আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
234 views
in যাকাত ও সদকাহ (Zakat and Charity) by (6 points)
আসসালামু আলাইকুম।
বলা হয় সঠিকভাবে যাকাত আদায় করলে সবাই নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়ে যেত, পৃথিবীতে যাকাত নেওয়ার মত লোক খুঁজে পাওয়া যেত না। থিউরিটিক্যালি ধরে নিলাম, সঠিকভাবে মানুষ যাকাত দেওয়া শুরু করল। ফলে সবাই নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়ে গেল। এরপর মুসলমানরা কীভাবে যাকাত দেবে? এটা তো অমুসলিমদের দেওয়াও যাবে না, আবার যেহেতু ধরে নিয়েছি, সব মুসলিমই নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক! এদিকে যাকাত যেহেতু ফরজ বিধান কাজেই এটা তো রহিত হয়ে যাওয়ারও সুযোগ নেই। তাহলে মানুষ কীভাবে যাকাত আদায় করবে? প্রয়োজনে ধরে নিলাম যে সমস্ত অমুসলিমই ইসলাম গ্রহণ করল এবং তারাও নেসাব সম্পত্তির মালিক। অর্থাৎ পৃথিবীতে একটা গরীব লোকও নেই, তাহলে যাকাতের বিধান কী? তখন কি এই ফরজ বিধানটি রহিত হয়ে যাবে?
অথবা এভাবে যদি ভাবি, পৃথিবীতে তখনও কিছু গরীব লোক আছে বটে, কিন্তু ধনী লোকই সংখ্যায় বেশি। ধনীর তুলনায় গরীবের সংখ্যা খুবই কম, এবং ধনীদের সম্পদ এত বেশি যে একেকজনের লক্ষ-কোটি টাকা করে যাকাত আসে। তারা গরীবদেরকে যাকাত দিতে গিয়ে দেখা গেল, কোনো গরীবই একজন ধনীরও যাকাতের মাল পুরোপুরি গ্রহণ করতে পারে না, তার আগেই সে নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়ে যায়। যেমনঃ যদি নেসাব সম্পদের মালিক হতে পাঁচ লক্ষ টাকা প্রয়োজন হয় আর প্রতি ধনীর যাকাত কমপক্ষে ১০ লক্ষ টাকা করে বের হয়, তাহলে একজন গরীবকে ৫ ;লক্ষ টাকা দিলেই সে নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়ে যায়, আর যেহেতু কাউকে এই পরিমাণ যাকাত দেওয়া যায় না যাতে সে নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়ে যায় সেহেতু ৫ লক্ষ টাকার কম যাকাত দিতে হবে। তাহলে যাকাতের বাকি অনাদায়ী টাকাগুলো (প্রতিজনের কমপক্ষে ৫ লক্ষাধিক টাকা) কোন খাতে ব্যয় করতে হবে?

1 Answer

0 votes
by (597,330 points)

ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-

শরীয়তে দু'টি জিনিষ রয়েছে,
একটি হল, রুখসত এবং অন্যটি হল আযিমত।
রূখসত হল,কোনো কিছুর অনুমোদন দেয়া।বৈধতার ঘোষণা দেয়া।

আর রুখসত হল, বৈধ ফাতাওয়া আসার পরও সতর্কতামূলক নিজেকে বাছিয়ে রাখা।
আদীব হুজুর জায়েয-নাজায়েয এর আলোচনা না করে সতর্কতার বিষয়টি সামনে নিয়ে এসেছেন।

আপনার পিতার বেতন বিনা দ্বিধায় হালাল হবে।
আপনাদের যদি বেশ কোনো প্রয়োজন না থাকে তাবে সতর্কতামূলক বেছে থাকতে পারেন।এবং এটাই সবচেয়ে উত্তম।
কেননা সন্দেহ থেকে বেছে থাকা তাকওয়ার সর্বোচ্ছ স্থর।

হাদীস শরীেফে  রুখসতের মুকাবেলায় আযিমতকে অগ্রাধিকার দেয়ার কথা বর্ণিত হয়েছে,
ওয়াবিসা ইবনে মা'বাদ রাযি থেকে বর্ণিত,
ﻭﻋﻦ ﻭﺍﺑﺼﺔَ ﺑﻦِ ﻣَﻌْﺒِﺪٍ  ﻗَﺎﻝَ : ﺃَﺗَﻴْﺖُ ﺭﺳﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪ ﷺ ﻓَﻘَﺎﻝَ : « ﺟِﺌْﺖَ ﺗﺴﺄَﻝُ ﻋﻦِ ﺍﻟﺒِﺮِّ؟ » ﻗُﻠْﺖُ : ﻧَﻌَﻢْ، ﻓَﻘَﺎﻝَ : « ﺍﺳْﺘَﻔْﺖِ ﻗَﻠْﺒَﻚَ، ﺍﻟﺒِﺮُّ : ﻣَﺎ ﺍﻃْﻤَﺄَﻧَّﺖْ ﺇِﻟَﻴْﻪِ ﺍﻟﻨَّﻔْﺲُ، ﻭﺍﻃْﻤَﺄَﻥَّ ﺇِﻟَﻴْﻪِ ﺍﻟﻘَﻠْﺐُ، ﻭﺍﻹِﺛﻢُ : ﻣَﺎ ﺣﺎﻙَ ﻓﻲ ﺍﻟﻨَّﻔْﺲِ، ﻭﺗَﺮَﺩَّﺩَ ﻓِﻲ ﺍﻟﺼَّﺪْﺭِ، ﻭﺇِﻥْ ﺃَﻓْﺘَﺎﻙَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ ﻭَﺃَﻓْﺘَﻮﻙَ » ﺣﺪﻳﺚٌ ﺣﺴﻦٌ، ﺭﻭﺍﻩُ ﺃﺣﻤﺪُ ﻭﺍﻟﺪَّﺍﺭﻣِﻲُّ ﻓﻲ " ﻣُﺴْﻨَﺪَﻳْﻬِﻤﺎ ."
তিনি বলেন,আমি রাসূলুল্লাহ সাঃ এর নিকট গেলাম।রাসূলুল্লাহ সাঃ আমাকে বললেন,তুমি কি নেকীর কাজ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করার জন্য এসেছ?আমি বললাম জ্বী হ্যা, ইয়া রাসূলাল্লাহ!
তখন তিনি আমাকে বললেন,তুমি তোমার অন্তরের নিকট ফাতওয়া জিজ্ঞাসা করো।নেকি হল সেটা যার উপর অন্তর প্রশান্তিবোধ করে,এবং যে জিনিষের উপর অন্তর শান্ত থাকে।আর গোনাহ হল সেটা,যা অন্তরে অশান্তি সৃষ্টি করে নাড়িয়ে দেয়,এবং অন্তরকে দ্বিধান্বিত করে ফেলে।যদিও উক্ত কাজ সম্পর্কে মুফতিগণ বৈধতার ফাতাওয়া প্রদাণ করুক না কেন।(মুসনাদে আহমদ-১৭৫৪৫)


