আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
30 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (68 points)
১।সৃষ্টির শেষ কোথায় আরশ নাকি লাওহে মাহফুজ?
২।আরশ সমস্ত সৃষ্টির ছাদ সরূপ হয় লাওহে মাহফুজ কি সৃষ্টি নয় তা কি আরশের উপরে আছে?


৩।সাত আসমান সাত জমিনের উপরে আরশ তার উপরে আল্লাহ পাক আছেন কিভাবে আছেন আল্লাহ ভালো জানেন আল্লাহ পাক তো দিক থেকে পবিত্র আরশ তো উপরের দিকে। এ বিষয়ে আমরা কি আকিদা রাখবো

1 Answer

0 votes
by (705,510 points)
জবাবঃ-
بسم الله الرحمن الرحيم

(০১)
আল্লাহ তায়ালা তিনি শাশ্বত, আর তাঁর ছাড়া বাকি সব কিছু সৃষ্টি (مخلوق)।

এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হলো:
আকাশসমূহ ও পৃথিবী
আরশ (العرش)
কুরসি (الكرسي)
লাওহে মাহফুয (اللوح المحفوظ)
কলম (القلم)
সবই আল্লাহর সৃষ্টি।

আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ- 

اللَّهُ خَالِقُ كُلِّ شَيْءٍ
“আল্লাহ সব কিছুর সৃষ্টিকর্তা।”
(সূরা যুমার ৩৯:৬২)


★আরশ (العرش) — সৃষ্টির সর্বোচ্চ স্তর

কুরআন ও হাদীস অনুযায়ী,
আরশ হচ্ছে সর্ববৃহৎ ও সর্বোচ্চ সৃষ্টি, যা সমস্ত সৃষ্টি জগতের উপর অবস্থিত।

মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ- 

 الرَّحْمَٰنُ عَلَى الْعَرْشِ اسْتَوَى
“পরম দয়ালু আল্লাহ আরশের উপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন।”
(সূরা ত্বাহা ২০:৫)

وَهُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ
“আর তিনিই মহান আরশের প্রতিপালক।”
(সূরা আত্ তাওবা ৯:১২৯)

ইবনে কাসীর (রহ.) বলেন:
“আরশ হচ্ছে সমস্ত সৃষ্টির উপরে অবস্থিত সবচেয়ে বড় মাখলুক।”
(তাফসীর ইবনু কাসীর, সূরা ত্বাহা ৫ আয়াতের ব্যাখ্যা)



(০২)
লাওহে মাহফুয হচ্ছে সেই সংরক্ষিত পাটিকা যেখানে আল্লাহ তায়ালা সমগ্র সৃষ্টির তাকদির বা ভাগ্য লিখে রেখেছেন।
এটিও একটি সৃষ্টি, কারণ এটি আল্লাহর বানানো এক “লওহ” (পাটিকা)।

মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ- 

بَلْ هُوَ قُرْآنٌ مَجِيدٌ * فِي لَوْحٍ مَحْفُوظٍ
“বরং এটি মহিমান্বিত কুরআন, সংরক্ষিত পাটিকায় (লাওহে মাহফুযে) রয়েছে।”
(সূরা আল-বুরুজ ৮৫:২১–২২)

ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন:

 “লাওহে মাহফুয হলো সেই পাটিকা, যা আসমানের নীচে নয় বরং উপরের স্তরে আছে, কিন্তু তা আরশের নীচে।”
(তাফসীর তাবারী, সূরা আল-বুরুজ ৮৫:২২ এর তাফসীর)

ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম (রহ.) বলেন:

 “লাওহে মাহফুয হলো আরশের নিচে অবস্থিত। আরশ হচ্ছে সৃষ্টির ছাদ।” 
( আস-সাওয়াইকুল মুরসালাহ, খণ্ড ৪, পৃ. ১৩০৮)

