আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
7 views
in সালাত(Prayer) by (9 points)
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লহি ওয়া বারকাতুহ।
আমাদের দেশে সালাতে রাকআত সংখ্যা ফজর,যোহর,আসর,মাগরিব,এশার সলাতে যথাক্রমে ৪,১২,৮,৭ এবং বিতিরসহ এশায় ১৫ রাকআত। রাকআত সংখ্যা নিয়ে আমি ইন্টারনেটে কিছু লিখা পড়েছিলাম যে রসুলুল্লাহ (সা) এর সময় তিনি ফরজ,সুন্নতে মুয়াক্কাদা, সুন্নতে গায়রে মুয়াক্কাদা আদায় করেছেন।আমরা যেরকম যোহর,মাগরিব এশায় ২ রাকআত করে নফল সালাত আদায় করি সেরকম বাধ্যবাধকতা সেসময়  ছিল না। তাহলে আমাদের সালাতে দুই রাকআত নফল সালাত কেন বাড়ানো হয়েছে? এর কি কোন কারন আছে? আমাদের নবীজি(সা) এর সময়ে সালাত কত রাকআত করে ছিল? তিনি কত রাকআত করে সালাত আয়াত করেছেন ৫ ওয়াক্তে? এখন তো সালাতে রাকআত সংখ্যা বেশি এজন্য অনেকেই সালাত আয়ায় করে না। বিশেষ করে বাহিরে কাজ করা মানুষরা। যেমন লাঞ্চে ১ ঘন্টা সময় দেয়া হলে ২০-২৫ মিনিট যোহর সালাত আদায়ে চলে যায় বাকি খাওয়া দাওয়া করে একটু বিশ্রাম নেয়ার জন্য তখন আর বেশি সময় থাকে না। এজন্য অনেকে সালাতই আদায় করে না।আমরা যখন কাউকে সালাতের দাওয়াত দিবো তখন শুরুতে কত রাকআত করে পড়তে বলবো যাতে তার সালাতে অন্তত আগ্রহটা আসে, সে যাতে সালাতকে এক্সট্রা প্রেশার হিসেবে না নেয়।

1 Answer

0 votes
by (704,100 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের রাকাআত সংখ্যাঃ-

দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা ফরজ। ফরজের পাশাপাশি ওয়াজিব এবং সুন্নাতে মুয়াক্কাদা নামাজ রয়েছে। 

সালাতুল ফজর
প্রথমে দুই রাকাআত সুন্নাতে মুয়াক্কাদা এবং পরে দুই রাকাআত ফরজ।

সালাতুল জোহর
যুহরের নামাজ প্রথমে চার রাকাআত সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। তারপর চার রাকাআত ফরজ এবং তারপর দুই রাকাআত সুন্নাতে মুয়াক্কাদা ।

সালাতুল আসর
চার রাকাআত ফরজ। 

সালাতুল মাগরিব
মাগরিবে প্রথম তিন রাকাআত ফরজ। তারপর দুই রাকাআত সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। 

সালাতুল ইশা
চার রাকাত ফরজ। তারপর দুই রাকাআত সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। অতপর তিন রাকাআত বিতর। বিতর পড়া ওয়াজিব। 

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ক্ষেত্রে সবচেয়ে জরুরি হলো ফরজ নামাজ গুলি আদায় করা। ফরজ নামাজের পরপরই ওয়াজিব নামাজের আবশ্যকীয়তার বিষয় আসে।

সেটি ইশার ওয়াক্তে তিন রাকাত বিতর, এটি ওয়াজিব নামাজ।

এরপর আসর নামাজ ব্যতীত প্রতি নামাজের সাথে সুন্নতে মুয়াক্কাদা নামাজ রয়েছে।

শরীয়তে এটিও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সুন্নাতে মুয়াক্কাদা বিনা ওযরে ছেড়ে দেওয়ার কোন বৈধতা নেই।

ওযর বশত কোনোক্ষেত্রর ছেড়ে দিলে গুনাহ হনেনা, তবে সেটিকে অভ্যাসে পরিণত করার কোন সুযোগ নেই।

প্রথমে যারা নামাজ আদায় করছে, প্রাথমিক অবস্থায় তাদেরকে ফরজ নামাজের দাওয়াত দেওয়া এরপরে পর্যায়ক্রমে সুন্নাতে মুয়াক্কাদা নামাজের প্রতি তাদেরকে দাওয়াত দিয়ে সুন্নাতে মুয়াক্কাদা নামাজের প্রতি অভ্যস্ত করার পরামর্শ দিতে পারেন।

সুন্নতে মুআক্কাদা বলা হয়, যে আমলকে রাসূল সাঃ ইবাদত হিসেবে পাবন্দীর সাথে করেছেন। কখনো ওজর ছাড়া ছেড়ে দিয়েছেন বা নিজেতো ছাড়েননি কিন্তু যে ছেড়ে দিয়েছে তাকে ভর্ৎসনা করেননি। এরকম আমলকে সুন্নতে মুআক্কাদা বলা হয়। {আততাআরিফাতুল ফিক্বহিয়্যাহ-৩২৮, আলমুজিজ ফি উসুলিল ফিক্বহ-৪৩৯-৪০}

