وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
(০১)
আল্লাহ তাআলা বলেন,
يَهَبُ لِمَن يَشَآءُ إِنَٰثٗا وَيَهَبُ لِمَن يَشَآءُ ٱلذُّكُورَ أَوۡ يُزَوِّجُهُمۡ ذُكۡرَانٗا وَإِنَٰثٗاۖ وَيَجۡعَلُ مَن يَشَآءُ عَقِيمًاۚ
‘আল্লাহ যাকে ইচ্ছা কন্যা সন্তান দান করেন, যাকে ইচ্ছা পুত্র সন্তান দান করেন অথবা ছেলে-মেয়ে উভয়ই দান করেন। আবার যাকে ইচ্ছে বন্ধ্যা করেন।’ (সূরা আশ্শূরা ৫০)
এ আয়াত থেকে আমরা বুঝতে পারি, সন্তান যেমন আল্লাহর ইচ্ছাতেই হয়, তেমনই সন্তান ছেলে হবে না মেয়ে হবে তাও আল্লাহর ইচ্ছাতেই নির্ধারণ হয়।
এ আকিদা স্মরণ রাখা আবশ্যক যে সব কিছু করার ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহর হাতে। ছেলে মেয়ে উভয়ই আল্লাহর দান। মূলত নেক সন্তানই কাম্য হওয়া উচিত। ছেলে মেয়ে যা-ই হোক, যদি নেক সন্তান হয়, তাহলেই সফলতা।
★★পুত্র সন্তান লাভ করতে অনেককে অনেক বুযুর্গানে দ্বীনের দেওয়া বিভিন্ন রকমের তাবিজ ব্যবহার করতে বা দুয়া পড়তে দেখা যায়। উক্ত দোয়া তাবীজে যদি কোন প্রকার শিরকী কথাবার্তা না থাকে, তাবিজের শর্ত সমূহ মেনেই তাহা ব্যবহার করা হয় , তাহলে কোন সমস্যা নেই। সেই সাথে লক্ষ রাখতে হবে, কুরআনের আয়াতের যেন কোন অসম্মান না হয়।
প্রকৃতপক্ষে গর্ভাবস্থার জন্য কোরআন-সু্ন্নাহয় বর্ণিত কোনো নির্দিষ্ট আমল বা দোয়া নেই। বরং একজন স্ত্রী তাঁর স্বামী কর্তৃক গর্ভবতী হওয়াটাই একটি স্বতন্ত্র এবং এতটাই ফজিলতপূর্ণ আমল যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বিখ্যাত মহিলা সাহাবি সালামা রাযি.কে বলেছেন—
أَفَمَا تَرْضَى إِحْدَاكُنَّ أَنَّهَا إِذَا كَانَتْ حَامِلًا مِنْ زَوْجِهَا ، وَهُوَ عَنْهَا رَاضٍ أَنَّ لَهَا مِثْلَ أَجْرِ الصَّائِمِ الْقَائِمِ فِي سَبِيلِ اللَّهِ ، فَإِذَا أَصَابَهَا الطَّلْقُ لَمْ يَعْلَمْ أَهْلُ السَّمَاءِ وَأَهْلُ الأَرْضِ مَا أُخْفِيَ لَهَا مِنْ قُرَّةِ أَعْيُنٍ ، فَإِذَا وَضَعَتْ لَمْ يَخْرُجْ مِنْهَا جُرْعَةٌ مِنْ لَبَنِهَا ، وَلَمْ يَمُصَّ مَصَّةً إِلا كَانَ لَهَا بِكُلِّ جُرْعَةٍ وَبِكُلِّ مَصَّةٍ حَسَنَةٌ ، فَإِنْ أَسْهَرَها لَيْلَةً كَانَ لَهَا مِثْلُ أَجْرِ سَبْعِينَ رَقَبَةً تُعْتِقُهُنَّ فِي سَبِيلِ اللَّهِ
তোমাদের কেউ কি এতে খুশি নয় যে, সে যখন স্বামী কর্তৃক গর্ভবতী হয় এবং স্বামী তার প্রতি সন্তুষ্টও থাকে তখন (এই গর্ভকালীন) সে আল্লাহর পথে সর্বদা রোজা পালনকারী ও সারারাত নফল ইবাদতকারীর মতো সওয়াব পাবে? তার যখন প্রসব ব্যথা শুরু হয় তখন তার জন্য নয়ন শীতলকারী কী কী নিয়ামত লুকিয়ে রাখা হয়, তা আসমান জমিনের কোনো অধিবাসীই জানে না। সে যখন সন্তান প্রসব করে তখন তার দুধের প্রতিটি ফোঁটার পরিবর্তে একটি করে নেকি দেওয়া হয়। এ সন্তান যদি কোনো রাতে তাকে জাগিয়ে রাখে (অসুখ ইত্যাদির কারণে বিরক্ত করে মাকে ঘুমুতে না দেয়) তাহলে সে আল্লাহর পথে নিখুঁত সত্তরটি গোলাম আযাদ করার সওয়াব পাবে। (আলমু’জাম, তাবরানী: ৬৯০৮, আবু নুআইম: ৭০৮৯, মাজমাউজজাওয়াইদ: ৪/৩০৫ )
★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
দোয়াতে নির্দিষ্ট করে পুত্র সন্তান চাইতে পারবেন। এটি নাজায়েজ নয়।
(০২)
নেক সন্তান লাভের জন্য মা হালাল রিযিক ভক্ষন করবে,হারাম, গুনাহের কাজ থেকে বেঁচে থাকবে, গান বাজনা থেকে বেঁচে থাকবে,বেশি বেশি যিকির,কুরআন তিলাওয়াত করতে হবে,এবং নিম্নোক্ত দোয়া করবেঃ-
رَبِّ هَبْ لِي مِن لَّدُنْكَ ذُرِّيَّةً طَيِّبَةً إِنَّكَ سَمِيعُ الدُّعَاء
