম থাকার জন্য অপরিহার্য, তা একেবারে ধ্বংস হয়ে যায়। এজন্য এটা জঘন্য পাপ। সিনেমার পার্ট ও প্লে করা, সিনেমার ব্যবসা করা, এর এডভার্টাইজিং করা সবই কবীরা গুনাহ ও মহাপাপ।    

৩৯. পেশাব করে পানি না নেওয়া ও পাক-পবিত্র না হওয়া কবীরা গুনাহ। পেশাবের ছিঁটা-ফোটা থেকে বেঁচে না থাকার দরুন কবর আযাব হয়।হযরত নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে এ বিষয়ে সচেতন করে গিয়েছেন। খৃষ্টানরা পেশাব করে পানি ব্যবহার করে না। পশুর মতো দাঁড়িয়ে পেশাব করে। তাদের দেখাদেখি যারা তদ্রূপ করে তারা বড়ই হতভাগ্য।   

৪০. চোগলখুরী করা ও কূটনামী করা কবীরা গুনাহ।

৪১. গণকের কাছে যাওয়া মহাপাপ ও কবীরা গুনাহ।

৪২. মানুষের বা অন্য কারো জীবের ফটো আদর-যত্নসহকারে ঘরে রাখা বা টাঙ্গানো কবীরা গুনাহ।

৪৩. পুরুষের জন্য সোনার আংটি পরা কবীরা গুনাহ।

৪৪. পুরুষের জন্য রেশমী পোশাক পরা কবীরা গুনাহ।

৪৫. মেয়েলোকের জন্য শরীরের রূপ প্রকাশ পায়, এমন পাতলা লেবাস পরা কবীরা গুনাহ। তেমনি কোন অঙ্গের অংশবিশেষ বের করে সংক্ষিপ্ত পোশাক পরা বা অঙ্গের পরিধি ফুটে ওঠার মতো আঁটসাঁট পোশাক পরাও কবীরা গুনাহ।

৪৬. পুরুষের জন্য লুঙ্গি, পায়জামা ও প্যান্ট পায়ের গিরার নিচে পরা কবীরা গুনাহ। আল্লাহ তা‘আলা কুরআন শরীফে ইরশাদ করেছেন, “মাটির উপর দিয়ে গর্বভরে বিচরণ করো না।” তিনি আরো বলেছেন, “আল্লাহর নিকট মানুষের অহংকার ও ফখর অত্যন্ত অপছন্দনীয়।”

হাদীস শরীফে হযরত নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তিন ব্যক্তির দিকে আল্লাহপাক কিয়ামতের দিন রহমতের দৃষ্টি দিবেন না। তাদের সাথে মেহেরবানির কথা বলবেন না এবং তাদেরকে পবিত্রও করবেন না। তারা হলো-১.যে অহংকারের সাথে লুঙ্গি-পায়জামা টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে পরবে, ২.যে উপকার করে খোঁটা দিবে, ৩.যে মিথ্যা কসম খেয়ে জিনিস বিক্রয় করবে।  

৪৭. বংশ পরিবর্তন করা অর্থাৎ বাপের নাম বদলিয়ে দেওয়া (যে কোন মতলব হাসিল করার উদ্দেশ্যে) কবীরা গুনাহ।

৪৮. ঝগড়া-বিবাদ করে মিথ্যা মুকাদ্দমা দায়ের করা কবীরা গুনাহ। মিথ্যা মুকাদ্দমার তদবির করা জায়িয আছে, কিন্তু জেনে-শুনে মিথ্যা মুকাদ্দমা করা বা তার পায়রবি করা কিংবা মিথ্যা পরামর্শ দিয়ে মিথ্যা মুকাদ্দমা সাজিয়ে দেওয়া কবীরা গুনাহ। সত্য মিথ্যা না জেনে মুকাদ্দমার তদবির করাও দুরস্ত নয় এবং মুকাদ্দমায় জিতিয়ে দিব-এই চুক্তিতে মুকাদ্দমার তদবির করা জায়িয নয়।

৪৯. মৃত ব্যক্তির জায়িয ওসীয়ত পালন না করা কবীরা গুনাহ। অবশ্য ওসীয়ত শরী‘আত সম্মত হওয়া চাই। শরী‘আতবিরোধী ওসীয়ত করাও কবীরা গুনাহ এবং তা পালন করাও কবীরা গুনাহ।