★সুতরাং সৃষ্টির শেষ সীমা হলো “আরশ”।
এটি সমস্ত সৃষ্টির উপরে অবস্থিত, একে “সৃষ্টির ছাদ” বলা হয়।

লাওহে মাহফুয — এটি সৃষ্টি, এবং আরশের নিচে অবস্থিত।

(০৩)
মহান আল্লাহ তায়ালা সুরা আ'রাফের ৫৪ নং আয়াতে ইরশাদ করেনঃ

اِنَّ رَبَّکُمُ اللّٰهُ الَّذِیۡ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضَ فِیۡ سِتَّۃِ اَیَّامٍ ثُمَّ اسۡتَوٰی عَلَی الۡعَرۡشِ ۟ یُغۡشِی الَّیۡلَ النَّهَارَ یَطۡلُبُهٗ حَثِیۡثًا ۙ وَّ الشَّمۡسَ وَ الۡقَمَرَ وَ النُّجُوۡمَ مُسَخَّرٰتٍۭ بِاَمۡرِهٖ ؕ اَلَا لَهُ الۡخَلۡقُ وَ الۡاَمۡرُ ؕ تَبٰرَکَ اللّٰهُ رَبُّ الۡعٰلَمِیۡنَ ﴿۵۴﴾

নিশ্চয় তোমাদের রব আসমানসমূহ ও যমীন ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর আরশে উঠেছেন। তিনি রাত দ্বারা দিনকে ঢেকে দেন। প্রত্যেকটি একে অপরকে দ্রুত অনুসরণ করে। আর (সৃষ্টি করেছেন) সূর্য, চাঁদ ও তারকারাজী, যা তাঁর নির্দেশে নিয়োজিত। জেনে রাখ, সৃষ্টি ও নির্দেশ তাঁরই। আল্লাহ মহান, যিনি সকল সৃষ্টির রব।

ইমাম মালেক রাহিমাহুল্লাহকে কেউ استواء সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি কিছুক্ষণ চিন্তা করে বললেনঃ استواء শব্দের অর্থ তো জানাই আছে; কিন্তু এর স্বরূপ ও অবস্থা মানব বুদ্ধি সম্যক বুঝতে অক্ষম। এতে বিশ্বাস স্থাপন করা ওয়াজিব। এর অবস্থা ও স্বরূপ জিজ্ঞেস করা বিদ'আত। কেননা, সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এ ধরনের প্রশ্ন কখনো করেননি। কারণ, তারা এর অর্থ বুঝতেন।

শুধুমাত্র আল্লাহ্ তা'আলা এ গুণে কিভাবে গুণান্বিত হলেন, তা শুধু মানুষের অজানা। এটি আল্লাহর একটি গুণ। আল্লাহ তা'আলা যে রকম, তার গুণও সে রকম। সুফিয়ান সওরী, ইমাম আওযায়ী, লাইস ইবনে সাদ, সুফিয়ান ইবনে উয়াইনা, আব্দুল্লাহ ইবনে মোবারক রাহিমাহুমুল্লাহ প্রমুখ বলেছেনঃ যেসব আয়াত আল্লাহ্ তা'আলার সত্তা ও গুণাবলী সম্পর্কে বর্ণিত রয়েছে, সেগুলোর প্রতি বিশ্বাস রাখতে হবে যে, এগুলো হক এবং এগুলোর অর্থও স্পষ্ট। তবে গুণান্বিত হওয়ার ধরণের ব্যাপারে কোন প্রশ্ন করা যাবে না। বরং যেভাবে আছে সেভাবে রেখে কোনরূপ অপব্যাখ্যা ও সাদৃশ্য ছাড়াই বিশ্বাস স্থাপন করা উচিত। [এ ব্যাপারে বিস্তারিত দেখুন, ইমাম যাহাবী রচিত আল-উলু]

ইমাম আবু হানিফা রহ.-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, আল্লাহ কোথায়? তিনি বললেন :

