আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
34 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (57 points)

আসসালামু আলাইকুম
 

১) বিপদে ও অসুস্থতায় ধৈর্য ধরার কথা ইসলামে আছে। এখন এই ধৈর্য ধরার প্রক্রিয়া কি? 


২) দরুদ পাঠের গুরুত্বপূর্ণ ফজিলত কি কি? 


৩) ইস্তেগফার পাঠের গুরুত্বপূর্ণ ফজিলত কি কি?

৪) ২ ও ৩ নং এ দুরুদ ও ইস্তেগফার শুধু এমনে পড়া হলে কি ফজিলত পাওয়া যাবে। যেমন ইস্তেগফার করার সময় গুনাহের কথা স্বরণ না করা। 

৫) রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে স্বপ্ন দেখা ব্যক্তি কি জান্নাতি?  

জাঝাকাল্লাহু খাইরান

1 Answer

+1 vote
by (667,230 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

(০১)
ইসলামে ধৈর্য (সবর) একটি মৌলিক ইবাদত। আল্লাহ বলেছেন:

 وَ اصۡبِرُوۡا ؕ اِنَّ اللّٰہَ مَعَ الصّٰبِرِیۡنَ ﴿ۚ۴۶﴾ 

“আর তুমি ধৈর্য ধারণ করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন।”
(সূরা আল-আনফাল: 46)

ধৈর্য ধরার প্রক্রিয়া কীভাবে হবে?

★আল্লাহর ফয়সালায় সন্তুষ্ট থাকা (رضا بالقضاء)

বিশ্বাস রাখা যে, বিপদ ও অসুস্থতা আল্লাহর নির্ধারণ।
তিনি যেমন ইচ্ছা করেন, তাতে হিকমত আছে।


★মুখে অভিযোগ না করা।

অসুস্থ হলে কষ্টের কথা বলা যাবে (যেমন: “আমার ব্যথা হচ্ছে”), কিন্তু আল্লাহর বিধান নিয়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করা যাবে না।

শোক প্রকাশে বিলাপ, হায় হায় করা, চুল ছেঁড়া—এসব ধৈর্যের বিরুদ্ধে।


★জিহ্বা ও অন্তর দিয়ে আল্লাহর দিকে ফিরে যাওয়া।

কষ্টের মুহূর্তে দোয়া করা:
إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ
(আমরা আল্লাহর জন্যই এবং আল্লাহর দিকেই প্রত্যাবর্তনকারী)

এ দোয়া পড়লে আল্লাহ তিনটি নিয়ামত দেন: রহমত, রহমতপূর্ণ দৃষ্টি, হেদায়েত (সূরা বাকারা: 155-157)।

★মনে রাখা যে কষ্ট মাফের কারণ।

রাসূল ﷺ বলেছেন:
“মুসলিম যখন কোনো কষ্ট, রোগ, দুঃশ্চিন্তা, দুঃখ, কষ্ট কিংবা দুশ্চিন্তায় পড়ে, এমনকি যদি কোনো কাঁটা বিঁধেও যায়, আল্লাহ তার মাধ্যমে তার গুনাহ মাফ করে দেন।”
(সহিহ বুখারি ও মুসলিম)

★আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া।
নামাজ ও দোয়ায় মনোযোগী হওয়া।

এ সময় বলা:
اللَّهُمَّ أَجِرْنِي فِي مُصِيبَتِي وَاخْلُفْ لِي خَيْرًا مِنْهَا
(হে আল্লাহ, আমার এই বিপদে আমাকে প্রতিদান দাও এবং এর পরিবর্তে উত্তম কিছু দাও।)
(মুসলিম, 918)

★ভালো ধারণা রাখা (حسن الظن بالله)
বিশ্বাস রাখা যে অসুস্থতা বা বিপদ সাময়িক, এর মাধ্যমে আল্লাহ গুনাহ মাফ করবেন ও আখিরাতে মর্যাদা বাড়াবেন।

(০২)
দরুদ পাঠের গুরুত্বপূর্ণ ফজিলত সমুহঃ-

★আল্লাহর রহমত লাভ

রাসূল ﷺ বলেছেন:
“যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরুদ পাঠ করে, আল্লাহ তার ওপর দশবার রহমত বর্ষণ করেন।”
(সহিহ মুসলিম, 408)

★গুনাহ মাফ ও মর্যাদা বৃদ্ধি।
রাসুলুল্লাহ সাঃ ইরশাদ করেন,
“যে আমার ওপর দরুদ পাঠ করে, আল্লাহ তার দশটি গুনাহ মাফ করেন, তার দশটি মর্যাদা বাড়ান এবং দশবার রহমত নাযিল করেন।”
(সুনান নাসায়ী, 1297 – সহিহ)

