আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
10 views
ago in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (3 points)
আসসালামু আলাইকুম উস্তাদ,

আমি আমার গ্রামে একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুল তৈরি করার কাজ করছি। স্কুলটি প্লে থেকে ৫ম শ্রেণীর পর্যন্ত থাকবে। পুরুষ এবং মহিলা শিক্ষক উভয়ই থাকবে। তবে, মহিলা শিক্ষক পর্দা করবে। স্কুলের শুরুতে প্রত্যেকটি মুসলিম শিক্ষার্থীর জন্য কোরআন শিক্ষা ক্লাস থাকবে, অর্থাৎ বাধ্যতামূলক মুক্তব  থাকবে।
১. এভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরি করার ব্যাপারে আপনার পরামর্শ চাচ্ছি।

২. যদি বাবা-মায়ের নামে স্কুল করি সেক্ষেত্রে স্কুলে কোন গুনাহ এর কাজ হলে আমার মৃত বাবার আযাব হবে কি না?

৩. যদি কোন ইসলামিক নাম ব্যবহার করি এবং সেক্ষেত্রে যদি স্কুলে কোন গুনাহ এর কাজ হয় তাহলে আরও বেশী গুনাহ হবে কি না? যেমন: মিসবাহ মডেল স্কুল নাম দিলে ইত্যাদি।

1 Answer

0 votes
ago by (644,310 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

(০১)
https://ifatwa.info/97510/ নং ফতোয়াতে উল্লেখ রয়েছেঃ- 
মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ- 

وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَىٰ ۖ وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ ۚ وَاتَّقُوا اللَّهَ ۖ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ [٥:٢] 

সৎকর্ম ও খোদাভীতিতে একে অন্যের সাহায্য কর। পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে একে অন্যের সহায়তা করো না। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা কঠোর শাস্তিদাতা। {সূরা মায়িদা-২}

হাদীস শরীফে এসেছেঃ 

حَدَّثَنَا نَصْرُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ الْكُوفِيُّ، حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ بَشِيرٍ، عَنْ شَبِيبِ بْنِ بِشْرٍ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ أَتَى النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم رَجُلٌ يَسْتَحْمِلُهُ فَلَمْ يَجِدْ عِنْدَهُ مَا يَتَحَمَّلُهُ فَدَلَّهُ عَلَى آخَرَ فَحَمَلَهُ . فَأَتَى النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَأَخْبَرَهُ فَقَالَ " إِنَّ الدَّالَّ عَلَى الْخَيْرِ كَفَاعِلِهِ "

নাসর ইবন আবদুর রহমান কূফী (রহঃ) ..... আনাস ইবন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এক ব্যাক্তি এসে একটি বাহন চাইলে। কিন্তু নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের কাছে তার আরোহণের জন্য কিছু পেলেন না। তাই তিনি অন্য একজনের কাছে পাঠিয়ে দিলেন, ঐ ব্যক্তি তাকে একটি বাহন দিল। পরে সে এসে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তা জানালে তিনি বললেনঃ ভাল কাজের পথ প্রদর্শনকারী তা সম্পাদনকারীর মতই। 

হাসান সহীহ, সহিহাহ ১১৬০, তা'লিকুর রাগীব ১/৭২, তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ২৬৭০ [আল মাদানী প্রকাশনী]

وَحَدَّثَنِي عَنْ مَالِك أَنَّهُ بَلَغَهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَا مِنْ دَاعٍ يَدْعُو إِلَى هُدًى إِلَّا كَانَ لَهُ مِثْلُ أَجْرِ مَنْ اتَّبَعَهُ لَا يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ أُجُورِهِمْ شَيْئًا وَمَا مِنْ دَاعٍ يَدْعُو إِلَى ضَلَالَةٍ إِلَّا كَانَ عَلَيْهِ مِثْلُ أَوْزَارِهِمْ لَا يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ أَوْزَارِهِمْ شَيْئًا

মালিক (রহঃ) বলেনঃ তাহার নিকট খবর পৌছিয়াছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফরমাইয়াছেনঃ যেকোন আহবানকারী হিদায়াতের দিকে আহবান করিবে তবে তাহাকে তাহার অনুসরণকারীদের সমান পুণ্য দেওয়া হইবে। অনুসরণকারীদের পুণ্য হইতে বিন্দুমাত্র কম করা হইবে না। আর যেকোন আহবানকারী পথভ্রষ্টতার দিকে আহবান করিবে, তবে তাহার উপর অনুসরণকারীদের পাপসমূহের সমান পাপ বৰ্তাইবে। তাহাতে অনুসরণকারীদের পাপসমূহের এতটুকুও কম করা হইবে না।
(মুয়াত্তা মালিক ৪৯৬)

হাদীস শরীফে এসেছেঃ- 

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
لَأَنْ يَهْدِيَ اللَّهُ بِكَ رَجُلًا وَاحِدًا خَيْرٌ لَكَ مِنْ أَنْ يَكُونَ لَكَ حُمْرُ النَّعَمِ

“তোমার মাধ্যমে যদি আল্লাহ একজন লোককেও হেদায়েত দেন তবে তা তোমার জন্য একটি লাল উট পাওয়া থেকেও উত্তম।” (বুখারী ১২/৩৭)

