আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
424 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (35 points)
আস-সালামু আলাইকুম
১) রুকু/সিজদাহ্ এর তাসবিহ কি তিন বার বলা ফরজ নাকি একবার বলা ফরজ?

২) অন্ধকারে সালাত আদায় করলে কি আদায় হবে? নাকি ভুল হবে?

৩) জামআতে সালাত আদায় করতে গিয়ে যদি এক/দুই রাকআত না পাই তাহলে ইমামের সালাম ফিরানোর পর বাকি সালাত নিজে নিজে আদায় করতে হয়। কিন্তু সালাম ফিরানোর কখন ওঠতে হবে? এক সালাম ফিরানোর পর নাকি দুই সালামই ফিরানোর পর?

৪) চার রাকআত বিশিষ্ট ফরজ/সুন্নাত সালাতে দ্বিতীয় রাকআত এর পর বৈঠক থেকে উঠে সূরা ফাতিহার পর ভুল করে [বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম] পড়লে কি সাহু সিজদাহ্ দিতে হবে?

৫) ফরজ সালাতের আগে/পরে যে সুন্নাতে মুয়াক্কাদা সালাত গুলো আছে, ওই সালাতের সিজদাহ্ গিয়ে কি (বাংলায়) দু'আ করা যাবে? নাকি শুধু নফল সালাতে (বাংলায়) দু'আ করা যায়?

৬) আগুন দিয়ে পুড়িয়ে কোনো জীবজন্তুকে হত্যা করা বিষয়ে ইসলামি শরিয়ত কি বলে? অনেক জীবজন্তু আছে বিষাক্ত/ আক্রমনাত্মক / হিংস্র।

1 Answer

0 votes
by (657,800 points)
edited by
জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله 
وبركاته بسم الله الرحمن الرحيم  


(০১)
নামাজে রুকু করা ফরজ,তবে রুকুতে তাসবিহ পড়া ফরজ নয়।
এটি সুন্নাত।

নামাজের মধ্যে যেসন কাজ ফরজ,তার মধ্যে অন্যতম হলোঃ রুকু করা। [সুরা হজ, আয়াত ৭৭; বুখারি ১/১৫০,   হাদিস : ১১১৩, ১১১৪, মুসলিম ১/১৭৭, হাদিস : ৪১২]

রুকুতে কমপক্ষে তিনবার রুকুর তাসবীহ  (সুবহানা রাব্বিয়াল ‘আযীম) পড়া সুন্নাত।(আবু দাউদ, হাদীস নং- ৮৮৯)

হুজায়ফা (সা.) থেকে বর্ণিত, তিনি মহানবী (সা.)-এর সঙ্গে নামাজ আদায় করেন এবং রাসুলুল্লাহ (সা.) রুকুতে এই তাসবিহ পাঠ করেন। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২৬২)

পূর্ণ হাদীসঃ

حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ حُجْرٍ، أَخْبَرَنَا عِيسَى بْنُ يُونُسَ، عَنِ ابْنِ أَبِي ذِئْبٍ، عَنْ إِسْحَاقَ بْنِ يَزِيدَ الْهُذَلِيِّ، عَنْ عَوْنِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُتْبَةَ، عَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " إِذَا رَكَعَ أَحَدُكُمْ فَقَالَ فِي رُكُوعِهِ سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيمِ ثَلاَثَ مَرَّاتٍ فَقَدْ تَمَّ رُكُوعُهُ وَذَلِكَ أَدْنَاهُ . وَإِذَا سَجَدَ فَقَالَ فِي سُجُودِهِ سُبْحَانَ رَبِّيَ الأَعْلَى ثَلاَثَ مَرَّاتٍ فَقَدْ تَمَّ سُجُودُهُ وَذَلِكَ أَدْنَاهُ " . قَالَ وَفِي الْبَابِ عَنْ حُذَيْفَةَ وَعُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ . قَالَ أَبُو عِيسَى حَدِيثُ ابْنِ مَسْعُودٍ لَيْسَ إِسْنَادُهُ بِمُتَّصِلٍ . عَوْنُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُتْبَةَ لَمْ يَلْقَ ابْنَ مَسْعُودٍ . وَالْعَمَلُ عَلَى هَذَا عِنْدَ أَهْلِ الْعِلْمِ يَسْتَحِبُّونَ أَنْ لاَ يَنْقُصَ الرَّجُلُ فِي الرُّكُوعِ وَالسُّجُودِ مِنْ ثَلاَثِ تَسْبِيحَاتٍ . وَرُوِيَ عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ الْمُبَارَكِ أَنَّهُ قَالَ أَسْتَحِبُّ لِلإِمَامِ أَنْ يُسَبِّحَ خَمْسَ تَسْبِيحَاتٍ لِكَىْ يُدْرِكَ مَنْ خَلْفَهُ ثَلاَثَ تَسْبِيحَاتٍ . وَهَكَذَا قَالَ إِسْحَاقُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ .
ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যখন তোমাদের কেউ রুকূ করবে তখন রুকূতে তিনবার “সুবাহানা রব্বিয়াল আযীম” (আমার মহান প্রভুর পবিত্রতা বর্ণনা করছি) বলবে। তাহলে তার রুকূ পূর্ণ হবে। আর এটা হল সর্বনিম্ন পরিমাণ। যখন সে সিজদা করবে তখন সিজদায় তিনবার “সুবহানা রব্বিয়াল আলা” বলবে। তাহলে তার সিজদা পূর্ণ হবে। আর এটা হল সর্বনিম্ন পরিমাণ।