হে, আমার পালনকর্তা! আপনার নিকট থেকে আমাকে পুত-পবিত্র সন্তান দান করুন। নিশ্চয়ই আপনি প্রার্থনা শ্রবণকারী। (সূরা আল-ইমরান ৩৮)
رَبِّ هَبْ لِي مِنَ الصَّالِحِينَ
‘হে আমার পরওয়ারদেগার! আমাকে নেক সন্তান দান করুন।’ (সূরা সাফফাত ১০০)
رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ وَاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَامًا
‘হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদের জীবনসঙ্গীর পক্ষ থেকে এবং আমাদের সন্তানের পক্ষ থেকে আমাদের জন্যে চোখের শীতলতা দান দান করুন এবং আমাদেরকে মুত্তাকীদের জন্যে আদর্শস্বরূপ দান করুন।’ (সূরা ফুরকান ৭৪)
★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
সূরা সফফাতের ১০০ নম্বর আয়াতে নেক সন্তান চাওয়া বুঝায়।
এক্ষেত্রে সন্তানটি ছেলেও হতে পারে বা মেয়েও হতে পারে।
কুরআনের অসংখ্য জায়গায় শুধু পুঃলিঙ্গ শব্দ ব্যবহার করে থাকে, ওই পুঃলিঙ্গ শব্দের মধ্যেই স্ত্রীলিঙ্গ শব্দও অন্তর্ভুক্ত থাকে।
(০৩)
গুনাহ (পাপ) থেকে বাঁচার জন্য একজন মুমিনকে আন্তরিকভাবে চেষ্টা করতে হয়।
ইসলাম আমাদেরকে গুনাহ থেকে দূরে থাকার এবং আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাওয়ার জন্য বেশ কিছু পথনির্দেশনা দিয়েছেঃ-
★গুনাহ থেকে বাঁচার মূল চাবিকাঠি হলো আল্লাহর ভয় রাখা।
কুরআনে বলা হয়েছে:
"তোমরা যারা ঈমান এনেছো, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো যেমনভাবে তাঁকে ভয় করা উচিত।"
(সূরা আল-ইমরান, ৩:১০২)
★নিয়মিত কুরআন ও হাদিস পাঠ
ইসলামী জ্ঞান অর্জন করলে ভালো ও মন্দের পার্থক্য পরিষ্কার হয় এবং গুনাহের ভয়াবহতা হৃদয়ে বদ্ধমূল হয়।
হাদিসে এসেছে:
"যে ব্যক্তি কুরআন পড়ে এবং সে অনুযায়ী আমল করে, তাকে জান্নাতে যেতে বলা হবে।"
★নামাজ কায়েম করা,কেননা নামাজ গুনাহ থেকে বিরত রাখে।
মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ-
إِنَّ الصَّلَاةَ تَنْهَىٰ عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالْمُنكَرِ
“নিশ্চয় নামায অশ্লীল ও গর্হিত কার্য থেকে বিরত রাখে।” [সূরা আনকাবুত: ৪৫]
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট আগমন করে অভিযোগ করল,
إنَّ فُلانًا يصلِّي باللَّيلِ فإذا أصبحَ سرقَ ، فقالَ : إنَّهُ سينْهاهُ ما تقولُ
“অমুক লোক রাতে নামায পড়ে আর ভোর হলে চুরি করে।” তখন তিনি বললেন, “তুমি যা বলছ সলাত তাকে সেটা থেকে (চুরি করা থেকে) বিরত রাখবে।”
[সিলসিলা সহীহাহ, তাহকীক মিশকাত)
★তাওবা ও ইস্তিগফার করা (অনুশোচনা ও ক্ষমা প্রার্থনা)
গুনাহ হয়ে গেলে সাথে সাথে তওবা করা উচিত।
“নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবাকারীদের ভালোবাসেন।”
(সূরা বাকারা, ২:২২২)
★গুনাহের কারণ ও পরিবেশ থেকে দূরে থাকা
যেসব পরিবেশ, বন্ধু, বা মাধ্যম গুনাহের দিকে টেনে নেয়, সেগুলো থেকে নিজেকে দূরে রাখতে হবে।
যেমন: খারাপ বন্ধুত্ব, হারাম ওয়েবসাইট, ফাহিশা, প্রলোভন ইত্যাদি।
★সৎ সঙ্গ গ্রহণ করা।
ভালো বন্ধু মানুষকে গুনাহ থেকে বিরত রাখে এবং নেক পথে আগ্রহী করে।
সুতরাং নেককার লোকদের সাথে বেশি উঠাবসা করতে হবে।
★ফাঁকা সময়কে ইবাদত বা উপকারী কাজে ব্যয় করা।
অলসতা গুনাহের দিকে ধাবিত করে। তাই সময়কে যথাযথ কাজে লাগানো উচিত।
★মৃত্যু ও আখিরাতের কথা স্মরণ করা
গুনাহ করতে গেলে মৃত্যুর কথা মনে করো। জান্নাত-জাহান্নামের ভয় হৃদয়ে জাগ্রত রাখো।
(০৪)
পরবর্তীতে আর এমনটি করবেননা, আল্লাহ তায়ালার কাছে খালেস দিলে তওবা করলে প্রশ্নের বিবরণ মতে আশা করি সন্তানের উপর উক্ত পাপের প্রভাব পরবেনা। ইনশাআল্লাহ।