اسلام عليكم ورحمة الله
আমার বিয়ের প্রায় তিন বছর একটা বাচ্চা আছে। আমি এবং আমার স্বামী দুইজনই জেনারেল শিক্ষিত, দ্বীনে ফেরা। ইসলাম প্রাকটিস করি। কিন্তু আমার স্বামীর পরিবার সম্পূর্ণ বিপরীত। সমস্যা এখানেই। আমি মাহরাম নন-মাহারাম মেইনটেইন করি বিয়ের আগে থেকেই আলহামদুলিল্লাহ। তো পুরুষ মানুষের সাথে কথা বলতে কিংবা তাদের সামনে যেতে আমার আমার ইতস্তত বোধ হয় এবং হত। মনে হয় আমি আগুনের মধ্যে আছি।
যাই হোক এবার আসল ঘটনায় আসি।
️প্রথমত, স্বামীর নিকটাত্মীয় পুরুষদের সাথে আগে কথা বলতাম কিন্তু কিছু ঘটনার কারণে ফিতনার আশঙ্কা থেকে আর কথা বলিনা।
1️⃣ নন্দাই:
আমি প্রসূতি অবস্থায় হসপিটালের কাছে আমার ননদের বাসা হওয়ার কারণে সেখানে কিছুদিন থাকাকালীন সময়ে ননদের স্বামী কোনো প্রকার অনুমতি ছাড়াই তিন বার আমার রুমে প্রবেশ করেছিলেন। একবার আমি বাথরুমে ছিলাম, আরেকবার বাবুকে ব্রেস্টফিডিং করাচ্ছিলাম, অন্যবার বাবুকে পাশে রেখে শুয়ে ছিলাম, ইনি এসে কতক্ষণ আমার মাথার পাশে দাঁড়িয়ে থেকে বাবু কী করে বলে কয়ে চলে যান এসময় আমার পায়ের কিছু অংশ হয়তো উন্মুক্ত ছিল আমি অনুভব করছিলাম কিন্তু বাবু ডেলিভারী হওয়ার পরের ব্যথার কারণে আমি নড়তে পারছিলামনা, যার জন্য ঠিক করতে পারিনি। কিন্তু ইনি আগে কখনো তিনি এভাবে রুমে আসেনি, তিনি জানতেন আমি পর্দা করি এবং রুমের পর্দাও দেওয়া ছিল তবু অঘটন ঘটল। আবার আমার ননদও তারপর বলে সবই তো দেখে ফেলল শুধু মুখটাই বাকি আছে। এই পাপী বান্দাদের ভালোবাসেন তাই বেপর্দা থেকে হেফাজত করেছেন আলহামদুলিল্লাহ কারণ প্রতিবার আমার মুখ মাথাসহ শরীর আবৃত ছিল। আবার ইনি আমার বাবার সাথেও খারাপ ব্যবহার করেছে যে আমাদের বাবার বাড়ি থেকে আসবাবপত্র দেইনি তাই। আমার স্বামীও বলেন খুশি করে কিছু দিলে সেটা নাকি যৌতুক না। শুরুর দিকে নন্দাই খুব মৌখিক ইয়ার্কি মারার চেষ্টা করত যেটা আমি শুনেও এড়িয়ে যেতাম বেশিরভাগই। এনার চারিত্রিক ব্যাপারে আমি তেমন ওয়াকিবহাল নই।
2️⃣বড় ভাসুর:
ভাসুর বড় জা কে জিজ্ঞেস করেছিলেন আমাতুল্লাহ এর চেহারা কেমন, দেখতে কী অমুকের থেকেও সুন্দর?
আর একদিন মাংস রাখতে আসছিল তো বাড়িতে আমি ছাড়া কেউ নাই। তিনি মা মা করে ডেকেছেন আমি তার কণ্ঠ বুঝতে পারিনি। আর শাশুড়িও বাড়ি ছিল না ফলে তিনি সামনের একটা রুমে মাংস রেখে চলে যান। আর ননদের স্বামীর কাছে ফোন দিয়ে বলেন, এমন মেয়ে বিয়ে দিয়ে নিয়ে এনেছেন ডাকলেও কথা বলে না। পর্দা করে বলে কী কথাও বলা যাবেনা ইত্যাদি...