(তিরমিজি ২৬১ ইবনু মাজাহ (৮৯০)



حَدَّثَنَا مَحْمُودُ بْنُ غَيْلاَنَ، حَدَّثَنَا أَبُو دَاوُدَ، قَالَ أَنْبَأَنَا شُعْبَةُ، عَنِ الأَعْمَشِ، قَالَ سَمِعْتُ سَعْدَ بْنَ عُبَيْدَةَ، يُحَدِّثُ عَنِ الْمُسْتَوْرِدِ، عَنْ صِلَةَ بْنِ زُفَرَ، عَنْ حُذَيْفَةَ، أَنَّهُ صَلَّى مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَكَانَ يَقُولُ فِي رُكُوعِهِ " سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيمِ " . وَفِي سُجُودِهِ " سُبْحَانَ رَبِّيَ الأَعْلَى " . وَمَا أَتَى عَلَى آيَةِ رَحْمَةٍ إِلاَّ وَقَفَ وَسَأَلَ وَمَا أَتَى عَلَى آيَةِ عَذَابٍ إِلاَّ وَقَفَ وَتَعَوَّذَ . قَالَ أَبُو عِيسَى وَهَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ .
হুযাইফা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে নামায আদায় করছেন। তিনি (রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)) রুকূতে ‘সুবহানা রব্বিয়াল আযীম’ এবং সিজদায় ‘সুবহানা রব্বিয়াল আ’লা’ বলতেন। যখনই কোন রাহমাত সম্পর্কিত আয়াতে আসতেন, তখনই তিনি সামনে অগ্রসর হওয়া বন্ধ রেখে ‘রাহমাত’ চাইতেন। যখনই তিনি কোন শাস্তি সম্পর্কিত আয়াতে আসতেন, তখন সামনে অগ্রসর হওয়া বন্ধ রেখে শাস্তি হতে আশ্রয় চাইতেন।

সহীহ। তিরমিজি ২৬২ মিশকাত-(৮৮১)।

(০২)

অন্ধকার স্থানে নামায পড়াতে কোন সমস্যা নেই।

عَنْ عَائِشَةَ زَوْجِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، أَنَّهَا قَالَتْ: «كُنْتُ أَنَامُ بَيْنَ يَدَيْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَرِجْلاَيَ، فِي قِبْلَتِهِ فَإِذَا سَجَدَ غَمَزَنِي، فَقَبَضْتُ رِجْلَيَّ، فَإِذَا قَامَ بَسَطْتُهُمَا»، قَالَتْ: وَالبُيُوتُ يَوْمَئِذٍ لَيْسَ فِيهَا مَصَابِيحُ

হযরত আয়শা রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূল সাঃ এর সামনে ঘুমিয়ে থাকতাম। তখন আমার দু’পা থাকতো তার সামনের দিকে। যখন তিনি সেজদা দিতে চাইতেন, তখন আমাকে [আলতু] খোঁচা দিতেন, আমি তখন পা গুটিয়ে নিতাম। আবার যখন তিনি দাঁড়িয়ে পড়তেন, তখন পা বিছাতাম। আয়শা রাঃ বলেন, সে সময় আমাদের ঘরে কোন বাতি ছিল না। [বুখারী, হাদীস নং-৩৮২]

আয়েশা রাঃ  থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: এক রাতে আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বিছানায় পাচ্ছিলাম না। তখন আমি আমার হাত দ্বারা তাঁকে খুঁজতে লাগলাম। তখন আমার হাত তার পদযুগলের উপর পতিত হল। তখন তাঁর পা খাড়া ছিল আর তিনি ছিলেন সিজদারত। তিনি বলছিলেন:

أَعُوذُ بِرِضَاكَ مِنْ سَخَطِكَ، وَبِمُعَافَاتِكَ مِنْ عُقُوبَتِكَ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْكَ لَا أُحْصِي ثَنَاءً عَلَيْكَ أَنْتَ كَمَا أَثْنَيْتَ عَلَى نَفْسِكَ