হাসান ইবনে আলী রাযি থেকে বর্ণিত রয়েছে।
ﻭﻋﻦ ﺍﻟﺤَﺴَﻦِ ﺑﻦ ﻋَﻠﻲٍّ ﺭﺿﻲَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋﻨﻬﻤﺎ ﻗَﺎﻝَ : ﺣَﻔِﻈْﺖُ ﻣِﻦْ ﺭَﺳُﻮﻝ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﷺ : « ﺩَﻉْ ﻣَﺎ ﻳَﺮِﻳﺒُﻚَ ﺇِﻟﻰ ﻣَﺎ ﻻ ﻳﺮِﻳﺒُﻚ » ﺭﻭﺍﻩُ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ ﻭﻗﺎﻝ : ﺣﺪﻳﺚٌ ﺣﺴﻦٌ ﺻﺤﻴﺢٌ 
তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাঃ কে বলতে শুনেছি।তিনি বলেন,সন্দেহ যুক্ত জিনিষকে পরিহার করে সন্দেহমুক্ত জিনিষকে গ্রহণ করো।(সুনানু তিরমিযি-২৪৪২)

নু'মান ইবনে বশির বলেন,আমি রাসূলুল্লাহ সাঃ কে বলতে শুনেছি-
عن عامر، قال: سمعت النعمان بن بشير، يقول: سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: "الحلال بين، والحرام بين، وبينهما مشبهات لا يعلمها كثير من الناس، فمن اتقى المشبهات استبرأ لدينه وعرضه، ومن وقع في الشبهات: كراع يرعى حول الحمى، يوشك أن يواقعه، ألا وإن لكل ملك حمى، ألا إن حمى الله في أرضه محارمه، ألا وإن في الجسد مضغة: إذا صلحت صلح الجسد كله، وإذا فسدت فسد الجسد كله، ألا وهي القلب "
রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেন,(কোনো জিনিষ)হালাল (হওয়া)পরিস্কার।(এবং কোনো জিনিষ) হারাম(হওয়া) ও পরিস্কার। হ্যা এ দুয়ের মধ্যে কিছু বিধান রয়েছে সাদৃশ্যপূর্ণ। যার সম্পর্কে অধিকাংশ মানুষই জানেনা।যে ব্যক্তি সন্দেহপূর্ণ জিনিষ থেকে বেঁছে থাকল, সে যেন তার দ্বীন এবং ইজ্জতকে হেফাজত করে নিল। আর যে ব্যক্তি সন্দেহপূর্ণ জিনিষে পতিত হল, সে যেন হারামে পতিত হল। যেমন রাখাল ক্ষেতের দেয়াল ঘেষে পশু চড়ালো।এখানে সম্ভাবনা রয়েছে যে, পশু ক্ষেতে নেমে যাবে। 
জেনে রাখ! প্রত্যেক বাদশারই একটি সীমান্তরেখা রয়েছে।এবং আল্লাহ যমীনে তার সীমারেখা হল,তার হারাম বিধি-বিধান।জেনে রাখ! শরীরে একটি মাংসপিণ্ড রয়েছে। যখন সেই মাংসপিণ্ড ভাল থাকে তখন সারা শরীর-ই ভাল থাকে।আর যখন সেই মাংসপিণ্ড নষ্ট হয়ে যায়,তখন সমস্ত শরীরই নষ্ট হয়ে যায়। সেই বস্তু হল,ক্বলব বা অন্তর।(সহীহ বুখারী-৫২)

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
্পৃথিবীতে কখনো গরীবের অভাব দেখা দিবে না। গরীবের অভাব দেখা দিলে পৃথিবী অচল হয়ে যাবে। কিয়ামতের র্পূর্বে সবাই ধনী হয়ে যাবে। তখন মানুষে যাকাতের মাল নিয়ে ঘুরবে দেয়ার মত কাউকে পাবেনা। যদি সবাই যাকাত দিত, তবে পৃথিবীর সবার জরুরত র্পূর্ণ হয়ে যেত। তবে সবাই যে নেসাব পরিমাণ মালের মালিক হয়ে যাবে, তা কিন্তু কখনো গবেষণায় দেখিনি। এসমস্ত কারণে ইসলাম সমাজতন্ত্রবাদকে সমর্থন দেয়িনি। 




(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...