আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
38 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (4 points)
edited by

আমি একজন মেয়ে,  ভার্সিটির একজন শিক্ষককে উনার নামাজ পড়া এবং দাড়ি রাখা এই দুটো বিষয়ের জন্য উনাকে পছন্দ হয়েছে, অতঃপর কোনরূপ হারাম সম্পর্কে না গিয়ে তাকে বিয়ের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে,পারিবারিকভাবে। আমার পরিবারের উনাকে পছন্দ হয়েছে।  

দেড় মাস হয়ে গিয়েছে, এখনো উনি জানান নাই। হ্যাঁ বা না কোনটাই না। 

উনি আমার ফেসবুকের স্টোরি দুইদিন সিন ও করেছে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার পর, 

যে মাধ্যমে ওনাকে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, উনি উনাকে বলেছে যে আমাকে নাকি কখনো ওই দৃষ্টিতে দেখেনি, উনার ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়ার পরে জানা গেছে যে উনি নাকি আর এক থেকে দুই মাস পরে মাস্টার্স এবং  পিএইচডি  করার জন্য দেশের বাহিরে যাবেন। বর্তমানে উনি হালাল রিযিক হয় এমন জায়গাই কাজ করছেন। 

উনার দ্বীনদারিতা দেখে আমার আসলে ভালো লেগেছে, কিন্তু আসলে , উনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করলেও মিউজিকটাকে ঐভাবে হারাম করে  স্ট্রিকলি  ওভাবে  বাদ দেননি, এবং একই সাথে ক্যাম্পাসে ছেলে মেয়ে আলাদা করার ইস্যুতে উনি আলাদা ক্লাস নিতে উনার ব্যক্তিগতভাবে কোন সমস্যা ছিল না কিন্তু উনি আবার ছেলেমেয়ে যে একসাথে ক্লাস করা যাবে না এটা যে হারাম ওইটা ওইভাবে মেইনটেইন করেন না। 

উনার যে নারী সহকর্মী তাদের ফেসবুকে শালীনতা মেনটেইন করা ছবিতে কেয়ার ইমোজিসহ বিভিন্ন রিয়েক্ট দিয়ে থাকেন, কিন্তু সেটা কোন কুদৃষ্টির কারণে নয়  মানে ওরকম গাইরত বোধ নেই আর কি। 

এমতাবস্থায় আমি কি করব?

উনাকে দেখলে আমার অনেক শান্তি অনুভব করি ভালো লাগে উনার আখলাকে দেখে। 

আমি এখন কি করবো আমি কি উনাকে স্পেসিফিক ভাবে আল্লাহর কাছে চাইবো? আমি খুব চাই আমার একজন দ্বীনদার জীবন সঙ্গী হোক কিন্তু উনি আসলে দ্বীনদারী তার কেমন পর্যায়ে আছে ইসলাম কি বলে। 

আমি তো আর কোন ফেরেশতাকে বিয়ে করতে পারব না কিন্তু তার মধ্যে ইসলামের প্রধান যে বিষয়গুলো আছে ওইগুলো আছে এবং উনি ইসলামের প্রত্যেকটা বিধানের উপর খুবই সম্মান করেন কিন্তু হয়তো ব্যক্তিগত জীবনে ততটা আমল করেন না উনি খুব কম দিন হয়েছে হেদায়েত প্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।তাই ইসলামিক বিধি বিধান সম্পর্কে ততটা উনি জানেন না শুরুতেই তো আসলে মানুষ সবকিছু জেনে যায় না কি করবো আসলে এই মুহূর্তে। কিন্তু ইসলামের মৌলিক এবং গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়গুলো যেমন নামাজ রোজা দাড়ি হালাল রিজিক এগুলো উনি চেষ্টা করেন পালন করার,

আমার জন্য অন্য কোন প্রপোজাল আসে নাই,পারিবারিকভাবে এখন এটা বাদে অন্য পাত্রের জন্য খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে আমার বিয়ের  জন্য। কিন্তু আমি আসলে কি করবো একটু যদি আমাকে বলতেন দয়া করে। 

আমি ওনাকে চাই কিন্তু আবার এটাও ভাবি যে উনি কি প্রকৃত দ্বীনদার হবে? 

