আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
19 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (34 points)
আসসালামু আলাইকুম,

১। আমার বাসায় স্কুলের ছোটবেলার বিভিন্ন শ্রেণির ইসলাম শিক্ষা বই রয়েছে এবং একটি অনেক পুরাতন কুরআন শরীফ রয়েছে যেটা পৃষ্ঠা উল্টালেই ছিড়ে যায়। ঐগুলোতে তো কুরআন হাদিসের আরবি লেখা রয়েছে। তাই এগুলো ফেলার বিধানটা জানতে চাচ্ছিলাম। আমি থাকি ঢাকাতে। এখানে তো প্রবাহমান নদী নেই। আবার পাকা রাস্তা তাই মাটির নিচেও চাপা দেওয়াও ঝামেলা। কবরস্থানও বাসা থেকে অনেক দূরে। এমতাবস্থায় কি করতে পারি?

২। আমার এক প্রতিবেশী আমাকে তার বাংলা অনুবাদ সহ কোরআন শরীফ দিয়ে গিয়েছেন আমাকে পড়ার জন্য। আমার কাছে আরো দুইটা কোরআন শরীফ অতিরিক্ত রয়েছে যেগুলো প্রতিনিয়ত পড়া হয় আলহামদুলিল্লাহ। এখন আমি ওই কোরআন শরীফটি কি করব? বাসায় রেখে দিব,  নাকি মসজিদে দিয়ে দিব, নাকি অন্য কোন ব্যবস্থা করব? এ সংক্রান্ত আরেকটা বিষয় জানার ছিল যে: একটা কথা শুনেছিলাম  বাসায় যদি কোরআন শরীফ পড়া না হয় তাহলে কোরআন নাকি নাকি বদদোয়া করে বা এরকম কিছু। এখন আমার তো অন্য কোরআন শরীফগুলো নিয়মিত পড়া হয় আলহামদুলিল্লাহ। তাহলে ঐ বাংলা অনুবাদ সহ কোরআন শরীফটি না পড়ার কারণেও কি আমার জন্য উপরোক্ত কথা প্রযোজ্য হবে?

1 Answer

+1 vote
by (647,730 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 

(০১)
পবিত্র কোরআনের পুরাতন কপিগুলো তেলাওয়াতের অনুপযুক্ত হয়ে গেলে যত্ন করে সরিয়ে নিতে হবে। এরপর পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন কাপড়ে পেঁচিয়ে মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে।
তবে এমন জায়গায় দাফন (পুঁতে) করতে হবে, যেখানে মানুষের চলাচল নেই।

যদি সেটি আবার প্রকাশ হওয়ার ভয় হয়,তাহলে সেটি জালিয়ে ছাইকে দাফন করে দিবে।
অথবা প্রবাহমান নদি/সাগরে প্রবাহ করে দিবে।
(কিতাবুন নাওয়াজেল ১৫/৭৬)

কেহ কেহ বলেছেন যে আর যদি পুঁতে ফেলা সম্ভব না হয়, তাহলে ভারী কোনো বস্তুর সঙ্গে বেঁধে গভীর কোনো জলাশয়ে ডুবিয়ে দিতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে, কোরআনের সঙ্গে যেন কোনো ধরনের অসম্মানজনক কাজ না হয়।
,
পুড়ানোর বিষয় নিয়ে উলামায়ে কেরামদের মাঝে অনেক মতবিরোধ রয়েছে,তাই দাফন করর দেওয়াই হলো উত্তম পন্থা। 

,
হাদীস শরীফে এসেছেঃ
 
وَعَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ: أَنَّ حُذَيْفَةَ بْنَ الْيَمَانِ قَدِمَ عَلٰى عُثْمَانَ وَكَانَ يُغَازِىْ أَهْلَ الشَّامِ فِىْ فَتْحِ أَرْمِينِيَّةَ وَأَذْرَبِيجَانَ مَعَ أَهْلِ الْعِرَاقِ فَأَفْزَعَ حُذَيْفَةَ اخْتِلَافُهُمْ فِى الْقِرَاءَةِ فَقَالَ حُذَيْفَةُ لِعُثْمَانَ يَا أَمِيرَ الْمُؤْمِنِينَ أَدْرِكْ هٰذِهِ الْأُمَّةَ قَبْلَ أَنْ يَخْتَلِفُوْا فِى الْكِتَابِ اخْتِلَافَ الْيَهُودِ وَالنَّصَارٰى فَأَرْسَلَ عُثْمَانُ إِلٰى حَفْصَةَ أَنْ أَرْسِلِىْ إِلَيْنَا بِالصُّحُفِ نَنْسَخُهَا فِى الْمَصَاحِفِ ثُمَّ نَرُدُّهَا إِلَيْكِ فَأَرْسَلَتْ بِهَا حَفْصَةُ إِلٰى عُثْمَانَ فَأَمَرَ زَيْدَ بْنَ ثَابِتٍ وَعَبْدَ اللّٰهِ بْنَ الزُّبَيْرِ وَسَعِيْدَ بْنَ الْعَاصِ وَعَبْدَ الرَّحْمَنِ بْنَ الْحَارِثِ بْنِ هِشَامٍ فَنَسَخُوهَا فِى الْمَصَاحِفِ وَقَالَ عُثْمَانُ لِلرَّهْطِ الْقُرَشِيِّيْنَ الثَّلَاثِ إِذَا اخْتَلَفْتُمْ فِىْ شَىْءٍ مِنَ الْقُرْاٰنِ فَاكْتُبُوهُ بِلِسَانِ قُرَيْشٍ فَإِنَّمَا نَزَلَ بِلِسَانِهِمْ فَفَعَلُوا حَتّٰى اِذَا نَسَخُوا الصُّحُفَ فِى الْمَصَاحِفِ رَدَّ عُثْمَانُ الصُّحُفَ إِلٰى حَفْصَةَ وَأَرْسَلَ إِلٰى كُلِّ أُفُقٍ بِمُصْحَفٍ مِمَّا نَسَخُوْا وَأَمَرَ بِمَا سِوَاهُ مِنَ الْقُرْاٰنِ فِىْ كُلِّ صَحِيفَةٍ أَوْ مُصْحَفٍ أَنْ يُحْرَقَ

