আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
11 views
in সালাত(Prayer) by (4 points)
১. নামাজে তাকবীর তাহরীমা 'আল্লহু আকবার' বলার সময় মহিলারা যদি নিজের কানে শুনতে না পায় তাহলে নামাজ হবেনা, পূর্বের সব নামাজ কাজা করতে হবে। এই কথা কি সঠিক?

২. মহিলারা কতটুকু শব্দে সুরা কিরাত পড়বে? নিজের কানে শুনতে হবে নাকি জিহ্বা নাড়িয়ে স্পষ্ট উচ্চারণ করে পড়লেই হবে?

৩. সেজদায় ঘুমিয়ে পড়লে এবং কয়টি সেজদা হল মনে না থাকলে কী করণীয় ?

1 Answer

0 votes
by (664,560 points)
জবাবঃ-
بسم الله الرحمن الرحيم

https://ifatwa.info/64982 নং ফতোয়াতে উল্লেখ রয়েছেঃ- 
হাদীস শরীফে এসেছেঃ 

عَنْ أَبِي مَعْمَرٍ، قَالَ: سَأَلْنَا خَبَّابًا أَكَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقْرَأُ فِي الظُّهْرِ وَالعَصْرِ؟ قَالَ: نَعَمْ، قُلْنَا: بِأَيِّ شَيْءٍ كُنْتُمْ تَعْرِفُونَ؟ قَالَ: «بِاضْطِرَابِ لِحْيَتِهِ»

হযরত আবু মামার রহঃ হযরত খাব্বাব রাঃ কে জিজ্ঞাসা করলেন, রাসুল সাঃ যোহর ও আসরে কিরাত পড়তেন কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ পড়তেন। আবু মামার পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেন, এটা কিভাবে বুঝা যেত? তিনি উত্তরে বলেন, রাসুল সাঃ এর দাড়ি নড়াচড়া দেখে বুঝা যেত। {বুখারী, হাদীস নং-৭৬০}

★শরীয়তের বিধান অনুযায়ী নিম্নস্বরের পরিমাণ হল, নিজ কর্ণ দ্বারা শ্রবণ করা। 

ফাতাওয়ায়ে শামীতে এসেছে   

 أنہماختلفوا في حد وجود القراء ة علی ثلاثة أقوال: فشرط الہندواني والفضیلي لوجودہا: خروج صوت یصل إلی إذنہ وبہ قال الشافعي واختار شیخ الإسلام وقاضي خاں وصاحب المحیط والحلواني قول الہندواني کذا في معراج الدرایة، ونقل في المجتبی عن الہندواني أنہ لا یجزیہ مالم تسمع أذناہ (سامي: ۲/۲۵۲، کتاب الصلاة باب صفة الصلاة، ط: زکریا دیوبند)

সারমর্মঃ  নামাজেই এতটুকু আওয়াজ বের করা, যাতে আওয়াজ নিজ কান পর্যন্ত পৌছতে পারে।

বিস্তারিত জানুনঃ 

https://www.ifatwa.info/2570 নং ফাতাওয়ায় উল্লেখ রয়েছে যে,
নামাযে কেরাত জোরের জায়গা জোরে পড়া এবং আস্তের জায়গায় আস্তে পড়া ওয়াজিব।কেউ কেউ সুন্নতও বলেছেন।
কেরাত যদি নিম্নস্বরে হয় তাহলে তার সীমারেখা কতটুকু? আর উচ্ছস্বরে হলে তার সীমারেখা কতটুকু?

নিম্নস্বরের সীমারেখাঃ
নিম্নস্বরের সীমারেখা সম্পর্কে উলামায়ে কেরাম থেকে দু রকম বক্তব্য পাওয়া যায়,
(১)শা'ফেয়ী, হাম্বলী, এবং বিশুদ্ধ মতানুযায়ী হানাফি মাযহাব মতে তেলাওয়াতকে জবান দ্বারা এতটুকু উচ্ছারণ করতে হবে যে,নিজে শুনতে পারবে।কোনো প্রকার আওয়াজ ব্যতীত শুধুমাত্র জবান নাড়ানো যথেষ্ট হবে না।
(২)মালিকী মাযহাব এবং এক বিবরণ অনুযায়ী হানাফি মাযহাব মতে কোনো প্রকার আওয়াজ ব্যতীত শুধুমাত্র জবান নাড়িয়ে নিলেই যথেষ্ট হবে।এ মতামতকেই ইবনে তাইমিয়্যাহ রাহ গ্রহণ করেছেন।