আসলে ভালো লেগে গেছে আমার ওনাকে। কিন্তু আমি চাই হালাল ভাবে আসুক উনি আমার জীবনে, আমাদের মাঝে কোন হারাম কিছুই নেই।  

উনার কথা চিন্তা করলে, উনার জন্য দোয়া করলে আমার অনেক পজিটিভিটি কাজ করে। খুব মনে হয় যে আমি ওনাকে পাব। কিন্তু কিছুই তো হচ্ছে না। 

1 Answer

0 votes
by (77,820 points)

ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

জবাবঃ

https://www.ifatwa.info/4541/  নং ফাতাওয়াতে আমরা বলেছি, যে,

বিয়ের আগে পাত্রপাত্রীর যে বিষয়গুলো গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে তার মধ্যে ‘কুফু’ অন্যতম।

আরবি ‘কুফু’ শব্দের অর্থ সমতা, সমান, সাদৃশ্য, সমকক্ষ, সমতুল্য ইত্যাদি।

,

বিয়ের ক্ষেত্রে বর-কনের দ্বীনদারি, সম্পদ, বংশ, সৌন্দর্যতা সব কিছু সমান সমান বা কাছাকাছি হওয়াকে ইসলামী পরিভাষায় কুফু বলে।

স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের রুচি, চাহিদা, অর্থনৈতিক অবস্থান খুব বেশি ভিন্ন হলে সেখানে সুখী দাম্পত্যজীবন প্রতিষ্ঠা কষ্টসাধ্য হয়ে যায়। একজন উচ্চ শ্রেণীর ছেলেমেয়ের চাহিদা-রুচির সাথে একজন দরিদ্র বা মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়ের রুচিবোধের মিল না থাকাটাই স্বাভাবিক।

,

আবার একজন দ্বীনদার পাত্রপাত্রীর সাথে একজন ধর্মবিষয়ে উদাসীন পাত্রপাত্রীর জীবনাচার নাও মিলতে পারে। দ্বীনদার চাইবে সব কিছুতে ধর্মের ছাপ থাকুক। আর দীনহীন চাইবে সব কিছু ধর্মের আবরণমুক্ত থাকুক। সুতরাং এ দুইয়ের একত্রে বসবাস কখনো শান্তি-সুখের ঠিকানা হতে পারে না। তাই পবিত্র কুরআনও বিয়ের ক্ষেত্রে দ্বীনদারিতে সমতা রক্ষার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছে।

,

আল্লাহ বলেন, ‘দুশ্চরিত্রা নারী দুশ্চরিত্র পুরুষদের জন্য; দুশ্চরিত্র পুরুষ দুশ্চরিত্রা নারীর জন্য; সচ্চরিত্রা নারী সচ্চরিত্র পুরুষদের জন্য এবং সচ্চরিত্র পুরুষ সচ্চরিত্রা নারীর জন্য উপযুক্ত।’ (সূরা নূর : ২৬)।

,

অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘ব্যভিচারী পুরুষ যেন ব্যভিচারিণী বা মুশরিক নারী ছাড়া কাউকে বিয়ে না করে। আবার ব্যভিচারিণী নারী যেন ব্যভিচারী পুরুষ বা মুশরিক পুরুষ ছাড়া কাউকে বিয়ে না করে। মুমিনদের জন্য এ ধরনের চরিত্রের নারী-পুরুষকে হারাম করা হয়েছে।’ (সূরা নূর : ৩)।

,

কুরআনের পাশাপাশি রাসূল সা:-এর পবিত্র হাদিস শরিফেও ‘কুফু’ সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা পাওয়া যায়।

রাসূল সা: ‘কুফু’র বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন।

حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ سَابُورَ الرَّقِّيُّ حَدَّثَنَا عَبْدُ الْحَمِيدِ بْنُ سُلَيْمَانَ الْأَنْصَارِيُّ أَخُو فُلَيْحٍ عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ عَجْلَانَ عَنْ ابْنِ وَثِيمَةَ النَّصْرِيِّ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِذَا أَتَاكُمْ مَنْ تَرْضَوْنَ خُلُقَهُ وَدِينَهُ فَزَوِّجُوهُ إِلَّا تَفْعَلُوا تَكُنْ فِتْنَةٌ فِي الْأَرْضِ وَفَسَادٌ عَرِيضٌ

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের নিকট এমন কোন ব্যক্তি বিবাহের প্রস্তাব নিয়ে এলে, যার চরিত্র ও ধর্মানুরাগ সম্পর্কে তোমরা সন্তুষ্ট, তার সাথে (তোমাদের মেয়েদের) বিবাহ দাও। তোমরা যদি তা না করো, তাহলে পৃথিবীতে বিপর্যয় ও ব্যাপক বিশৃংখলা ছড়িয়ে পড়বে। (ইবনে মাজাহ ১৯৬৭,তিরমিযী ১০৮৪, ইরওয়াহ ১৮৬৮, সহীহাহ ১০২২।)

