আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
32 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (8 points)
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ

আমার অতীতে করা একটি গোনাহ বা ভুলের ব্যাপারে জানতে চাচ্ছিলাম। আমি তখন ক্লাস সেভেনে পড়তাম। আমি পড়াশুনায় যথেষ্ট ভালো ছাত্রী ছিলাম। কিন্তু আমার কিছু বান্ধবীরা ছিল যারা ছোটবেলা থেকেই স্কুল লাইফে প্রেম করা বা ছেলেদের সাথে হারাম সম্পর্ক এগুলোকে গুরুত্ব দিত। আমার তখন দ্বীনের বুঝ  না থাকলেও তাদের এই কাজগুলো আমার পছন্দ ছিল না। ফলে আমি তাদেরকে সব সময় নিষেধ করতাম ছেলেদের থেকে সাবধানে থাকতে, দূরে থাকতে, পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে। এরপর ক্লাস সেভেনে থাকতে আমাদেরই ক্লাসমেট কিছু ছেলেদের সম্পর্কে তারা খুব ভালো ভালো কথা বলতো। আর আমি বলতাম এসব ছেলেদের ক্যারেক্টার ভালো হয় না। এরা আজকে তোমাদের পিছনে ঘুরবে কালকে অন্য মেয়ের পিছনে ঘুরবে। এদের পাল্লায় পড়ো না। তো তখন আমার বান্ধবীরা আমাকে বিভিন্ন রকম চ্যালেঞ্জ দিত। পরে এক পর্যায়ে আমার তাদের উপর খুব রাগ হয়ে যায় এবং জেদ তৈরি হয়। তখন ক্লাসের সব থেকে ভালো ভদ্র ছেলের ব্যাপারে তারা অনেক প্রশংসা করতে থাকতো, বলতো সে খুব ভালো ছেলে কোনদিন কোন মেয়েদের দিকে তাকায়ও না। আর আমি তখন রাগ হয়ে বলতাম যে, এই ছেলেরে আমার পিছনে ঘুরাইতে এক সপ্তাহের বেশি টাইম লাগবে না। আমি কিছুই করবো না, খালি ঐ ছেলের দিকে তাকায় থাকব দেখবা তাতেই ছেলে আমার পিছনে ঘুরবে। ওরা বিশ্বাস করতেছিল না এবং এক পর্যায়ে আমার সাথে চ্যালেঞ্জ নেওয়া, বাজি ধরা এগুলো শুরু করল। আর আমিও তখন তাদের সাথে তর্ক বিতর্ক ঝগড়া রাগারাগির এক পর্যায়ে তাদের চ্যালেঞ্জ একসেপ্ট করি। আর ক্লাসে যেয়ে ওই ছেলের দিকে তাকাই থাকতাম। এরকম এক সপ্তাহের মতো তাকায় থাকার পরে আমি নিজে থেকেই আর জিনিসটা অফ করে দিই। পরবর্তীতে দেখা যায় যে, ওই ছেলে সত্যি সত্যি আমার প্রেমে পড়ে যায়। এবং এই দীর্ঘ 12 বছর ধরে সে আমাকে পছন্দ করে। নানাভাবে এসে আমাকে বিয়ে করার জন্য চেষ্টা করে। কিন্তু আমি কোনভাবেই রাজি হয় না। কারণ তাকে আমার এক পারসেন্টও ভালো লাগে না। আমি পরবর্তীতে কলেজে পড়া কালীন সময়ে এসে অনেকবারই  প্রস্তাব দিয়েছে। আমি রাজি হয়নি এবং তাকে ভালোভাবেই বারবার বোঝানোর চেষ্টা করছি যে আমার তাকে পছন্দ না। ইনফ্যাক্ট সে আমাকে ব্ল্যাক ম্যাজিক পর্যন্ত করছে কিন্তু তারপরও তার প্রতি আমার কোন আকর্ষণ বা ভালোলাগা তৈরি হয় না। আমাকে বিভিন্ন আননোন নাম্বার বা আইডি থেকে ফোনে বিভিন্ন সময়ে থ্রেড করছে তার সাথে কথা না বললে, যোগাযোগ না করলে অনলাইনে আমার ছবি আপলোড করবে বা এটা সেটা বিভিন্ন তা করবে। মোটামুটি তার জায়গা থেকে যতভাবে চেষ্টা করা যায় সব ভাবে সে চেষ্টা করছে। তার গার্জিয়ান নিয়ে আমার বাসায়ও আসছে। মাঝে আমার বান্ধবীরা মিথ্যা নিউজ ওকে জানাইছে যে আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে তাতেই সে অসুস্থ হয়ে বুকে ব্যথা উঠে হসপিটালে ভর্তি করা লাগছে। প্রথমত তার প্রতি আমার খুব রাগ আর ঘৃণা তৈরি হতো তার এসব কার্যকলাপে। কিন্তু আমার নিজের মধ্যে একটা অনুতপ্ত বা অনুশোচনা বোধ কাজ করতো সবসময়ই যে আমি যদি ক্লাস সেভেনে থাকতে ওর দিকে এরকম করে না তাকাতাম তাহলে হয়তো আজকে ও এত কষ্ট পেত না আর আমারও এত সমস্যার সম্মুখীন হতে হতো না।