৫০. কোন মুসলমানকে ধোঁকা দেওয়া কবীরা গুনাহ।

৫১. জাসূসী করা অর্থাৎ মুসলমান সমাজ ও রাষ্ট্রের গোপন কথা বা দুর্বল পয়েন্টের কথা অন্য সমাজের লোকের কাছে, অন্য রাষ্ট্রের কাছে প্রকাশ করা মহাপাপ ও কবীরা গুনাহ।

৫২. নর হয়ে নারীর বেশ ধারণ করা এবং নারী হয়ে নরের বেশ ধারণ করাও কবীরা গুনাহ। শুধু বেশ নয়, নারী হয়ে নরের সমান অধিকারের দাবি করে দরবারে, মাঠে-ময়দানে এবং হাটে-বাজারে অবাধ বিচরণ করা, আর নর হয়ে অক্ষম সেজে ঘরে বসে থাকা-এটাও এরই পর্যায়ভুক্ত।

হযরত নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, “সেসব নারীর ওপর আল্লাহর অভিশাপ, যারা নরের বেশ ধারণ করবে এবং সেসব নরের ওপর যারা নারীর বেশ ধারণ করবে।”

৫৩. টাকা বা নোট জাল করা কবীরা গুনাহ।

৫৪. অন্তর এত শক্ত করা যে, গরিব-দুঃখীর সীমাহীন দুঃখ-কষ্ট দেখেও দরদ লাগে না, এটাও কবীরা গুনাহ।

৫৫. ইসলামী রাষ্ট্রের সীমান্ত পাহারায় ত্রুটি করা এবং দেশের জরুরী রসদ, খাদ্য বা হাতিয়ার চোরাচালান বা পাচার করা কবীরা গুনাহ।

৫৬. রাস্তা-ঘাটে বা ছায়াদার ফলদার বৃক্ষের নিচে পায়খানা করা কবীরা গুনাহ।

৫৭. ঘরবাড়ি ও তার পার্শ্ববর্তী জায়গা, আসবাবপত্র, থালা-বাসন, কাপড়-চোপড়, ইত্যাদি নোংরা বা গান্ধা করে রাখা কবীরা গুনাহ।

৫৮. হায়িয-নিফাস অবস্থায় স্ত্রী-সহবাস করা কবীরা গুনাহ।

৫৯. যাকাত না দেওয়া কবীরা গুনাহ।

৬০. ইচ্ছা করে এক ওয়াক্ত নামাযও কাযা করা কবীরা গুনাহ।

৬১. মাহে রমাযানের একদিনেরও রোযাও বিনা ওজরে ভেঙে ফেলা বা না রাখা মহাপাপ ও কবীরা গুনাহ।

৬২. জনগণের কষ্ট হওয়া সত্ত্বেও দাম বাড়ানোর জন্য জীবিকা নির্বাহোপযোগী খাদ্য-দ্রব্য গোলাজাত করে আটক করে রাখা কবীরা গুনাহ।

৬৩. ষাঁড় দ্বারা গাভীর বা পাঁঠার দ্বারা ছাগীর পাল দিতে না দেওয়া কবীরা গুনাহ।

৬৪. পড়শীকে কষ্ট দেওয়া (যদিও সে ভিন্ন জাতির হয়) কবীরা গুনাহ।

৬৫. যার মাল আছে, যার মাল উপার্জন করার শক্তি আছে, এমন লোকের লোভের বশীভূত হয়ে দান প্রার্থী হওয়া অর্থাৎ ভিক্ষা করা কবীরা গুনাহ। এরূপ পেশাদার ভিক্ষুককে জেনেশুনে ভিক্ষা দেওয়াও কবীরা গুনাহ।

৬৬. জনগণ চায় না, তা সত্ত্বেও তাদের ইমামত ও নেতৃত্ব করা কবীরা গুনাহ।

৬৭. নিজের দোষ না দেখে পরের দোষ দেখে বেড়ানো এবং গর্বের সাথে নিজের প্রশংসা করা কবীরা গুনাহ।

৬৮. বদগুমানী করা অর্থাৎ বিনা সাক্ষ্য-প্রমাণে অন্য মুসলমানের প্রতি খারাপ ধারণা পোষণ করা কবীরা গুনাহ।