ইমাম নববী রাহ লিখেন,
"وأدنى الإسرار أن يسمع نفسه إذا كان صحيح السمع ولا عارض عنده من لغط وغيره . وهذا عام في القراءة والتكبير والتسبيح في الركوع وغيره , والتشهد والسلام والدعاء , سواء واجبها ونفلها لا يحسب شيء منها حتى يسمع نفسه إذا كان صحيح السمع ولا عارض" انتهى .
নিম্নস্বরের সর্বনিম্ন পরিমাণ হল,নিজের কর্ণ দ্বারা শ্রবণ করা,যদি তার কানে কোনো প্রকার শ্রবণ সমস্যা না থাকে।আর এ বিধান নামাযের কেরাত, তাকবীর,তাসবীহ, তাশাহুদ, দু'আ সবকিছুর বেলায়ই প্রযোজ্য। চায় ওয়াজিব রুকুনে হোক বা নফল রুকুনে হোক।সেটাকে ততক্ষণ পর্যন্ত গ্রহণযোগ্য বিবেচনা করা হবে না যতক্ষণ না সে নিজে শুনতে পারবে,যদি তার শ্রবণে কোনো সমস্যা না থাকে।

নামাযে কুরআন তেলাওয়াত নিম্নস্বরের সীমারেখা কি?এ সম্পর্কে ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়ায় বর্ণিত রয়েছে,
নামাযের তেলাওয়াতের জন্য হরফ গুলি পরিস্কার ভাবে উচ্ছারিত হওয়া শর্ত। যদি হরফগুলি উচ্ছারিত হয়,তবে নিজে না শুনে তাহলে সেই তেলাওয়াত/কেরাত নামায বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য যথেষ্ট হবে না।এটাই সাধারণ মাশায়েখগণের সিদ্ধান্ত।(মুহিত)এবং এটাই পছন্দনীয় মত।এমনটাই সিরাজিয়্যাহ নামক কিতাবে বর্ণিত রয়েছে।এবং এটাই বিশুদ্ধতম মত।(নুকায়া) অর্থাৎ  নিজে শুনতে হবে,নতুবা নামায বিশুদ্ধ হবে না।(ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া-১/৬৯)

ইবনে আবেদীন শামী রাহ বলেন,
এত্থেকে প্রতিয়মান হলো যে,নিম্নস্বরের সর্বোচ্ছ পরিমাণ হল,নিজে শ্রবণ করা বা পাশবর্তীজন কর্তৃক শ্রবণ করা।আর নিম্নস্বরের সর্বনিম্ন পরিমাণ হল,জবান থেকে অক্ষর উচ্ছারিত হয়ে যাওয়া।(চায় নিজে শুনুক বা নাই শুনুক)যেমনটা ইমাম কারখী রাহ এর মাযহাব।তবে এটা গ্রহণযোগ্য নয়।
আর উচ্ছস্বরের সর্বনিম্ন পরিমাণ হল,নিকটবর্তী নয় এমন কেউ শ্রবণ করা যেমন,প্রথম কাতারের লোকজন কর্তৃক শ্রবণ করা।আর উচ্ছস্বরের সর্বোচ্ছ পরিমাণের কোনো সাীমারেখা নাই।এ বিষয়ে অনেকেই বিভ্রান্ত হয়ে যান।সুতরাং বিষয়টা ভালোভাবে বোধগম্য করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।মূলকথা হল,অর্থাৎ নিম্নস্বরের সর্বোচ্ছ পরিমাণ,নিজে শ্রবণ করা বা পাশেরজন কর্তৃক শ্রবণ করা।এজন্য কেরাতকে নিজে শ্রবণ না করলে ফকিহ হিন্দাওয়ানি রাহ এর মতে নামায বিশুদ্ধ হবে না।আর ইমাম কারখী রাহ এর মতে হরফ উচ্ছারিত হয়ে গেলে যদিও শুনা না যাক, এতে নামায বিশুদ্ধ হয়ে যাবে।(রদ্দুল মুহতার-১/৫৩৪:-:৫৩৫)

★আপনার মনে যেহেতু ওয়াসওয়াসা আসছে,যে নিজ কানে আওয়াজ আসলো কিনা?