,

হাদীস শরীফে এসেছে-

حَدَّثَنَا عَبْدُ اللهِ بْنُ سَعِيدٍ حَدَّثَنَا الْحَارِثُ بْنُ عِمْرَانَ الْجَعْفَرِيُّ عَنْ هِشَامِ بْنِ عُرْوَةَ عَنْ أَبِيهِ عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم تَخَيَّرُوا لِنُطَفِكُمْ وَانْكِحُوا الْأَكْفَاءَ وَأَنْكِحُوا إِلَيْهِمْ

 ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)  থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা ভবিষ্যত বংশধরদের স্বার্থে উত্তম মহিলা গ্রহণ করো এবং সমতা (কুফু) বিবচেনায় বিবাহ করো, আর বিবাহ দিতেও সমতার প্রতি লক্ষ্য রাখো। (ইবনে মাজাহ ১৯৬৮)

,

হাদীস শরীফে এসেছে-

وَعَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ : «تُنْكَحُ الْمَرْأَةُ لِأَرْبَعٍ : لِمَالِهَا وَلِحَسَبِهَا وَلِجَمَالِهَا وَلِدِينِهَا فَاظْفَرْ بِذَاتِ الدَّيْنِ تَرِبَتْ يَدَاكَ»

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (মূলত) চারটি গুণের কারণে নারীকে বিবাহ করা হয়- নারীর ধন-সম্পদ, অথবা বংশ-মর্যাদা, অথবা রূপ-সৌন্দর্য, অথবা তার ধর্মভীরুর কারণে। (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন) সুতরাং ধর্মভীরুকে প্রাধান্য দিয়ে বিবাহ করে সফল হও। আর যদি এরূপ না কর তাহলে তোমার দু’ হাত ধূলায় ধূসরিত হোক (ধর্মভীরু মহিলাকে প্রাধান্য না দিলে ধ্বংস অবধারিত)! সহীহ : বুখারী ৫০৯০, মুসলিম ১৪৬৬, নাসায়ী ৩২৩০, আবূ দাঊদ ২০৪৭, ইবনু মাজাহ ১৮৫৮, আহমাদ ৯৫২১, ইরওয়া ১৭৮৩, সহীহ আল জামি‘ ৩০০৩।)

,

কুফু সম্পর্কে বিস্তারিত জানুনঃ  https://www.ifatwa.info/4541/

ইস্তেখারার নামাজ সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন- https://ifatwa.info/14451/

,

ছেলে ও ছেলের পরিবার যদি আপনার ও আপনার পরিবারের মত দ্বীনদার না হয় এবং আপনার ও আপনার পরিবারের কুফু এবং তার ও তার পরিবারের কুফুর সাথে মিল না থাকে তাহলে বিয়ের জন্য সামনে অগ্রসর না হওয়াই আমরা পরামর্শ দিবো। কারণ, একজন দ্বীনদার পাত্রপাত্রীর সাথে একজন ধর্মবিষয়ে উদাসীন পাত্রপাত্রীর জীবনাচার নাও মিলতে পারে। দ্বীনদার চাইবে সব কিছুতে ধর্মের ছাপ থাকুক। আর দ্বীনহীন চাইবে সব কিছু ধর্মের আবরণমুক্ত থাকুক। সুতরাং এ দুইয়ের একত্রে বসবাস কখনো শান্তি-সুখের ঠিকানা হতে পারে না। তাই পবিত্র কুরআনও বিয়ের ক্ষেত্রে দ্বীনদারিতে সমতা রক্ষার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছে।

,

★ সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী বোন!

,

আপনি ইস্তেখারাহ করে ও আপনার পরিবারের সাথে পরামর্শ করে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন ইনশাআল্লাহ। 

আর কে আপনার জন্য কল্যাণকর আর কে অকল্যাণকর? তা আল্লাহই ভালো জানেন। সুতরাং নির্দিষ্টকরে কাউকে পাওয়ার জন্য দু'আ না করে বরং যা আপনার জন্য কল্যাণকর হবে, যিনি আপনার জন্য কল্যাণকর হবেন, তার জন্যই আপনি দু'আ করবেন।

,

আল্লাহর কাছে এভাবে দু'আ করবেন,

হে আল্লাহ! যে আমার জন্য কল্যাণকর হবে, তাকেই আমার জীবনসঙ্গী হিসেবে দিয়ে দেন। অথবা ঐ ছেলে যদি আমার জন্য কল্যাণকর হয়, তাহলে তাকেই আমার জন্য জীবন সাথী বানিয়ে দিন।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী আব্দুল ওয়াহিদ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...