كان الله تعالى ولا مكان، كان قبل أن يخلق الخلق، كان ولم يكن أين ولا خلق ولا شىء، وهو خالق كل شىء

যখন কোনো স্থানই ছিল না, তখনো আল্লাহ ছিলেন। সৃষ্টির অস্তিত্বের পূর্বে তিনি ছিলেন। তিনি তখনো ছিলেন, যখন ‘কোথায়’ বলার মতো জায়গা ছিল না, কোনো সৃষ্টি ছিল না এবং কোনো বস্তুই ছিল না। তিনিই সবকিছুর স্রষ্টা।
আল-ফিকহুল আবসাত : ৫৭

 ইমাম আবু হানিফা রহ. আরও বলেন :
نقر بأن الله على العرش استوى من غير أن يكون له حاجة إليه واستقرار عليه وهو الحافظ للعرش وغير العرش، فلو كان محتاجا لما قدر على إيجاد العالم وتدبيره كالمخلوق ولو كان محتاجا إلى الجلوس والقرار فقبل خلق العرش أين كان الله تعالى! تعالى الله عن ذلك علوا كبيرا.

আমরা স্বীকার করি যে, আল্লাহ তাআলা আরশের ওপর ইসতিওয়া করেছেন। তিনি আরশের প্রতি কোনো ধরনের প্রয়োজন ও তার ওপর স্থিতিগ্রহণ ব্যতিরেকেই তার ওপর ইসতিওয়া করেছেন। তিনি আরশ ও আরশ ছাড়া অন্য সব সৃষ্টির সংরক্ষণকারী কোনো ধরনের মুখাপেক্ষিতা ব্যতিরেকে। তিনি যদি মুখাপেক্ষী হতেন, তাহলে সৃষ্টিজীবের মতো মহাবিশ্ব সৃষ্টি ও পরিচালনা করতে সক্ষম হতেন না। তিনি যদি আরশের ওপর সমাসীন হওয়া এবং স্থির হওয়ার দিকে মুখাপেক্ষী হতেন, তাহলে আরশ সৃষ্টির পূর্বে তিনি কোথায় ছিলেন? আল্লাহ এসব বিষয় থেকে সম্পূর্ণ ঊর্ধ্বে।
আল-ওসিয়্যাহ : ২

ইমাম ইবনু আবদুস সালাম রহ. ইমাম আবু হানিফা থেকে উদ্ধৃত করেন :

من قال لا أعرف الله تعالى في السماء هو أم في الأرض كفر، لأن هذا القول يوهم أن للحق مكانا ومن توهم أن للحق مكانا فهو مشبه

যে ব্যক্তি বলবে, আমি জানি না, আল্লাহ তাআলা আকাশে আছেন নাকি পৃথিবীতে, সে কাফির হয়ে যাবে। কারণ, এই কথাটি এ সংশয় সৃষ্টি করে যে, আল্লাহ তাআলার জন্য কোনো স্থান রয়েছে। যে ব্যক্তি এ ধারণা রাখবে যে, আল্লাহ জন্য কোনো স্থান রয়েছে, সে একজন মুশাব্বিহা।
শারহুল ফিকহিল আকবার, মোল্লা আলি কারি।

اسْتِوَآءٌ এর অর্থ হল, উপরে ওঠা, সমাসীন হওয়া। সালাফগণ কোন ধরণ নির্ণয় ও সাদৃশ্য স্থাপন ছাড়াই এই অর্থই করেছেন। অর্থাৎ, মহান আল্লাহ আরশের উপর সমাসীন ও অধিষ্ঠিত। তবে কিভাবে এবং কোন্ ধরনের তা আমরা না বর্ণনা করতে পারব, আর না কারো সাথে তার সাদৃশ্য স্থাপন করতে পারব। নাঈম ইবনে হাম্মাদের উক্তি হল, ‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহকে তাঁর সৃষ্টির সাথে তুলনা করল, সে কুফরী করল এবং যে ব্যক্তি আল্লাহর নিজের ব্যাপারে বর্ণিত কোন কথাকে অস্বীকার করল, সেও কুফরী করল।’’ 

