এই লেখাটা আমি এক জায়গায় পেয়েছি, এই লেখাটা অনুযায়ী মিলাদুন্নবী পালন করা যাবে কি? এই বিষয় আমি বিস্তারিত জানতে চাই,
রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখে মুহাম্মদ সাঃ জন্মগ্রহণ করেছেন,একে উপলক্ষ করে কিছু মানুষ আনন্দ প্রকাশ করে।
প্রশ্ন হল: তিনি এই দিনে ইন্তেকাল করেছেন, হিসাব অনুযায়ী অবশ্যই এই দিনে শোক পালন করা দরকার কিন্তু তারা (সুন্নিরা) এই দিনে কোন শোক পালন করে না?
উত্তর:
২) নবীর (সা.) জীবিত থাকা ও মৃত্যুর কল্যাণ
আরবি ইবারত ও বাংলা অনুবাদ:
حياتي خير لكم تحدثون ويحدث لكم فإذا أنا مت كانت وفاتي خيرًا لكم تعرض على أعمالكم فإذا رأيت خيرًا حمدت الله وإن رأيت شرًّا استغفرت لكم
বাংলা অর্থ: “আমার জীবন তোমাদের জন্য কল্যাণ—তোমরা আমার সম্পর্কে বর্ণনা করবে আমাকে সম্পর্কে শুনবে। আর যখন আমি মৃত (হবে), তখন আমার মৃত্যু তোমাদের জন্য কল্যাণকর: তোমাদের আমলগুলো আমার কাছে উপস্থাপিত হবে; যদি আমি সেখানে কল্য (ভালো) দেখি, আল্লাহকে ধন্যবাদ জানাব, আর যদি মন্দ কিছু দেখি, তাহলে তোমাদের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইব।”
এই বক্তব্যটি নির্দেশ করে, নবীর (সা.) জীবিত থাকা ও মৃত্যুর পরেও উম্মাহর কাজে তাঁর ভূমিকা অব্যাহত থাকে।
➡️ রেফারেন্স:
মুসনাদ আল-বায্‌যার, হাদিস নং 6811
মুজামুল আওসাত (তাবরানি), হাদিস নং 4939
হায়সামি, মাজমাউয্‌যাওয়ায়েদ (৯/২৪) বলেছেন: رجاله رجال الصحيح অর্থাৎ রাবিগণ সহিহ হাদিসের রাবিদের অন্তর্ভুক্ত।
ব্যাখ্যা: উপরিউক্ত হাদিস থেকে জানা গেল নবী করীম সাঃ এর জীবিত থাকাটা আমাদের জন্য যেভাবে কল্যাণকর ঠিক তেমনি তার মৃত্যু বরণ করাটাও আমাদের জন্য কল্যাণকর।
★★যদি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম এর ইন্তেকাল আমাদের জন্য কল্যাণকর না হতো,তাহলে অবশ্যই আমরা সুখ পালন করতাম।
✓কল্যাণকর বিষয় নিয়ে শোক পালন করা পাগলামি ছাড়া আর কিছু নয়।
প্রশ্ন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম তার জন্মদিন পালন করেছেন কিনা?
অবশ্যই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জন্মদিন পালন করেছেন এ সম্বন্ধে নিম্নে হাদিস বর্ণনা করা হলো:
★★হাদিসের মূলপাঠ
عَنْ أَبِي قَتَادَةَ الأَنْصَارِيِّ رضي الله عنه أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ سُئِلَ عَنْ صَوْمِ يَوْمِ الاِثْنَيْنِ، فَقَالَ:
«فِيهِ وُلِدْتُ، وَفِيهِ أُنْزِلَ عَلَيَّ»
অনুবাদ
আবু কাতাদা আনসারী (রাযি.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে সোমবারে রোযা রাখার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন—
“এই দিনে আমি জন্মগ্রহণ করেছি এবং এই দিনেই আমার উপর কুরআন নাযিল করা হয়েছে।”
---
রেফারেন্স
সহিহ মুসলিম, কিতাবুস্ সিয়াম, হাদিস নং 1162
মুসনাদ আহমাদ, হাদিস নং 22574
অর্থাৎ, সোমবারের রোযা রাখার মূল কারণ—
1. এ দিনে নবী করীম ﷺ জন্মগ্রহণ করেছেন।
2. এ দিনেই প্রথম ওহী (কুরআন) নাযিল হয়েছে।
বিশ্লেষণ: উপরোক্তার হাদিস থেকে এ বিষয়ে অবগত হওয়া গেল যে,রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম তার জন্মদিন পালন করেছেন রোজা রাখার মাধ্যমে. তাহলে
★ একটি প্রশ্ন উঠে যে,আপনারা জুলুস (রেলি)করার মাধ্যমে মিলাদুন্নবী কেন পালন করেন?