তিনি আরো বলেন:

مَنْ دَعَا إِلَى هُدًى كَانَ لَهُ مِنْ الْأَجْرِ مِثْلُ أُجُورِ مَنْ تَبِعَهُ لَا يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ أُجُورِهِمْ شَيْئًا

“যে ব্যক্তি হেদায়েতের পথে আহবান করে সে ঐ পরিমাণ সওয়াবের অধিকারী হয় যে ব্যক্তি তদনুযায়ী আমল করে। কিন্তু এতে আহ্বানকারীর সওয়াব কমানো হয় না।”(সুনানু আবি দাউদ-৪৬০৯)

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,
আপনার উদ্যোগটি খুবই প্রশংসনীয় এবং সময়োপযোগী—একটি ইসলামি মূল্যবোধসম্পন্ন কিন্ডারগার্টেন ও প্রাথমিক বিদ্যালয় তৈরি করে গ্রামে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়ার এ প্রচেষ্টা নিঃসন্দেহে অনেক মানুষের উপকারে আসবে। 

এটি সময় উপযোগী একটি সিদ্ধান্ত, মাশাআল্লাহ। 

আল্লাহ তায়ালা আপনাকে কবুল করুন,আমিন।

আপনি যেহেতু প্লে থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের জন্য একটি ইসলামিক-ভিত্তিক স্কুল করতে চাচ্ছেন, নিচে কিছু পরামর্শ তুলে ধরছি যা আপনার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহায়ক হতে পারে:

★ইসলামী ও আধুনিক শিক্ষার সমন্বয়

১. মক্তব/কোরআন শিক্ষা বাধ্যতামূলক

প্রতিদিনের প্রথম ক্লাস কোরআন শিক্ষা হতে পারে।

মৌলিক ইসলামি শিক্ষা (কালেমা, নামাজ, আকাইদ, দোয়া, আদব, হাদিস) সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করুন।

হিফজ ক্লাস (আংশিক) বা নাজেরা বিভাগ রাখতে পারেন আগ্রহীদের জন্য।


★বই ও পরীক্ষা পদ্ধতিতে যথাযথ মান বজায় রাখতে হবে।

ইংরেজি ও গণিতের জন্য আলাদাভাবে বেসিক দক্ষতা গড়ার উপর গুরুত্ব দিন।

★নারী শিক্ষকদের পর্দা

নারী শিক্ষকদের জন্য আলাদা প্রবেশ ও বসার ব্যবস্থা রাখুন (যেমনঃ ওয়ার্ক স্টেশন আলাদা), অথবা ক্লাসে পর্দা নিশ্চিত করুন।

★প্রতিটি শ্রেণির জন্য আলাদা কক্ষ রাখুন।

শিশুদের বয়স অনুযায়ী ক্লাসরুম সাজান (রঙিন, খেলাধুলার উপকরণ, বইয়ের কর্নার ইত্যাদি)।

★আলাদা অজু ও নামাজের স্থান
শিক্ষার্থী ও শিক্ষক শিক্ষিকাদের জন্য আলাদা অজু ও নামাজের জায়গা তৈরি করুন।

★ছেলেমেয়েদের জন্য আলাদা টয়লেট ব্যবস্থা দিন।

খেলার মাঠ ও কিছু শারীরিক কসরত শেখানোর ব্যবস্থা রাখলে ভালো হয়।

★কুরআন শিক্ষা ও ইসলামি শিক্ষা বিষয়ক শিক্ষকদের পাশাপাশি আধুনিক বিষয়ে দক্ষ শিক্ষক রাখুন।

শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিন যেন শিশুদের সাথে আচরণ ও পড়ানোর কৌশল উন্নত হয়।

★স্থানীয় শিক্ষিত লোকজন, আলেম ও অভিভাবকদের সমন্বয়ে একটি পরিচালনা কমিটি তৈরি করুন।

★সকাল শুরু হবে মক্তব ও দোয়া হাদীস,তিলাওয়াত দিয়ে।

এরপর নিয়মিত একাডেমিক ক্লাস হবে।

শুক্রবার ছুটি বা হাফ ডে রাখতে পারেন।

প্রতি সপ্তাহে একটি ইসলামি চরিত্র গঠনের ক্লাস বা অ্যাক্টিভিটি রাখতে পারেন।

★ফি কাঠামো নমনীয় রাখুন,যাতে কাহারো উপর জুলুম না হয়, দরিদ্র পরিবারের শিশুদের জন্য স্কলারশিপ দিন।

শিশুদের হামদ,নাত, আবৃত্তি, হাদিস প্রতিযোগিতা ইত্যাদির আয়োজন করে তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস গড়ে তুলুন।
(কিছু তথ্য সংগৃহীত।)

(০২)
এতে আপনার মৃত বাবার আযাব হবেনা।

(০৩)
যতটুকু গুনাহ হওয়ার কথা, ঠিক ততটুকুই গুনাহ হবে।

ইসলামিক নাম রাখার কারণে আলাদাভাবে অতিরিক্ত কোন গুনাহ হবে না।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...