৬৯. ইলমে দ্বীনকে তুচ্ছ মনে করে ইলমে দ্বীন হাসিল না করা বা হাসিল করে আমল না করা মহাপাপ ও কবীরা গুনাহ। তেমনিভাবে সন্তানদেরকে ইলমে দ্বীন শিক্ষা না দেওয়া কবীরা গুনাহ।

৭০. বিনা জরুরতে লোকের সামনে সতর খোলা কবীরা গুনাহ। পুরুষের সতর নাভি হতে হাঁটু পর্যন্ত এবং স্ত্রীলোকের সতর বেগানা পুরুষের সামনে মাথা হতে পা পর্যন্ত সমস্ত শরীর। আর নিজের মাহরামের সামনে বুক হতে হাঁটু পর্যন্ত সতর। তাই মাহরামের সামনে নারীর পেট এবং পিঠও খোলা থাকতে পারবে না।

৭১. মেহমানের খাতির, আদর-যত্ন ও অভ্যর্থনা না করা কবীরা গুনাহ।

৭২. ছেলেদের সঙ্গে কু-কর্ম করা তথা পুংমৈথুন করা মহাপাপ। এটা অত্যন্ত মারাত্মক কবীরা গুনাহ।

৭৩. আমানতদার যোগ্য সৎকর্মীকে নিযুক্ত, নির্বাচিত বা মনোনীত না করে আত্মীয়তা, দলীয় বা অন্য কোন স্বার্থের বশবর্তী হয়ে বা জনস্বার্থে অমনোযোগী হয়ে অযোগ্য, অসৎ ও অকর্মাকে নিযুক্ত, নির্বাচিত বা মনোনীত করা কবীরা গুনাহ।

৭৪. নিজে ইচ্ছা করে বা দাবি করে অথবা জোর করে কোন পদ গ্রহণ করা কবীরা গুনাহ।

৭৫. ইসলামী রাষ্ট্রের বিরোধী বা বিদ্রোহী হওয়া কবীরা গুনাহ।

৭৬. নিজের বিবি-বাচ্চার খবর-বার্তা না নিয়ে তাদেরকে দুনিয়াবি ব্যাপারে কষ্টে ফেলা, কিংবা পরকালীন ব্যাপারে খারাপ ও নষ্ট হতে দেওয়া কবীরা গুনাহ।

৭৭. খতনা না করা কবীরা গুনাহ।

৭৮. অসৎ ও অন্যায় কাজ হতে দেখে শক্তি-সামর্থ্য অনুযায়ী বাধা না দেওয়া, কিছু না বলা কবীরা গুনাহ। অন্তরে তার প্রতি ঘৃণা এবং তা প্রতিরোধের ফিকির না করা ঈমানের পরিপন্থী।

৭৯. অন্যায়ের সমর্থন করা কবীরা গুনাহ। অন্যায়ের প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করা মারাত্মক কবীরা গুনাহ ও কুফর।

৮০. আত্মহত্যা করা কবীরা গুনাহ।

৮১. স্ত্রী সহবাস করে গোসল না করা কবীরা গুনাহ।

৮২. পেশাব-পায়খানা করে ঢিলা বা পানি দ্বারা পবিত্রতা হাসিল না করে অপবিত্র থাকা কবীরা গুনাহ।

৮৩. পুরুষ-মহিলার নাভীর নিচের পশম, বগলের পশম, নখ ইত্যাদি বর্ধিত করে রাখা কবীরা গুনাহ। তেমনিভাবে পুরুষের জন্য দাড়ি মুন্ডিয়ে মেয়েলোক সাজা এবং স্ত্রীলোকের জন্য মাথার চুল কেটে পুরুষ সাজা কবীরা গুনাহ। পুরুষদের দাড়ি লম্বা রাখা এবং স্ত্রীলোকদের মাথার চুল লম্বা রাখা ওয়াজিব। নারী-পুরুষ উভয়ের নাভীর নিচের পশম ও বগলের পশম পরিষ্কার করে ফেলা ওয়াজিব।

