মুবাহালার ব্যখ্যা নিয়ে আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল এর একটি ফাতাওয়া উল্লেখ করছি।
প্রশ্ন: মুবাহালার শর্ত কি? কাদের সাথে মুবাহালা করা যাবে?
উত্তর:
মুহাবালা ( المباهلة) এর শাব্দিক অর্থ: পারস্পারিক অভিশাপ দেয়া।
আর পরিভাষায়:
أَن يجتمع القوم إِذا اختلفوا في شيء فيقولوا : لَعْنَةُ الله على الظالم منا
“লোকজন কোনও বিষয়ে মতবিরোধে লিপ্ত হলে তারা একত্রিত হয়ে বলবে, “আমাদের মধ্যে যারা অবিচারকারী তাদের উপর আল্লাহর লানত (অভিশাপ) বর্ষিত হোক।” [লিসানুল আরব ১১/৭১]
মুবাহালার দলিল:
আল্লাহ তাআলা বলেন,
فَمَنْ حَاجَّكَ فِيهِ مِن بَعْدِ مَا جَاءَكَ مِنَ الْعِلْمِ فَقُلْ تَعَالَوْا نَدْعُ أَبْنَاءَنَا وَأَبْنَاءَكُمْ وَنِسَاءَنَا وَنِسَاءَكُمْ وَأَنفُسَنَا وَأَنفُسَكُمْ ثُمَّ نَبْتَهِلْ فَنَجْعَل لَّعْنَتَ اللَّـهِ عَلَى الْكَاذِبِينَ
“অতঃপর তোমার নিকট সত্য সংবাদ এসে যাওয়ার পর যদি এই কাহিনী সম্পর্কে তোমার সাথে কেউ বিবাদ করে, তাহলে বল-এসো, আমরা ডেকে নেই আমাদের পুত্রদের এবং তোমাদের পুত্রদের এবং আমাদের স্ত্রীদের ও তোমাদের স্ত্রীদের এবং আমাদের নিজেদের ও তোমাদের নিজেদের আর তারপর চল আমরা সবাই মিলে প্রার্থনা করি এবং তাদের প্রতি আল্লাহর অভিসম্পাত করি যারা মিথ্যাবাদী।” (আলে ইমরান: ৬১)
ইবনুল কাইয়েম রহঃ বলেন,
” السُّنَّة فى مجادلة أهل الباطل إذا قامت عليهم حُجَّةُ اللهِ ولم يرجعوا ، بل أصرُّوا على العناد أن يدعوَهم إلى المباهلة ، وقد أمر اللهُ سبحانه بذلك رسولَه ، ولم يقل : إنَّ ذلك ليس لأُمتك مِن بعدك ” انتهى من”زاد المعاد” (3 /643)
“বাতিল পন্থীদের সাথে বিতর্কের ক্ষেত্রে সুন্নত হল, যদি তাদের উপর আল্লাহর হুজ্জত (স্পষ্ট ও অকাট্য প্রমাণ) প্রতিষ্ঠিত হয় কিন্তু তারা (তাদের বাতিল মতবাদ থেকে) ফিরে না এসে বরং গোঁড়ামির উপর স্থির থাকে তাহলে তাদেরকে মুবাহালায় আহ্বান করা। আল্লাহ তাআলা তার রাসূলকে এর নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি এ কথা বলেন নি যে, তোমার পরে তোমার উম্মতের জন্য তা করার অনুমতি নাই।” [যাদুল মাআদ ৩/৬৪৩]
শাইখ আহমদ বিন ইবরাহিম শারহু কাসিদাতি ইবনিল কাইয়েম (شرح قصيدة ابن القيم) গ্রন্থের ১ম খণ্ডের ৩৭ পৃষ্ঠায় বলেন,
“كتب بعض العلماء رسالة في شروطها المستنبطة من الكتاب والسنة والآثار وكلام الأئمة ، وحاصل كلامه فيها : أنها لا تجوز إلا في أمر مهم شرعا وقع فيه اشتباه وعناد لا يتيسر دفعه إلا بالمباهلة ، فيشترط كونها بعد إقامة الحجة ، والسعي في إزالة الشبه ، وتقديم النصح والإنذار ، وعدم نفع ذلك ، ومساس الضرورة إليها ” انتهى .”شرح قصيدة ابن القيم” (1 /37)
والله أعلم .
“কতিপয় আলেম কুরআন, সুন্নাহ, বিভিন্ন আসার (সাহাবি-তাবেঈদে মতামত ও কর্মনীতি) এবং ইমামতের বক্তব্য বিশ্লেষণ পূর্বক মুবাহালার শর্তাদি বিষয়ে গ্রন্থ রচনা করেছেন। যার সারাংশ হল:
শরিয়তের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে যদি এমন জটিল সংশয় ও গোঁড়ামি সৃষ্টি হয় যা মুবাহালা ব্যতিরেকে দূর করা সম্ভব না হয় তাহলেই কেবল মুবাহলা করা বৈধ; অন্যথায় তা জায়েজ নাই।
এ অবস্থায় মুবাহালার শর্ত হল,
১) অকাট্য দলিল উপস্থাপন করা (হুজ্জত কায়েম)।
২) সংশয় দূরভীত করার চেষ্টা করা।
৩) নসিহত করা।
৪) সাবধান করা।
এ সকল প্রচেষ্টার পরও যদি কোন কাজ না হয় এবং মুবাহালা করা জরুরি বলে মনে হয় তাহলে মুবাহালা করা যাবে।
আল্লাহু আলাম। (শেষ)
সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
১. উনি একাই করেছেন অপরপক্ষ আসেনি। তাহলে এটা মুবাহালা হয়নি বরং বদদোয়া হয়েছে।
২. যদি মুবাহালা হয় এবং তাতে যারা অংশ গ্রহণ করবেন, সবাই বিপদের সম্মুখিন হবেন।
৩. ধ্বংস হলে কি সাধারণ জনগণও ধ্বংস হয়ে যাবে এই গজবের জন্য? না সবাই ধ্বংস হবে না। বরং শুধুমাত্র তারাই ধ্বংস হবে, যারা মুবাহালাতে অংশ নিবে।
৪. যাদের ঘরে আওয়ামী সাপোর্টার আছে তারাও কি গজবের আওতায় পড়তে পারে? যদিও তারা নিরপেক্ষ থাকে? আর তাদের সাথে কি ঘরের প্রযাক্টিসিং মুসলিমরাও গজবে নিপতিত হবে? উত্তরে বলা হবে না, এমনটা হবে না।
৫. আমাদের এখন কি করণীয়? আমরা কি এভাবে বলবো " আল্লাহ যালিমদের ধ্বংস করুন এবং হকপন্থীদের রক্ষা করুন।" এভাবে দুয়া করবো? জ্বী আমরা এভাবেই দু’আ করবো।