আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ
আমার অতীতে করা একটি গোনাহ বা ভুলের ব্যাপারে জানতে চাচ্ছিলাম। আমি তখন ক্লাস সেভেনে পড়তাম। আমি পড়াশুনায় যথেষ্ট ভালো ছাত্রী ছিলাম। কিন্তু আমার কিছু বান্ধবীরা ছিল যারা ছোটবেলা থেকেই স্কুল লাইফে প্রেম করা বা ছেলেদের সাথে হারাম সম্পর্ক এগুলোকে গুরুত্ব দিত। আমার তখন দ্বীনের বুঝ না থাকলেও তাদের এই কাজগুলো আমার পছন্দ ছিল না। ফলে আমি তাদেরকে সব সময় নিষেধ করতাম ছেলেদের থেকে সাবধানে থাকতে, দূরে থাকতে, পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে। এরপর ক্লাস সেভেনে থাকতে আমাদেরই ক্লাসমেট কিছু ছেলেদের সম্পর্কে তারা খুব ভালো ভালো কথা বলতো। আর আমি বলতাম এসব ছেলেদের ক্যারেক্টার ভালো হয় না। এরা আজকে তোমাদের পিছনে ঘুরবে কালকে অন্য মেয়ের পিছনে ঘুরবে। এদের পাল্লায় পড়ো না। তো তখন আমার বান্ধবীরা আমাকে বিভিন্ন রকম চ্যালেঞ্জ দিত। পরে এক পর্যায়ে আমার তাদের উপর খুব রাগ হয়ে যায় এবং জেদ তৈরি হয়। তখন ক্লাসের সব থেকে ভালো ভদ্র ছেলের ব্যাপারে তারা অনেক প্রশংসা করতে থাকতো, বলতো সে খুব ভালো ছেলে কোনদিন কোন মেয়েদের দিকে তাকায়ও না। আর আমি তখন রাগ হয়ে বলতাম যে, এই ছেলেরে আমার পিছনে ঘুরাইতে এক সপ্তাহের বেশি টাইম লাগবে না। আমি কিছুই করবো না, খালি ঐ ছেলের দিকে তাকায় থাকব দেখবা তাতেই ছেলে আমার পিছনে ঘুরবে। ওরা বিশ্বাস করতেছিল না এবং এক পর্যায়ে আমার সাথে চ্যালেঞ্জ নেওয়া, বাজি ধরা এগুলো শুরু করল। আর আমিও তখন তাদের সাথে তর্ক বিতর্ক ঝগড়া রাগারাগির এক পর্যায়ে তাদের চ্যালেঞ্জ একসেপ্ট করি। আর ক্লাসে যেয়ে ওই ছেলের দিকে তাকাই থাকতাম। এরকম এক সপ্তাহের মতো তাকায় থাকার পরে আমি নিজে থেকেই আর জিনিসটা অফ করে দিই। পরবর্তীতে দেখা যায় যে, ওই ছেলে সত্যি সত্যি আমার প্রেমে পড়ে যায়। এবং এই দীর্ঘ 12 বছর ধরে সে আমাকে পছন্দ করে। নানাভাবে এসে আমাকে বিয়ে করার জন্য চেষ্টা করে। কিন্তু আমি কোনভাবেই রাজি হয় না। কারণ তাকে আমার এক পারসেন্টও ভালো লাগে না। আমি পরবর্তীতে কলেজে পড়া কালীন সময়ে এসে অনেকবারই প্রস্তাব দিয়েছে। আমি রাজি হয়নি এবং তাকে ভালোভাবেই বারবার বোঝানোর চেষ্টা করছি যে আমার তাকে পছন্দ না। ইনফ্যাক্ট সে আমাকে ব্ল্যাক ম্যাজিক পর্যন্ত করছে কিন্তু তারপরও তার প্রতি আমার কোন আকর্ষণ বা ভালোলাগা তৈরি হয় না। আমাকে বিভিন্ন আননোন নাম্বার বা আইডি থেকে ফোনে বিভিন্ন সময়ে থ্রেড করছে তার সাথে কথা না বললে, যোগাযোগ না করলে অনলাইনে আমার ছবি আপলোড করবে বা এটা সেটা বিভিন্ন তা করবে। মোটামুটি তার জায়গা থেকে যতভাবে চেষ্টা করা যায় সব ভাবে সে চেষ্টা করছে। তার গার্জিয়ান নিয়ে আমার বাসায়ও আসছে। মাঝে আমার বান্ধবীরা মিথ্যা নিউজ ওকে জানাইছে যে আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে তাতেই সে অসুস্থ হয়ে বুকে ব্যথা উঠে হসপিটালে ভর্তি করা লাগছে। প্রথমত তার প্রতি আমার খুব রাগ আর ঘৃণা তৈরি হতো তার এসব কার্যকলাপে। কিন্তু আমার নিজের মধ্যে একটা অনুতপ্ত বা অনুশোচনা বোধ কাজ করতো সবসময়ই যে আমি যদি ক্লাস সেভেনে থাকতে ওর দিকে এরকম করে না তাকাতাম তাহলে হয়তো আজকে ও এত কষ্ট পেত না আর আমারও এত সমস্যার সম্মুখীন হতে হতো না।
উল্লেখ্য, আমি এই প্রায় পাঁচ বছর হতে যাচ্ছে আল্লাহর অশেষ রহমতে দ্বীনের পথে চলে আসছি আলহামদুলিল্লাহ। আমি বিভিন্ন সময় তওবা করছি এবং তার পক্ষ থেকেও যেন আল্লাহ পাক আমাকে মাফপত্র বা সন্তোষপত্র পাওয়াই দেন সেজন্য দোয়া করছি তার হেদায়েতের জন্যও দোয়া করছি। আমি মূলত পর্দা করার কারণে বিবিএ সেকেন্ড ইয়ারে উঠে আমার ভার্সিটির পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছি। এখন হিফয পড়ছি আলহামদুলিল্লাহ। কিন্তু সবার সাথে কম বেশি আমার লেনাদেনা বা মাফ চাওয়া,মাফ করা এগুলা কমপ্লিট করলেও এই ছেলের সমস্যাটার সমাধানই হচ্ছে না। আমার নিজের মধ্যে অনুশোচনা বোধ তো আছেই। আর সে না নিজে স্বাভাবিক জীবন কাটাচ্ছে আর না আমাকে স্বাভাবিক জীবন পার করতে দিচ্ছে। এক্ষেত্রে আমার এখন কি করনীয়?
১)আমি কি এখন আবার আমার ফোনে তার ব্লকটা খুলে তার কাছে সব সত্যিটা স্বীকার করে মাফ চেয়ে নিব? যে, ক্লাস সেভেনে থাকতে আমি এরকম করছি তার জন্য তোমাকে এত কষ্ট পেতে হচ্ছে আমাকে মাফ করে দিও কিন্তু আমার পক্ষে তোমাকে বিয়ে করা সম্ভব না। আমার তোমাকে পছন্দ না, ভালোও লাগে না। এরকমটা বলবো?
তাতে কি আদৌ সমস্যার সমাধান হবে?
২) আর তার কাছে যদি সরাসরি এভাবে বলে মাফ না চায় তাহলে বর্তমান পরিস্থিতিতে আমার কি করনীয় আছে? আমি ভয় পাই অন্যের হক নষ্ট করার গুনাহে যেন পরকালে আমাকে শাস্তি পেতে না হয়।
মেহেরবানী করে যদি আমাকে জানাতেন।