ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।
জবাবঃ-
ইনবক্সে মেসেজ যাচ্ছেনা।
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,
হাদীস শরীফে এসেছেঃ
عَنْ أَبِي مَعْمَرٍ، قَالَ: سَأَلْنَا خَبَّابًا أَكَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقْرَأُ فِي الظُّهْرِ وَالعَصْرِ؟ قَالَ: نَعَمْ، قُلْنَا: بِأَيِّ شَيْءٍ كُنْتُمْ تَعْرِفُونَ؟ قَالَ: «بِاضْطِرَابِ لِحْيَتِهِ»
হযরত আবু মামার রহঃ হযরত খাব্বাব রাঃ কে জিজ্ঞাসা করলেন, রাসুল সাঃ যোহর ও আসরে কিরাত পড়তেন কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ পড়তেন। আবু মামার পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেন, এটা কিভাবে বুঝা যেত? তিনি উত্তরে বলেন, রাসুল সাঃ এর দাড়ি নড়াচড়া দেখে বুঝা যেত। {বুখারী, হাদীস নং-৭৬০}
★শরীয়তের বিধান অনুযায়ী নিম্নস্বরের পরিমাণ হল, নিজ কর্ণ দ্বারা শ্রবণ করা।
ফাতাওয়ায়ে শামীতে এসেছে
أنہماختلفوا في حد وجود القراء ة علی ثلاثة أقوال: فشرط الہندواني والفضیلي لوجودہا: خروج صوت یصل إلی إذنہ وبہ قال الشافعي واختار شیخ الإسلام وقاضي خاں وصاحب المحیط والحلواني قول الہندواني کذا في معراج الدرایة، ونقل في المجتبی عن الہندواني أنہ لا یجزیہ مالم تسمع أذناہ (سامي: ۲/۲۵۲، کتاب الصلاة باب صفة الصلاة، ط: زکریا دیوبند)
সারমর্মঃ নামাজেই এতটুকু আওয়াজ বের করা, যাতে আওয়াজ নিজ কান পর্যন্ত পৌছতে পারে।
বিস্তারিত জানুনঃ
নামাযে কেরাত জোরের জায়গা জোরে পড়া এবং আস্তের জায়গায় আস্তে পড়া ওয়াজিব।কেউ কেউ সুন্নতও বলেছেন।
কেরাত যদি নিম্নস্বরে হয় তাহলে তার সীমারেখা কতটুকু? আর উচ্ছস্বরে হলে তার সীমারেখা কতটুকু?
নিম্নস্বরের সীমারেখাঃ
নিম্নস্বরের সীমারেখা সম্পর্কে উলামায়ে কেরাম থেকে দু রকম বক্তব্য পাওয়া যায়,
(১)শা'ফেয়ী, হাম্বলী, এবং বিশুদ্ধ মতানুযায়ী হানাফি মাযহাব মতে তেলাওয়াতকে জবান দ্বারা এতটুকু উচ্ছারণ করতে হবে যে,নিজে শুনতে পারবে।কোনো প্রকার আওয়াজ ব্যতীত শুধুমাত্র জবান নাড়ানো যথেষ্ট হবে না।
(২)মালিকী মাযহাব এবং এক বিবরণ অনুযায়ী হানাফি মাযহাব মতে কোনো প্রকার আওয়াজ ব্যতীত শুধুমাত্র জবান নাড়িয়ে নিলেই যথেষ্ট হবে।এ মতামতকেই ইবনে তাইমিয়্যাহ রাহ গ্রহণ করেছেন।
ইমাম নববী রাহ লিখেন,
"وأدنى الإسرار أن يسمع نفسه إذا كان صحيح السمع ولا عارض عنده من لغط وغيره . وهذا عام في القراءة والتكبير والتسبيح في الركوع وغيره , والتشهد والسلام والدعاء , سواء واجبها ونفلها لا يحسب شيء منها حتى يسمع نفسه إذا كان صحيح السمع ولا عارض" انتهى .