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুযায়ফাহ্ ইবনু ইয়ামান, খলীফা ‘উসমান (রাঃ)-এর কাছে মাদীনায় এলেন। তখন হুযায়ফাহ্ ইরাক্বীদের সাথে থেকে আরমীনিয়্যাহ্ (আরমেনিয়া) ও আযরাবীজান (আযারবাইজান) জয় করার জন্য শামবাসীদের (সিরিয়াবাসীদের) বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছিলেন। এখানে তাদের অমিল কুরআন তিলাওয়াত তাকে উদ্বিগ্ন করে তুলল। তিনি ‘উসমান (রাঃ)-কে বললেন, হে আমীরুল মু’মিনীন! ইয়াহূদী-খৃষ্টানদের মতো আল্লাহর কিতাবে ভিন্নতা আসার আগে আপনি এ জাতিকে রক্ষা করুন। তাই ‘উসমান (রাঃ) উম্মুল মু’মিনীন হাফসাহ্’র নিকট রক্ষিত মাসহাফ (কুরআন মাজীদ) তার নিকট পাঠিয়ে দেবার জন্য খবর পাঠালেন। তিনি বললেন, আমরা সেটাকে বিভিন্ন মাসহাফে অনুলিপি করে আবার আপনার নিকট তা পাঠিয়ে দিব।  হাফসাহ্ (রাঃ) সে সহীফাহ্ ‘উসমানের নিকট পাঠিয়ে দিলেন। ‘উসমান (রাঃ) সাহাবী যায়দ ইবনু সাবিত, ‘আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র, সা‘ঈদ ইবনু ‘আস ও ‘আবদুল্লাহ ইবনু হারিস ইবনু হিশামকে এ সহীফা কপি করার নির্দেশ দিলেন।

হুকুম মতো তারা এ সহীফার অনেক কপি করে নিলেন। সে সময় ‘উসমান কুরায়শী তিন ব্যক্তিকে বলে দিয়েছিলেন, কুরআনের কোন স্থানে যায়দ-এর সাথে আপনাদের মতভেদ হলে তা কুরায়শদের রীতিতে লিখে নিবেন। কারণ কুরআন মূলত তাদের রীতিতেই নাযিল হয়েছে। তারা নির্দেশ মতো কাজ করলেন। সর্বশেষ সমস্ত সহীফাহ্ বিভিন্ন মাসহাফে কপি করে নেবার পর ‘উসমান মূল সহীফাহ্ হাফসাহ্’র নিকট ফেরত পাঠালেন। তাদের কপি করা সহীফাহসমূহের এক এক কপি রাজ্যের এক এক এলাকায় পাঠিয়ে দিলেন। এ কপি ছাড়া অন্য সব আগের সহীফায় লিখিত কুরআনকে জ্বালিয়ে ফেলতে নির্দেশ জারী করেছিলেন।
সহীহ : বুখারী ৪৯৮৭, তিরমিযী ৩১০৪, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ২৩৭৪, সহীহ ইবনু হিব্বান ৪৫০৬।

আরো জানুনঃ- 

অব্যবহারযোগ্য পুরাতন কুরআনের নুসখা সম্পর্কে তিনটি পদ্ধতি গ্রহণ করা যেতে পারে,

(১) পবিত্র কাপড় দ্বারা মুড়িয়ে এমন স্থানে দাফন করে দেওয়াই উচিৎ যেখানে লোকদের সাধারণত চলাচল নেই। কবর খনন করে বা বগলি কবর করে, সেখানে দাফন করাই উত্তম হিসেবে বিবেচিত হবে।

(২) ভাড়ী কোনো জিনিষ বেধে গভীর পানিতে ছেড়ে দেওয়া।

(৩) পানি দ্বারা ধৌত করে লিখাকে মিটিয়ে দেওয়া বা ক্যামিকাল দ্বারা মিটিয়ে দিয়ে অত:পর জ্বালিয়ে দেওয়া।

আরো জানুনঃ- 

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,
প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে এই কপি গুলো আপাতত আপনার কাছে যত্ন করে রেখে দিবেন।

যখন প্রবাহমান নদীর কাছে যাবেন,তখন এই কপি গুলো বা এগুলো পুড়িয়ে এর ছাই নিয়ে গিয়ে নদীতে প্রবাহ করে দিবেন।

অথবা যখম গ্রামে যাবেন,তখন এই কপি গুলো এমন জায়গায় দাফন (পুঁতে) করে দিবেন, যেখানে মানুষের চলাচল নেই।

(০২)
আপনি সেই কোরআন শরীফটি বাসাতেও রাখতে পারবেন বা কাউকে গিফট করতে পারবেন বা মসজিদে দান করতে পারবেন কোন সমস্যা নাই।

প্রশ্নের বিবরণ মতে সেই কুরআন শরীফ যদি বাসায় রেখে দেন,সেক্ষেত্রে তাহা না পড়ার কারনে কোনো সমস্যা হবেনা।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...