পরে স্বামীর কাছ থেকে এই ব্যাপারে বিস্তারিত জানি। শাশুড়ি ননদ তো সেই বকাবকি। আমি ভুল স্বীকার করেছিলাম যে আমি কণ্ঠ বুঝতে পারিনি। এর রেশ ধরে আমার স্বামী আমার মাকে ফোন করে যা তা বলে। তবে স্বামীর কাছে প্রশ্ন করেছিলাম এ অবস্থায় আমার যাওয়া কী যায়েজ ছিল যেহেতু বাড়িতে কেউ ছিল না। সে উত্তর দিল গেলে কী আমার ভাই তোমাকে খেয়ে ফেলত! মাংস দিয়েই চলে যেত। অথচ সে তার বড় ভাইয়ের চরিত্র সম্পর্কে সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল ছিল। মাদকাসক্ত, পর্ণাসক্ত আর পরকীয়ার লিপ্ত একজন মানুষ। কিছুদিন আগেও জেল খেটে আসল মাদক কারবারিতে ধরা পড়ে।
3️⃣মেজ ভাসুর
আমার বিয়ে তোলার দিন আমি স্বর্ণ + সিটিগোল্ডের চুড়ি পরেছিলাম অনেক গুলো। তবে বোরখা + সাত পর্দা পরে থাকার কারণে মানুষের নজরে কম আসছিল। তো শ্বশুর বাড়ি গিয়েই আমি এক রুমে বসেছি শাশুড়ি+ স্বামী আছে দরজা খোলা সেখানে আমার মেজ ভাসুর আমার বরাবর ডাইনিং এ দাড়িয়ে লুঙ্গি চেঞ্জ করতে করতে জিজ্ঞেস করছে আমাতুল্লাহর হাতের সব চুড়িগুলো স্বর্ণের নাকি। আমি খুবই অবাক হয়েছিলাম হাটু নিচ পর্যন্ত হিজাব আর বোরখার হাতার নিচে থাকা চুড়িগুলো ভাসুরের চোখে কিভাবে পড়ল! এনার চারিত্রিক অবস্থা বড় ভাসুরের মতই। ইনি বিয়ে করার পরও পরকিয়া করত। ইভেন বড় ভাসুরের বউয়ের সাথে নাকি তার পরকিয়া সম্পর্ক ছিল। পরে ওই ভাবী অন্য জনের সাথে পরকিয়া করে চলে গেছে।
4️⃣ ননদের ছেলে: বর্তমানে অনার্স করছে। সে আমার রুমে উকি দিয়ে নাকি আমাকে দেখেছে একথা শুনেছি শাশুড়ির থেকে। আবার আমার ননদের ছেলে তো আমার উপর পুরুষ ঘটিত মিথ্যা অপবাদ রটানোর চেষ্টা করেছিল আউজুবিল্লাহ। অথচ আমি সম্পূর্ণ নির্দোষ ছিলাম আলহামদুলিল্লাহ।
একবার খাবার বেড়ে দিতে হয়েছিল স্বামীর চাপে। খাবার বাড়ার সময় হঠাৎ খেয়াল করেছিলাম আমার হাতের দিকে ননদের ছেলের নজর কারণ ভুলবশত হাতমোজা পরেছিলাম না, আমার হাত যেদিকে যায় চোখও সেদিকে দেয় আসতাগফিরুল্লাহ। আর কখনো দিই নাই এরপর। ননদের ছেলেরও নারী ঘটিত কেলেঙ্কারি আছে, মাদকাসক্ত, পর্ণাসক্ত।
যেহেতু নন-মাহারামদের সাথে কথা বলতে আমার অস্বস্তি লাগত আর উপরোক্ত কারণ সমূহের জন্য ফিতনার আশঙ্কা থেকে আমি তাদের সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিই।
এরপর আমার স্বামীর পরিবার থেকে আমার ব্যপারে দুইটা অভিযোগ আসতে থাকে।
️১. আমি কোনো নন-মাহারাম পুরুষ মানুষের সাথে সৌজন্যে সাক্ষাত করিনা, আসা যাওয়ার সময় কথা বলিনা। তারা আসলে তাদের সামনে গিয়ে সালাম দিয়ে ভালো মন্দ জিজ্ঞাসা করিনা। চলে আসার সময় বলিনা যে, চলে গেলাম, আপনারা আমাদের বাসাতে যেয়ে ঘুরে এসেন ইত্যাদি।