“(হে আল্লাহ!) আমি আশ্রয় গ্রহণ করছি তোমার ক্রোধ হতে তোমার সন্তুষ্টির, তোমার শাস্তি থেকে তোমার ক্ষমার আর আমি তোমার আশ্রয় গ্রহণ করছি তোমা হতে। তোমার প্রশংসা করে আমি শেষ করতে পারব না, তুমি নিজে ঐরূপ, যেরূপ তুমি নিজের প্রশংসা করেছ। ” (সুনান নাসাঈ, হা/১৬৯, সহীহ)
,
অন্ধকারের মধ্যে নামাজ পড়া সহিহ আছে। সিজদার জায়গার দিকে নজর রাখা সুন্নাত। কিন্তু তার জন্য ঐ জায়গা দেখতে পাওয়া বা দেখতে থাকা জরুরি নয়।
শামী ১:৪৭৭পৃঃ
,
(০৩)
উভয় সালাম ফিরানোর পর উঠা উত্তম।

সঠিক নিয়ম হল, ইমাম সাহেবের উভয় দিকে সালাম ফিরানোর পর মাসবুক তার অবশিষ্ট নামায আদায়ের জন্য দাঁড়াবে। ইমামের প্রথম সালামের পরই দাঁড়িয়ে যাওয়া ঠিক নয়। কারণ ইমাম সাহু সিজদা দিলে মাসবুকেরও ইমামের সাথে সিজদা করা আবশ্যক। আর ইমামের সাহু সিজদা নেই এটা প্রায় নিশ্চিত হবে দ্বিতীয় সালামের পর। তাই দ্বিতীয় সালামের পরই মাসবুক দাঁড়াবে।

(মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ৩১৫৫; আলবাহরুর রায়েক ১/৩৭৮; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/১০৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৯১; আদ্দুররুল মুখতার ১/৫৯৭)

ইমামের দুই দিকে সালাম ফেরানোর পরেই মাসবুকের দাঁড়ানো উচিত। এর আগে দাঁড়ানো অনুত্তম।
খিজানাতুল আকমাল : ১/৫৮;
বাদায়িউস সানায়ে : ১/৫৬৩; হালবাতুল মুজাল্লি : ২/৪৬৪;
হাশিয়াতুত তাহতাবি আলাল মারাকি, পৃষ্ঠা : ২৫২
,
(০৪)
নামাজে চাই তাহা ফরজ নামাজ হোক বা নফল নামাজ হোক বাংলায় দোয়া করার বিধান নেই।
,
তবে কিছু ইসলামী স্কলারগন এই মত দিয়েছেন।
তাই তাদের মতানুসারী গন সেই মত অনুযায়ী আমল করতে পারেন।
,
নামাজে বাংলায় দোয়া,দুনিয়াবি দোয়া সংক্রান্ত বিস্তারিত জানুনঃ 
,
(০৫)
আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলা জায়েজ নেই। 

আগুন দিয়ে শাস্তি দেয়া এটা আল্লাহ তাআলা নির্ধারিত শাস্তি। আর আল্লাহ তাআলার নির্ধারিত শাস্তি কোন বান্দার প্রয়োগ করা জায়েজ নয়। 

হাদীস শরীফে এসেছেঃ
 
عَنْ عِكْرِمَةَ أَنَّ عَلِيًّا عَلَيْهِ السَّلاَمُ أَحْرَقَ نَاسًا ارْتَدُّوا عَنِ الإِسْلاَمِ فَبَلَغَ ذَلِكَ ابْنَ عَبَّاسٍ فَقَالَ لَمْ أَكُنْ لأَحْرِقَهُمْ بِالنَّارِ إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- قَالَ « لاَ تُعَذِّبُوا بِعَذَابِ اللَّهِ »

হযরত ইকরিমা রাঃ থেকে বর্ণিত। হযরত আলী রাঃ একদল মুরতাদকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিলেন। এ সংবাদ ইবনে আব্বাস রাঃ এর কাছে পৌঁছলে তিনি বলেনঃ আমি হলে তাদের আগুন দিয়ে পুড়াতাম না। কারণ, রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ “তোমরা আল্লাহর শাস্তি দিয়ে কাউকে শাস্তি দিও না। 
{সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪৩৫৩, সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-১৬৬৩৫, সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-১৪৫৮, সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-৯০, সুনানে নাসায়ী কুবরা, হাদীস নং-৩৫২৩, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৫৬০৬, সহীহ বুখারী, হাদীস নং-২৮৫৪, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২৫৫২}


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

+1 vote
1 answer 434 views
0 votes
1 answer 510 views
0 votes
1 answer 327 views
...