৮৪. উস্তাদ ও পীরের সঙ্গে বেয়াদবি করা, কুরআন ও হাদীসের আলেম বিশেষভাবে কুরআনের হাফেযের অমর্যাদা করা কবীরা গুনাহ। যিনি কুরআন-হাদীসের আধ্যাত্মিক তত্ত্ব কার্যকরীভাবে শিক্ষা দেন, তাকেই পীর বলে। আর উস্তাদ বলে, যিনি কুরআন-হাদীসের বাহ্যিক অর্থ শিক্ষা দেন। উস্তাদ ও পীর উভয়েরই বড় হক। এরূপে যারা কুরআন শরীফ হিফয করে হাফেয হন বা কুরআন-হাদীসের অর্থ ও মর্ম আসল আরবী ভাষায় পাঠ করে বুঝে আমল করেন এবং মানুষকে তদানুযায়ী আমল করতে উপদেশ দেন, তাঁরা অনেক মর্যাদার অধিকারী। তাঁদের প্রতি যারা আন্তরিক মর্যাদা প্রদর্শন করে না, তারা মহাপাপী।

৮৫. শূকরের গোশত খাওয়া মহাপাপ ও কবীরা গুনাহ। এ কথা বলার দরকার ছিল না, যেমন দরকার নেই এ কথা বলার যে, মল-মূত্র ভক্ষণ করা মহাপাপ। কিন্তু যেহেতু শোনা যায় যে, যারা ইংল্যান্ড-আমেরিকায় যায়, তারা নাকি মুসলমান হওয়া সত্ত্বেও কেউ কেউ শূকরের গোশত খেতে পরোয়া করে না। সেজন্য এ কথাটাও লেখার প্রয়োজন অনুভূত হয়েছে।

৮৬. হস্তমৈথুন করা মহাপাপ ও কবীরা গুনাহ।

৮৭. ষাঁড়, কবুতর বা মোরগ ইত্যাদি লড়াইয়ের আয়োজন করা এবং তামাশা দেখা কবীরা গুনাহ।

৮৮. কুরআন শরীফ পড়ে ভুলে যাওয়া।

৮৯. কোন জীবন্ত ও জানদার জীবকে আগুন দিয়ে জ্বালানো কবীরা গুনাহ। তবে সাপ, বিচ্ছু, ভীমরুল, বল্লা ইত্যাদি দুষ্ট ও কষ্টদায়ক জীব হতে বাঁচার যদি কোন উপায় না থাকে, তবে আগুন দ্বারা জ্বালিয়ে দিয়ে আত্মরক্ষার ব্যবস্থা করায় আশা করা যায় যে, কোন গুনাহ হবে না।

৯০. আল্লাহর রহমত হতে নিরাশ হয়ে যাওয়া কবীরা গুনাহ।

৯১. আল্লাহর আযাব হতে নির্ভীক হওয়া কবীরা গুনাহ।

৯২. হালাল জানোয়ারকে আল্লাহর নামে যবেহ না করে অন্য উপায়ে মেরে খাওয়া বা যে জীব নিয়মতান্ত্রিক যবেহ ব্যতীত কোন আঘাতে বা অন্য কোন উপায়ে মরে গেছে, উক্ত মৃত জীব খাওয়া কবীরা গুনাহ।

৯৩. অপচয় বা অপব্যয় করা কবীরা গুনাহ।

৯৪. কৃপণতা ও বখিলি করা কবীরা গুনাহ।

৯৫. আসতিয় ক্ষমতা হাতে থাকা সত্ত্বেও ইসলামী আইন প্রবর্তন বা জারি না করা, গণতন্ত্র বা সমাজতন্ত্র অথবা ধর্মনিরপেক্ষতার নামে অনৈসলামিক আইন সমর্থন করা বা জারি করা কবীরা গুনাহ।

৯৬. ইসলামের আইন মুতাবিক আইন-কানুন জারি হওয়া সত্ত্বেও ইসলামী রাষ্ট্রের কোন আইন অমান্য করা বা রাষ্ট্রদ্রোহিতা করা কবীরা গুনাহ। 

৯৭. ডাকাতি করা, লুটতরাজ করা বা পকেট কেটে বা হঠাৎ চোখের আড়ালে অসতর্কতার সুযোগে মাল চুরি বা ছিনতাই করা কবীরা গুনাহ।

৯৮. ছোট জাত, ছোট পেশাদার বলে বা জোলা, তেলি, শিকারী, কামার, কুমার, বান্দীর বাচ্চা ইত্যাদি বলে কাউকে হেকারত করা বা খাটো করে দেখা কবীরা গুনাহ।