উল্লেখ্য, আমি এই প্রায় পাঁচ বছর হতে যাচ্ছে আল্লাহর অশেষ রহমতে দ্বীনের পথে চলে আসছি আলহামদুলিল্লাহ। আমি বিভিন্ন সময় তওবা করছি এবং তার পক্ষ থেকেও যেন আল্লাহ পাক আমাকে মাফপত্র বা সন্তোষপত্র পাওয়াই দেন সেজন্য দোয়া করছি তার হেদায়েতের জন্যও দোয়া করছি। আমি মূলত পর্দা করার কারণে বিবিএ সেকেন্ড ইয়ারে উঠে আমার ভার্সিটির পড়াশোনা ছেড়ে  দিয়েছি। এখন হিফয পড়ছি আলহামদুলিল্লাহ। কিন্তু সবার সাথে কম বেশি আমার লেনাদেনা বা মাফ চাওয়া,মাফ করা এগুলা কমপ্লিট করলেও এই ছেলের সমস্যাটার সমাধানই হচ্ছে না। আমার নিজের মধ্যে অনুশোচনা বোধ তো আছেই। আর সে না নিজে স্বাভাবিক জীবন কাটাচ্ছে আর না আমাকে স্বাভাবিক জীবন পার করতে দিচ্ছে। এক্ষেত্রে আমার এখন কি করনীয়?

১)আমি কি এখন আবার আমার ফোনে তার ব্লকটা খুলে তার কাছে সব সত্যিটা স্বীকার করে মাফ চেয়ে নিব? যে, ক্লাস সেভেনে থাকতে আমি এরকম করছি তার জন্য তোমাকে এত কষ্ট পেতে হচ্ছে আমাকে মাফ করে দিও কিন্তু আমার পক্ষে তোমাকে বিয়ে করা সম্ভব না। আমার তোমাকে পছন্দ না, ভালোও লাগে না। এরকমটা বলবো?

তাতে কি আদৌ সমস্যার সমাধান হবে?
২) আর তার কাছে যদি সরাসরি এভাবে বলে মাফ না চায় তাহলে বর্তমান পরিস্থিতিতে আমার কি করনীয় আছে? আমি ভয় পাই অন্যের হক নষ্ট করার গুনাহে যেন পরকালে আমাকে শাস্তি পেতে না হয়।

মেহেরবানী করে যদি আমাকে জানাতেন।

1 Answer

0 votes
ago by (659,880 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

হাদীস শরীফে এসেছেঃ  

ওয়াবিসা ইবনে মা'বাদ রাযি থেকে বর্ণিত,

ﻭﻋﻦ ﻭﺍﺑﺼﺔَ ﺑﻦِ ﻣَﻌْﺒِﺪٍ  ﻗَﺎﻝَ : ﺃَﺗَﻴْﺖُ ﺭﺳﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪ ﷺ ﻓَﻘَﺎﻝَ : « ﺟِﺌْﺖَ ﺗﺴﺄَﻝُ ﻋﻦِ ﺍﻟﺒِﺮِّ؟ » ﻗُﻠْﺖُ : ﻧَﻌَﻢْ، ﻓَﻘَﺎﻝَ : « ﺍﺳْﺘَﻔْﺖِ ﻗَﻠْﺒَﻚَ، ﺍﻟﺒِﺮُّ : ﻣَﺎ ﺍﻃْﻤَﺄَﻧَّﺖْ ﺇِﻟَﻴْﻪِ ﺍﻟﻨَّﻔْﺲُ، ﻭﺍﻃْﻤَﺄَﻥَّ ﺇِﻟَﻴْﻪِ ﺍﻟﻘَﻠْﺐُ، ﻭﺍﻹِﺛﻢُ : ﻣَﺎ ﺣﺎﻙَ ﻓﻲ ﺍﻟﻨَّﻔْﺲِ، ﻭﺗَﺮَﺩَّﺩَ ﻓِﻲ ﺍﻟﺼَّﺪْﺭِ، ﻭﺇِﻥْ ﺃَﻓْﺘَﺎﻙَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ ﻭَﺃَﻓْﺘَﻮﻙَ » ﺣﺪﻳﺚٌ ﺣﺴﻦٌ، ﺭﻭﺍﻩُ ﺃﺣﻤﺪُ ﻭﺍﻟﺪَّﺍﺭﻣِﻲُّ ﻓﻲ " ﻣُﺴْﻨَﺪَﻳْﻬِﻤﺎ ."

তিনি বলেন,আমি রাসূলুল্লাহ সাঃ এর নিকট গেলাম।রাসূলুল্লাহ সাঃ আমাকে বললেন,তুমি কি নেকীর কাজ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করার জন্য এসেছ?আমি বললাম জ্বী হ্যা, ইয়া রাসূলাল্লাহ!