★দোয়া কবুল হওয়ার মাধ্যম।

রাসূল ﷺ বলেছেন:
“যখন তোমাদের কেউ দোয়া করবে, সে যেন প্রথমে আল্লাহর প্রশংসা করে, তারপর আমার ওপর দরুদ পাঠ করে; এরপর যা ইচ্ছে দোয়া করে।”
(সুনান আবু দাউদ, 1481)

★কিয়ামতের দিন সুপারিশ লাভ।

রাসূল ﷺ বলেছেন:
“যে ব্যক্তি আমার ওপর বেশি দরুদ পাঠ করে, কিয়ামতের দিন তার সুপারিশ লাভের বেশি হকদার সে-ই হবে।”
(সুনান তিরমিজি, 484 – হাসান সহিহ)

★দুনিয়া-আখিরাতের চিন্তা দূর।

উবাই ইবনে কা‘ব (রাযি.) বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করলাম: হে আল্লাহর রাসূল ﷺ, আমি কতটুকু সময় আপনার জন্য দরুদে ব্যয় করব?
রাসূল ﷺ বললেন:

“যদি তুমি সব সময় আমাকে দরুদে ব্যয় কর, তবে তোমার দুঃশ্চিন্তা দূর হবে এবং তোমার গুনাহ মাফ করা হবে।”
(সুনান তিরমিজি, 2457 – হাসান সহিহ)

★রাসূল ﷺ-এর নিকটবর্তী হওয়া।

রাসূল ﷺ বলেছেন:
“কিয়ামতের দিন আমার নিকটতম ব্যক্তি হবে সে-ই, যে আমার ওপর বেশি দরুদ পাঠ করে।”
(সুনান তিরমিজি, 484)

(০৩)
ইস্তেগফার পাঠের গুরুত্বপূর্ণ ফজিলতঃ-

★গুনাহ মাফ হয়

রাসূল ﷺ বলেছেন:
“যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার করে, আল্লাহ তার প্রত্যেক দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির পথ তৈরি করেন, প্রত্যেক দুঃখ থেকে মুক্তি দেন এবং অপ্রত্যাশিত জায়গা থেকে তাকে রিজিক দেন।”
(সুনান আবু দাউদ, 1518 – হাসান সহিহ)

★রিজিক ও সন্তান-সন্ততি বৃদ্ধি।

হযরত নূহ (আঃ) তার কওমকে বলেছিলেন:
“তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো, নিশ্চয়ই তিনি মহা ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের জন্য আকাশ থেকে প্রচুর বৃষ্টি পাঠাবেন, তোমাদের সম্পদ ও সন্তান দ্বারা শক্তিশালী করবেন, তোমাদের জন্য বাগান বানাবেন এবং নদী প্রবাহিত করবেন।”
(সূরা নূহ: 10-12)

★দুঃখ-কষ্ট দূর হয়।

রাসূল ﷺ বলেছেন:
“যে ব্যক্তি বেশি বেশি ইস্তেগফার করে, আল্লাহ তার সব দুশ্চিন্তা দূর করে দেন এবং প্রতিটি সংকট থেকে তার জন্য মুক্তির পথ করে দেন।”
(মুসনাদ আহমদ, 2234 – সহিহ)

★জান্নাত লাভের উপায়।
কুরআনে বারবার এসেছে, যারা গুনাহের পর ইস্তেগফার করে এবং তাওবা করে, আল্লাহ তাদের জান্নাত দান করবেন।
(সূরা আলে-ইমরান: 135-136)

★আল্লাহর ভালোবাসা লাভ।
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ- 
“নিশ্চয়ই আল্লাহ তাওবাকারী ও পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালোবাসেন।”
(সূরা বাকারা: 222)
(কিছু তথ্য সংগৃহীত।)

(০৪)
দরুদ পাঠের সময় রাসুলের প্রতি ভক্তি শ্রদ্ধা থাকা চাই। আর ইস্তেগফার পাঠের সময় ক্ষমাপ্রার্থনা বিষয়টি মনে রাখা চাই।
তাহলে পরিপূর্ণ ফজিলত পাওয়া যাবে। 

অন্যথায় শুধু এমনে পড়া হলে সেক্ষেত্রে পূর্ণ ফজিলত পাওয়া যাবেনা।

(০৫)
এ ব্যাপারে কোন সহিহ হাদিস নেই।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...