️২. আমার মেহমানদের সেবা যত্নে ঘাটতি আছে, মানুষের সাথে মেলামেশাতে ঘাটতি আছে। অর্থাৎ পুরুষ মানুষের থেকে আড়ালে থাকি। আমি নন-মাহারাম পুরুষদের খাবার বেড়ে দিইনা। একগ্লাস পানি পর্যন্ত ঢেলে খাওয়াই না।
উল্লেখিত দুইটা কাজই আমি মহিলাদের সাথে করি কিন্তু নন-মাহারামদের সাথে নয়। নন-মাহারাম পুরুষদের সাথে আমি ফ্রি না। কিন্তু অনেক সময় বাধ্য হয়ে কথা বলতে হয়েছিল। রীতিমত প্রচুর পরিমাণ অস্বস্তি নিয়ে স্বামীর নিকটাত্মীয়দের সাথে গ্রুপকলে কথা বলা লাগত। আবার আমি দরজার পর্দার ওপাশ থেকে সালাম+ ভালোমন্দ জিজ্ঞাসা করলেও তাদের সমস্যা শুরু হয়ে যেত। তাদের সামনে কেন গেলাম না এটা নিয়ে।
আমি বলি পুরুষদের খাবার তাদের মাহরাম মহিলা কিংবা পুরুষ দিবে। কিন্তু তা তারা মানতে নারাজ।
আমার স্বামী বলেন, যদি মা আর আপুর কথামত চলো তবে আমার চেয়ে ভালো স্বামী আর কেউ হবে না। আমার বোন আমার বউয়ের উপর ছড়ি ঘুরাবে। আর তোমার উপর স্বামীর আনুগত্য করা ফরজ। তোমার জন্য আত্মীয়তার সম্পর্ক নষ্ট করে আমি জাহান্নামী হতে পারবোনা। অথচ তার সাথে তাদের সম্পর্ক সম্পূর্ণ ঠিক আছে এখন। আমার স্বামীর নারী আত্মীয়দের কাছে আমিই কল দেই, খোঁজ খবর নিই, তারা দেইনা। তবে ইদানীং আমি কল দিলে ওনারা আমার কল রিসিভও করেননা। স্বামীর কথা তাদের থেকেই তাদের কোনো কথা তোমার কাছে খারাপ লাগলেও আমাকে বলা যাবেনা। তুমি স্বামীর হুকুম মানছোনা দেখো হাশরে আবার ঠেকে না যাও।
তুমি যদি আমার পুরুষ আত্মীয়দের সাথে কথা না বলো তবে তুমি আমাদের বাড়ি যাবা না আর আমি তোমাদের বাড়ি যাব না। তুমি একঘরে হয়ে থাক। আমার নারী আত্মীয়দের সাথেও তোমার কথা বলা লাগবেনা। মনে কর তোমার শ্বশুরবাড়ি নেই, সেখানকার আত্মীয়ও নেই। তুমি শুধু আমাকে চিনবা আর আমার পরিবারের কোনো পুরুষ মেম্বারকে চিনবা না, কথা বলবা না, এটা আমি মেনে নিতে পারবো না। অথচ বিয়ের আগে নাকি সেই বলেছিল মেয়ে(আমি) কারো সামনে যায় না। আবার একসময় সেই বলেছে আমার বউ কোনো নন-মাহারাম এর সাথে কথা বলবে না। কিন্তু এখন পুরাই পাল্টে গেছে। আমি বলি আমি ফিতনার ভয়ে কথা বলি না। সে বলে ফিতনার কিছু নেই। আরো বলে ইখতেলাফি মাসআলা এটা ফাতওয়া যা খুশি মানতে পারবো।
আমি আমার কন্যা সন্তান ও আমার নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত।
যাই হোক, আমাকে ফাতওয়া দিবেন দয়া করে এই ঘটনার প্রেক্ষিতে উপরোক্ত ব্যক্তিদের সাথে পর্দা করে কথা বলা, খেদমত করা যাবে কী?
যেভাবে স্বামীর পরিবার চায়।
এই সমস্ত কারণে আমি আত্মীয়তার সম্পর্ক নষ্টকারী হিসেবে বিবেচিত হব কী? যেহেতু নারী আত্মীয়রা নিজ থেকেই আমার সাথে দুরত্ব বজায় রাখতে চাইছে।
উত্তর জানালে উপকৃত হই ইনশাআল্লাহ।