৯৯. বিনা ইজাযতে কারো বাড়ির ভিতরে বা ঘরের ভিতরে বা খাস কামরায় প্রবেশ করা কবীরা গুনাহ। ইজ্জতের জন্য সালাম দিয়ে সালামের উত্তর না পাওয়া গেলে ফিরে আসতে হবে।

১০০. পরের দোষ তালাশ করে বেড়ানো কবীরা গুনাহ।

১০১. মানুষের কষ্ট হয়, এমন খাদ্যমূল্য বৃদ্ধি দেখে খুশি হওয়া কবীরা গুনাহ।

১০২. সুরত-শেকেলের কারণে বা গরিব হওয়ার কারণে কোন মুসলমানকে টিটকারি বা ঠাট্টা-বিদ্রূপ করা কবীরা গুনাহ।

১০৩. বিদ‘আত কাজ করা বা বিদ‘আত জারি করা কবীরা গুনাহ। হযরত আয়িশা রাযি. হতে বর্ণিত আছে, হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কোন ব্যক্তি যদি আমাদের দ্বীনের মধ্যে এমন কোন নতুন বিষয় অন্তর্ভুক্ত করে যা দ্বীনের মধ্যে শামিল নয়, তবে ঐ ‘নতুন বিষয়’ প্রত্যাখ্যাত হবে। অর্থাৎ সেই ব্যক্তির কথা গ্রহণ করা জায়িয হবে না।[সূত্র: মিশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা ৩৪। বুখারী শরীফ খণ্ড-১ পৃষ্ঠা-৩৭১]

১০৪. দুনিয়া হাসিলের জন্য ইলমে দ্বীন শিক্ষা করা কবীরা গুনাহ। হযরত আবু হুরাইরা রাযি. হতে বর্ণিত আছে হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে ইলম দ্বারা আল্লাহপাকের রিয়া ও সন্তুষ্টি লাভ করা হয়, এমন ইলমকে যে ব্যক্তি দুনিয়ার তুচ্ছ সম্পদ হাসিল করার উদ্দেশ্যে শিক্ষা করবে, সে জান্নাতের সুগন্ধিও পাবে না।”[সূত্র: মিশকাতুল মাসাবীহ, পৃষ্ঠা ৩৪। আবুদ দাউদ শরীফ খণ্ড ২ পৃষ্ঠা-৫১৫]

১০৫. ইলম গোপন করা কবীরা গুনাহ। হযরত আবু হুরাইরা রাযি. হতে বর্ণিত আছে, হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন- “কারো নিকট ইলমী বিষয়ে কোন প্রশ্ন করলে, উক্ত বিষয়টি জানা থাকা সত্ত্বেও যদি সে তা গোপন করে, তবে কিয়ামতের দিন তাকে আগুনের লাগাম পরানো হবে।”[সূত্র : মিশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা ৩৪। আবু দাউদ শরীফ খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৫১৫]

উপরোক্ত হাদীসে বর্ণিত ‘ইলমী বিষয়’ দ্বারা কুরআন হাদীস ও দ্বীনি মাসআলার কথা বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ দ্বীনি বিষয় জানা থাকা সত্ত্বেও যদি সে তা গোপন করে, তবে কিয়ামতের দিন তাকে আগুনের লাগাম পরানো হবে।[সূত্র: মিশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা ৩৪।]

১০৬. জাল হাদীস বর্ণনা করা কবীরা গুনাহ। হযরত আবু হুরাইরা রাযি. থেকে বর্ণিত আছে, “হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার ওপর মিথ্যা আরোপ করে অর্থাৎ জাল হাদীস বর্ণনা করে, সে যেন দোযখে নিজের ঠিকানা বানিয়ে নেয়।”

১০৭. গুনাহের কাজে মান্নত মানা কবীরা গুনাহ। গুনাহের কাজে মান্নত মানা যেমন গুনাহ, তা পূরণ করাও গুনাহ। তথাপি যদি কেউ কোন গুনাহর মান্নত মেনে থাকে, তাহলে তার কর্তব্য হচ্ছে, সে যেন তা পূরণ না করে, বরং কাফফারা আদায় করে দেয়। তার কাফফারা কসমের কাফফারার মতো।