অতএব আল্লাহ সম্পর্কে স্বয়ং আল্লাহর অথবা তাঁর রসূলের বর্ণিত কথাকে বর্ণনা করা সাদৃশ্য স্থাপন করা নয়। কাজেই আল্লাহ সম্পর্কে যে কথাগুলো কুরআন ও হাদীসের আলোকে প্রমাণিত, কোন অপব্যাখ্যা, ধরণ-গঠন নির্ণয় এবং সাদৃশ্য স্থাপন করা ছাড়াই তার উপর বিশ্বাস স্থাপন করা জরুরী। (ইবনে কাসীর)
,
আরো জানুনঃ 

★আল্লাহ তায়ালা কোথায় আছেন,এ সম্পর্কে প্রশ্ন, ভাবনা নিষেধ।  

হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
تفكَّروا في كلِّ شيءٍ , ولا تتفكَّروا في اللهِ                                                                                         
তোমরা সব কিছু নিয়ে গবেষণা কর। কিন্তু আল্লাহর সত্ত্বা নিয়ে গবেষণা করো না।
ইমাম যুরকানী রহঃ বলেন, হাদীসটি হাসান লিগাইরিহী। [মুখতাসারুল মাকাসিদ, বর্ণনা নং-৩১৮]

কুরআনে কারীমে ইরশাদ হচ্ছেঃ

هُوَ الَّذِي أَنزَلَ عَلَيْكَ الْكِتَابَ مِنْهُ آيَاتٌ مُّحْكَمَاتٌ هُنَّ أُمُّ الْكِتَابِ وَأُخَرُ مُتَشَابِهَاتٌ ۖ فَأَمَّا الَّذِينَ فِي قُلُوبِهِمْ زَيْغٌ فَيَتَّبِعُونَ مَا تَشَابَهَ مِنْهُ ابْتِغَاءَ الْفِتْنَةِ وَابْتِغَاءَ تَأْوِيلِهِ ۗ وَمَا يَعْلَمُ تَأْوِيلَهُ إِلَّا اللَّهُ ۗ وَالرَّاسِخُونَ فِي الْعِلْمِ يَقُولُونَ آمَنَّا بِهِ كُلٌّ مِّنْ عِندِ رَبِّنَا ۗ وَمَا يَذَّكَّرُ إِلَّا أُولُو الْأَلْبَابِ [٣:٧]

তিনিই আপনার প্রতি কিতাব নাযিল করেছেন। তাতে কিছু আয়াত রয়েছে সুস্পষ্ট,সেগুলোই কিতাবের আসল অংশ। আর অন্যগুলো রূপক। সুতরাং যাদের অন্তরে কুটিলতা রয়েছে,তারা অনুসরণ করে ফিৎনা বিস্তার এবং অপব্যাখ্যার উদ্দেশে তন্মধ্যেকার রূপকগুলোর। আর সেগুলোর ব্যাখ্যা আল্লাহ ব্যতীত কেউ জানে না। আর যারা জ্ঞানে সুগভীর,তারা বলেনঃ আমরা এর প্রতি ঈমান এনেছি। এই সবই আমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে। আর বোধশক্তি সম্পন্নেরা ছাড়া অপর কেউ শিক্ষা গ্রহণ করে না। {সূরা আলে ইমরান-৭}

আরো জানুনঃ 

আমরা বিশ্বাস রাখবো যে আল্লাহ বেষ্টনকারী, তথা আল্লাহ ইলম ও কুদরত হিসেবে সর্বত্র তিনি আমাদের মাঝে বিরাজমান আছেন। তাহলে এমন আকিদা বিশ্বাস রাখা যাবে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...