আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
33 views
ago in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (9 points)
আসসালামুআলাইকুম, আমি বিবাহিত এবং পরিপূর্ণ পর্দা মেনে চলার চেষ্টা করি। আমার  শশুড় বাড়িতে আমার স্বামী, শাশুড়ী এবং অবিবাহিত ভাসুর থাকেন। আমার ভাসুর সবসময়ই বাসায় থাকেন। এতে আমার পর্দা মেনে চলতে ও গরমে প্রচন্ড কষ্ট হয়। এভাবে চলার পরও অনেকবার ই আমি বেপর্দা অবস্থায় তার সামনে পড়ে যাই। কয়েকবার এমন হয়েছে যে আমি একেবারে কোনো ওড়না ছাড়া, চুল খোলা অবস্থায়ও ওনার সামনে পড়ে গিয়েছি। এটা নিয়ে আমি সবসময়ই আতংকে থাকি, আমার অনেক খারাপ লাগে। আমার শশুড় বাড়ির পরিবার আমার পর্দা সম্পর্কে সচেতন না। অনেকদিন ধরে আমার স্বামীকে আলাদা বাসা নেওয়ার কথা বলার পর তিনি রাজী হন। কিন্তু রাজী হওয়ার পরও তিনি বাসা দেখছি, খুজছি বলতে বলতে প্রায় ১বছর হয়ে যাচ্ছে।  আমার পর্দা নষ্ট হচ্ছে বিধায় তিনি বাসা না পাওয়া পর্যন্ত আমাকে আমার বাবার বাড়িতে থাকতে বলেন। কিন্তু আমি বাবার বাড়িতে কয়েকদিন থাকলেই তিনি আমার সাথে ঠিকভাবে কথা বলেন না, সারাদিন মন খারাপ করে থাকেন। আমি সেখানে থাকি সেটা তিনি মন থেকে চান না। কিন্তু তিনি আমার পর্দা নষ্ট হওয়ার গুনাহ ও নিজের উপর নিতে চান না। তিনি চান তিনি আমাকে বলবে বাবার বাড়ি থাকতে তবে আমি যেন নিজের থেকে ওখানে না থাকি। তিনি বলেন আমার যদি সত্যিকার অর্থেই ওনার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ও ভালোবাসা থাকে তাহলে আমি কষ্ট করেই ওনার বাসায় থাকব, তিনি আমার কম্ফোর্টজোনে আমার থেকে সেবা পেতে চান না, তিনি চান আমি কষ্ট সহ্য করে সব কিছু করি। কিন্তু ওখানে থাকাও আমার জন্য কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। আবার আমার স্বামীর সাথে সম্পর্কও খারাপ হয়ে যাচ্ছে।
১) যেহেতু পর্দা এবং স্বামীর সন্তুষ্টি দুইটিই ফরজ, এখন এই পরিস্থিতিতে আমার কি করা উচিত? আমি বাবার বাড়িতে থাকলে কি স্বামীর অসন্তুষ্টির  জন্য আমার গুনাহ হবে যদিও উনি নিজেই বলেছেন আমাকে ওখানে থাকতে?
২) আমার স্বামী অনেক বিষয়েই আমার উপর ছেড়ে দেন। নিজে দায় নিতে চান না। তিনি সবার কাছে ভালো থাকতে চান। এরপর কিছু হলে আমাকে দোষ দেন যে আমার সিদ্ধান্ত এর জন্য এটা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে আমার উপর অসন্তুষ্ট হন। এক্ষেত্রে তিনি অসন্তুষ্ট হলে কি আমার গুনাহ হবে? এইরকম পরিস্থিতি সামাল দিয়ে কিভাবে চলব? আমি অনেক বেশি চালাক চতুর মেয়ে না। উস্তায,  আমাকে কিছু নসিহত করলে উপকৃত হতাম।

1 Answer

0 votes
ago by (668,220 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

হাদীস শরীফে এসেছে-

عَنْ سُلَيْمَانَ بْنِ عَمْرِو بْنِ الأَحْوَصِ، قَالَ حَدَّثَنِي أَبِي أَنَّهُ، شَهِدَ حَجَّةَ الْوَدَاعِ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَحَمِدَ اللَّهَ وَأَثْنَى عَلَيْهِ وَذَكَّرَ وَوَعَظَ فَذَكَرَ فِي الْحَدِيثِ قِصَّةً فَقَالَ " أَلاَ وَاسْتَوْصُوا بِالنِّسَاءِ خَيْرًا… أَلاَ وَحَقُّهُنَّ عَلَيْكُمْ أَنْ تُحْسِنُوا إِلَيْهِنَّ فِي كِسْوَتِهِنَّ وَطَعَامِهِنَّ " .