১০৮. প্রজাদের অধিকার খর্ব করা। জনগণের হক আদায় না করা কবীরা গুনাহ। হযরত মা‘কাল বিন ইয়াছার রাযি. হতে বর্ণিত আছে, হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “মুসলমানদের মধ্য হতে কেউ জনগণের শাসক হওয়ার পর যদি এমন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে যে, সে স্বীয় জনগণের অধিকার খর্বকারী ছিল অর্থাৎ তাদের দ্বীন ও দুনিয়াবি কল্যাণের ব্যবস্থা করেনি, তবে আল্লাহপাক অবশ্যই তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিবেন।”  [সূত্র: মিশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা-৩২১। বুখারী শরীফ, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-১০৫৯]

১০৯. অবৈধ ট্যাক্স আদায় করা কবীরা গুনাহ। হযরত উকবা বিন আমের রাযি. হতে বর্ণিত আছে, “অবৈধ ট্যাক্স আদায়কারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।” শরী‘আতের দৃষ্টিতে কাষ্টম চার্জ, নগর শুল্ক ও আয়কর (ইনকাম ট্যাক্স) ইত্যাদি আদয় করা জায়িয নয়।

১১০. ঋণী অবস্থায় মৃত্যুবরণ করা কবীরা গুনাহ। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রাযি. হতে বর্ণিত, হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “ঋণ ব্যতীত শহীদের যাবতীয় গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।”[সূত্র: মিশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা-২৫২। মুসলিম শরীফ, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-১৩৫]

উপরোক্ত হাদীসের মর্ম এই যে, কোন ব্যক্তি যদি ঋণ করে এবং সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও তা পরিশোধ না করে বা পরিশোধের কোন ব্যবস্থাও না করে শাহাদত বরণ করে, তবে শাহাদতের কারণে তার যাবতীয় গুনাহ মাফ করে দেওয়া হলেও তার ঋণ ক্ষমা করা হবে না। কারণ সেটা বান্দার হক।

১১১. দু’মুখো স্বভাব ইখতিয়ার করা কবীরা গুনাহ। হযরত আম্মার রাযি. হতে বর্ণিত, হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “দুনিয়াতে যার দু’মুখো স্বভাব থাকবে, কিয়ামতের দিন তার জিহ্বা হবে আগুনের”।[সূত্র: মিশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা-৪১৩, সুনানে দারেমী, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-৪০৫]

১১২. মহিলাদের খুশবু লাগিয়ে বের হওয়া কবীরা গুনাহ। হযরত আবু মূসা আশআরী রাযি. হতে বর্ণিত, হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “গাইরে মাহরাম বা পরপুরুষকে দর্শনকারী সকল চক্ষুই ব্যভিচারিণী। আর মহিলার যদি খুশবু লাগিয়ে কোন মজলিসের পার্শ্ব দিয়ে গমন করে, তবে সে এরূপ [এরূপ বলার দ্বারা ব্যভিচারিণী বোঝানো উদ্দেশ্য]”। [সূত্র: আত তারগীব ওয়াত তারহীব, খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা-৮৪]

সুতরাং মহিলাদের বিশেষ জরুরতে পর্দা সহকারে বের হওয়া জায়িয থাকলেও খুশবু মেখে বের হওয়া জাযিয নয়।

১১৩. বিজাতিদের অনুকরণ করা কবীরা গুনাহ। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রাযি. হতে বর্ণিত, হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি অন্য কোন কওমের অর্থাৎ অমুসলিমদের রীতি-নীতির অনুকরণ করবে, সে তাদের মধ্যে গণ্য হবে”।

অর্থাৎ যে ব্যক্তি কর্ম, বিশ্বাস ও আমল-আখলাকের ক্ষেত্রে বিজাতীয় ধ্যান-ধারণা, কৃষ্টি-কালচার, সভ্যতা ও সংস্কৃতির অনুসরণ করবে, সে তাদের দলভুক্ত বলে গণ্য হবে এবং কিয়ামতে তাদের সাথে হাশর হবে।

১১৪. গোঁফ বড় করে রাখা কবীরা গুনাহ। হযরত যায়েদা বিন আরকাম রাযি. হতে বর্ণিত, হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “যে ব্যক্তি স্বীয় গোঁফ ছাটবে না, সে আমাদের দলভুক্ত নয়”।