তখন তিনি আমাকে বললেন,তুমি তোমার অন্তরের নিকট ফাতওয়া জিজ্ঞাসা করো।নেকি হল সেটা যার উপর অন্তর প্রশান্তিবোধ করে,এবং যে জিনিষের উপর অন্তর শান্ত থাকে।আর গোনাহ হল সেটা,যা অন্তরে অশান্তি সৃষ্টি করে নাড়িয়ে দেয়,এবং অন্তরকে দ্বিধান্বিত করে ফেলে।যদিও উক্ত কাজ সম্পর্কে মুফতিগণ বৈধতার ফাতাওয়া প্রদাণ করুক না কেন।(মুসনাদে আহমদ-১৭৫৪৫)

حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ بْنُ حَرْبٍ حَدَّثَنَا حَمَّادُ بْنُ سَلَمَةَ عَنْ الزُّبَيْرِ أَبِي عَبْدِ السَّلَامِ عَنْ أَيُّوبَ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مِكْرَزٍ الْفِهْرِيِّ عَنْ وَابِصَةَ بْنِ مَعْبَدٍ الْأَسَدِيِّ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لِوَابِصَةَ جِئْتَ تَسْأَلُ عَنْ الْبِرِّ وَالْإِثْمِ قَالَ قُلْتُ نَعَمْ قَالَ فَجَمَعَ أَصَابِعَهُ فَضَرَبَ بِهَا صَدْرَهُ وَقَالَ اسْتَفْتِ نَفْسَكَ اسْتَفْتِ قَلْبَكَ يَا وَابِصَةُ ثَلَاثًا الْبِرُّ مَا اطْمَأَنَّتْ إِلَيْهِ النَّفْسُ وَاطْمَأَنَّ إِلَيْهِ الْقَلْبُ وَالْإِثْمُ مَا حَاكَ فِي النَّفْسِ وَتَرَدَّدَ فِي الصَّدْرِ وَإِنْ أَفْتَاكَ النَّاسُ وَأَفْتَوْكَ 

ওয়াবিসা ইবনু মা’বাদ আল আসাদী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওয়াবিসাকে বলেন, “তুমি আমাকে পাপ ও পুণ্য সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে এসেছ?” তিনি বলেন, হাঁ। তিনি বলেন, তখন তিনি তাঁর আঙ্গুলগুলি মুষ্টিবদ্ধ করে তা দ্বারা তার বুকে আঘাত করে বললেন: “হে ওয়াবিসা! তুমি তোমার নাফসকে জিজ্ঞেস কর, তোমার অন্তরকে জিজ্ঞেস কর।”- একথা তিনি তিনবার বললেন। “তোমার নাফস বা মন যে বিষয়ে প্রশান্তি বা নিশ্চিন্ততা লাভ করে, তোমার অন্তর যে বিষয়ের প্রতি প্রশান্ত- নিশ্চিন্ত হয়-তা-ই হলো পূণ্য। আর তোমার মন যে বিষয়ে চিন্তিত হয়, তোমার অন্তরে যা ইতস্ততবোধ বা দ্বিধা সঞ্চার করে-তা-ই হলো পাপ। লোকেরা যদি তোমাকে কোনো সিদ্ধান্ত দেয়, তবে তুমি তা গ্রহণ করবে।”

(সুনানে আদ দারেমী ২৫৭১)

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে ব্লক খুলে দেওয়া এবং তার কাছে মাফ চাওয়া এগুলো কোন কিছুই সমাধান নয়।

এগুলোর দ্বারা মূলত সমাধান হবে না,বরং সমস্যা আরো বাড়তে পারে। 

এক্ষেত্রে পরামর্শ হলো আপনি আপনার বাবাকে বা আপনার মাকে বিষয়টি পুরোপুরি খুলে বলবেন।

এরপর আপনার বাবা বা আপনার ভাই বা  অভিভাবকদের মধ্যে অন্য কোনো ব্যাক্তি ওই ছেলের সাথে যোগাযোগ করবে এবং সবকিছু বিষয় খুলে বলে তাকে অন্যত্রে বিবাহ করতে বলবে এবং আপনার বাবা আপনাকে অন্যত্রে বিবাহ দিয়ে দিবে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

ago by (8 points)
edited ago by
এক্ষেত্রে সে আমাকে ক্ষমা না করলে আল্লাহপাকও কি আমাকে মাফ করবেন না?
আমি শুধু নিজে তওবা ইস্তেগফার করলেই হবে?

##আমার আম্মু বেঁচে নেই। আর আব্বুকে তো এগুলো বলাই যাবে না! আর আমার বাসায় তাকে এসব কিছু বুঝায় বলার মত তেমন কোন অভিভাবক নাই। যারা আছে তারা রাজিও হবে না এইসব বলতে।গত বছর যখন সে তার অভিভাবক নিয়ে আমাদের বাসায় আসছিল তখন পরিষ্কার করে তাদের জানানো হয়েছিল যে, আমার তাকে পছন্দ না, বিয়েও করতে চাই না(ক্লাস সেভেনের ঘটনা বলা হয়নি)।  সে যেন অন্য কাউকে বিয়ে করে নেয়।
  তারপর এখনো ব্লাক ম্যাজিক করতেছে।  এখন আমার করণীয় কি? মেহেরবানী করে যদি একটু বলতেন 

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...