ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
(১)
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের যে দশটি উল্লেখযোগ্য আকিদার কথা পাওয়া যায়,সেই দশটি আকিদাকে আহলে হাদীস সম্প্রদায় মেনে থাকেন।সেজন্য তাদেরকে আহলে সুন্নাত থেকে খারিজ বলা যাবে না।তবে যেহেতু তারা তাকলীদ সম্পর্কে ইজমায়ে উম্মতের খেলাফ অবস্থান করেন,এবং মুকাল্লিদ উলামায়ে কেরামদেরকে ভালমন্দ বলে থাকেন,তাই তাদের দিকে উলামায়ে করাম নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি লালন করে থাকেন।
সালাফ মূলত হাম্বলী মাযহাবের এক অংশকে বলা হয়, যারা ব্যক্তি তাকলীদ করেন না।তবে তারা মুকাল্লিদদেরকে ভালমন্দ কিছু বলেন না।
যেহেতু সালাফদের মত আহলে হাদীস সম্প্রদায়ও তাকলীদ করেন না,তাই কেউ কেউ আহলে হাদীস সম্প্রদায়কে ও সালাফী বলে থাকেন।
সালাফিরা মূলত হাম্বলী মাযহাবের একাংশ যারা ব্যক্তি তাকলীদ করেন না।তবে তারা অন্যদেরকে ভালমন্দ কিছু বলেন না।আর আহলে হাদীস সম্পর্কে শুনা যায় যে,তারা তাদের মতাদর্শের খেলাফদের সম্পর্কে ভালমন্দ বলে থাকেন।এটাই পার্থক্য।
(২)ফতোয়া সাইট islamqa তে মাতুরিদিয়্যাহ আকীদাকে ভ্রান্ত বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এটা তাদের নিজস্ব ব্যক্তিগত মতামত। দুনিয়ার পূর্ব থেকে পশ্চিম এর অনেক আলেম উলামা এ আকিদার অনুসারী ছিলেন। এমনকি আশায়েরাদের কেউও মাতুরিদিয়াদেরকে ভ্রান্ত বলেননি। হ্যা তারা মতপার্থক্য করেছেন।
(৩) আছারী আকীদা অতীতে ছিল না। এটা হাল যামানার আকিদা। তবে তাদের উল্লেখযোগ্য আকিদা আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের আকিদার সাথে সাংঘর্ষিক নয়,বিধায় তাদেরকে কাফির- মুরতাদ বলা যাবে না। হ্যা কিছু ক্ষেত্রে তারা ইজমায়ে উম্মতের বিরোধীতা করেছেন।সেজন্য তাদেরকে বেশতে বেশ পথভ্রষ্ট বলা যেতে পারে।
(৪)
মীযান হারুনের একটি লিখা এ সম্পর্কে অত্যন্ত সুন্দর লেগেছে। আমি হুবহু সেই লেখাটি কপি করে দিচ্ছি,
মৌলিক ঈমানের ভেতরে হ্রাস-বৃদ্ধি নেই। এটা ইমাম আবু হানীফার মাযহাব। শাফেয়ী এবং অন্যান্য সংখ্যাগরিষ্ঠ উলামায়ে কিরামের মতে ঈমানে হ্রাস বৃদ্ধি ঘটে। তাদের দলীল হলো কুরআন ও সুন্নাহর অনেক নসের ‘যাহেরী’ শব্দ। সেখানে সুস্পষ্টভাবেই ঈমানের ব্যাপারে ‘হ্রাস’-‘বৃদ্ধি’ ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু ইমাম আবু হানীফার বক্তব্য হচ্ছে, ঈমান হলো জরুরি কিছু বিষয় সত্যায়ন (এবং স্বীকার) এর নাম। যেগুলো থেকে সামান্য কম করলেও কেউ মুমিন থাকবে না। আবার বেশি করারও মুমিন