যারা বড় বড় গোঁফ রাখে এবং ছোট করাকে মর্যাদার খেলাফ মনে করে, তারা উভয় হাদীস হতে শিক্ষা গ্রহণ করুক। উল্লেখ্য, মোচ বড় বড় রাখা হিন্দুয়ানী সংস্কৃতি।

১১৫. কৃত্রিম চুল ব্যবহার করা কবীরা গুনাহ। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রাযি. হতে বর্ণিত, হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম অভিশাপ করেছেন, (নিজে বা অন্যের দ্বারা কৃত্রিম) চুল সংযোজনকারিণীর ওপর এবং নিজে বা অপরের দ্বারা শরীর খোদাই করে বা নকশা বা ছবি অংকনকারিণীর ওপর । [সূত্র: আত তারগীব ওয়াত তারহীব, খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা-১২০]

আজকাল আমাদের দেশে কিছু মহিলা ও পুরুষদেরকে দেখা যায় যে, তারা কৃত্রিম চুল ব্যবহার করে থাকে। যারা এরূপ করবে তারা উপরোক্ত হাদীসের বর্ণিত অভিশাপের অন্তর্ভুক্ত হবে।

১১৬. অভিশাপ দেয়া কবীরা গুনাহ। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রাযি. হতে বর্ণিত, হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “মু‘মিন কখনো অভিসম্পাতকারী হতে পারে না”। [সূত্র: মিশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা-৪১৩। তিরমিযী শরীফ, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-২২]

১১৭. অহেতুক কুকুর পোষা কবীরা গুনাহ। হযরত আবু তালহা রাযি. হতে বর্ণিত, হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “এমন ঘরে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করে না, যে ঘরে কুকুর বা প্রাণীর ছবি আছে”। [সূত্র: বুখারী শরীফ, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-৮৮০, মিশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা-৩৮৫।]

১১৮. ছবি তৈরি করা কবীরা গুনাহ। হযরত আবদুল্লাহ বিন মাসউদ রাযি. হতে বর্ণিত, হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহপাকের কাছে সর্বাধিক শাস্তিযোগ্য অপরাধী ব্যক্তি হলো, চিত্র অংকনকারী বা ছবি তৈরিকারী”।  [সূত্র: মুসলিম শরীফ, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-১৯৯, মিশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা-৩৮৫।]

শরী‘আত সম্মত প্রয়োজন ব্যতিরেকে হাতে ছবি অংকন করা বা ক্যামেরা দ্বারা ছবি তোলা অর্থাৎ যে কোন উপায়ে কোন প্রাণীর ছবি তৈরি করা বা করানো সম্পূর্ণ হারাম। তবে বৃক্ষ, ফলফুল, পাহাড়, মসজিদ ইত্যাদি ছবি তৈরি করা হারাম নয়।

১১৯. মাতম ও শোক প্রকাশ করা কবীরা গুনাহ। হযরত আবদুল্লাহ বিন মাসউদ রাযি. হতে বর্ণিত, হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “সেই ব্যক্তি আমাদের দলভুক্ত নয়, যে কারো মৃত্যুতে মাতম করে, মুখে আঘাত করে, জামা ছিঁড়ে ফেলে এবং জাহিলিয়্যাতের অর্থাৎ জাহিলী যুগের উক্ত প্রথাকে অনুসরণ করে এবং তা সকলেই করে বলে দোহাই দেয়”। [ সূত্র: মিশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা-১৫০। বুখারী শরীফ, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-৪৯৯]

১২০. একাধিক স্ত্রীদের মধ্যে সমতা রক্ষা না করা কবীরা গুনাহ। হযরত আবু হুরাইরা (রাযি.) হতে বর্ণিত, হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “কোন ব্যক্তির যদি একাধিক স্ত্রী থাকে, আর সে তাদের মধ্যে সমতা রক্ষা না করে, তবে কিয়ামতের দিন সে অর্ধাঙ্গ অবশ অবস্থায় হাজির হবে”।[সূত্র: মিশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা-২৭৯।]

১২১. সাহাবায়ে কিরামের সমালোচনা করা কবীরা গুনাহ। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রাযি. হতে বর্ণিত, হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম  বলেছেন, “যখন তোমরা সাহাবায়ে কিরামের সমালোচনাকারীদের দেখবে, তখন তাদেরকে বল সাহাবা ও তোমাদের মধ্যে যারা নিকৃষ্ট, তাদের ওপর আল্লাহপাকের লানত হোক”। [সূত্র: মিশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা-৫৫৪। তিরমিযী শরীফ, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-২২৫]

