আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
1,418 views
in সালাত(Prayer) by (53 points)
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ,

মুহতারাম,যদি বাড়ির অতি নিকটে পান্জেগানা মসজিদ ও দূরে জামে মসজিদ থাকে, তাহলে কোথায় নামাজ আদায় করা উচিত? উল্লেখ্য উক্ত পান্জেগানা মসজিদ আশেপাশের বাড়িসমূহের মুসল্লিদের জন্যই নির্মিত হয়েছে।

জামে মসজিদে নামাজ আদায় করার কি কোন বিশেষ ফযীলত রয়েছে?

1 Answer

0 votes
by (589,170 points)
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
আলহামদুলিল্লাহ!
মসজিদ সমূহের মধ্যে সবচেয়ে ফযিলতপূর্ণ মসজিদ হলো মসজিদে হারাম।কেননা এই মসজিদ সকল মসজিদ সমূহের কিবলা এবং মূল। যে ব্যক্তি মসজিদে হারামে এক ওয়াক্ত নামায পড়বে সে এক লাখ নামাযের সওয়াব পাবে। এরপর হলো মসজিদে নববীর দরজা।এরপর হলো মসজিদে আক্বসা। এই মসজিদ দ্বয়ে এক ওয়াক্ত নামায পঞ্চাশ হাজার নামাযের সমতূল্য। এরপর স্থান হলো শহরের জামে মসজিদ এর। এতে এক ওয়াক্ত নামায পাঁচশত নামাযের সওয়াবের সমতূল্য।অতপর মহল্লার পাঞ্জেগানা মসজিদ।তাতে এক ওয়াক্ত নামায পচিশ নামাযের সওয়াবের সমতূল্য। এ ব্যখ্যা হযরত আনাস রাযি থেকে বর্ণিত রয়েছে(ইবনে মা'জা র সূত্রে মিশকাতে বর্ণিত রয়েছে)

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে,
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ " صَلاَةُ الرَّجُلِ فِي بَيْتِهِ بِصَلاَةٍ وَصَلاَتُهُ فِي مَسْجِدِ الْقَبَائِلِ بِخَمْسٍ وَعِشْرِينَ صَلاَةً وَصَلاَتُهُ فِي الْمَسْجِدِ الَّذِي يُجَمَّعُ فِيهِ بِخَمْسِمِائَةِ صَلاَةٍ وَصَلاَةٌ فِي الْمَسْجِدِ الأَقْصَى بِخَمْسِينَ أَلْفِ صَلاَةٍ وَصَلاَةٌ فِي مَسْجِدِي بِخَمْسِينَ أَلْفِ صَلاَةٍ وَصَلاَةٌ فِي الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ بِمِائَةِ أَلْفِ صَلاَةٍ " 
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন ব্যক্তির নিজ ঘরে এক ওয়াক্ত সালাত (নামায/নামাজ) পড়ার সওয়াব এক ওয়াক্ত সালাতেরই সমান, তার পাড়ার বা গোত্রের মসজিদে তার এক সালাত পঁচিশ সালাতের সমতুল্য, জুমুআহ মসজিদে তার এক সালাত পাঁচ শত সালাতের সমান। মাসজিদুল আকসায় তার এক সালাত পঞ্চাশ হাজার সালাতের সমতুল্য, আমার মসজিদে - তথা মসজিদে নববীতে- তার এক সালাত পঞ্চাশ হাজার সালাতের সমতুল্য এবং মাসজিদুল হারামে তার এক সালাত এক লাখ সালাতের সমতুল্য।(সুনানে ইবনে মাজা-১৪১৩)

বিঃদ্রঃ
তাহক্বীক্ব আলবানী: যঈফ। তাখরীজ আলবানী: মিশকাত ৭৫২, তালীকুর রগীব ১৩৬। উক্ত হাদিসের রাবী আবুল খাত্তাব খাত্তাব (হাম্মাদ) আদ-দিমাশকী সম্পর্কে ইমাম যাহাবী বলেন, তিনি প্রসিদ্ধ নয়। ২. রুকায়য আবু আবদুল্লাহ আল হানী সম্পর্কে ইবনু হিব্বান বলেন, তার হাদিস দ্বারা দলীল গ্রহণযোগ্য নয়।

তবে মহল্লাবাসীর জন্য জামে মসজিদের চেয়ে মহল্লার পাঞ্জেগানা মসজিদে নামায পড়া অনেক অনেক উত্তম।সাহাবায়ে কেরাম তাবেঈন এবং সালাফে সালেহীন এর আ'মলও এটার উপর প্রমাণ করে।যে,তারা সকল নিজ নিজ মহল্লার পাঞ্জেগানা মসজিদেই নামায পড়তেন।মহল্লার মসজিদ ছেড়ে তারা জামে মসজিদে কখনো যেতেন না।

مؤذن مسجد لا يحضر مسجده أحد  قالوا هو يؤذن ويقيم ويصلي وحده وذاك أحب من أن يصلي في مسجد آخر ۔(ردالمحتارعلی الدرالمختار ،کتاب الصلوۃ ،ج1ص333)
যদি কোনো মসজিদে কেউ উপস্থিত না হয়, তাহলে মুওয়াজ্জিন সাহেব আজান ইকামত দিয়ে একাকি নামায পড়ে নিবেন। তারপরও অন্য মসজিদে যাওযার কোনো প্রয়োজনিতা নাই । (রদ্দুল মুহতার-১/৩৩৩)