নিম্নস্বরের সর্বনিম্ন পরিমাণ হল,নিজের কর্ণ দ্বারা শ্রবণ করা,যদি তার কানে কোনো প্রকার শ্রবণ সমস্যা না থাকে।আর এ বিধান নামাযের কেরাত, তাকবীর,তাসবীহ, তাশাহুদ, দু'আ সবকিছুর বেলায়ই প্রযোজ্য। চায় ওয়াজিব রুকুনে হোক বা নফল রুকুনে হোক।সেটাকে ততক্ষণ পর্যন্ত গ্রহণযোগ্য বিবেচনা করা হবে না যতক্ষণ না সে নিজে শুনতে পারবে,যদি তার শ্রবণে কোনো সমস্যা না থাকে।
নামাযে কুরআন তেলাওয়াত নিম্নস্বরের সীমারেখা কি?এ সম্পর্কে ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়ায় বর্ণিত রয়েছে,
নামাযের তেলাওয়াতের জন্য হরফ গুলি পরিস্কার ভাবে উচ্ছারিত হওয়া শর্ত। যদি হরফগুলি উচ্ছারিত হয়,তবে নিজে না শুনে তাহলে সেই তেলাওয়াত/কেরাত নামায বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য যথেষ্ট হবে না।এটাই সাধারণ মাশায়েখগণের সিদ্ধান্ত।(মুহিত)এবং এটাই পছন্দনীয় মত।এমনটাই সিরাজিয়্যাহ নামক কিতাবে বর্ণিত রয়েছে।এবং এটাই বিশুদ্ধতম মত।(নুকায়া) অর্থাৎ নিজে শুনতে হবে,নতুবা নামায বিশুদ্ধ হবে না।(ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া-১/৬৯)
ইবনে আবেদীন শামী রাহ বলেন,
এত্থেকে প্রতিয়মান হলো যে,নিম্নস্বরের সর্বোচ্ছ পরিমাণ হল,নিজে শ্রবণ করা বা পাশবর্তীজন কর্তৃক শ্রবণ করা।আর নিম্নস্বরের সর্বনিম্ন পরিমাণ হল,জবান থেকে অক্ষর উচ্ছারিত হয়ে যাওয়া।(চায় নিজে শুনুক বা নাই শুনুক)যেমনটা ইমাম কারখী রাহ এর মাযহাব।তবে এটা গ্রহণযোগ্য নয়।
আর উচ্ছস্বরের সর্বনিম্ন পরিমাণ হল,নিকটবর্তী নয় এমন কেউ শ্রবণ করা যেমন,প্রথম কাতারের লোকজন কর্তৃক শ্রবণ করা।আর উচ্ছস্বরের সর্বোচ্ছ পরিমাণের কোনো সাীমারেখা নাই।এ বিষয়ে অনেকেই বিভ্রান্ত হয়ে যান।সুতরাং বিষয়টা ভালোভাবে বোধগম্য করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।মূলকথা হল,অর্থাৎ নিম্নস্বরের সর্বোচ্ছ পরিমাণ,নিজে শ্রবণ করা বা পাশেরজন কর্তৃক শ্রবণ করা।এজন্য কেরাতকে নিজে শ্রবণ না করলে ফকিহ হিন্দাওয়ানি রাহ এর মতে নামায বিশুদ্ধ হবে না।আর ইমাম কারখী রাহ এর মতে হরফ উচ্ছারিত হয়ে গেলে যদিও শুনা না যাক, এতে নামায বিশুদ্ধ হয়ে যাবে।(রদ্দুল মুহতার-১/৫৩৪:-:৫৩৫)
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,
প্রশ্নের বিবরণ মতে আপনার এতো বার তাকবিরে তাহরিমা বলার প্রয়োজনীয়তা নেই।
প্রথমবারই যথেষ্ট।
আপনার মনে যেহেতু ওয়াসওয়াসা আসছে,যে নিজ কানে আওয়াজ আসলো কিনা?
আসলে এটি ফ্যান বা অন্যান্য কিছুর কারনে কান পর্যন্ত আসতে প্রতিবন্ধক হচ্ছে,যার দরুন আওয়াজ কানে আসছেনা।
এমন কোনো প্রতিবন্ধকতা না থাকার ছুরতে আওয়াজ কানে না আসলে আপনি পুনরায় তাকবিরে তাহরিমা বলবেন।
কিন্তু ফ্যান বা অন্যান্য এমন কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকলে আপনি জিহবা ও ঠোঁট নাড়িয়ে হালকা আওয়াজে উচ্চারণ করার চেষ্টা করবেন,সেটিই যথেষ্ট হবে।
আপনি গভির রাতে একাকী এভাবে হালকা আওয়াজ করলেই দেখবেন যে সেই আওয়াজ কানে আসছে,তার মানে দিনেও মানুষের মাঝে একই রকম আওয়াজ হয়
তবে কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকার দরুন সেই আওয়াজ কানে আসেনা।
সুতরাং এরকম হালকা আওয়াজে নামাজ হয়ে যাবে।
এটিই যথেষ্ট, পুনরায় তাকবিরে তাহরিমা বলতে হবেনা।
তদুপরি আপন যে সমস্ত ছুরত বলেছেন,পুনরায় তাকবিরে তাহরিমা বলা সংক্রান্ত, সব ছুরতেই আপনার নামাজ হয়ে যাবে।
তবে এগুলো অনুচিত।