এ কথা স্পষ্ট যে, সাহাবায়ে কিরাম ও তাদের সমালোচকদের মধ্যে সমালোচকরাই নিকৃষ্ট। সুতরাং সমালোচকদের ওপর লানত বর্ষিত হবে। 

১২২. হক্কানী উলামায়ে কিরামের সাথে বিদ্বেষভাব পোষণ করা কবীরা গুনাহ। হযরত আবু হুরাইরা রাযি. এর বর্ণনা থেকে জানা যায়, হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহ তাআলা বলেন, “যে ব্যক্তি আমার কোন বন্ধুর সাথে শত্রুতা রাখে আমি তার সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণা করছি”।[সূত্র : মিশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা-১৯৭।]

যে সকল ব্যক্তি ইখলাসের সাথে দ্বীনের ইলম ও আমলের মধ্যে লিপ্ত তারাই আল্লাহওয়ালা ও আল্লাহর বন্ধু। আল্লাহ তা‘আলার নৈকট্যভাজন ব্যক্তিদের সঙ্গে শত্রুতা পোষণ করা চরম দুর্ভাগ্যের কথা। আল্লাহপাক স্বয়ং এই জাতীয় লোকদের সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। হযরত মাওলানা রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী রহ. লিখেছেন যে, আলেম বিদ্বেষীদের কবরে রাখার পর তাদের চেহারা কিবলার দিক থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।  [সূত্র : মা‘আরিফে আকাবির, পৃষ্ঠা-৪০১]

১২৩. বিনা দাওয়াতে আহার করা কবীরা গুনাহ। হযরত আবদুল্লাহ বিন উমর রাযি. হতে বর্ণিত, হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “কাউকে দাওয়াত করা হলে, সে যদি বিনা উজরে তা কবুল না করে, তবে সে আল্লাহ ও তার রাসূলের নাফরমানী করলো। আর যে ব্যক্তি দাওয়াত ছাড়া এসে খানায় অংশগ্রহণ করে, সে যেন চোর হয়ে ঘরে প্রবেশ করলো এবং ডাকাত হয়ে বের হয়ে গেল”।[সূত্র : মিশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা-২৭৮।]

উল্লেখ্য, বিয়ের সময় মেয়ের বাপের বাড়িতে বরের সাথে ২/৪ জন লোক খাওয়াতে অংশগ্রহণ করা দূষণীয় কিছু নয়। কিন্তু বর্তমানে প্রথা প্রচলিত হয়েছে যে, বরের সাথে বহুসংখ্যক লোকজন শর্ত করে মেয়ের বাপের বাড়িতে খাওয়ার মধ্যে শরীফ হয় এবং অনেক ক্ষেত্রে মেয়ের পিতা জমি বিক্রি করে বা জমি বন্ধক রেখে বা সুদের ওপর ঋণ গ্রহণ করে দাওয়াতের আয়োজন করে থাকে। মেয়ের বাপের বাড়িতে এ ধরনের খাবার মজলিসের কোন প্রমাণ কুরআন ও হাদীসে পাওয়া যায় না। এবং এ ধরনের অনুষ্ঠানের খানাকে বুযুর্গানে দ্বীন ডাকাতির খানা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এর থেকে পরহেজ করা জরুরী। স্মরণ রাখতে হবে যে, কোন মুসলমানের মাল তার অন্তরের পুরোপুরি সন্তুষ্টি ছাড়া অন্যের জন্য কখনো হালাল হয় না।

তওবার পদ্ধতি সংক্রান্ত বিস্তারিত জানুনঃ 
,
★তওবা ব্যাতিত তার এই আশা করাটা ঠিক হবেনা।
,
(০৩)
 "আমি মুসলমান" এই দাবিটা করা ঠিক।
,
(০৪)
যেহেতু এখান থেকে কুরআন পড়া হয়,তাই সেটি পায়ের নিচে রাখা বেয়াদবি। 
,
(০৫)
হ্যাঁ এই আশা করা ঠিক আছে,কারন ছগীরা গুনাহ নেক আমল, অযু,সালাম মুছাফাহা ইত্যাদি করার দ্বারা মাফ হয়ে যায়।  


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...