বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
(১) কাফেররা যুদ্ধ করার পর হেরে গেলে হয়তো ইসলাম কবুল করবে, নতুবা তারা জিযয়া দিবে। অথবা দেশান্তর বা মৃত্যুদন্ড দেয়া হবে। এটা মূলত যুদ্ধরত কাফেরদের জন্য ।
(২) দারুল আমান এবং দারুল হারবে অমুসলিমদের উপর কোন মুসলিম অত্যাচার করলে তার পুরোপুরি বিচার করা হবে।
এ সম্পর্কে একটি ঐতিহাসিক ঘটনা উল্লেখযোগ্য--
দ্বিতীয় খলিফা হজরত উমর (রা)-এর খেলাফতকাল। মিসরের শাসনকর্তা হিসেবে তখন হজরত আমর ইবনে আ’স (রা) দায়িত্ব পালন করছিলেন। আর, তখন খ্রিস্টান সাম্রাজ্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলো ইসলাম ধ্বংস করার। রোমান বাহিনী শেষ পর্যন্ত আলেক্সান্দ্রিয়া দখলেরও পায়তারা করে। কিন্তু ওদিকে সুশাসক আমর ইবনে আ'স (রা) নিষ্ঠার সাথে শাসন করছিলেন। খ্রিস্টানদের শাসন করতেন নিজেদের ধর্মগ্রন্থ থেকেই। খ্রিস্টানরা স্বাধীনভাবে নিজেদের ধর্ম পালন করতে পারত।
একদিন সকালবেলা।
আলেকজান্দ্রিয়ার খ্রিষ্টান পল্লীতে হইচই পড়ে গেল। সবাই দেখা গেল বাজারে জটলা হয়ে আছে। উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় চলছে। সেখান থেকে খ্রিস্টানদের স্থানীয় আর্চবিশপ আমর ইবনে আ'স এর বাসভবনে গেলেন বাজারের ঘটনা সল্ভ করার জন্য। তাঁর সাথে আরও অনেকেই গেলেন।
সেখানে গিয়ে বিশপ জানালেন, কেউ একজন বাজারের যিশু খ্রিষ্টের মার্বেলের মূর্তির নাক গত রাতে ভেঙে ফেলেছে। এ মূর্তিটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল তাদের জন্য। খ্রিষ্টানরা ধরে নিয়েছে যে এটা মুসলমানদের কাজ। তারা উত্তেজিত হয়ে উঠেছে।
আমর ইবেন আ'স এ কথা শুনে অত্যন্ত দু:খিত হলেন। তিনি বললেন, "আমি খুবই লজ্জিত, ব্যথিত। সত্যি কথা, ইসলামে মূর্তিপূজা জায়েজ না। কিন্তু, অন্য ধর্মের উপাস্যকে গালি দেয়া পর্যন্তও হারাম। প্লিজ, আপনি মূর্তিটা repair করে নিন। আমি পূর্ণ খরচ দেব।"
কিন্তু বিশপ বললেন, "এ মূর্তি রিপেয়ার করা যাবে না।"
আ'স বললেন, "তবে নতুন করে বানান। আমি খরচ দেব।"
"না, সেটাও হবে না। আপনি জানেন, যীশু ঈশ্বরপুত্র। তাঁর মূর্তির এমন অবমাননা সহ্য করা যায় না। একটাই ক্ষতিপূরণ, আমরা আপনাদের মুহাম্মাদ (স) এর মূর্তি বানিয়ে সেটার নাক ভাঙব।"
রাগে জ্বলে গেল আ'স এর গা। তিনি কিছুক্ষণ নীরব থেকে খ্রিষ্টান বিশপকে বললেন, "আপনি যা বললেন সেটা সম্ভব না। আমাদের সম্পদ, পরিবারের চেয়েও মুহাম্মাদ (স)কে বেশি ভালবাসি। আমার অনুরোধ, এ প্রস্তাব ছাড়া অন্য যেকোনো প্রস্তাব করুন আমি রাজি আছি। আমাদের যেকোনো একজনের নাক কেটে আমি আপনাদের দিতে প্রস্তুত, যার নাক আপনারা চান।"
খ্রিষ্টান নেতারা সবাই এ প্রস্তাবে সম্মত হলো।
পরদিন খ্রিষ্টান ও মুসলমান বিরাট এক ময়দানে জমায়েত হলো। মিসরের শাসক সেনাপতি আমর রা: সবার সামনে হাজির হয়ে বিশপকে বললেন, "এ দেশ শাসনের দায়িত্ব আমার। যে অপমান আজ আপনাদের, তাতে আমার শাসনের দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে। তাই এই তরবারি গ্রহণ করুন এবং আপনিই আমার নাক কেটে দিন।"
এ কথা বলেই বিশপকে একখানি ধারালো তরবারি হাতে দিলেন, বিশপ সেটা পরীক্ষা করলেন। জনতা স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, খ্রিষ্টানরা স্তম্ভিত। চারদিকে থমথমে ভাব। সে নীরবতায় নি:শ্বাসের শব্দ করতেও যেন ভয় হয়।
হঠাৎ সেই নীরবতা ভঙ্গ করে একজন মুসলিম সৈন্য এগিয়ে এলো। চিৎকার করে বলল, "আমিই দোষী, সেনাপতির কোনো অপরাধ নেই। আমিই মূর্তির নাক ভেঙেছি। এইত, আমার হাতেই আছে সে নাক। তবে মূর্তি ভাঙার কোনো ইচ্ছা আমার ছিল না। মূর্তির মাথায় বসা একটি পাখির দিকে তীর নিক্ষেপ করতে গিয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।"
সৈন্যটি এগিয়ে এসে বিশপের তরবারির নিচে নাক পেতে দিল। স্তম্ভিত বিশপ! নির্বাক সবাই। বিশপের অন্তরাত্মা রোমাঞ্চিত হয়ে উঠল।
তরবারি ছুড়ে বিশপ বললেন, "ধন্য সেনাপতি, ধন্য হে বীর সৈনিক, আর ধন্য আপনাদের মুহাম্মদ (সা:), যার মহান আদর্শে আপনাদের মতো মহৎ উদার নির্ভীক ও শক্তিমান ব্যক্তি গড়ে উঠেছে। যীশু খ্রিষ্টের প্রতিমূর্তিই অসম্মান করা হয়েছে সন্দেহ নেই, কিন্তু তার চেয়েও অন্যায় হবে যদি অঙ্গহানি করি।"
কী অসাধারণ ছিল আমর ইবনে আ'সের ঈমান!{রেফারেন্সঃ ওয়াকিদি, হিরাক হার; বর্ণিতঃ খান, Anecdotes from Islam, পৃষ্ঠা ১৯৫-৭}