সুলাইমান ইবনু আমর ইবনুল আহওয়াস (রহঃ) হতে তার পিতার সূত্র থেকে বর্ণিতঃ
বিদায় হজ্জের সময় তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে ছিলেন। তিনি আল্লাহ তা'আলার প্রশংসা ও গুণগান করলেন এবং ওয়াজ-নাসীহাত করলেন। এ হাদীসের মধ্যে বর্ণনাকারী একটি ঘটনা বর্ণনা করে বলেন, তিনি (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ স্ত্রীদের সাথে ভালো আচরণের উপদেশ নাও। ... জেনে রাখ! তোমাদের প্রতি তাদের অধিকার এই যে, তোমরা তাদের উত্তম পোশাক-পরিচ্ছদ ও ভরণপোষণের ব্যবস্থা করবে। (সুনানে তিরমিযী ১১৬৩)

ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়াতে রয়েছে-

تجب السكني لها عليه في بيت خال

মর্থার্থ: স্ত্রীর জন্য আলাদা ঘরের ব্যবস্থা করা স্বামীর উপর আবশ্যক। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়াত, ১/৬০৪)

قَوْلُهُ خَالٍ عَنْ أَهْلِهِ إلَخْ) ؛ لِأَنَّهَا تَتَضَرَّرُ بِمُشَارَكَةِ غَيْرِهَا فِيهِ؛؛ لِأَنَّهَا لَا تَأْمَنُ عَلَى مَتَاعِهَا وَيَمْنَعُهَاذَلِكَ مِنْ الْمُعَاشَرَةِ مَعَ زَوْجِهَا وَمِنْ الِاسْتِمْتَاعِ إلَّا أَنْ تَخْتَارَ ذَلِكَ؛ لِأَنَّهَا رَضِيَتْ بِانْتِقَاصِ حَقِّهَا هِدَايَةٌ )

স্ত্রীকে এমন একটি বাসস্থান দান করা স্বামীর জন্য ওয়াজিব,যা স্বামীর পরিবার থেকে খালি থাকবে,কেননা সে অন্যর উপস্থিতির ধরুণ কষ্ট উপভোগ করবে,এবং তার মাল সামানা পুরোপুরি সংরক্ষিত থাকবে না।তৃতীয় কারো উপস্থিতি স্বামী-স্ত্রীর পারিবারিক জীবন ও একান্ত সময় অতিবাহিত করতে ব্যাঘাত সৃষ্টি করবে। এ জন্য একটি পৃথক বাসস্থান স্ত্রীর মৌলিক অধিকার।তবে যদি সে তার নিজ অধিকার বিসর্জন দিতে রাজি হয় যায় তাহলে তার জন্য অনুমিত রয়েছে (যদি এক্ষেত্রে গোনাহের কোনো সম্ভাবনা না থাকে)

এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন-https://www.ifatwa.info/430

ইসলামের দিক-নিদের্শনা হচ্ছে বিবাহের পরে স্বামীর প্রথম কতর্ব্য হলো স্ত্রীর জন্য এমন একটি বাসস্থানের ব্যবস্থা করা যেখানে স্ত্রী মানুষের দৃষ্টি থেকে নিরাপদ থাকবে। কেননা পর্দা ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ফরজ বিধান। আর এই বিধান পালন করার জন্য স্বামীর কতর্ব্য স্ত্রীকে সাহায্য করা। সেই সাথে অন্যান্য সকল কষ্ট থেকে স্ত্রীর আরামের ব্যবস্থা করতে হবে। তবে স্ত্রীকে শ্বশুর ও শাশুড়ির সাথেই থাকতে হবে এমন বাধ্যও করা যাবে না। কেননা এমন কোন অধিকার স্বামীর নেই। তবে এই ক্ষেত্রে স্বামী স্ত্রী উভয়কে সামাজিক অবস্থার উপর বিবেচনা করেও কিছু কাজ করতে হবে।

যদি কোন স্বামী তার স্ত্রীকে স্বামীর পরিবারের সাথে অথবা অন্য আত্মীয়ের সাথে থাকার কথা বলে কিন্তু স্ত্রী কারো সাথে থাকার কথা রাজি না হয় তাহলে স্ত্রীকে আলাদা রাখার ব্যবস্থা করা স্বামীর কতর্ব্য। কেননা স্ত্রীর সকল কিছু রক্ষা করা ও নিরাপদে বসবাস করার দায়িত্ব স্বামীর।

আরো জানুনঃ 

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
(০১)
প্রশ্নের বিবরণ মতে আপনার স্বামী বাসা নেয়ার আগ পর্যন্ত আপনি নিজ বাবার বাসায় থাকলে এক্ষেত্রে আপনার গুনাহ হবেনা।

উক্ত পরিস্থিতিতে আপনার প্রতি পরামর্শ থাকবে আপনি মুরুব্বীদের মাধ্যমে আপনার স্বামীর উপর চাপ প্রয়োগ করবেন, যাতে দ্রুতই তিনি আলাদা বাসা নেন।

আলাদা বাসা নেওয়ার আগ পর্যন্ত আপনি স্বামীর বাসায় যদি থাকেন, সেক্ষেত্রে ঘরের দরজায় পর্দা লাগাবেন।
ঘরের ভিতরে যেন কোনো গায়রে মাহরাম না আসে, সে ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করবেন এবং আপনি ঘরের বাহিরে আসলেই হিজাব পরিহিত অবস্থায় আসবেন, যাতে করে গায়রে কেউ  আপনাকে দেখতে না পারে।
পর্দা বিঘ্নিত না হয়।

(০২)
এক্ষেত্রে তিনি অসন্তুষ্ট হলে প্রশ্নের বিবরন মতে আপনার গুনাহ হবেনা।

এইরকম পরিস্থিতিতে আপনি শরীয়তের দিক দেখে সিদ্ধান্ত নিবেন।

শরীয়তের দৃষ্টিতে যে কাজ বৈধ আপনি সেই কাজ করবেন। শরীয়তের দৃষ্টিতে যে কাজ অবৈধ বা যেটা শরীয়ত কোনভাবেই মানতে চায় না, সে কাজ আপনি করবেন না।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...