হওয়ার জন্য জরুরি নয়। সেসব বিষয়ে ঈমান আনার ক্ষেত্রে সকলেই সমান। তাছাড়া প্রথম যুগের সাহাবায়ে কিরামকেও মুমিন বলা হয, অথচ তখন সত্যায়ন ( ও স্বীরোক্তি) ছাড়া অন্য কিছু ছিল না। অর্থাৎ তখন আমল ছিলই না। তারা কি তখন অসম্পূর্ণ মুমিন ছিল? হ্যা এতটুকু বলা যায়, তখন তাদের ঈমান ছিল মুজমাল। এরপর বিভিন্ন আহকাম নাযিল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেগুলোর প্রতি ঈমানও তাফসীল তে থাকে। আর ঈমানের হ্রাস-বৃদ্ধির ব্যাপারে যেসব নস এসেছে সেগুলোর ক্ষেত্রে তাদের বক্তব্য হচ্ছে ওগুলো ঈমানের নূর ও ইয়াকীনের শক্তি ইত্যাদি অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।
তবে তাহকীকের বেলা দেখা গেছে এই মতবিরোধ কেবলই শাব্দিক। অর্থাৎ হাকীকতে মতবিরোধ নেই। কারণ যারা বলেন ঈমানের ক্ষেত্রে হ্রাসবৃদ্ধি হয় না, তাদের উদ্দেশ্য হলো ‘মুতলাকুল ঈমান’ (ন্যূনতম ঈমান; আমল অন্তর্ভুক্ত নয়) অর্থাৎ যতটুকু ঈমান আনা জরুরি সেখানে কম-বেশি নেই। যারা বলেন ঈমানে হ্রাসবৃদ্ধি ঘটে, তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে ‘ঈমান মুতলাক’ (পূর্ণ ঈমান ও আমল) এ কম-বেশি ঘটে থাকে। আর একারণেই রাসূলের হাদীস ‘যখন কোনো ব্যক্তি ব্যাভিচার করে তখন সে মুমিন থাকে না’- এখানে ‘ঈমান মুতলাক’ (পূর্ণ ঈমান) উদ্দেশ্য; মুতলাকুল ঈমান (ন্যূনতম ঈমান) উদ্দেশ্য নয়। কারণ আহলে সুন্নাহর সকলে একমত যে, কবীরা গোনাহের মাধ্যমে ঈমান নাকচ হয় না। একইভবে য হাদীসে এসেছে, ঈমানের ৭০ টির অধিক শাখা। এর উদ্দেশ্য ঈমানের শাখাগুলোর বিভাজন মৌলিক ঈমানের নয়। কারণ সকলেই একমত যে কেউ যদি সারাজীবনেও রাস্তা থেকে ময়লা দূর না করে তবুও মুমিন থাকবে, কাফের হবে না।
এ কারণেই কোনো কোনো আলেম বলেছেন, ঈমান যদি ‘দৃঢ় বিশ্বাস (আকদুন জাযিম) এর নাম হয়ে থাকে, সেখানে স্তরভেদ হওয়ার কেনো সুযোগ নেই। হ্যা আমলের ক্ষেত্রে স্তরভেদ হওয়ার সুযোগ আছে। একারণেই আমলকে ঈমানের পরিপূর্ণতা হিসেবে গণ্য করা হয়। আর যদি আমলকে মূল ঈমানের (পরিপূর্ণতার পরিবর্তে) রোকন হিসেবে গণ্য করা হয়, তাবে খারেজী এবং মুতাযিলাদের দোষ কী?
(শরহুল ওয়াসিয়্যাহ- বাবরতী)
(৫)
একজন সাধারণ মুসলিম হিসেবে ইমানে মুফাসসালের ৭ টি বিষয়ের ওপর বিশ্বাস রাখাই যথেষ্ট।
এই সাতটি বিষয় যথাক্রমে: (১) আল্লাহ, (২) ফেরেশতা, (৩) কিতাব, (৪) রাসুল, (৫) কিয়ামত, (৬) তাকদির ও (৭) পরকাল।
আকিদা নিয়ে বেশী চিন্তা না করে,আ'মল করাই শ্রেয়। এ বিষয়ে সাধারণত কোনো পার্থক্যর কথা গ্রহণযোগ্য কোনো কিতাবে পাওয়া যায়নি।আল্লাহ ই ভালো জানেন।