সুন্নাতে মুয়াক্কাদা সম্পর্কে হাদিস শরিফে এসেছে,

عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ: مَنْ ثَابَرَ عَلَى اثْنَتَيْ عَشْرَةَ رَكْعَةً بَنَى اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ لَهُ بَيْتًا فِي الْجَنَّةِ، أَرْبَعًا قَبْلَ الظُّهْرِ وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَ الظُّهْرِ، وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَ الْمَغْرِبِ، وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَ الْعِشَاءِ، وَرَكْعَتَيْنِ قَبْلَ الْفَجْرِ

আয়েশা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি দিবা-রাত্র বার রাকাত (সুন্নাতে মুআক্কাদা) আদায়ে অভ্যস্ত হয়ে যায় আল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর বানিয়ে রাখেন। চার রাকাত জোহরের ফরয নামাযের পূর্বে এবং দু’রাকাত জোহরের ফরয নামাজের পরে, দু’রাকাত মাগরিবের ফরয নামাজের পরে, দু’রাকআত ইশার ফরয নামাজের পরে এবং দু’রাকআত ফজরের ফরয নামাজের পূর্বে। (সুনানে নাসায়ী ১৭৯৫)

مَنْ صَلَّى اثْنَتَىْ عَشْرَةَ رَكْعَةً فِي يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ بُنِيَ لَهُ بِهِنَّ بَيْتٌ فِي الْجَنَّةِ ” . قَالَتْ أُمُّ حَبِيبَةَ فَمَا تَرَكْتُهُنَّ مُنْذُ سَمِعْتُهُنَّ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم . وَقَالَ عَنْبَسَةُ فَمَا تَرَكْتُهُنَّ مُنْذُ سَمِعْتُهُنَّ مِنْ أُمِّ حَبِيبَةَ . وَقَالَ عَمْرُو بْنُ أَوْسٍ مَا تَرَكْتُهُنَّ مُنْذُ سَمِعْتُهُنَّ مِنْ عَنْبَسَةَ . وَقَالَ النُّعْمَانُ بْنُ سَالِمٍ مَا تَرَكْتُهُنَّ مُنْذُ سَمِعْتُهُنَّ مِنْ عَمْرِو بْنِ أَوْسٍ

দিন ও রাতে যে ব্যক্তি মোট ১২ রাক‘আত (সুন্নাত) সলাত আদায় করে তার বিনিময়ে জান্নাতে ঐ ব্যক্তির জন্য একটি ঘর নির্মাণ করা হয়। উম্মু হাবীবাহ্ বলেছেন: আমি যে সময়ে রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর কাছে এ সলাত সম্পর্কে শুনেছি তখন থেকে আর কখনো তা আদায় করা পরিত্যাগ করিনি। ‘আম্বাসাহ ইবনু আবূ সুফ্ইয়ান বলেছেন: এ সলাত সম্পর্কে যখন আমি উম্মু হাবীবার কাছে শুনেছি; তখন থেকে আর ঐ সলাত গুলো কখনো পরিত্যাগ করিনি। ‘আম্র ইবনু আওস বলেছেনঃ যে সময়ে এ সলাত সম্পর্কে আমি ‘আম্বাসাহ্ ইবনু আবূ সুফ্ইয়ান- এর নিকট থেকে শুনেছি সে সময় থেকে আর কখনো তা পরিত্যাগ করিনি। নু’মান ইবনু সালিম বলেছেন: যে সময় আমি এ হাদীসটি ‘আম্র ইবনু আওস- এর নিকট থেকে শুনেছি তখন থেকে কখনো আর তা পরিত্যাগ করিনি। [সহিহ মুসলিম অধ্যায়: ফরযের পূর্বে ও পরে নিয়মিত সুন্নাতের ফাযীলাত এবং তার সংখ্যার বিবরণ। হা/১৫৭৯]

ইবন নুজাইম রহ. বলেন,

 والذي يظهر من كلام أهل المذهب أن الإثم منوط بترك الواجب أو السنة المؤكدة على الصحيح ؛ لتصريحهم بأن من ترك سنن الصلوات الخمس قيل لا يأثم ، والصحيح أنه يأثم .. . . فالإثم لتارك السنة المؤكدة أخف من الإثم لتارك الواجب

মাযহাবের ইমামদের কথা থেকে স্পষ্ট হয় যে, ওয়াজিব অথবা সুন্নতে মুআক্কাদা ত্যাগ করলে বিশুদ্ধ মতানুযায়ী গুনাহ হয়। কেননা, তারা বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের (আগে-পরের) সুন্নতগুলো ছেড়ে দিবে, কেউ বলেন, গুনাহ হবে না। বিশদ্ধ কথা হল, গুনাহ হবে।’ তবে সুন্নতে মুআক্কাদা ত্যাগকারীর গুনাহ ওয়াজিব ত্যাগকারীর চাইতে কম হবে। (আল বাহরুর রায়েক ১/৩১৯)

বিস্তারিত জানুনঃ- 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...