উত্তর: এ সম্পর্কে আল্লাহতালা কুরআনে বলেন: قل بفضل الله وبرحمته فبذلك فليفرح هو خير مما يجمعون সূরা ইউনুস ৫৭ নং আয়াত।
অনুবাদ: আপনি বলুন!আল্লাহর রহমত এবং তারই দয়া লাভ করার পর তাদের উচিত তারা যেন আনন্দ প্রকাশ করে। সূরা ইউনুস আয়াত নং ৫৭.
উপরোক্ত আয়াত থেকে জানা গেল যে, রহমত লাভ করার পর আনন্দ প্রকাশ করা আল্লাহ তাআলার আদেশ, কেননা আল্লাহর পক্ষ থেকে সবচেয়ে বড় রহমত হল:হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। এ সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলা কুরআনে পাক এরশাদ করেন: وما ارسلناك الا رحمه للعالمين
তাহলে স্পষ্ট বোঝা গেল যে, আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম হচ্ছে আল্লাহর পক্ষ থেকে সবচেয়ে বড় নেয়ামত এবং রহমত।
প্রশ্ন: হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম আল্লাহতালার পক্ষ থেকে রহমত এজন্য আপনারা মিলাদুন্নবী পালন করেন, এতটুকু ক্লিয়ার হলাম, কিন্তু মাহফিল কিংবা রেলি কেন করেন?
উত্তর: ঘরে বসে খুশি উদযাপন করা যায় না. কিংবা নেয়ামতের কথা গোপন রেখে খুশি উদযাপন করার বিধান ইসলামে নেই! খুশির কথা সবাইকে জানাতে হয়। তাই আমরা রেলি করার মাধ্যমে মুসলিম উম্মাকে খুশির বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিতে চাই।
দলিল: নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মক্কা শরীফ থেকে হিজরত করে মদিনায় গিয়েছিলেন তখন সেখানকার জনগণ নবীজির আগমনে খুশি হয়ে সারিবদ্ধ হয়ে পাঠ করেছিলেন: طلع البدر علينا من ثنيات وداعي وجب الشكر علينا ما دعا لله داعي.
১.নেয়ামতের শুকরিয়া করা
কুরআন
সূরা ইবরাহীম 14:7
لَئِن شَكَرْتُمْ لَأَزِيدَنَّكُمْ وَلَئِن كَفَرْتُمْ إِنَّ عَذَابِي لَشَدِيدٌ
“তোমরা যদি শুকরিয়া কর, আমি অবশ্যই তোমাদের আরও দেব। আর যদি অকৃতজ্ঞ হও, তবে নিশ্চয়ই আমার শাস্তি কঠিন।”
সূরা লুকমান 31:12
وَمَن يَشْكُرْ فَإِنَّمَا يَشْكُرُ لِنَفْسِهِ
“যে শুকরিয়া করে, সে আসলে নিজের জন্যই শুকরিয়া করে।”
আরও বলেছেন:
“মুমিনের অবস্থা আশ্চর্যজনক। সব অবস্থাই তার জন্য কল্যাণকর। নেয়ামত পেলে শুকরিয়া করে—এটা তার জন্য কল্যাণকর; কষ্ট পেলে সবর করে—এটাও তার জন্য কল্যাণকর।”
(সহিহ মুসলিম, হাদিস: 2999)
--- ২. নেয়ামত চলে গেলে সবর করা ও শোক না করা।
কুরআন
সূরা হাদীদ 57:23
لِكَيْلَا تَأْسَوْا عَلَى مَا فَاتَكُمْ وَلَا تَفْرَحُوا بِمَا آتَاكُمْ
“যাতে তোমরা হারানো জিনিস নিয়ে দুঃখিত না হও এবং যা আল্লাহ দিয়েছেন তা নিয়ে অহংকার না কর।”
সূরা বাকারা 2:155-156
وَبَشِّرِ الصَّابِرِينَ • الَّذِينَ إِذَا أَصَابَتْهُم مُّصِيبَةٌ قَالُوا إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ
“সবরকারীদের সুসংবাদ দাও। যারা বিপদে পড়লে বলে: নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর এবং আমরা তাঁর কাছেই প্রত্যাবর্তনকারী।”
✅ ফলাফল:
নেয়ামত এলে শুকরিয়া করা ফরজের নিকটবর্তী এক ওয়াজিব আমল।
নেয়ামত চলে গেলে বিলাপ/হাহাকার করা হারাম; বরং সবর করা ও আল্লাহর কাছে সওয়াব আশা করা ঈমানের নিদর্শন।
এতগুলো দলিল দেওয়ার পরও যদি আপনার কোন ডাউট থাকে,সেক্ষেত্রে আল্লাহর কাছে আপনার নিজের জন্য হেদায়েতের দোয়া করবেন।