এত্থেকে বুঝা যায় যে,জামে মসজিদ সম্পর্কিত যে সওয়াবের কথা হাদীসে বর্ণিত রয়েছে,সেটার সম্পর্ক মূলত জুম্মার সাথে।অর্থাৎ জুম্মা মহল্লার মসজিদে না পড়ে শহরের জামে মসজিদে পড়া অনেক সওয়াব।হ্যা জনসাধারণের জন্য পাঞ্জেগানা মসজিদের নামাযেও পাঁচশত নামাযের সওয়াব পাওয়া যাবে।
আল-আশবাহ ওয়ান-নাযাঈর(পৃষ্টা-১৯৫) নামক কিতাবে বর্ণিত রয়েছে যে,জনসাধারণের জন্য মহল্লার পাঞ্জেগানা মসজিদই সওয়াবের দিক দিয়ে জামে মসজিদের সমতূল্য।তবে যদি জামে মসজিদের ইমাম আলেম হন,আর পাঞ্জেগানা মসজিদের ইমাম আলেম না হন, তাহলে এমতাবস্থায় সর্বদা জামে মসজিদে নামায পড়াই উত্তম।জুম্মায় এবং অন্যান্য নামাযেও।
(জাওয়াহিরুল ফিকহ-৩/১০১)

প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
উপরোক্ত ব্যখ্যা এ হিসেবে করা হয়েছে যে,যেখানে পূর্ববর্তী সময়ে মহল্লার মসজিদ সমূহে জুম্মা হত না।কেননা তখন মহল্লার মসজিদ সমূহে ৪০জন মুসাল্লি হত না।কিন্তু এখন যেহেতু প্রায় মসজিদে ৪০জন মুসাল্লি হয়ে যায় সে হিসেবে ইমাম আবু-ইউসুফ রাহি এর মাযহাবকে অনুসরণ করে মহল্লার মসজিদ কে বড় গ্রামের মসজিদ ধরে নিয়ে তাতে জুম্মা আদায় করা হয়।এবং উলামায়ে কেরাম তাতে সম্মতি দিয়ে থাকেন।
(বিঃদ্রঃ হানাফি মাযহাব অনুযায়ী শহর বা বড় গ্রাম ছাড়া জুম্মা ওয়াজিব হয় না, এটা তারাফইন হযরাতদ্বয়ের মাযহাব।তবে ইমাম আবু ইউসুফরাহ ছোট্ট গ্রামে ৪০জন মুসাল্লির শর্তে জুম্মাকে ওয়াজিব করে থাকেন)

তাই এক গ্রামে কখনো দুই তিনটি জুম্মার মসজিদ রয়েছে,সেখানে জুম্মাকে পড়ে নেয়া হয়।এবং কখনো কখনো কোনো গ্রামে জুম্মার একাধিক মসজিদ থাকার পরও সেখানে দুয়েকটা পাঞ্জেগানা মসজিদও থাকে।
তো প্রশ্নের উত্তর এভাবে দেয়া যায় যে,পাঞ্জেগানা মসজিদের আশপাশে যারা রয়েছেন,তারা পাঞ্জেগানা মসজিদেই নামায পড়বেন।এতেও তারা জামে মসজিদের সওয়াব তথা পাঁচশত নামাযের সওয়াব পাবেন। তবে তারা জুম্মাকে জামে মসজিদে গিয়ে আদায় করবেন। এবং সম্ভব হলে শহরের জামে মসজিদে গিয়ে জুম্মার নামায আদায় করবেন।এতেই তাদের জন্য রয়েছে বেশী সওয়াব।

سنن ابن ماجہ: (رقم الحدیث: 1406)
حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيل بْنُ أَسَدٍ، حَدَّثَنَا زَكَرِيَّا بْنُ عَدِيٍّ، أَنْبَأَنَا عُبَيْدُ اللَّهِ بْنُ عَمْرٍو، عَنْ عَبْدِ الْكَرِيمِ، عَنْ عَطَاءٍ، عَنْ جَابِرٍ، أَنّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: صَلَاةٌ فِي مَسْجِدِي أَفْضَلُ مِنْ أَلْفِ صَلَاةٍ فِيمَا سِوَاهُ، إِلَّا الْمَسْجِدَ الْحَرَامَ، وَصَلَاةٌ فِي الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ أَفْضَلُ مِنْ مِائَةِ أَلْفِ صَلَاةٍ فِيمَا سِوَاهُ

و فیہ ایضا: (رقم الحدیث: 1413)
حَدَّثَنَا هِشَامُ بْنُ عَمَّارٍ، حَدَّثَنَا أَبُو الْخَطَّابِ الدِّمَشْقِيُّ، حَدَّثَنَا رُزَيْقٌ أَبُو عَبْدِ اللَّهِ الْأَلْهَانِيُّ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: صَلَاةُ الرَّجُلِ فِي بَيْتِهِ بِصَلَاةٍ، وَصَلَاتُهُ فِي مَسْجِدِ الْقَبَائِلِ بِخَمْسٍ وَعِشْرِينَ صَلَاةً، وَصَلَاتُهُ فِي الْمَسْجِدِ الَّذِي يُجَمَّعُ فِيهِ بِخَمْسِ مِائَةِ صَلَاةٍ، وَصَلَاتُهُ فِي الْمَسْجِدِ الْأَقْصَى بِخَمْسِينَ أَلْفِ صَلَاةٍ، وَصَلَاتُهُ فِي مَسْجِدِي بِخَمْسِينَ أَلْفِ صَلَاةٍ، وَصَلَاةٌ فِي الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ بِمِائَةِ أَلْفِ صَلَاةٍ .

فتح الملھم: (باب فضل الصلاۃ بمسجدي مكۃ و المدينۃ، 301/6، ط: مکتبہ دار العلوم کراتشی)
لاحتمال ان حديث الاقل قبل حديث الاكثر ثم تفضل الله بالاکثر شيئا بعد شيء ويحتمل ان يكون تفاوت الاعداد لتفاوت الاحوال۔


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...