আসলে এটি ফ্যান বা অন্যান্য কিছুর কারনে কান পর্যন্ত আসতে প্রতিবন্ধক হচ্ছে,যার দরুন আওয়াজ কানে আসছেনা।
এমন কোনো প্রতিবন্ধকতা না থাকার ছুরতে আওয়াজ কানে না আসলে আপনি পুনরায় তাকবিরে তাহরিমা বলবেন।

কিন্তু ফ্যান বা অন্যান্য এমন কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকলে আপনি জিহবা ও ঠোঁট নাড়িয়ে হালকা আওয়াজে উচ্চারণ করার চেষ্টা করবেন,সেটিই যথেষ্ট হবে।
আপনি গভির রাতে একাকী এভাবে হালকা আওয়াজ করলেই দেখবেন যে সেই আওয়াজ কানে আসছে,তার মানে দিনেও মানুষের মাঝে একই রকম আওয়াজ হয় 
তবে কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকার দরুন সেই আওয়াজ কানে আসেনা।
সুতরাং এরকম হালকা আওয়াজে নামাজ হয়ে যাবে।
এটিই যথেষ্ট, পুনরায় তাকবিরে তাহরিমা বলতে হবেনা।

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,
(০১)
প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে যদি নিজ কানে আসার মতোই আওয়াজ দিয়ে তাকবিরে তাহরিমা বলা হয়,কিন্তু ফ্যান বা অন্য কোনো কিছুর কারনে কান পর্যন্ত আওয়াজ আসতে প্রতিবন্ধক হয়,যার দরুন আওয়াজ কানে আসছেনা,এমতাবস্থায় সেই নামাজ গুলি আদায় হয়েছে।
পুনরায় আদায় করতে হবেনা।

আর যদি নিজ কানে আসার মতো আওয়াজ দিয়ে তাকবিরে তাহরিমা না বলা হয়,এবং এক্ষেত্রে যদি ফ্যান বা অন্য কোনো প্রতিবন্ধকতাও না থাকে,
সেক্ষেত্রে পূর্বের সব নামাজ কাজা করতে হবে।

(০২)
নিজ কানে আসার মতো আওয়াজ দিয়ে সুরা কিরাআত পাঠ করতে হবে।

তবে যদি নিজ কানে আসার মতো আওয়াজ দিয়েই সুরা কিরাআত পাঠ করা হয়,
কিন্তু ফ্যান বা অন্য কোনো কিছুর কারনে কান পর্যন্ত আওয়াজ আসতে প্রতিবন্ধক হয়,যার দরুন আওয়াজ কানে আসছেনা,এমতাবস্থায় নামাজ আদায় হয়ে যাবে । 

(০৩)
প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে যদি সুন্নাত তরিকায় সেজদাহ না হয়ে থাকে,অঙ্গপ্রত্যঙ্গ যদি ঢিলেঢালা হয়ে যায়,সেক্ষেত্রে আপনার অযু ভেঙ্গে যাবে।
পুনরায় অযু করে এবং এসে বাকি নামাজ আদায় করতে হবে। 

আর যদি সুন্নাত তরিকায় সেজদাহ হয়ে থাকে,অঙ্গপ্রত্যঙ্গ যদি ঢিলেঢালা না হয়ে যায়,সেক্ষেত্রে আপনার নামাজ অযু কোনোটিই ভেঙ্গে যাবেনা।
এমতাবস্থায় আপনি নামাজ চালিয়ে যাবেন।

কয়টি সেজদাহ হলো,সেটি মনে না পড়লে প্রবল ধারণার ভিত্তিতে বাকি নামাজ আদায় করবেন।

★কোনোদিকেই প্রবল ধারণা না হলে পুনরায় একটি সেজদাহ আদায় করে শেষে সেজদায়ে সাহু দিবেন। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...